জীবের বংশগতি ও বিবর্তন এবং জেনেটিক ডিসঅর্ডার (Heredity and Evolution of Human and Genetic Disorder)
জীবের বংশগতি ও বিবর্তন (Heredity and evolution of human)
পিতামাতার বৈশিষ্ট্যগুলো বংশানুক্রমে সন্তান সন্ততির দেহে সঞ্চারিত হওয়ার প্রক্রিয়াই হলো বংশগতি।
বংশগতিবস্তু (Hereditary objects)
- ক্রোমোজোম (chromosome)
- ডিএনএ (DNA)
- আরএনএ (RNA)
- জিন (gene)
১. ক্রোমোজোম কাকে বলে? (What is Chromosome?):
- ১৮৭৫ সালে বিজ্ঞানী Strasbuger প্রথম ক্রোমোজোম আবিষ্কার করেন।
- দৈর্ঘ্য →3.5 থেকে 30.00 মাইক্রন (micron)
- প্রস্থ →0.2 থেকে 2.00 মাইক্রন (micron)
- মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে। এদের মধ্যে ২২ জোড়া অটোসোম (autosome)। ১ জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম (sex chromosome)।
চিত্র: ক্রোমোজোম
ক্রোমোজমের কাজ (Work):
- বংশগতির ধারক ও বাহক হিসাবে কাজ করে।
- বংশগতির ভৌত ভিত্তি হিসাবে কাজ করে।
- মানুষের চুলের রং, চামড়ার রং, চুলের প্রকৃতি, চোখের রং, চামড়ার গঠন নির্ধারণ করে।
২. ডিএনএ কী? (What is DNA?)
- ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান হলো ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (deoxyribonucleic acid)।
- DNA দুই সূত্র বিশিষ্ট পলিনিউক্লিওটাইডের (polynucleotide) সর্পিলাকার গঠন (spiral structure)।
- একটি সূত্র অন্যটির পরিপূরক।
চিত্র: DNA
ডিএনএর উপাদান (Materials):
- পাঁচ কার্বনযুক্ত শর্করা।
- নাইট্রোজেন বেস বা ক্ষার। (nitrogen base or alkali)
- অজৈব ফসফেট। (inorganic phosphate)
3. নিউক্লিওটাইড কী? (What is Nucleotide?):
- পাঁচ কার্বনযুক্ত শর্করা, নাইট্রোজেন বেস বা ক্ষার এবং অজৈব ফসফেটকে একত্রে নিউক্লিওটাইড বলে।
নাইট্রোজেন বেস বা ক্ষার | |
পিউরিন | পাইরিমিডিন |
এডিনিন (adinine) (A) |
সাইটোসিন (cytosine) (C) |
গুয়ানিন (guanine) (G) |
থায়ামিন (thymine) (T) |
ডিএনএ বেস সংযুক্তি (Base attachment):
- একটি সূত্রের এডিনিন অন্য সূত্রের থায়ামিন (T) এর সাথে ২টি হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে যুক্ত থাকে। যেমন- A=T
- একটি সূত্রের গুয়ানিন অন্য সূত্রের সাইটোসিনের সাথে ৩টি হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে যুক্ত থাকে। যেমন- G≡C
- হেলিক্সের প্রতিটি পূর্ণ ঘূর্ণন 34Å দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এবং একটি পূর্ণ ঘূর্ণনের মধ্যে ১০টি নিউক্লিওটাইড জোড়া থাকে।
- পার্শ্ববর্তী ২টি নিউক্লিওটাইডের দূরত্ব 3.4Å ।
- ১৯৫৩ সালে Watson এবং Crick প্রথম DNA অণুর ডাবল হেলিক্স বা দ্বি-সূত্রী কাঠামোর বর্ণনা দেন।
ডিএনএর কাজ (Work):
- DNA ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান এবং বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি।
- DNA জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত ধারক এবং বাহক, যা জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সরাসরি বহন করে মাতা-পিতা থেকে তাদের বংশধরে নিয়ে যায়।
DNA অনুলিপন (DNA replication)
- এই প্রক্রিয়ায় একটি DNA অণু থেকে আরেকটি নতুন DNA অণু তৈরি হয় বা সংশ্লেষিত হয়।
- DNA অর্ধ রক্ষণশীল পদ্ধতিতে অনুলিপিত হয়।
- এই পদ্ধতিতে হাইড্রোজেন বন্ধন (hydrogen bond) ভেঙে গিয়ে DNA সূত্র দুটি আলাদা হয়ে যায়।
- তখন কোষের ভিতর ভাসমান নিউক্লিওটাইডগুলো থেকে A এর সাথে T, T এর সাথে A, C এর সাথে G এবং G এর সাথে C যুক্ত হয়ে সূত্র দু’টি তার পরিপূরক সূত্র তৈরি করে।
- DNA এর দু’টি সূত্রের ভেতর একটি পুরাতন সূত্র রয়ে যায় এবং তার সাথে একটি নতুন সূত্র যুক্ত হয়ে পরিপূর্ণ DNA অণুর সৃষ্টি হয়।
- অর্ধেক নতুন ও অর্ধেক পুরাতন নিয়ে গঠিত বলে একে অর্ধরক্ষণশীল পদ্ধতি বলে।
চিত্র: DNA অনুলিপন
৩. আরএনএ কী? (What is RNA?):
- RNA হলো রাইবোনিউক্লিক এসিড (ribonucleic acid)।
- RNA-তে একটি পলিনিউক্লিওটাইডের (polynucleotide) সূত্র থাকে।
আরএনএর উপাদান (Matrials):
- পাঁচ কার্বন বিশিষ্ট রাইবোজ সুগার (ribose sugar)
- নাইট্রোজেন বেস (nitrogen base)
- অজৈব ফসফেট (inorganic phosphate)
নাইট্রোজেন বেস বা ক্ষার | ||
পিউরিন | পাইরিমিডিন | |
1. এডিনিন (adinine) (A) | 1. সাইটোসিন (cytosine) (C) | |
1. গুয়ানিন (guanine) (G) | 1. থায়ামিন (thymine) (T) |
আরএনএ বেস সংযুক্তি (Base attachment):
- A=U
- G≡C
চিত্র: RNA
৪. জিন কী? (What is Gene?):
জীবের সব দৃশ্য এবং অদৃশ্যমান লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী এককের নাম জিন।
জিনের অবস্থান (location):
জীবের ক্রোমোজোমে।
৫. লোকাস কী? (What is Locus?):
ক্রোমোজোমের যে স্থানে জিন অবস্থান করে তাকে লোকাস বলে বা আরো স্পষ্টভাবে বললে ক্রোমোজোমের যে নির্দিষ্ট স্থানে যে নির্দিষ্ট জিন পাওয়া যায় ,ঐ স্থানটি উক্ত জিনটির লোকাস।
- জিন হচ্ছে বংশগতির নিয়ন্ত্রক।
- DNA→RNA→ প্রোটিন বৈশিষ্ট্য
- জিন দুই প্রকার। যথা:
- প্রকট জিন
- প্রচ্ছন্ন জিন
- গ্রেগর জোহান মেন্ডেলকে বংশগতিবিদ্যার জনক বলা হয়।
মেন্ডেলের পরীক্ষা (Mendel’s test):
T T= লম্বা হওয়ার জন্য দায়ী
t t= খাটো হওয়ার জন্য দায়ী
সুতরাং, F1 ধাপে সবগুলো লম্বা হবে।
প্রকট বৈশিষ্ট্য: প্রকট বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে বৈশিষ্ট্য যেটি প্রথম বংশধরে প্রকাশ পায়।
প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য: যে বৈশিষ্ট্য প্রথম বংশধরে প্রকাশ পায় নাই কিন্তু ২য় বংশধরে 3:1 অনুপাতেপ্রকাশ পায় সেটি হচ্ছে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য।
মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ (Determining human sex):
- মানবদেহে ক্রোমোজোম সংখ্যা ২৩ জোড়া।
- ২২ জোড়া হচ্ছে অটোসোম (autosome) এবং ১ জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম (sex chromosome)।
44 অটোসোম + XY→ ছেলে
44 অটোসোম + XX→ মেয়ে
- নারীদের ডিপ্লয়েড কোষে (diploid cell) ২ টি সেক্স ক্রোমোজোমই x ক্রোমোজোম অর্থাৎ xx। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে দুটির মধ্যে একটি x এবং অপরটি y ক্রোমোজোম অর্থাৎ xy।
- নারীদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু তৈরি করার সময় যখন মিয়োসিস বিভাজন ঘটে, তখন প্রতিটি ডিম্বাণু অন্যান্য ক্রোমোজোমের সাথে একটি করে x ক্রোমোজোম লাভ করে।
- অন্যদিকে পুরুষে শুক্রাণু সৃষ্টির সময় অর্ধেক সংখ্যক শুক্রাণু একটি করে x এবং বাকি অর্ধেক শুক্রাণু একটি করে y ক্রোমোজোম লাভ করে।
- ডিম্বাণু পুরুষের x ও y বহনকারী যেকোনো একটি শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত হতে পারে।
- গর্ভধারণকালে কোন ধরনের শুক্রাণু মাতার x বহনকারী ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় তার উপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ সন্তানের লিঙ্গ।
জেনেটিক ডিসঅর্ডার (Genetic disorder)
(a) কালার ব্লাইন্ডনেস বা বর্ণান্ধতা (Color blindness)
- যখন কেউ কোনো রঙ সঠিকভাবে চিনতে পারে না, তখন তাকে কালার ব্লাইন্ডনেস বা বর্ণান্ধতা বলে।
- আমাদের জেনেটিক ডিসঅর্ডারগুলো x ক্রোমোজোমের কারণে ঘটে থাকে।
- কালার ব্লাইন্ড অবস্থায় রোগীদের চোখে স্নায়ুকোষের রং শনাক্তকারী পিগমেন্টের অভাব থাকে।
- যদি কারো একটি পিগমেন্ট না থাকে তখন সে লাল আর সবুজ পার্থক্য করতে পারে না।
- সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ জনে ১ জনকে কালার ব্লাইন্ড হতে দেখা যায়।
(b) থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia)
- রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার এক অস্বাভাবিক অভাবজনিত রোগের নাম থ্যালাসেমিয়া।
- থ্যালাসেমিয়া একটি অটোসোমাল রিসিসিভ ডিসঅর্ডার। অর্থাৎ, বাবা ও মা উভয়ই এ রোগের বাহক বা রোগী হলে তবেই তা সন্তানে রোগলক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়।
- লোহিত রক্তকোষ দুই ধরনের প্রোটিন দিয়ে তৈরি। যথা-
- 1. α– গ্লোবিউলিন
- 2. β– গ্লোবিউলিন
α – থ্যালাসেমিয়া : যখন α-গ্লোবিউলিন তৈরির জিন অনুপস্থিত থাকে কিংবা ত্রুটিপূর্ণ থাকে তখন তাকে α-থ্যালাসেমিয়া বলে।
β – থ্যালাসেমিয়া : যখন β-গ্লোবিউলিন তৈরির জিন অনুপস্থিত বা ত্রুটিপূর্ণ থাকে তখন তাকে β-গ্লোবিউলিন বলে।