পত্ররন্ধ্র এবং গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্র (Foliage and Ground tissue system)
পত্ররন্ধ্রের চিত্র
পত্ররন্ধের প্রকারভেদ (Types of foliage)
১) Diacytic : স্টোমা দুটি সাবসিডিয়ারি কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। কোষ দু’টি রক্ষীকোষের সাথে সমকোণে অবস্থিত।
২) Paracytic : স্টোমা দুটি সাবসিডিয়ারি কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। কোষ দুটি রক্ষীকোষে সমান্তরালভাবে অবস্থিত।
৩) Anisocytic : স্টোমা তিনটি সাবসিডিয়ারি কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে, তার মধ্যে একটি কোষ ছোট।
8) Tetracytic : স্টোমা চারটি সাবসিডিয়ারি কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে।
৫) Actinocytic : স্টোমা অনেকগুলো রেডিয়েলি লম্বা কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে।
৬) Anomocytic : স্টোমাকে পরিবেষ্টনকারী কোষসমূহ সাধারণ ত্বকীয় কোষ থেকে পৃথকযোগ্য নয়।
পত্ররন্ধ ও পানি-পত্ররন্ধ্র-এর মধ্যে পার্থক্য (The difference between foliage and water foliage)
পার্থক্যের বিষয় | পত্ররন্ধ্র | পানি-পত্ররন্ধ্র |
১. অবস্থান | পাতার উর্ধ্ব ও নিম্ন ত্বকে। | পাতার কিনারায় |
২. পানি নির্গমনের সময় | দিনের আলোতে বেশি হয়। | রাত্রে বেশি হয়। |
৩. পানি নির্গমন পদ্ধতি | বাম্পাকারে নির্গত হয়। | তরলাকারে নির্গত হয়। |
৪. খনিজ লবণের
মুক্তি |
পানির সাথে খনিজ লবণের মুক্তি ঘটে না। | পানির সাথে খনিজ লবণের মুক্তি ঘটে। |
৫. এপিথেলিয়াম | নেই | আছে। |
৬. নিয়ন্ত্রণ | রক্ষীকোষ দ্বারা নিয়ন্ত্রণশীল। | রক্ষীকোষ দ্বারা নিয়ন্ত্রণশীল নয়। |
গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্র (Ground tissue system)
ত্বকীয় টিস্যু ও পরিবহনতন্ত্র ছাড়া উদ্ভিদদেহের অন্যান্য অংশ গঠনকারী টিস্যুতন্ত্রকে একত্রে গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্র বলে। আদি (fundamental) টিস্যুতন্ত্র নামেও এটি পরিচিত। এক বা একাধিক টিস্যু নিয়ে এই টিস্যুতন্ত্র গঠিত। উদ্ভিদের অধিকাংশ অংশ এই টিস্যুতন্ত্রের অন্তর্গত। সাধারণত প্যারেনকাইমা টিস্যু দিয়ে এই তন্ত্র গঠিত। অনেক সময় প্যারেনকাইমা, কোলেনকাইমা ও স্ক্লেরেনকাইমা- এই তিন প্রকার টিস্যু মিলিতভাবে এই টিস্যুতন্ত্র গঠন করে থাকে। পেরিব্লেম ভাজক টিস্যু হতে এই টিস্যুতন্ত্রের উৎপত্তি।
উদ্ভিদের এপিডার্মিস তথা ত্বক-এর নিচ হতে আরম্ভ করে ভাস্কুলার বান্ডল (vascular bundle) ব্যতীত কেন্দ্র পর্যন্ত এই টিস্যুতন্ত্রের অন্তর্গত। কতক ক্ষেত্রে অধঃত্বক (hypodermis) স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত হয় আর বাকি সবটুকু প্যারেনকাইমা টিস্যু দিয়ে তৈরি। পাতায় এই তন্ত্র শুধু প্যারেনকাইমা দিয়ে গঠিত হয়। সব উদ্ভিদের মূলে এবং দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডে এই টিস্যুতন্ত্রকে প্রধানত স্পষ্ট দু’ভাগে ভাগ করা যায়; যথা : (১) বহিঃস্টিলীয় অঞ্চল (extrastelar region) অর্থাৎ স্টিলীর বাইরের অংশ এবং (২) অন্তঃস্টিলীয় অঞ্চল (intrastelar region) অর্থাৎ স্টিলীর ভেতরের অংশ। এখানে উল্লেখ্য যে, পেরিসাইকল স্তর হতে আরম্ভ করে ভাস্কুলার বান্ডলসহ কেন্দ্র পর্যন্ত। অংশকে স্টিলি (stele) বলে।
গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্রের কাজ
১। বিপাকে সাহায্যকরণ
২। খাদ্য সঞ্চয়
৩। আংশিকভাবে দৃঢ়তা প্রদান।
১। বহিঃস্টিলীয় অঞ্চল
(১) অধঃত্বক (Hypodermis) : ত্বকের নিচে কোলেনকাইমা বা স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যুর এক বা একাধিক স্তর থাকলে তাকে অধঃত্বক বলে। সাধারণত কাণ্ডেই অধঃত্বক থাকে। মূলে অধঃত্বক থাকে না।
কাজ : কাণ্ডকে যান্ত্রিক দৃঢ়তা প্রদান করা এবং ভেতরের অংশকে রক্ষা করাই অধঃত্বকের প্রধান কাজ।
(২) কর্টেক্স (Cortex) : অধঃত্বকের নিচ হতে আরম্ভ করে অন্তঃত্বকের উপর পর্যন্ত অংশকে কর্টেক্স বলে। এটি প্যারেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত এবং বহু স্তরবিশিষ্ট। পাশাপাশি কোষের মধ্যে আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকে। অনেক সময় অন্যান্য টিস্যুও বিক্ষিপ্তভাবে এই অংশে দেখা যায়। মূলের কর্টেক্স বহুস্তর বিশিষ্ট হয়। কাণ্ডের কর্টেক্স কয়েকস্তর বিশিষ্ট হয়।
কাজ : পানি ও খাদ্য সঞ্চয়ই মূলের কর্টেক্সের প্রধান কাজ। কাণ্ডের কর্টেক্স পানি ও খাদ্য সঞ্চয় ছাড়াও উদ্ভিদকে দৃঢ়তা প্রদান করে এবং সালোকসংশ্লেষণে অংশ গ্রহণ করে।
(৩) অন্তঃত্বক (Endodermis) : স্টিলীর বাইরে এবং কর্টেক্সের নিচে এক স্তরবিশিষ্ট অন্তঃত্বক অবস্থিত। মুলে এবং দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ কাণ্ডে অন্তঃত্বক বিদ্যমান। এ স্তরের কোষগুলো ফাকবিহীনভাবে সন্নিবেশিত ও পিপাকৃতির (barrel shaped)। মূলের অন্তঃত্বকীয় কোষের প্রস্থ ও পার্শ্বপ্রাচীর সুবেরিন ও লিগনিন যুক্ত হয়ে সরু ফিতার মতো যে বেষ্টনি সৃষ্টি করে তাকে ক্যাসপেরিয়ান স্ট্রিপ (casperian strip) বলে। বিজ্ঞানী ক্যাসপেরি (Caspary) এটি লক্ষ্য করেন ১৮৬৫ সালে। মূলের অন্তঃত্বকে ক্যাসপেরিয়ান স্ট্রিপ থাকে। অন্তঃত্বকের যেসব কোষগুলোর প্রাচীর পাতলা থাকে তাদের প্যাসেজ সেল বলে। অনেক সময় এ স্তরে প্রচুর শ্বেতসার কণিকা বিদ্যমান থাকতে দেখা যায়, তখন এ স্তরকে শ্বেতসার আবরণ (starch sheath) বলে। সাধারণত দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডে শ্বেতসার আবরণ থাকে।
কাজ : অন্তঃত্বক সম্ভবত খাদ্য সঞ্চয়, ভেতরের অংশকে রক্ষা করা এবং মূলজ চাপ নিয়ন্ত্রণ করায় ভূমিকা রাখে। ভাস্কুলার বান্ডল ও তৎসংলগ্ন কোষগুলো যাতে বায়ু ও পানিতে আবদ্ধ হয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য অন্তঃত্বক বাধের (dam) মতো কাজ করে।
২। অন্তঃস্টিলীয় অঞ্চল
(i) পরিচক্র (Pericycle) : অন্তঃত্বকের নিচে এবং ভাস্কুলার বান্ডলের বারে এক বা একাধিক স্তরে বিন্যস্ত বিশেষ টিস্যুকে পেরিসাইকল বলে। কতক জলজ উদ্ভিদের মূলে বা কাণ্ডে এদের দেখতে পাওয়া যায় না। সাধারণত পেরিসাইকল এক স্তরবিশিষ্ট হয়ে থাকে। শুধু প্যারেনকাইমা টিস্যু অথবা স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু অথবা দুই টিস্যুর মিশ্রণে এ স্তর গঠিত হতে পারে। কুমড়া ও কুমারিকা কাণ্ডে এটি বহু স্তরবিশিষ্ট ও স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত। স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু শুধু ফ্লোয়েমের মাথায় অবস্থান করলে এটিকে হার্ড বাষ্ট বা গুচ্ছটুপি (bundle cap) বলে। এ স্তর হতে সেকেন্ডারি ভাজক টিস্যুর সৃষ্টি হয়।
কাজ : খাদ্য সঞ্চয় ও কাণ্ডকে দৃঢ়তা প্রদান করে। এছাড়া পার্শ্বমূল সৃষ্টি করা এবং কাণ্ডে অস্থানিক মূল সৃষ্টি করা এ অংশের কাজ।
(ii) মজ্জা বা মেডুলা (Pith or Medulla) : পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ দিয়ে পরিবেষ্টিত মূল বা কান্ডের কেন্দ্রস্থলের অংশকে মজ্জা বলে। মজ্জা সাধারণত প্যারেনকাইমা, টিস্যু দিয়ে গঠিত হয়। কখনো কখনো স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত হয়ে থাকে। মজ্জায় সাধারণত পাশাপাশি কোষের মধ্যে ফাঁক থাকে। অনেক সময় কিছু মজ্জাকোষ নষ্ট হয়ে মূল বা কান্ডের কেন্দ্রস্থলে একটি শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয়।
কাজ : খাদ্য সঞ্চয়ই মজ্জার প্রধান কাজ। স্ক্লেরেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত হলে মজ্জা সে অংশকে দৃঢ়তা প্রদান করে থাকে।
(iii) মজ্জা রশ্মি (Medullary ray) : মজ্জা দুটি পরিবহন টিস্যুগুচ্ছের মধ্য দিয়ে রশ্মির ন্যায় পেরিসাইকল পর্যন্ত বিস্তৃত হলে সেই রশ্মির ন্যায় অংশকে মজ্জা রশ্মি বলে। এটি প্যারেনকাইমা টিস্যু দিয়ে গঠিত।
কাজ : পানি ও খাদ্য পরিবহন করা। পানি ও খাদ্যবস্ত সঞ্চয় এবং প্রয়োজনে গৌণ টিস্যু সৃষ্টি করা মজ্জা রশ্মির কাজ।
– পাতার গ্রাউন্ড টিস্যুকে মেসোফিল বলে।
– মেসোফিল অসংখ্য ক্লোরোপ্লাষ্ট ও পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত।
– বিষমপৃষ্ঠ পাতায় মেসোফিল ২ ধরনের-
(i)প্যালিসেড প্যারেনকাইমা (Palisade parenchyma):
– ঘন সন্নিবিষ্ট, লম্বভাবে বিন্যস্ত।
(ii) স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা (Sponge parenchyma):
– অনিয়ত, ডিম্বাকার, কোষাবকাশভাবে বিন্যস্ত।
– সমাঙ্গপৃষ্ঠ পাতায় মেসোফিল টিস্যু শুধু একধরনের প্যারেনকাইমা টিস্যু (হয় স্পঞ্জি, নতুবা প্যালিসেড) নিয়ে গঠিত।