অভ্যন্তরীণ শক্তি | Internal Energy
অভ্যন্তরীণ শক্তির সংজ্ঞা (Internal energy definition)
প্রত্যেক ব্যবস্থা (system)-এর মধ্যে এমন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি আছে যা কাজ সম্পাদন করে অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। বস্তুর মধ্যস্থ অণু-পরমাণুর গতিশক্তি এবং এদের মধ্যকার আন্তঃআণবিক বলের কারণে সৃষ্ট শক্তিতে অভ্যন্তরীণ শক্তি বলে। সংক্ষেপে বলা যায় কোনো সিস্টেমের বা বস্তুর মধ্যে যে শক্তি লুকায়িত বা সুপ্ত অবস্থায় থাকে যা পরিবেশ পরিস্থিতিতে বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তাকে অভ্যন্তরীণ শক্তি(Internal Energy) বলে।
অভ্যন্তরীণ শক্তি(Internal Energy) নিম্নোক্ত দুই ধরনের শক্তির যোগফল।
(ক) তাপীয় শক্তি যা এলোমেলোভাবে (randomly) বিচরণশীল অণুগুলোর গতিশক্তি এবং
(খ) আণবিক স্থিতিশক্তি (atomic potential energy)।
মোট অভ্যন্তরীণ অন্তস্থ শক্তি, E= গতিশক্তি K. E.+ স্থিতিশক্তি (P.E.)
কোনো বস্তুর মোট অভ্যন্তরীণ শক্তি কোনোভাবেই পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তবে তাপ প্রয়োগে বস্তুর অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায়। স্থির তাপে অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন শূন্য হয় এবং কাজও শূন্য হয়।
অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন (Changes in internal energy)
ধরা যাক, ঘর্ষণবিহীন একটি সিলিন্ডারের মধ্যে m মোল আদর্শ গ্যাস আছে। এই গ্যাসের চাপ, আয়তন, তাপমাত্রা এবং অভ্যন্তরীণ শক্তি যথাক্রমে P, V, T এবং u। এখন এই গ্যাসে dQ পরিমাণ তাপ প্রয়োগ করা হলে অভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন du এবং বাহ্যিক কাজ dw হলে,
তাপগতির ১ম সূত্র অনুযায়ী,
dQ=du+dW
বা, dQ=du+PdV
বা, du=dQ-PdV
আয়তন স্থির থাকলে, du=dQ ∵dV=0
∴du=dQ
এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, স্থির আয়তনের গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তির বৃদ্ধি সরবরাহকৃত তাপের সমান।
স্থির আয়তনে m মোল গ্যাসের dQ পরিমাণ তাপশক্তি সরবরাহ করায় যদি এর তাপমাত্রা dT পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে ওই গ্যাসের মোলার আপেক্ষিক তাপ,
C_V=\frac{dQ}{mdT}বা, dQ=mC_VdT, 1 মোল গ্যাসের ক্ষেত্রে m=1
\therefore dQ=C_VdT। অর্থাৎ dT তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে 1 মোল গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তির(Internal Energy) বৃদ্ধি হলো C_V এবং dT এর গুণফলের সমান। এক্ষেত্রে আয়তন স্থির থাকা আবশ্যক নয়। কারণ অভ্যন্তরীণ শক্তি কেবল তাপমাত্রার ওপর নির্ভরশীল।
গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তির নির্ভরতা (Dependence on the internal energy of the gas)
কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তি শুধু এর তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে, এর চাপ বা আয়তনের ওপর নির্ভর করে না। একে মেয়ারের প্রকল্প (Mayer’s hypothesis) বলা হয়।
তাপ, অভ্যন্তরীণ শক্তি ও কাজ (Heat, Internal Energy and Work)
মনে করি C কুপরিবাহী পদার্থের তৈরি একটি ধাতব চোঙ। এখন চোঙের মধ্যে কিছু পরিমাণ গ্যাস ভরে এর মুখ হালকা, ঘর্ষণ মুক্ত ও বায়ু নিরুদ্ধ পিস্টন F দ্বারা বন্ধ করি। ফলে পিস্টন বিনা বাধায় চলাচল করতে পারে। উল্লেখ্য, পিস্টনও কুপরিবাহী পদার্থের তৈরি।
যদি আবদ্ধ গ্যাসের চাপ P এবং পিস্টন কিংবা চোঙের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A হয়, তবে পিস্টনের ওপর গ্যাস কর্তৃক প্রযুক্ত বল F= চাপ X ক্ষেত্রফল বা, F=P×A
মনে করি গ্যাস স্থির চাপে প্রসারিত হলো, ফলে পিস্টনটি B স্থান হতে D স্থানে সরে গিয়ে dx দূরত্ব অতিক্রম করল।
অতএব সম্পাদিত কাজ dW= বল Xসরণ
বা, dW=F\times dx=PAdx
বা, dW=PdV [এখানে A.dx=dV= গ্যাসের প্রসারণজণিত আয়তন বৃদ্ধি]
অর্থাৎ কাজ = চাপ X আয়তনের পরিবর্তন। এই কাজকে বাহ্যিক কাজ (external work) বলে।
[বি. দ্র. গ্যাসের সম্প্রসারণে কৃত কাজ ধনাত্মক এবং সংকোচনে কৃত কাজ ঋনাত্মক]
যদি গ্যাসের প্রাথমিক আয়তন V_1 এবং প্রসারণের পর শেষ আয়তন V_2 হয়, তবে গ্যাস কর্তৃক সম্পাদিত কাজ যদি গ্যাসের প্রাথমিক আয়তন V_1 প্রসারণের পর শেষ আয়তন V_2 হয়, তবে গ্যাসের কর্তৃক সম্পাদিত কাজ dW=P(V_2-V_1)
যদি গ্যাসের আয়তন প্রসারণের সময় চাপও পরিবর্তিত হয়, তবে dW=dPdV=(P_1-P_2)(V_2-V_1)
এখানে, P_1= গ্যাসের আদি চাপ এবং P_2= প্রসারণের পর শেষ চাপ। চাপ Nm^{-2} এবং আয়তন m^3 এককে প্রকাশ করা হলে কাজের একক হবে J (জুল)।
তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র থেকে আমরা জানি কোনো সিস্টেমে dQ পরিমাণ তাপশক্তি সরবরাহ করার ফলে কোনো সিস্টেমের অন্তস্থ শক্তির পরিবর্তন du এবং বাহ্যিক কৃত কাজ dW হলে
dQ=du+dWবা, dQ=du+Pdv
বা, dQ=du+P(V_2-V_1)