অ্যামিনো এসিড, প্রোটিন এবং লিপিড (Amino Acid, Protein and Lipid)
অ্যামিনো এসিড (Amino Acid)
শ্রেণিবিভাগ : অ্যামিনো এসিড (Classification : Amino Acid)
শ্রেণিবিভাগের ভিত্তিতে | প্রকার | নাম | উদাহরণ |
ক. গঠন অনুর ভিত্ততে | ৩ | ১. অ্যালিফ্যাটিক | গ্লাইসিন, এলালিন,জ্যালিন |
২. অ্যারোমেটিক | ফিনাইল এলনিন, টাইরোসিন | ||
৩. হেটেরোসাইক্লিক | টিপটোফ্যান, প্রোলিন, হিস্টিডিন | ||
খ. পোলারিটি ও চার্জের ভিত্তিতে | ৪ | ১. নন–পোলার | ১০টি |
২. পোলার–আনচার্জড | ৫টি | ||
৩. পোলার–নেগেটিভ চার্জড | ২টি | ||
৪. পোলার–পজিটিভ চার্জড | ৩টি | ||
গ. প্রোটিন গঠনের ভিত্তিতে | ৩ | ১. প্রোটিন | ২০টি; লিউসিন, মেথিওনিন, প্রোলিন |
২. নন-প্রোটিন | অরনিথিন, সাইট্রুলিন, হেমোসেরিন | ||
৩. বিরল | হাইড্রক্সিপ্রোপিন | ||
ঘ. আবশ্যকীয়তার ভিত্তিতে | ২ | ১. অত্যাবশ্যকীয় | ৮টি নাম |
২. অনাত্যবশ্যকীয় | ১২টি নাম |
প্রোটিন (Protein)
একাধিক অ্যামিনো এসিড, নিজেদের মধ্যে ‘পেপটাইড বন্ধন’ তৈরির মাধ্যমে পলিপেপটাইড তৈরি করে।
শ্রেণিবিভাগ (Classification) :
শ্রেণিবিভাগের ভিত্তিতে | প্রকার | নাম | উদাহরণ |
ক. জৈবিক কার্যাবলি | ২ | ১. গাঠনিক প্রোটিন | কেরাটিন, কোলাজেন , ফাইব্রাইন, স্ক্লেরোটিন, কনড্রিন, সেইন । |
২. কার্যকরি প্রোটিন | এনজাইম, হরমোন, ভিটামিন, শ্বাসরঞ্জক ইত্যাদি। | ||
খ. আকৃতি | ২ | ১. তন্তুময় প্রোটিন | কেরাটিন, কোলাজেন , ফাইব্রাইন ইত্যাদি। |
২. গ্লোবিউলার প্রোটিন | মায়োগ্লোবিন, ইনস্যুলিন, হিমোগ্লোবিন ইত্যাদি। | ||
গ. গঠন অনুসারে | ৪ | ১. প্রাইমারি | |
২. সেকেন্ডারি | |||
৩. টারশিয়ারি | |||
৪. কুয়াটার্নারি | |||
ঘ. ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলি ও দ্রবনীয়তা | ৩ | সরল প্রোটিন | লিউকোসিন, লিগুমেলিন, এন্ডেস্টিন , গ্লুটেনিন ইত্যাদি। |
২. যুগ্ম প্রোটিন | দুধের কেসিনোজেন, ডিমের ভাইটেলিন ইত্যাদি। | ||
৩. উদ্ভূত প্রোটিন | পেপটাইড, প্রোটিইয়োজ, পেপটোন, ফাইব্রিন ইত্যাদি। |
প্রোটিনের কাজ (Functions of Protein)
- জীবদেহের গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে, যেমন-কোলাজেন।
- কোষে প্রোটিন সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে কাজ করে এবং প্রয়োজনে শক্তি উৎপাদন করে।
- বিভিন্ন অঙ্গাণু এবং কোষ ঝিল্লি গঠনে কাজ করে।
- এনজাইম হিসেবে জীবদেহের ক্রিয়া-বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে তথা জীবদেহকে সচল রাখে, যেমন—রুবিস্কো।
- অ্যান্টিবডির গাঠনিক উপাদান হিসেবে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে এবং দেহকে রোগমুক্ত রাখে, যেমন- ইমিউনোগ্লোবিউলিন।
- হিস্টোন প্রোটিন নিউক্লিয়াস এবং নিউক্লিক অ্যাসিডকে কার্যকর করে।
- কিছু প্রোটিন বিষাক্ত হওয়ায় অনেক জীব তা খেয়ে মারা যায় (সাপের বিষের প্রোটিন)।
- যে সকল উদ্ভিদে বিষাক্ত প্রোটিন থাকে তারা অনেক পশু পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।
- এক গ্রাম প্রোটিন জারণে ৪.১ কিলোক্যালরি শক্তি উৎপন্ন হয়।
- হিমোগ্লোবিন প্রোটিন প্রাণিদেহের সমস্ত কোষে O2 সঞ্চালন করে।
- মানবদেহের পেপটাইড থেকে উৎপাদিত প্রোটিন ডিফেনসিভ (defensive) অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করে।
- পিগমেন্ট হিসেবে কাজ করে, যেমন- রোডোপসিন।
- ইন্টারফেরন (interferon) একটি কোষীয় প্রোটিন) এটি ভাইরাস আক্রমণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেহে তৈরি হয়, ধারণা করা হচ্ছে ইন্টারফেরন ক্যান্সার ও ভাইরাসজনিত রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা যাবে।
জীবদেহে ভূমিকা (Role in Living Body)
জীবদেহে প্রোটিনের ভূমিকা অত্যাবশ্যকীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেহের গঠন উপাদানের একটি বড় অংশ। প্রোটিনএর দেহাঙ্গ বা অঙ্গাণুর সঠিক গঠন সম্ভব নয়। সজীব দেহ কতগুলো রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার সমষ্টিমাত্র। আর এসব এনজাইম কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। সব এনজাইমই প্রোটিন। ‘জিন’-এর বৈশিষ্ট্য প্রকাশ ঘটে প্রোটিনের মাধ্যমে, এর বৈশিষ্ট্য প্রকাশ ছাড়া জীবের অস্তিত্ব নেই। জীবদেহের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন হরমোন বিশেষ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে (যেমন ইনসুলিন, হিমোগ্লোবিন)। অধিকাংশ হরমোনই প্রোটিন। দেহের ইমিউন সিস্টেমও প্রোটিননির্ভর। প্রোটিনদেহের শক্তির উৎস হিসেবেও কাজ করে। কোযচক্র সম্পন্ন করতেও প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। ০০০০০ সম্পন্ন করতেও প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার এর কারণ হিসেবে ভাইরাস চিহ্নিত হয়েছে। ইন্টারফেরন নামক বিশেষ প্রোটিনভাইরাস প্রতিরোধক হিসেবে ব্লাড ক্যান্সার নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। রোগ জীবাণু ধ্বংস ও নিয়ন্ত্রণের জন্য পো ষক দেহে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা সংশ্লেষ করতে প্রোটিনএর প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন জীবের বিপাকীয় বিক্রিয়ায় প্রোটিনথেকে বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন হয়। এসব পদার্থ জীবের আত্মরক্ষার জন্য বিশেষ সহায়ক; যেমন-সাপের বিষ বা ভেনম। মস্তিষ্কে উৎপন্ন ০০০০০০০ ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অতি সম্প্রতি আবিষ্কৃত ঘুম আনয়নকারী S-factor বিশেষ ধরনের প্রোটিন ০০০০০০০ প্রামাণিত হয়েছে।
লিপিড (Lipids)
লিপিডের গঠন (Structure of Lipid)
সাধারণভাবে গ্লিসারোল ও ফ্যাটি অ্যাসিডের সমন্বয়ে লিপিড গঠিত হয়। ফসফোলিপিড-এ গ্লিসারোল ও ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়া ফসফরাস এবং নাইট্রোজেন বেস থাকে। গ্লাইকোলিপিড-এ ফ্যাটি অ্যাসিড, শ্যুগার (হেক্সোজ) ও নাইট্রোজেনঘটিত পদার্থ থাকে। মোমজাতীয় লিপিড-এ গ্লিসারোল-এর পরিবর্তে অ্যালকোহল বা কোলেস্টেরোল থাকে।
লিপিডের কাজ (Functions of Lipid)
- চর্বি ও তেল জাতীয় লিপিড উদ্ভিদদেহে সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে জমা থাকে। বিভিন্ন তেলবীজের (সরিষা, তিল, সয়াবিন ইত্যাদি) অঙ্কুরোদগমকালে লিপিড খাদ্যরূপে গৃহীত হয়। এদের বিজারণকালে অধিক ATP তৈরি হয় ।
- ফসফোলিপিড বিভিন্ন মেমব্রেন গঠনে উপাদান হিসেবে কাজ করে।
- মোম জাতীয় লিপিড পাতার বহিরাবরণে স্তর (কিউটিকল) সৃষ্টি করে অতিরিক্ত প্রস্বেদন রোধ করে।
- কতিপয় এনজাইমের প্রোসথেটিক গ্রুপ হিসেবে ফসফোলিপিড কাজ করে। এছাড়া ফসফোলিপিড আয়নের বাহক হিসবেও কাজ করে।
- সালোকসংশ্লেষণে গ্লাইকোলিপিড বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- টিনের সাথে যুক্ত হয়ে লিপো প্রোটিনগঠন করে এবং লিপো প্রোটিন শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকে।
শ্রেণিবিভাগ (Classification)
চর্বি ও তেল এর মধ্যে পার্থক্য (Difference between Fat and Oil)
চর্বি | তেল |
১। সাধারণত লম্বা শিকল ফ্যাটি অ্যাসিড ধারণ করে। | ১। সাধারণত খাটো শিকল ফ্যাটি অ্যাসিড ধারণ করে। |
২। সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড ধারণ করে। | ২। অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড ধারণ করে। |
৩। কক্ষ তাপমাত্রায় (20°C) কঠিন বা অর্ধকঠিন। | ৩। কক্ষ তাপমাত্রায় (20°C) তরল। |
৪। গলনাঙ্ক অনেক বেশি (প্রায় 70°C এর কাছাকাছি)। লরিক অ্যাসিড, স্টিয়ারিক অ্যাসিড, লিনোটিক অ্যাসিড ইত্যাদি সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড। | ৪। গলনাঙ্ক অনেক কম (মাত্র 5°C এর কাছাকাছি)। অলিক অ্যাসিড, লিনোলিক অ্যাসিড ইত্যাদি। |
৫। উদাহরণ- উদ্ভিজ্জ চর্বি, পাম অয়েল, নারিকেল তেল, মাখন, ঘি, প্রাণিজ চর্বি, মাছের তেল। | ৫। উদাহরণ- ভোজ্য তেল। |
ট্রাইগ্লিসারাইড (Triglyceride)
এক অণু গ্লিসারোল-এর সাথে তিনটি ফ্যাটি অ্যাসিড সংযুক্ত হয়ে তৈরি হয় এক অণু ট্রাইগ্লিসারাইড। এ সময় তিন অনু পানি তৈরি হয়, কাজেই এটি হলো একটি ডিহাইড্রেশন বিক্রিয়া। গ্লিসারোল হলো একটি ক্ষুদ্র অণুর অ্যালকোহল এখানে ৩টি কার্বন ও ৩টি হাইড্রোক্সি পার্শ্বগ্রুপ থাকে।
ফ্যাটি অ্যাসিড হলো একটি হাইড্রোকার্বন চেইন যার এক মাথায় একটি কার্বক্সিলিক গ্রুপ থাকে। কার্বোক্সিল গ্রুপের ডিহাইড্রেশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে OH সাইড গ্রুপের সংযোগকে বলা হয় এস্টার লিংকেজ (ester linkage)।
ফ্যাটি অ্যাসিড চেইন-এ কোনো ডাবল বন্ড না থাকলে তাকে বলা হয় স্যোচুরেটেড ফ্যাটি এসিড, যেমন-স্টিয়ারিক অ্যাসিড। ফ্যাটি অ্যাসিডের হাইড্রোকার্বন চেইন-এ এক বা একাধিক ডাবল বন্ড থাকলে তাকে হয় আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যেমন- লিনোলিক (linoleic) অ্যাসিড, লিনোলেনিক (linolenic) অ্যাসিড । স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (যা প্রাণী চর্বিতে থাকে) আর্টারিগাত্রে জমা হয়ে রক্ত চলাচলের পথ সরু করে দেয়, তাই হৃদরোগ হয়। আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডে তা হয় না।
মানুষ (এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী) ফ্যাটি অ্যাসিডের নবম কার্বনের পর কোনো ডাবল বন্ড তৈরি করতে পারে না, তাই আমাদের খাদ্যে সামান্য আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড যোগ করতে হয়। এ জন্যই linoleic এবং linolenic অ্যাসিডদ্বয়কে আবশ্যকীয় (essential) ফ্যাটি অ্যাসিড বলা হয়। আমাদের খাদ্যে সাধারণত যথেষ্ট আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, তাই পুষ্টিজনিত অসুবিধা দেখা দেয় না।
সিজ এবং ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড (Cis and Trans – Fatty Acid)
ফ্যাটি অ্যাসিডের দুটি কার্বন এটমের মধ্যকার ডবল বন্ডের হাইড্রোজেন একই দিকে থাকলে তাকে বলা হয় Cis-fatty acid; আর ডবল বণ্ডের দুটি হাইড্রোজেন উল্টো দিকে থাকলে তা হলো tras-fatty acid ।
ফ্যাটি অ্যাসিডের শেষ CH3 এর পর ৩নং কার্বনে ডবল বন্ড থাকলে তা হলো ওমেগা-3 এবং ৬নং কার্বনে ডবল বন্ড থাকলে তা হলো ওমেগা-6। ওমেগা-3 এবং ওমেগা-6 অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, দেহে তৈরি হয় না, খাদ্যের সাথে গ্রহন করতে হয়। ব্রেইন ও চোখের গঠনে অধিক প্রয়োজন হয়। সিজ-ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন- অলিভ অয়েল, দেহের জন্য উপকারী এবং ট্রান্স-ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের জন্য অপকারী।
লিপিড প্রোফাইল (Lipid Profile)
রক্তে কোলেস্টেরল ও চর্বির মাত্রা দেখতে লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষাটি করা হয়। লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষায় টোটাল কোলেস্টেরল (TC), লো-ডেনসিটি লিপো প্রোটিন (LDL), হাই-ডেনসিটি লিপো প্রোটিন (HDL) ও ট্রাইগ্লিসারাইড (TG) এর মাত্রা দেখা হয়। নিচের ছক থেকে সহজেই লিপিড প্রোফাইল (mg/dl = milligram/deciliter) সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।
ব্যাখ্যা | TG (gm/dl) | LDL (mg/dl) | HDL (mg/dl) | TC |
স্বাভাবিক মাত্রা | <150 | <100 | >145 | >200 |
বর্ডার লাইন মাত্রা | 150 – 199 | 130 –159 | 90 –145 | 200 –239 |
ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রা | 200 – 499 | 160 –189 | <90 | <240 |
অতিঝুঁকিপূর্ণ মাত্রা | >500 | >190 | <40 | <40 |
Total Cholesterol (TC) = HDL + LDL + 20% of triglyceride level
উদ্ভূত বা উৎপাদিত লিপিড (Derived Lipids)
যৌগিক লিপিডের আর্দ্র বিশ্লেষণের ফলে যে লিপিড উদ্ভূত তাকে উদ্ৰত লিপিড বলে। আবার যেসব যৌগ আইসো প্রিন এককের (C5H8) পলিমার দিয়ে গঠিত তাকে টারপিনয়েড লিপিড বলে। আইসো প্রিন হলো ৫ কার্বনবিশিষ্ট যৌগ। স্টেরয়েড, টারপিন, রাবার ইত্যাদি টারপিনয়েড লিপিডের উদাহরণ।