10 Minute School
Log in

ইয়ং-এর দ্বি-চিড় পরীক্ষা (Young’s double slit experiment)

আলাোকের ব্যতিচারের ক্ষেত্রে ইয়ং-এর দ্বি-চিড় পরীক্ষা (Young’s double slit experiment on interference of light)

1807 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ইয়ং আলোকের ব্যতিচার প্রদর্শনের নিমিত্তে একটি পরীক্ষা সম্পাদন করেন। তাঁর নামানুসারে এই পরীক্ষাকে ইয়ং-এর পরীক্ষা (Young’s double slit experiment )বলা হয়। এই পরীক্ষায় বিজ্ঞানী ইয়ং সাদা আলোর উৎস ব্যবহার করেন।

পরীক্ষা : মনে করি, s একটি সরুরেখা ছিদ্রপথ। L একটি একবর্ণী আলোক উৎস। S-এর মধ্য দিয়ে একবর্ণী
আলোক গমন করছে।

S1S_1, এবং S2S_2, খুবই কাছাকাছি দুটি রেখা ছিদ্র বা রেখা চিড় [চিত্র ৭.৮]। এদেরকে S-এর সামনে সমান্তরালভাবে স্থাপন করা হয়েছে। আলোক S হতে বের হয়ে S1S_1S2S_2, এর ওপর পতিত হবে এবং এর পর সেগুলো এরকম তরঙ্গের আকারে নির্গত হবে। নির্গত তরঙ্গ দুভাবে বিভক্ত হয়ে মাধ্যমের মধ্য দিয়ে গমনকালে ব্যতিচার গঠন করে।

Picture

বিজ্ঞানী ইয়ং এরকম পর্দায় রঙিন ব্যতিচার পট্টি দেখতে পান। তরঙ্গ দুটি যদি পর্দার কোনো বিন্দুতে একই দশায় মিলিত হয় তবে সে স্থান উজ্জ্বল দেখাবে। এর নাম গঠনমূলক ব্যতিচার (Constructive interference)। আর তরঙ্গ দুটি যদি পর্দার কোনো বিন্দুতে বিপরীত দশায় মিলিত হয়, তবে সে স্থান অন্ধকার দেখাবে। এর নাম ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার ( Destructive interference)। চিত্রে AB পর্দার ড্যাস ড্যাস স্থানে উজ্জ্বল বিন্দু এবং নিরবচ্ছিন্ন স্থানে অন্ধকার বিন্দু সৃষ্টি হবে।

ইয়ং আরো উল্লেখ করেন যে যদি S উৎস সরিয়ে নেয়া হয় কিংবা S1S_1S2S_2,-এর দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়া হয়, তবে ব্যতিচার ডোরা অর্থাৎ রঙিন পট্টি দেখা যাবে না। সাদা আলোর পরিবর্তে একবর্ণী (monochromatic) আলো নিলে পর্যায়ক্রমিক উজ্জ্বল ও অন্ধকার ডোরা দেখা যায়।

দশা পার্থক্য ও পথ পার্থক্যের মধ্যে সম্পর্ক (Relation between phase difference and path difference)

ক. গাণিতিক পদ্ধতি (Mathematical method) :

মনে করি λ\lambda তরঙ্গদৈর্ঘ্যের একরঙা আলোর দুটি উৎস S1S_1S2S_2, [ চিত্র ৭.৯] হতে একই সঙ্গে নির্গত আলোক তরঙ্গ প্রায় একই দিকে c বেগে সঞ্চালিত হয়ে P বিন্দুতে উপরিপাতিত হয়।

যে কোনো t সময়ে P বিন্দুতে আলোক তরঙ্গের সরণ S1S_1 থেকে আগত তরঙ্গের জন্য γ1\gamma_1 এবং S2S_2 থেকে আগত তরঙ্গের জন্য γ1\gamma_1 হলে

γ1=asin2πλ(ctx1)\gamma_1 = \operatorname{asin} \frac{2 \pi}{\lambda}\left(c t-x_{1}\right)  এবং γ2=asin2πλ(ctx2)\gamma_2 = \operatorname{asin} \frac{2 \pi}{\lambda}\left(c t-x_{2}\right)

P বিন্দুতে S1S_1S2S_2 থেকে আগত তরঙ্গের দশা কোণ যথাক্রম 2πλ(ctx1)\frac{2 \pi}{\lambda}\left(c t-x_{1}\right) এবং 2πλ(ctx2)\frac{2 \pi}{\lambda}\left(c t-x_{2}\right)

P\therefore P বিন্দুতে S1S_1S2S_2, থেকে আগত তরঙ্গের দশা কোণ যথাক্রমে 

S=2πλ(ctx1)S = \frac{2 \pi}{\lambda}\left(c t-x_{1}\right) এবং 2πλ(ctx2)\frac{2 \pi}{\lambda}\left(c t-x_{2}\right)

=2πλ(x2x1)= \frac{2 \pi}{\lambda}\left(x_{2} - x_1\right) 

=2πλ(S2PS1P)= \frac{2 \pi}{\lambda}\left(S_{2}P - S_{1}P\right)

কিন্তু x2x1=S2PS1Px_2 - x_1=S_{2}P-S_{1}P  হচ্ছে তরঙ্গ দুটির পথ পার্থক্য।

\therefore দশা পার্থক্য  = 2π×2\pi \times পথ পার্থক্য

 

খ. লেখচিত্রের মাধ্যমে (By graphical method) :

আমরা জানি, কোনো তরঙ্গের দুটি তরঙ্গশীর্ষ বা তরঙ্গ পাদ-এর দূরত্ব হচ্ছে তরঙ্গদৈর্ঘ্য, λ\lambda   এবং ওই দুটি বিন্দুর মধ্যে দশা পার্থক্য =2π= 2\pi  [ চিত্র ৭.৯]

Picture

অতএব, পথ পার্থক্য -এর জন্য দশা পার্থক্য =2π= 2\pi
পথ পার্থক্য l-এর জন্য দশা পার্থক্য =2πλ= \frac{2\pi}{\lambda}

\therefore পথ পার্থক্য -এর জন্য দশা পার্থক্য =2πλx=2πλ×= \frac{2\pi}{\lambda}x = \frac{2\pi}{\lambda} \times  পথ পার্থক্য 

অতএব, S=2πλxS = \frac{2\pi}{\lambda}x                                                        

সমীকরণ (7.10) দশা ও পথ পার্থক্যের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে।

ইয়ং-এর দ্বি-চিড় পরীক্ষার ব্যাখ্যা
(Explanation of Young’s double slit experiment)

হাইগেনসের নীতি ব্যবহার করে ইয়ং এর দ্বি-চিড় পরীক্ষায় সৃষ্ট ব্যতিচার (interference) ব্যাখ্যা করা যায়। চিড় S গোলীয় তরঙ্গমুখ প্রেরণ করে। S1S_1 ও S2S_2 থেকে S এর দূরত্ব সমান হওয়ায় একই সময়ে একই তরঙ্গমুখ S1S_1 ও S2S_2-তে এসে পৌঁছায়। এই তরঙ্গমুখের ওপর অবস্থিত S1S_1 ও S2S_2, বিন্দু এখন গৌণ তরঙ্গ নিঃসৃত করে যেগুলো পরস্পরের সাথে একই দশায় থাকে। সুতরাং S1S_1 ও S2S_2, চিত্র থেকে নিঃসৃত গৌণ তরঙ্গসমূহ সুসঙ্গত। কেননা তাদের কম্পাঙ্ক ও বিস্তার একই। এখন S1S_1 ও S2S_2 থেকে নিঃসৃত তরঙ্গ দুটি উপরিপাতিত হয়ে ব্যতিচার সৃষ্টি করে। সমদশাসম্পন্ন কণাগুলো উপরিপাতিত হয়ে গঠনমূলক এবং বিপরীত দশাসম্পন্ন কণাগুলোর উপরিপাতনের ফলে ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার সৃষ্টি হয়। (৭.১০) চিত্রে হাইফেন (-) লাইন দ্বারা গঠনমূলক এবং সলিড লাইন দ্বারা ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার বুঝানো হয়েছে।

ধরা যাক, একটি সূক্ষ্ম চিড় S, λ\lambda   তরঙ্গদৈর্ঘ্যের একবর্ণী আলোক দ্বারা আলোকিত। S হতে নির্গত গোলাকৃতির আলোক তরঙ্গ S-এর কাছাকাছি এবং সমদূরত্বে অবস্থিত দুটি সমান্তরাল চিড় S1S_1 ও S2S_2,-কে আলোকিত করে।

ধরা যাক S1S_1, চিড় হতে P বিন্দুতে [চিত্র ৭.১০] আপতিত আলোক তরঙ্গের সমীকরণ

Picture

γ1=asin2πλvt\gamma_1 = a \sin \frac{2 \pi}{\lambda} v t                                        

এখানে, γ1\gamma_1  = আলোক তরঙ্গের সরণ, v v   = তরঙ্গের বেগ, λ\lambda = তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং a = তরঙ্গের বিস্তার।

এখন, S2S_2, চিড় হতে P বিন্দুতে আপতিত আলোক তরঙ্গের সরণ γ2\gamma_2 এবং S1S_1 ও S2S_2, হতে আগত রশ্মিদ্বয়ের পথ পার্থক্য x হলে, S2S_2,হতে আগত তরঙ্গের সমীকরণ লেখা যায়,

γ2=asin2πλ(vt+x)\gamma_2 = a \sin \frac{2 \pi}{\lambda} (v t + x)  

P বিন্দুতে এই দুটি তরঙ্গের উপরিপাতন ঘটায়, লব্ধি সরণ y হবে—

γ=γ1+γ2=asin2πλvt+asin2πλ(vt+x)\gamma=\gamma_{1}+\gamma_{2}=a \sin \frac{2 \pi}{\lambda} v t + a \sin \frac{2 \pi}{\lambda}(v t + x) =2acos(2πλx2)sin2πλ(vt+x2)[sinA+sinB=2sin(A+B2)cos(AB2)]=2 a \cos \left(\frac{2 \pi}{\lambda} \cdot \frac{x}{2}\right) \sin \frac{2 \pi}{\lambda}\left(v t+\frac{x}{2}\right)\left[\therefore \sin A+\sin B=2 \sin \left(\frac{A+B}{2}\right) \cos \left(\frac{A-B}{2}\right)\right]

এটি সরল ছন্দিত স্পন্দনের সমীকরণ। এর বিস্তার

A=2acos(2πλx2)=2acos(πxλ)A=2 a \cos \left(\frac{2 \pi}{\lambda} \cdot \frac{x}{2}\right)=2 a \cos \left(\frac{\pi x}{\lambda}\right)

আমরা জানি, আলোর তীব্রতা বা প্রাবল্য I=A2I = A^2 । সুতরাং, বিস্তার সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ হলে প্রাবল্যও যথাক্রমে সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ হবে।

 

দ্বি-চিড় পরীক্ষার ফলাফল (Result of Young’s double slit experiment )

(১) দ্বি-চিড় পরীক্ষায় আলোর ব্যতিচার ঘটে।
(২) যেহেতু আলোর তরজোর দরুন ব্যতিচার ঘটে, কাজেই আলো এক প্রকার তরঙ্গ। দ্বি-চিড় পরীক্ষা আলোর তরঙ্গ তত্ত্বকে সমর্থন করে।

 

ব্যতিচারের শর্তাবলি ( Conditions of Interference ):

১. গঠনমূলক ব্যতিচার বা উজ্জ্বল বিন্দুর শর্ত ( Conditions of Constructive Interference ) : বিস্তার তথা আলোর তীব্রতা সর্বোচ্চ হবে, অর্থাৎ গঠনমূলক
ব্যতিচার হবে, যখন

cosπxλ=1\cos \frac{\pi x}{\lambda}=1

বা, πxλ=0,π,2πnx\frac{\pi x}{\lambda}=0, \pi, 2 \pi \quad \mathrm{nx}

বা, x=nλ=2n(λ2)x=n \lambda=2 n\left(\frac{\lambda}{2}\right)                                                                    (7.13)

সুতরাং, আলোর তীব্রতা সর্বোচ্চ অর্থাৎ উজ্জ্বল হওয়ার শর্ত হলো পথ পার্থক্য λ2\frac{\lambda}{2} -এর যুগ্ম গুণিতক হতে হবে। দুটি তরঙ্গ যখন একই দশায় মিলিত হয় তখন লব্ধি তরঙ্গের বিস্তার তথা তীব্রতা সর্বাধিক হয় ফলে উজ্জ্বল ডোরার সৃষ্টি হয় বা গঠনমূলক ব্যতিচার ঘটে। অর্থাৎ গঠনমূলক ব্যতিচার সৃষ্টি হবে যখন,

দশা পার্থক্য, S=0,2π,4π,6π\mathrm{S}=0,2 \pi, 4 \pi, 6 \pi ………… ইত্যাদি π\pi এর জোড় গুণিতক
              = 2πn 2 \pi n  , যেখানে n = 0, 1, 2, 3 ……… ইত্যাদি।

অর্থাৎ 2πλ(S2PS1P)=2πn\frac{2 \pi}{\lambda}\left(S_{2} P - S_{1} P \right) = 2 \pi n

বা, পথ পার্থক্য, S2PS1P=nλ=2n(λ2)S_{2} P-S_{1} P=n \lambda=2 n\left(\frac{\lambda}{2}\right)

এখানে  n=0, 1, 2, 3,…………………ইত্যাদি 

সুতরাং আলোর তীব্রতা সর্বোচ্চ বা গঠনমূলক ব্যতিচারের শর্ত হলো পথ পার্থক্য (λ2\frac{\lambda}{2} ) এর যুগ্ম গুণিতক হতে হবে। এই ক্ষেত্রে গঠনমূলক ব্যতিচারের জন্য আমরা পাই, আলোকীয় পথ পার্থক্য = nλn\lambda.

বা, S2PS1P=nλ S_{2} P-S_{1} P=n \lambda

আবার দ্বিচিড়ের অক্ষের ওপর O বিন্দুতে পথ পার্থক্য

= S2MS1M=0  S_{2}M-S_{1} M = 0             (S1M=S2M\therefore S_1 M = S_2 M )

= 0×λ=0 0 \times \lambda = 0  

সুতরাং M বিন্দুতে একটি উজ্জ্বল ডোরা সৃষ্টি হয়। এটিকে অনেক সময় কেন্দ্রীয় চরম বলা হয়। M থেকে প্রথম উজ্জ্বল ডোরাটি পাওয়া যাবে P-তে যেখানে n = 1 এবং পথ পার্থক্য =S2PS1P=1×λ= S_{2} P-S_{1} P=1 \times \lambda

 

২. ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার বা অন্ধকার বিন্দুর শর্ত ( Conditions of Destructive Interference ): বিস্তার তথা প্রাবল্য সর্বনিম্ন হবে অর্থাৎ ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার
হবে, যখন—

cosπxλ=0\cos \frac{\pi x}{\lambda} = 0

 

বা, πxλ=π2,3π2(2n+1)π2\frac{\pi x}{\lambda}=\frac{\pi}{2}, \frac{3 \pi}{2} \ldots \ldots \ldots \ldots \ldots \ldots \ldots(2 n+1) \frac{\pi}{2}

বা, x=(2n+1)λ2x=(2 n+1) \frac{\lambda}{2}

এখানে = 0,1,2,3 ইত্যাদি  

অতএব, আলোর তীব্রতা সর্বনিম্ন অর্থাৎ অন্ধকার হওয়ার শর্ত হলো পথ পার্থক্য λ2\frac{\lambda}{2} -এর অযুগ্ম গুণিতক হতে
হবে।

অর্থাৎ পথ পার্থক্য (n+12)λ\left(n+\frac{1}{2}\right) \lambda

যেখানে, n = 1, 2, 3 ইত্যাদি

(৭.১০) চিত্রে Q বিন্দুতে একটি অন্ধকার ডোরা সৃষ্টি হয় এবং M থেকে এটিই প্রথম অন্ধকার ডোরা। সুতরাং
n = 1 এবং পথ পার্থক্য-

S2QS1Q=(1+12)λ=3λ2S_{2} Q-S_{1} Q=\left(1+\frac{1}{2}\right) \lambda=\frac{3 \lambda}{2}