তড়িৎ বিভব (Electric potential), বিভব শক্তির একক, বিভব পার্থক্য এবং সমবিভব তল এর বিস্তারিত আলোচনা
তড়িৎ বিভব কাকে বলে?
চার্জের আদান-প্রদান বস্তু দুটি বস্তুর মধ্যে চার্জের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না, বস্তু দুটির মধ্যে বিশেষ এক তড়িৎ অবস্থার ওপর নির্ভর করে। এ অবস্থাকে বলা হয় তড়িৎ বিভব। তড়িৎ বিভবের পার্থক্য থাকলেই কেবল চার্জের আদান-প্রদান হবে, অন্যথায় নয়। তড়িৎ বর্তনীতে দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভব পার্থক্য থাকার কারণেই তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়।
“দুটি চার্জিত বস্তুর মধ্যে চার্জের আদান-প্রদান যে তড়িৎ অবস্থার দ্বারা নির্ধারিত হয়, তাকে তড়িৎ বিভব বলে(Electric potential)।”
তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে স্থাপিত চার্জ এর বিভর শক্তিকে চার্জ দ্বারা ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায় তাকে ওই বিন্দুর তড়িৎ বিভব বলে।
এখন ধরা যাক A বিন্দু অসীম দূরত্বে অবস্থিত। অসীম দূরত্বে বিভব =0 ধরা হয়। সুতরাং ওপরের সমীকরণে =0 বসিয়ে এবং উপচিহ্নগুলো তুলে নিলে পাওয়া যায়,
বা,
অতএব, এই সমীকরণটি থেকে বিভবের আর একটি গাণিতিক সংজ্ঞা দেয়া যায়।
তড়িৎ বিভব বা বিভব কাকে বলে?
তড়িৎ বিভব কাকে বলে? – অসীম দূর হতে একটি একক ধন চার্জকে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কাজ সাধিত হয় তাকে উক্ত ক্ষেত্রের দরুন ওই বিন্দুর বিভব বা তড়িৎ বিভব(Electric potential) বলে। একে V দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
মনে করি কোনো বিন্দুতে তড়িৎ বিভব = V। অতএব অসীম দূরত্ব হতে একক ধন চার্জকে উক্ত বিন্দুতে আনতে V পরিমাণ কাজ সাধিত হবে। এখন যদি বহু দূর হতে এ পরিমাণ চার্জকে ওই বিন্দুতে আনা হয়, তবে কাজের পরিমাণ হবে,
কাজ = বিভবচার্জ
অর্থাৎ
অর্থাৎ
যেহেতু একক ধন চার্জ স্থানান্তরে কৃত কাজ দ্বারা বিভব পরিমাপ করা হয়, কাজেই কাজের ন্যায় বিভবেরও অভিমুখ নেই, কেবল পরিমাণ আছে। তাই তড়িৎ বিভব একটি স্কেলার রাশি। ঋণ চার্জ ও একক ধন চার্জের মধ্যকার আকর্ষণই কাজ করবে। সুতরাং ঋণ চার্জের জন্য বিভব ঋণ রাশি হবে।
বিভব শক্তির একক (Electric potential Unit):
এস. আই. (S. I.) পদ্ধতিতে বিভব শক্তির একক জুল, চার্জের একক কুলম্ব। সুতরাং তড়িৎ বিভবের একক
(Joule/Coulomb)
তড়িৎ বিভবের এই জুল/কুলম্ব একককে ভোল্ট বলে।
-
1 ভোল্ট বিভব (1 Volt Voltage):
অসীম দূরত্ব হতে 1 কুলম্ব ধন-চার্জকে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যদি 1 জুল কাজ করতে হয় তবে ওই বিন্দুর বিভবকে 1 ভোল্ট বলে।
- তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্য শূন্য হলে ওই বিন্দুতে তড়িৎ বিভব কী শূন্য হবে?
তড়িৎ প্রাবল্য ও বিভবের মধ্যে সম্পর্ক হলো, । এখন V ধ্রুব হলে , অর্থাৎ E = 0।
সুতরাং E শূন্য হলে V ধ্রুব হবে। যেমন ফাঁপা চার্জিত পরিবাহীর অভ্যন্তরে সর্বত্র V ধ্রুব; কিন্তু E শূন্য। তবে ওই পরিবাহী অচার্জিত হলে V-ও শূন্য হবে। অতএব, তড়িৎ প্রাবল্য শূন্য হলে তড়িৎ বিভব শূন্য হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে।
চার্জগ্ৰস্ত গোলকের বিভব (Potential of a charged sphere)
মনে করি A একটি গোলক [চিত্র]। এর ব্যাসার্ধ =r। গোলকে +q পরিমাণ চার্জ প্রদান করলে তা গোলকের তলে সমভাবে ছড়িয়ে পড়বে। গোলকের তল হতে বলরেখাসমূহ লম্বভাবে সব দিকে সরলরেখায় গমন করবে। এই রেখাগুলোকে পিছনের দিকে বর্ধিত করলে তারা গোলকের কেন্দ্রে মিলিত হবে। এখন যদি ধরে নেই যে, +q পরিমাণ চার্জ গোলকের কেন্দ্রে অবস্থিত আছে, তবে একই রকম বলরেখা গোলকের তল দিয়ে চারদিকে বের হয়ে যাবে [চিত্র]। অতএব যে-কোনো দিক হতেই বিবেচনা করা হোক না কেন +q পরিমাণ চার্জ গোলকের কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত ধরা যায়। সুতরাং গোলকের পৃষ্ঠে P একটি বিন্দু নিলে ওই বিন্দুতে তার বিভব হবে,
বায়ু মাধ্যমে এবং তড়িৎ প্রাবল্য,
কিন্তু গোলকের পৃষ্ঠের চার্জের তল ঘনত্ব, ; এখানে, A = গোলকের ক্ষেত্রফল ।
তড়িৎ প্রাবল্য,
বা, তড়িৎ প্রাবল্য
গোলকের অভ্যন্তরে সর্বত্র বিভব এর পৃষ্ঠের বিভবের সমান। কেননা গোলকের পৃষ্ঠে বিভব V এবং অভ্যন্তরে কোন বিন্দুতে বিভব হলে, প্রাবল্য দূরত্ব = 0 । যেহেতু গোলকের অভ্যন্তরে প্রাবল্য শূন্য,
। অতএব গোলকের পৃষ্ঠে বা অভ্যন্তরে বিভব,
গোলকের চারপাশের মাধ্যমের পরাবৈদ্যুতিক বা ডাই-ইলেকটিক ধ্রুবক k হলে,
বায়ু মাধ্যমে গোলকের কেন্দ্র হতে দূরত্বে যে কোনো বিন্দুতে বিভব, । চিত্রে দূরত্বের সাথে V এর পরিবর্তন দেখানো হয়েছে।
- একই ব্যাসার্ধের ফাঁপা ধাতব গোলক ও নিরেট ধাতব গোলক উভয়কে একই তড়িৎ বিভবে চার্জিত করলে কোনটি বেশি চার্জ ধারণ করবে?
কোনো ধাতব গোলকে চার্জ প্রদান করলে তা বাইরের পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে। তাই ধাতব গোলকের চার্জ ধারকত্ব এর ফাঁপা বা নিরেট হওয়ার ওপর নির্ভর করে না। এই কারণে একই ব্যাসার্ধের ফাঁধা ধাতব গোলক ও নিরেট ধাতব গোলক উভয়কে একই তড়িৎ বিভবে চার্জিত করলে উভয়ে সমানে চার্জ ধারণ করবে।
- কোনো গোলকের অভ্যন্তরে যে কোনো বিন্দুর বিভব পৃষ্ঠের বিভবের সমান হয় কেন?
চার্জিত গোলকের অভ্যন্তরে কোনো বলরেখা এবং তড়িৎ প্রাবল্য থাকে না। তাই অসীম হতে গোলকের পৃষ্ঠ পর্যন্ত ধনাত্মক চার্জকে আনতে যে পরিমাণ কাজ করতে হয়, অসীম হতে গোলকের অভ্যন্তরে যে কোনো বিন্দুতে নিতে একই পরিমাণ কাজ করতে হয়। এই কারণেই তড়িৎ বিভবের সংজ্ঞানুসারে, কোনো গোলকের অভ্যন্তরে যে কোনো বিন্দুর বিভব পৃষ্ঠের বিভবের সমান।
বিভব পার্থক্য কি (What is Potential difference?)
তড়িৎ ক্ষেত্রের দুটি বিন্দুর মধ্যে তড়িৎ বিভবের ব্যবধানকে বিভব পার্থক্য বা বিভব বৈষম্য বলে।
অথবা, তড়িৎ ক্ষেত্রের এক বিন্দু হতে অপর বিন্দুতে একটি একক ধন চার্জকে স্থানান্তর করতে যে পরিমাণ কাজ সাধিত হয় তাকে ওই দুই বিন্দুর মধ্যকার বিভব পার্থক্য বলে।
তড়িৎ ক্ষেত্রের একটি বিন্দু হতে অপর একটি বিন্দুতে একক ধন চার্জকে আনতে যে পরিমাণ কাজ করা হয় তাই ওই দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্যের পরিমাপ। কাজেই দুটি বিন্দুর বিভব যথাক্রমে ও হলে ওই দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য ও সম্পাদিত কাজের মধ্যে সম্পর্ক হলো—
বিভব পার্থক্য ∆V এবং অনেক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র V দ্বারাও প্রকাশ করা হয়। এর একক ভোল্ট ।
ইলেকট্রন ভোল্ট (Electron volt)
তড়িৎ ক্ষেত্রের দুটি বিন্দুর বিভব পার্থক্য যদি 1V হয় এবং একটি মুক্ত ইলেকট্রন এক বিন্দু হতে অপর বিন্দুতে গতিশীল হলে যে গতিশক্তি অর্জন করে তাকে 1 ইলেকট্রন ভোল্ট বা সংক্ষেপে বলে।
সুতরাং, টি ইলেকট্রনের আধান
এক ইলেকট্রন ভোল্টের 10 লক্ষ গুণ অর্থাৎ 106 গুণ বড় একককে মেগা ইলেকট্রন ভোল্ট বা মিলিয়ন ইলেকট্রন ভোল্ট বলে।
পৃথিবীর বিভব (Potential of the earth)
কোনো বস্তুর বিভব পরিমাপের সময় পৃথিবীর বিভব শূন্য ধরে এর সাপেক্ষে ওই বস্তুর বিভব তুলনা করা হয়। পৃথিবী একটি বিরাট তড়িৎ পরিবাহী বস্তু। কোনো ঋণচার্জে চার্জিত বস্তুকে পরিবাহী দ্বারা পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত করলে বস্তু থেকে ইলেকট্রন পৃথিবী তথা মাটিতে প্রবাহিত হয়ে বস্তুটি চার্জহীন হয়ে পড়ে। আবার ধনচার্জে চার্জিত বস্তুকে পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত করলে পৃথিবী হতে ইলেকট্রন বস্তুতে প্রবাহিত হয়ে বস্তুটিকে চার্জহীন করে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বস্তু হতে পৃথিবী চার্জ গ্রহণ বা বিভিন্ন বস্তুতে চার্জ প্রদান করছে। কিন্তু পৃথিবী একটি বিরাট পরিবাহী বলে এর চার্জের কোনো পরিবর্তন হয় না। ফলে বিভবেরও কোনো পরিবর্তন হয় না। পৃথিবীর বিভব চার্জহীন বস্তুর মতো (শূন্য) ধরা হয়।
তড়িৎ প্রাবল্য এবং তড়িৎ বিভবের মধ্যে সম্পর্ক (Relation between electric intensity and electric potential)
তড়িৎ বিভব কাকে বলে? বিভব কাকে বলে? আলোচনার পর এখন জেনে নেওয়া যাক তড়িৎ প্রাবল্য এবং তড়িৎ বিভবের মধ্যে সম্পর্কঃ
[চিত্র : ২.১০]
মনে করি A এবং B তড়িৎ ক্ষেত্রের মধ্যস্থিত নিকটবর্তী দুটি বিন্দু [চিত্র] । মনে করি A বিন্দুর তড়িৎ বিভব এবং বিন্দুর তড়িৎ বিভব । যদি হয়, তবে বিভব পার্থক্য
এখন A এবং B বিন্দু নিকটবর্তী হওয়ায় বিন্দু দুটিতে প্রাবল্য একই হবে গণ্য করা যায়। ধরি প্রাবল্য = E
∴ একক ধন চার্জকে B হতে A বিন্দুতে আনতে কাজের পরিমাণ
কিন্তু একক ধন চার্জকে B হতে A বিন্দুতে আনতে কাজের পরিমাণ উক্ত বিন্দু দুটির বিভব পার্থক্যের সমান।
∴ আমরা পাই, বা,
যদি এবং বিন্দুর মধ্যে দূরত্ব হয়, তবে
ক্যালকুলাসের সাহায্যে একে লেখা যায়,
এখানে ঋণ চিহ্ন নির্দেশ করে যে, বিভব বৃদ্ধির জন্য একটি ধনাত্মক চার্জকে তড়িৎ ক্ষেত্রের বিপরীত দিকে সরণ ঘটাতে হবে।
উপরোক্ত সমীকরণ হতে বলা যায় যে, বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর তড়িৎ প্রাবল্য ওই বিন্দুতে দূরত্ব সাপেক্ষে বিভবের পরিবর্তনের হারের সমান।
উল্লেখ্য (Note):
- কে বিভবের নতিমাত্রা (potential gradient) বলে।
- প্রাবল্যের সমীকরণ অনুসারে E এর এস. আই. একক ভোল্ট/মিটার ।
- অতএব তড়িৎ প্রাবল্য E-এর দুটি একক রয়েছে। যথা- নিউটন/কুলম্ব এবং ভোল্ট/মিটার ।
আধান ঘনত্ব এবং তড়িৎ প্রাবল্যের মধ্যে সম্পর্ক (Relation between charge density and electric intensity)
পরিবাহীর পৃষ্ঠের কোনো বিন্দুর চারদিকে প্রতি একক ক্ষেত্রফলের উপরস্থ আধানের পরিমাণকে ওই বিন্দুর আধান ঘনত্ব (charge density) বলে। একে আধানের তলমাত্রিক ঘনত্বও বলে।
কোনো তলের ক্ষেত্রফল এবং ওই তলে মোট আধানের পরিমাণ হলে উক্ত তলে আধান ঘনত্ব, আধান ঘনত্বের একক কুলম্ব/মিটার।
মনে করি একটি গোলক তড়িৎ মাধ্যমাঙ্কবিশিষ্ট কোনো মাধ্যমে অবস্থিত। একটি গোলাকার পরিবাহীর পৃষ্ঠে পরিমাণ চার্জ সুষমভাবে বন্টিত থাকলে তা ওই গোলকের কেন্দ্রে স্থাপিত বলে ধরে নেওয়া যায়। গোলকের ব্যাসার্ধ হলে এর পৃষ্ঠে তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য
পরিবাহীর ক্ষেত্রফল এবং আধান ঘনত্ব
উপরোক্ত সমীকরণে -এর মান বসিয়ে পাই,
কোনো মাধ্যমের ভেদনযোগ্যতা হলে
বায়ু বা শূন্য মাধ্যমে হলে
বিন্দু চার্জের জন্য তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে তড়িৎ বিভব ও তড়িৎ ক্ষেত্রের মধ্যে সম্পর্ক (Relation between electric potential at a point in the electric field due to a point charge and electric field)
মনে করি বায়ু মাধ্যমে একটি বিন্দু [চিত্র]। উক্ত বিন্দুতে পরিমাণ ধন চার্জ রাখা হয়েছে। এই চার্জের দরুন হতে দূরত্বে বিন্দুতে বিভব নির্ণয় করতে হবে। A P যোগ করি ও বর্ধিত করি। বর্ধিত রেখার ওপর P ও R কাছাকাছি দুটি বিন্দু Q ও R নেয়া যাক। মনে করি A হতে Q. ও R-এর দূরত্ব যথাক্রমে t ও । এখন চার্জের দরুন Q বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্য,
কিন্তু Q ও R কাছাকাছি দুটি বিন্দু হওয়ায় দূরত্বের সর্বত্র তড়িৎ প্রাবল্য ধরা যায়।
একক ধন চার্জকে R হতে Q-তে আনতে কাজের পরিমাণ =-বল সরণ =-প্রাবল্যসরণ
বা, [ প্রাবল্য এবং সরণ বিপরীতমুখী হওয়ায় বিয়োগ চিহ্ন হলো। ]
সুতরাং একক ধন চার্জকে অসীম দূরত্ব হতে P বিন্দুতে আনতে কাজের পরিমাণ নির্ণয় করতে হলে উপরোক্ত সমীকরণকে x=r ও এই সীমার মধ্যে সমাকলন করতে হবে।
মোট কাজের পরিমাণ,
বা,
কিন্তু অসীম দূরত্ব হতে একক ধন চার্জকে p বিন্দুতে আনতে কাজের পরিমাণই হলো p বিন্দুর বিভব,
বায়ু বা শূন্য মাধ্যমের ক্ষেত্রে K=1 হয়।
সেক্ষেত্রে,
তবে চার্জ যদি বায়ু বা শূন্য মাধ্যম ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে অবস্থিত হয়,
সেক্ষেত্রে বিভব,
এই সমীকরণ দুটি হলো তড়িৎ বিভব ও তড়িৎ ক্ষেত্রের মধ্যে সম্পর্ক। এখানে কে মাধ্যমের পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক বলে।
একাধিক চার্জের জন্য সৃষ্ট মোট বিভব:
যদি শূন্য মাধ্যমে A হতে দূরত্বে যথাক্রমে , চার্জ থাকে তবে সেগুলোর জন্য A বিন্দুতে মোট বিভব হবে চার্জগুলোর জন্য A বিন্দুতে সৃষ্ট পৃথক পৃথক বিভবের সমষ্টির সমান।
[শূন্য বা বায়ু মাধ্যমে]
বা,
[শূন্য বা বায়ু মাধ্যম ছাড়া অন্য মাধ্যমে]
সমবিভব তল (Equipotential surface)
ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র বিভব সমান (শূন্য) কারণ ভূপৃষ্ঠ একটি তড়িৎ পরিবাহী। তড়িৎ পরিবাহীর পৃষ্ঠে বিভব পার্থক্য থাকা সম্ভব নয় কারণ বিভব পার্থক্যের নতিমাত্রা (gradient) থাকলে পৃষ্ঠে একটি তড়িৎ ক্ষেত্র কাজ করবে এবং পৃষ্ঠের ইলেকট্রনগুলি ওই তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রভাবে নিজেদের এরূপভাবে পুনর্বণ্টন করবে যাতে তড়িৎ ক্ষেত্র লোপ পায়। পরিবাহীর মোট আধান ধনাত্মক কি ঋণাত্মক হোক কিংবা পরিবাহী তড়িৎবিহীন হোক অথবা কোনো বস্তুর সাপেক্ষে পরিবাহীর প্রকৃত বিভব যাই হোক না কেন, সর্বক্ষেত্রে পৃষ্ঠের বিভব সর্বত্র সমান হবে।
তাই বলা যায় কোনো তল বা আয়তন যদি এরূপ হয় যে, তার বিভব সর্বত্র সমান, তবে ওই তল বা আয়তনকে সমবিভব তল বা আয়তন বলে।
একটি বিন্দু চার্জ হতে দূরত্বের যে কোনো বিন্দুতে তড়িৎ বিভবের রাশিমালা
ওই বিন্দু চার্জ হতে সমবিভব তলের দূরত্ব যত বেশি হবে বিভবের মান তত কম হবে।
যেহেতু একটি সমবিভব তলের সকল বিন্দুতে বিভব সমান, ফলে ওই তলের যে কোনো দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য শূন্য। আবার, বিভব পার্থক্য শূন্য হলে কাজও শূন্য হবে। সুতরাং কোনো চার্জকে সমবিভব তলের এক বিন্দু হতে অন্য বিন্দুতে নিতে কোনো কাজ করতে হয় না। সমবিভব তলের যে কোনো বিন্দুতে তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য বা তড়িৎ প্রাবল্য ওই তলের সাথে লম্বভাবে ক্রিয়া করে।
- একটি সমবিভব তলের এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক চার্জ সরালে কৃত কাজ কত হবে—ব্যাখ্যা কর।
সমবিভব তলের যে কোনো দুটি বিন্দুর বিভব সমান। সুতরাং ওই বিন্দু দুটির বিভব পার্থক্য শূন্য। বিভব পার্থক্যের সংজ্ঞানুযায়ী এক বিন্দু হতে অন্য বিন্দুতে একটি একক ধন চার্জকে সরালে কৃত কাজ উক্ত বিন্দুদ্বয়ের বিভব পার্থক্যের সমান। সুতরাং একটি সমবিভব তলের এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক চার্জ সরালে বিভব পার্থক্য শূন্য হওয়ায় কৃত কাজের পরিমাণ শূন্য হবে।
সমবিভব তলের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of equipotential surface) :
(i) তড়িতাহিত পরিবাহীর তল সর্বদা সমবিভব তল। এই তলের ওপর তড়িৎ আধানগুলি স্থির থাকে।
(ii) তড়িৎ বলরেখা সমবিভব তলকে সমকোণে ছেদ করে।
(iii) সমবিভব তলের ওপর কোনো তড়িতাধানকে এক বিন্দু হতে অপর বিন্দুতে স্থানান্তরিত করতে কোনো কাজ হয় না।
(iv) কোনো বস্তুর তল বা আয়তন সমবিভবসম্পন্ন হতে পারে; আবার শূন্য দেশস্থ (in space) কোনো তল বা আয়তনও সমবিভবসম্পন্ন হতে পারে।
- চার্জিত পরিবাহীর পৃষ্ঠ সমবিভব তল হওয়ায় ওই তলের ওপর চার্জগুলো স্থির থাকে—ব্যাখ্যা কর।
ধরা যাক, চার্জিত পরিবাহীর দুটি বিন্দুতে বিভব পার্থক্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে উচ্চ বিভবের বিন্দু থেকে নিম্ন বিভব বিন্দুতে চার্জ প্রবাহিত হবে। এই তড়িৎ প্রবাহ চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না বিন্দু দুটির বিভব সমান হয়। বিভব সমান হলে এই প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ চার্জ স্থির হয়ে যাবে। সুতরাং চার্জিত পরিবাহীর পৃষ্ঠ একটি সমবিভব তল, তাই ওই তলের ওপর চার্জ স্থির থাকে।
এই নোটটি আরও ভালোভাবে বুঝতে দেখে নিতে পার আমাদের এই ভিডিওটিঃ
এইচএসসি পরীক্ষার পদার্থবিজ্ঞানের ২য় পত্রের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো দেখতে ক্লিক করো নিচের লিংকগুলোতেঃ
- তাপগতিবিদ্যা
- স্থির তড়িৎ
- চল তড়িৎ
- ভৌত আলোকবিজ্ঞান
- আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা
- সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রনিকস