10 Minute School
Log in

রাসায়নিক সংকেত (Chemical formula)

5যৌগের রাসায়নিক সংকেত (Chemical formula of compounds)

সংজ্ঞা (Definition):-

মৌল বা যৌগমূলকের প্রতীক বা সংকেত ও তাদের সংখ্যার মাধ্যমে কোনো যৌগ অণুকে প্রকাশ করাই হলো উক্ত যৌগের রাসায়নিক সংকেত।

ব্যাখ্যা (Explanation):-

যৌগের একটি অণুতে যেসব পরমাণু থাকে তাদের প্রতীক ও সংখ্যার মাধ্যমে অণুটিকে প্রকাশ করা হয়।

যেমন : H_2O হলো পানির অণুর রাসায়নিক সংকেত।

এক্ষেত্রে অণুর মধ্যে অবস্থিত মৌলের বা যৌগমূলকের সংখ্যাকে সংকেতের নিচে ডান পাশে ছোট করে লেখা হয়।

রাসায়নিক সংকেত লেখার নিয়ম (Rules to writing Chemical formula):

কোনো মৌলের একটি অণুতে যতগুলো পরমাণু থাকে তার সংখ্যাকে ইংরেজীতে মৌলটির প্রতীকের ডান পাশে নিচে ছোট করে লেখা হয়।

    1. নাইট্রোজেন অণুর সংকেত N_2। এরকম আরও – H_2,O_2
    2. ওজোন এর একটি অণুতে তিনটি অক্সিজেন পরমাণু থাকে। তাই ওজোন অণুর সংকেত O_3

কিছু মৌল অণু গঠন করে না তাই তাদেরকে শুধু প্রতীক দিয়ে বোঝানো হয়।

যেমন : সকল ধাতু। আয়রনকে বোঝাতে শুধু Fe লিখতে হবে। এছাড়াও  Na, Ca, K ইত্যাদি। 

  • কখনো কখনো কোনো যৌগের অণু ২টি ভিন্ন মৌলের পরমাণু দিয়ে গঠিত হয়। তাদের যোজনী যদি কোনো সাধারণ সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য না হয় তাহলে দুটি মৌলের প্রতীক পাশাপাশি লিখে একটি মৌলের প্রতীকের পাশে  অন্যটির যোজনী লিখতে হয়। যেমন : Al_2O_3,CaCl_2
  • কোনো যৌগমূলক একাধিক সংখ্যক থাকলে যৌগমূলকটিকে প্রথম বন্ধনীর মধ্যে রেখে তারপর সংখ্যা লিখতে হয়। যেমন : অ্যামোনিয়াম ফসফেট (NH_4)_3PO_4
  • যদি দুটি মৌলের যোজনী কোনো সাধারণ সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য হয় তাহলে যোজনীগুলো সেই সাধারণ সংখ্যা দিয়েই ভাগ দিয়ে মৌলের পাশে পূর্বের নিয়মে ভাগফলটি লিখতে হয়। যেমন : CO_2,FeSO_4

আণবিক সংকেত ও গাঠনিক সংকেত (Molecular Formula and Structural Formula)

আণবিক সংকেত (Molecular Formula):

একটি মৌল বা যৌগের অণুতে যে যে ধরনের মৌলের পরমাণু থাকে তাদের প্রতীক এবং সেই মৌলের যতটি পরমাণু থাকে সেই সকল সংখ্যা দিয়ে প্রকাশিত সংকেতকে আণবিক সংকেত বলে।

ব্যাখ্যা (Explanation): প্রোপেন (C_3H_8) এ তিনটি কার্বন (C) পরমাণু আটটি (8) হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়েছে। এবং C_3H_8 গঠন করেছে। প্রোপেনের (C_3H_8) এই সংকেতকে তার আণবিক সংকেত বলে।

গাঠনিক সংকেত (Structural Formula):

একটি অণুতে মৌলের পরমাণুগুলো যেভাবে সাজানো থাকে প্রতীক এবং বন্ধনের মাধ্যমে তা প্রকাশ করাকে গাঠনিক সংকেত বলে। 

ব্যাখ্যা (Explanation): (C_3H_8) যৌগে কার্বন পরমাণু তিনটি একে অপরের সাথে শিকল আকারে যুক্ত হয় এবং অবশিষ্ট যোজনীগুলো হাইড্রোজেন দ্বারা পূর্ণ হয়ে প্রতিটি কার্বনের যোজনী 4 হয়। 

প্রোপেনের গাঠনিক সংকেত :-

যৌগের রাসায়নিক সংকেত (Chemical formula of compounds)

পানির আণবিক সংকেত H_2O, অতএব এর গাঠনিক সংকেত :-

যৌগের রাসায়নিক সংকেত (Chemical formula of compounds)

মিথেনের আণবিক সংকেত CH_4, অতএব এর গাঠনিক সংকেত :-

যৌগের রাসায়নিক সংকেত (Chemical formula of compounds)

Note:

এখানে কার্বন- কার্বন হাইড্রোজেনের মধ্যে অবস্থিত প্রতিটি রেখা হলো একেকটি বন্ধন। এরা সমযোজী বন্ধন। গাঠনিক সংকেতের মাধ্যমে যৌগের অণুতে কোন পরমাণু কতটি করে আছে এবং তারা একে অপরের সাথে কিভাবে যুক্ত আছে তা জানা যায়। 

অষ্টক ও দুই এর নিয়ম (Octet and Duet Rules)

অষ্টক নিয়ম (Octet Rule):

প্রতিটি মৌলেই তার সর্বশেষ শক্তিস্তরে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাসের প্রবণতা দেখায়। “ অণু গঠনকালে কোনো মৌল ইলেকট্রন গ্রহণ-বর্জন অথবা ভাগাভাগির মাধ্যমে তার সর্বশেষ শক্তিস্তরে ৮টি করে ইলেকট্রন ধারণের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে। একেই অষ্টক নিয়ম বলা হয়।

ব্যাখ্যা (Explanation):

যৌগের রাসায়নিক সংকেত (Chemical formula of compounds)

মিথেন (CH_4)

CH_4 অণুতে কেন্দ্রীয় পরমাণু কার্বনের সর্বশেষ শক্তিস্তরে 8টি ইলেকট্রন বিদ্যমান যেখানে 4টি ইলেকট্রন কার্বনের নিজস্ব আর বাকি চারটি  ইলেকট্রন হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে আসে। এভাবে পরমাণুসমূহ তার সর্বশেষ শক্তিস্তরে ইলেকট্রন ভাগাভাগি আদান-প্রদানের মাধ্যমে 8টি ইলেকট্রন ধারণ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভের মাধ্যমে যৌগ গঠনের পদ্ধতিকে অষ্টক নিয়ম বলে।

Note:

  1. হিলিয়াম (He) ছাড়া সকল নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ শক্তিস্তরে ৮টি করে ইলেকট্রন বিদ্যমান।
  2. পর্যায় সারণির 1-20 পর্যন্ত মৌলগুলো ‘অষ্টক’ নিয়ম ভালোভাবে অনুসরণ করে।

অষ্টক নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম (Exceptions of Octet Rule):

SF_4,PCl_5,BF_3, LiF উক্ত যৌগগুলো অষ্টক নিয়ম মেনে চলে না। 

SF_4, অষ্টক নিয়ম না মানার কারণ :-

\Rightarrow S(16)=1s^22s^22p^63s^23p^4\\</span> <span style="color: #000000;">F(9)=1s^22s^22p^5 

বিভিন্ন মৌলের পরমাণুসমূহ নিজেদের মধ্যে ইলেকট্রন আদান-প্রদান এবং শেয়ারের মাধ্যমে পরমাণুসমূহের  শেষ শক্তিস্তরে আটটি ইলেকট্রনের বিন্যাস লাভ করে। একে অষ্টক নিয়ম বলে।

SF_4 যৌগে 1টি সালফার পরমাণু 4টি ফ্লোরিন পরমাণুর সাথে ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে যৌগ গঠন করে। ফলে, প্রতিটি F পরমাণুর অষ্টক পূর্ণ হলেও S এর সর্বশেষ শক্তিস্তরে 10টি ইলেকট্রন পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ‘S’ পরমাণু যৌগ গঠনে অষ্টক নিয়ম অনুসরণ করেনি। একে অষ্টক সম্প্রসারণ বলে।

দুই-এর নিয়ম (Duet Rule):

সংজ্ঞা (Definition): নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর সর্বশেষ শক্তিস্তরে যেমন ২টি বা ৮টি করে ইলেকট্রন বিদ্যমান। তেমনি অণু গঠনে কোনো পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তরে এক বা একাধিক জোড়া ইলেকট্রন বিদ্যমান থাকবে, এটিই দুই এর নিয়ম।

যৌগের রাসায়নিক সংকেত (Chemical formula of compounds)

ব্যাখ্যা (Explanation): BeCl_2 অণুর কেন্দ্রীয় পরমাণু Be এর সর্বশেষ শক্তিস্তরে ২ জোড়া অর্থাৎ 4টি ইলেকট্রন বিদ্যমান। Cl এর সর্বশেষ শক্তিস্তরে 4 জোড়া অর্থাৎ ৪টি ইলেকট্রন বিদ্যমান এসকল পরমাণু দুই এর নিয়ম অনুসরণ করছে। 

অর্থাৎ, অণুতে যেকোনো পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তরে এক বা একাধিক জোড়া ইলেকট্রন অবস্থান করবে।

Note:

  1. পর্যায় সারণির 1-20 পর্যন্ত মৌলসমূহ দুই এর নিয়ম ভালোভাবে অনুসরণ করে।
  2. অষ্টক নিয়মের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে বিজ্ঞানীরা ‘দুই’ এর নিয়ম উপস্থাপন করেন।

নিষ্ক্রিয় গ্যাস ও এর স্থিতিশীলতা (Inert gases and their stability):

He(2)→1s2\\ Ne(10)\rightarrow 1s^22s^22p^6\\ Ar(18)\rightarrow 1s^22s^22p^63s^23p^6\\ Kr(36)\rightarrow 1s^22s^22p^63s^23p^63d^{10}4s^24p^6\\ Xe(54)\rightarrow 1s^22s^22p^63s^23p^63d^{10}4s^24p^64d^{10}5s^25p^6\\ Rn(86)\rightarrow 1s^22s^22p^63s^23p^63d^{10}4s^24p^64d^{10}4f^{14}5s^25p^65d^{10}6s^26p^6

নিষ্ক্রিয় গ্যাসসমূহের ইলেকট্রন বিন্যাসে দেখা যায় যে,

  • হিলিয়ামের সর্বশেষ শক্তিস্তরে ২টি ইলেকট্রন রয়েছে। হিলিয়ামের সর্বশেষ শক্তিস্তর পূর্ণ করতে ২টি ইলেকট্রনই প্রয়োজন, কাজেই এর ইলেকট্রন বিন্যাস স্থিতিশীল।
  • অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাসের বেলায় তাদের সর্বশেষ শক্তিস্তরে ৮টি (ns^2np^6) করে ইলেকট্রন বিদ্যমান। কোনো মৌলের সর্বশেষ শক্তিস্তরে ৮টি করে ইলেকট্রন থাকলে তারা সর্বাধিক স্থিতিশীলতা অর্জন করে।
  • অন্যান্য মৌল স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য সর্বশেষ শক্তিস্তরে দ্বিত্ব বা অষ্টক পূরণ করতে চায়। এজন্য তারা সর্বশেষ শক্তিস্তরে ইলেকট্রন গ্রহণ, আদান-প্রদান বা ভাগাভাগি করে যৌগ গঠন করে।

ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন (Cation and Anion)

ক্যাটায়ন (Cation): ধনাত্মক চার্জযুক্ত পরমাণুকে ক্যাটায়ন বলে।

ব্যাখ্যা (Explanation): একটি আধান নিরপেক্ষ পরমাণুর বাইরের শক্তিস্তর থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রন সরিয়ে নিলে পরমাণুটি আর আধান নিরপেক্ষ থাকবে না। এটি সামগ্রিকভাবে ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট  আয়নে পরিণত হবে।

যে সকল মৌলের শেষ শক্তিস্তরে কম সংখ্যাকে ইলেকট্রন থাকে সে সকল মৌলের ইলেকট্রন ঐ পর্যায়ের অন্যান্য মৌলের তুলনায় নিউক্লিয়াস থেকে দূরে অবস্থানের কারণে নিউক্লিয়াসের সাথে দূর্বলভাবে আকর্ষিত হয় এবং ইলেকট্রন অপসারণ করে দুই বা অষ্টক পূর্ণ করতে চায়।

যৌগের রাসায়নিক সংকেত (Chemical formula of compounds)

চিত্র:- লিথিয়াম ক্যাটায়ন (Li^+)

Li পরমাণু তার সর্বশেষ শক্তিস্তরের একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিলিয়াম (He) এর ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জনের মাধ্যমে Li ক্যাটায়ন (Li^+) গঠন করে।

অ্যানায়ন (Anion): ঋণাত্মক চার্জযুক্ত পরমাণুকে অ্যানায়ন বলে।

ব্যাখ্যা (Explanation): যে সকল মৌলের শেষ শক্তিস্তরে অষ্টক অপেক্ষা সাধারণত 1, 2 বা 3 টি ইলেকট্রন কম থাকে তারা সেই সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে সহজেই নিষ্ক্রিয় গ্যাসের স্থিতিশীল ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে। অন্যভাবে বলা যায়, তাদের ইলেকট্রন আসক্তির মান বেশি। ইলেকট্রন গ্রহণের ফলে এদের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ধনাত্মক প্রোটন সংখ্যার চেয়ে ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট e এর সংখ্যা বেশি হয়। ফলে সামগ্রিকভাবে অধাতব পরমাণুসমূহ ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট হয়। এভাবে ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট অধাতব পরমাণুকে অ্যানায়ন বলে।

যেমন :

যৌগের রাসায়নিক সংকেত (Chemical formula of compounds)

ক্লোরিন (Cl) পরমাণু একটি ইলেকট্রন গ্রহণ আধানবিশিষ্ট নিষ্ক্রিয় গ্যাস আর্গনের (Ar) ইলেকট্রন বিন্যাস লাভের মাধ্যমে ক্লোরাইড (Cl) আয়ন তৈরি করে।