10 Minute School
Log in

জাংশন ডায়োডের গঠন ও একমুখীকরণ | Junction diode’s Construction and Rectification 

জাংশন ডায়োডের গঠন (Junction Diode Construction)

একটি p-টাইপ ও একটি n-টাইপ অর্ধপরিবাহীকে বিশেষ ব্যবস্থাধীনে সংযুক্ত করলে সংযোগ পৃষ্ঠকে p-n জাংশন বলে। একটি বিশুদ্ধ অর্ধপরিবাহী কেলাসের এক অর্ধাংশ p-টাইপ অর্ধপরিবাহী এবং অপর অর্ধাংশকে n-টাইপ অর্ধপরিবাহী উচ্চতাপে সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে মিশিয়ে p-n জাংশন তৈরি করা হয়।

p-n সংযোগের দুই পাশে যে সরু তর ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধানকে পৃথক করে রাখে, যেখানে গতিশীল আধান নিঃশেষ হয়ে যায় এবং কোনো গতিশীল আধান বাহকের অস্তিত্ব থাকে না, ওই স্তর বা অঞ্চলকে বলা হয় নিঃশেষিত স্তর বা অঞ্চল (Depletion layer or region)।

জাংশন ডায়োড এর গঠন (Junction Diode Structure)

এই নিশেঃষিত অঞ্চলকে জংশন প্রাচীর বলা হয়। এই জংশনে সামান্য পরিমাণ অভ্যন্তরীণ বিভব পার্থক্য 

সৃষ্টি হয়। ফলে এই অঞ্চলকে অনেক সময় বিভব পার্থক্য অঞ্চল বা বিভব পার্থক্য প্রাচীর বলে। এর মান 

সাধারণত ০.1 থেকে 0.3V। 

ডায়াডে কি কেবল রেকটিফায়ার বর্তনীতে বা AC কে DC করার কাজে ব্যবহৃত হয় না অন্য কোথাও ব্যবহার করা হয় ?

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে টিভি টেলিফোন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ইত্যাদি স্বাভাবিক ব্যবহারিক উপাদানে ডায়োড ব্যবহৃত হয়। এছাড়া AC কে DC করাসহ বেতার ও টিভির মধ্যে সিগন্যাল ডিটেক্টর হিসেবে ডায়াড হয়

ডোপিং করলে অর্ধপরিবাহীর পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায় কেন?

বিশুদ্ধ অর্ধপরিবাহীতে সুবিধাজনক অপদ্রব্য অতি সামান্য পরিমাণে নিয়ন্ত্রিতভাবে মেশানোর প্রক্রিয়া ডোপিং বলে। ডোপিং এর ফলে অর্ধপরিবাহীর পরিবহন ধর্ম বেড়ে যায়। কারণ অর্ধপরিবাহী কেলাসে তখন মুক্ত ইলেকট্রন সংখ্যা বা হোল সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়।

কার্যক্রম (Working process)

বাইরে থেকে p-n-জাংশন বরাবর দুভাবে বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করা যেতে পারে। যথা—সম্মুখবর্তী ঝোঁক বা ফরোয়ার্ড বায়াস ও বিপরীত ঝোঁক বা রিভার্স বায়াস প্রয়োগ।

ক) সম্মুখবর্তী ঝোঁক বা ফরোয়ার্ড বায়াস প্রয়োগ

যখন জাংশনে এমনভাবে বহিঃস্থ ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয় যাতে এটি বিভব প্রাচীর হ্রাস করে তড়িৎ প্রবাহ চালু করে তখন একে সম্মুখবর্তী ঝোঁক প্রয়োগ (forward biasing) বুঝায়। সম্মুখবর্তী ঝোঁক প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্ত p-টাইপের প্রান্তের সঙ্গে এবং ঋণাত্মক প্রান্ত n-টাইপ প্রান্তের সঙ্গে সংযোগ দেয়া হয়।  চিত্রে সম্মুখবর্তী ঝোঁক প্রয়োগ এবং এর ফলে বিভব প্রাচীরের হ্রাস দেখানো হয়েছে। প্রযুক্ত সম্মুখবর্তী বিভব বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র সৃষ্টি করে যা বিভব প্রাচীরের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের বিপরীতে কাজ করে। সুতরাং লদ্ধি ক্ষেত্র কমে যায় এবং প্রাচীরের উচ্চতা বা বিস্তার হ্রাস পায়। যেহেতু বিভব প্রাচীর ভোল্টেজের মান খুবই কম (0.1 থেকে 0.03 V ), সুতরাং সামান্য সম্মুখবর্তী ভোল্টেজ প্রয়োগ করলে বিভব প্রাচীরের প্রশস্ততা হ্রাস পায়। ফলে জাংশনে বাঁধা দূরীভূত হয় এবং তড়িৎ প্রবাহ শুরু হয়। সম্মুখ ঝোকে ব্যাটারীর ধনাত্মক প্রান্ত p-টাইপ বস্তুর সাথে যুক্ত হওয়ায় ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্ত ইলেকট্রনগুলাকে বামে অর্থাৎ p-টাইপ বস্তুর দিকে এবং ঋণাত্মক প্রান্ত n-টাইপের সাথে সংযুক্ত হওয়ায় ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্ত হোলগুলোকে ডানে অর্থাৎ n-টাইপ বস্তুর দিকে টানবে। ইলেকট্রন ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্ত দ্বারা বিকর্ষিত হয়ে p-টাইপের দিকে ধাবিত হয়। একইভাবে ধনাত্মক হোল (hole) ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্ত দ্বারা বিকর্ষিত হয়ে জাংশন অতিক্রম করে n-type বস্তুর দিকে ধাবিত হয়। জাংশনে ইলেকট্রন হোল পরিপূর্ন হয়। ইতোমধ্যে ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্ত n-টাইপ অর্ধ পরিবাহীতে ইলেক্ট্রনের নতুন সরাবরাহ প্রদান করতে থাকে এবং ব্যাটারির ধণাত্মক প্রান্ত p-টাইপ অর্ধপরিবাহী হতে ইলেকট্রন  টেনে নিয়ে নতুন হোল তৈরি করে। ফলে অবিরাম চার্জ তথা বিদ্যুৎ প্রবাহ চলতে থাকে। এই প্রবাহের মান mA ধরণের হয়। এই তড়িৎ প্রবাহকে সম্মুখবর্তী তড়িৎ প্রবাহ (Forward Current) বলে।

Forward bias currentসম্মুখ বায়াসের সময় নিঃশেষিত অঞ্চলে কী ঘটে?

যখন সংযোগটি সম্মুখ বায়াসে থাকে তখন আধান বাহকদের সংখ্যাগুরু অঞ্চল থেকে সংখ্যালঘু অঞ্চলে ব্যাপন হয়—ইলেকট্রন হোলের দিকে ব্যাপিত হয়। সুতরাং হোল ও ইলেকট্রনগুলি নিঃশেষিত অঞ্চলের কাছাকাছি কোথাও মিলিত হয়। ফলে নিঃশেষিত অঞ্চল ক্ষীণ হতে থাকে ও নী-ভোল্টেজের (Knee voltage) বেশি ভোল্টেজের অঞ্চলে প্রায় নিঃশেষিত হয়ে যায়।

সম্মুখবর্তী বায়াসের বৈশিষ্ট্য

১। জাংশন ডায়োডের অভ্যন্তরে উভয় প্রকার সংখ্যাগুরু বাহকের দ্বারা তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন হয়; কিন্তু বহিঃবর্তনীতে কেবলমাত্র ইলেকট্রন দ্বারা প্রবাহ উৎপন্ন হয়।

২। সম্মুখবর্তী বায়াস প্রয়োগে সাধারণত কয়েক মিলি-অ্যাম্পিয়ারের তড়িৎ প্রবাহ পাওয়া যায়। 

৩। প্রযুক্ত বিভব পার্থক্য বৃদ্ধি করলে প্রবাহমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

৪। প্রবাহমাত্রা এবং প্রযুক্ত বিভব পার্থক্যের লেখচিত্র অঙ্কন করলে সরলরেখা পাওয়া যায় না।

৫। সম্মুখবর্তী বায়াসে ডায়োডের নিঃশেষিত অঞ্চলের বেধ ক্রমশ হ্রাস পায়।

 

খ. বিপরীত ঝোঁক বা রিভার্স বায়াস প্রয়োগ

এক্ষেত্রে বাহ্য ভোল্টেজ এমনভাবে প্রয়োগ করা হয় যাতে বিভব প্রাচীরের উচ্চতা বা প্রশস্থতা বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের ঝোঁক প্রয়োগকে বিপরীত ঝোঁক প্রয়োগ (reverse biasing) বলে। বিপরীত ঝোঁক প্রয়োগের জন্য ব্যাটারির  ঋণাত্মক প্রান্ত p-টাইপ প্রান্তের সঙ্গে এবং ধনাত্মক প্রান্ত n-টাইপ প্রান্তের সঙ্গে সংযোগ দেয়া হয়। প্রযুক্ত বিপরীত ভোল্টেজের জন্য সৃষ্ট বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র বিভব প্রাচীরের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের দিকে কাজ করে। ফলে জাংশনে লদ্ধি ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায় এবং বিভব প্রাচীরের উচ্চতা বেড়ে যায়। চিত্রে বিপরীত ঝোঁক প্রয়োগ ও বিভব প্রাচীর বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। বিভব প্রাচীর বৃদ্ধির ফলে বাহকের চলাচলে বাধা বা রোধ অনেক বেড়ে যায় এবং বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ হয়না।

Reverse bias current

বিপরীত ঝোঁকে ব্যাটারি n-টাইপের ইলেকট্রনকে এবং p-টাইপের হোলকে আকর্ষণের জন্য জাংশন থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। ফলে জাংশনের প্রশস্ততা বৃদ্ধি পায় এবং জাংশন বরাবর বিভব বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না জাংশনের এবং ব্যাটারির বিভব সমান হয়। বিপরীত ঝোঁক প্রয়োগ করলে জাংশনের ভেতর দিয়ে খুব সামান্য পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। এ প্রবাহের কারণ হলো যে n-টাইপ ও p-টাইপে যথাক্রমে কিছু পরিমাণ হোল ও ইলেকট্রন থাকে। ওই সমস্ত ইলেকট্রন ও হোলের প্রবাহ সামান্য পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি করে। এই প্রবাহের মান সাধারণত µA মানের হয়। এই তড়িৎ প্রবাহকে বিপরীতবর্তী তড়িৎ প্রবাহ (Reverse current) বলে।

p-n জাংশনে বিপরীত ঝোঁকে প্রবাহ পাওয়া যায় না কেন ?

বিপরীতমুখী ঝোকে ব্যাটারি n-টাইপের ইলেকট্রনকে এবং p-টাইপের হোলকে আকর্ষণ করে জাংশন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। ফলে জাংশনের প্রশস্ততা বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না জাংশন ও ব্যাটারির বিভব শূন্য হয়। এই প্রশস্ত বিভব প্রাচীরের জন্য বিপরীতমুখী ঝোকে কোনো প্রবাহ পাওয়া যায় না।

বিপরীত বায়াসের সময় নিঃশেষিত অঞ্চলে কী ঘটে?

যখন সংযোগটি বিপরীত বায়াসে থাকে তখন চার্জ বাহকদের ব্যাপন বন্ধ হয়। তাই নিঃশেষিত অঞ্চল প্রসারিত হয়। ইলেকট্রন ও হোলের চলাচলের মুখ্য প্রক্রিয়া প্রবাহ মুখ্য প্রক্রিয়া প্রবাহ স্রোতও পরস্পর বিলীন হয়।

বিপরীত বায়াসের বৈশিষ্ট্য

১। জাংশন ডায়োডের অভ্যন্তরে উভয় ধরনের সংখ্যাগুরু বাহকের দ্বারা তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন হয়; কিন্তু বহিঃবর্তনীতে কেবলমাত্র ইলেকট্রনের দ্বারা প্রবাহ উৎপন্ন হয়।

২। বিপরীত বায়াসে সাধারণত কয়েক মাইক্রো-অ্যাম্পিয়ারের তড়িৎ প্রবাহ পাওয়া যায়। 

৩। প্রযুক্ত বিভব পার্থক্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি করলে প্রবাহমাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয় না। 

৪। বিপরীত বায়াসে ডায়োডের নিঃশেষিত অঞ্চলের বেধ ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।

Characteristics of reverse bias current

জাংশন ডায়োডের v—I বৈশিষ্ট্য লেখ (V-I characteristic curve of junction diode)

একটি p-n জাংশন ডায়োডে সম্মুখ ঝেকে দেখানো হয়েছে। বর্তনীতে অ্যামিটার A ডায়োডে কারেন্ট এবং ভোল্টমিটার V ডায়োড ভোল্টেজ পরিমাপের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। অ্যামিটারকে সব সময় বর্তনীতে শ্রেণি সংযোগ এবং ভোল্টমিটারকে সমান্তরাল সংযোগ দিতে হয়। ডায়োডে ভোল্টেজ পরিবর্তনের জন্য পরিবর্তনশীল রোধ ব্যবহার করা হয়েছে।

characteristics of reverse bias current

এখন সম্মুখবর্তী ভোল্টেজ শূন্য থেকে ধাপে ধাপে বাড়ানো হলে ভোল্টেজ বৃদ্ধির সাথে সাথে বর্তনীতে কারেন্টও বৃদ্ধি পায়। এবার ব্যাটারির সংযোগ উল্টো করে দিলে ডায়োডে বিপরীত ঝোঁক প্রযুক্ত হবে। সম্মুখ ঝোঁকের ন্যায় এক্ষেত্রেও ভোল্টেজ পরিবর্তন করলে কারেন্টেরও পরিবর্তন হবে। সম্মুখবর্তী ঝোঁক এবং বিপরীত ঝোঁকের জন্য ভোল্টেজ-কারেন্ট লেখচিত্র আঁকলে চিত্রের লেখচিত্র পাওয়া যাবে।

সম্মুখ ঝোঁকের ক্ষেত্রেঃ

(i) সম্মুখবর্তী ভোল্টেজ V_{F} বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কারেন্ট বৃদ্ধি পায় না। জার্মেনিয়াম ডায়োডের জন্য 0.3V  এবং সিলিকন ডায়োডের জন্য 0.7V পর্যন্ত সম্মুখ কারেন্ট I_{F} শুন্য থাকে 0.3V এবং 0.7Vহলো যথাক্রমে জার্মেনিয়াম ও সিলিকনের অভ্যন্তরীণ বিভব প্রাচীর ভোল্টেজ V_{0}। বিভব প্রাচীর অতিক্রম করার জন্য চার্জ বাহকের নুন্যতম   ভোল্টেজের প্রয়োজন হয়। একে অপারেটিং ভোল্টেজ বলে। চিত্রে B অপারেটিং ভোল্টেজ। এরপর ভোল্টেজ আরোও বৃদ্ধি করলে কারেন্ট সূচকীয়ভাবে বাড়ে এবং পরবর্তীতে কিছু সময়ের জন্য ভোল্টেজ কারেন্ট বৃদ্ধি সমানুপাত হয়। ডায়োডের এই নির্দিষ্ট প্রযুক্ত ভোল্টেজকে সূচন ভোল্টেজ (Threshold Voltage) বা কাট-ইন ভোল্টেজ বলে।

characteristics of Forward bias current

(ii) সম্মুখবর্তী ভোল্টেজ V_{F} এর মান অপারেটিং ভোল্টেজ  V_{0}অপেক্ষা বৃদ্ধি করা হলে অর্থাৎ V_{F}> V_{0}হলে I_{F} দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই I_{F}খাড়াভাবে ওপরে ওঠে। তখন এই V_{F}– কে নী (Knee ) ভোল্টেজ বলে। চিত্রে  P বিন্দু ইহা নির্দেশ করে। এই বৈশিষ্ট্য লেখটি সর্বদা সরলরৈখিক নয়। অর্থাৎ V এবং I পরস্পর সমানুপাতিক না। সিলিকনের ক্ষেত্রে এই ভোল্টেজ এর মান  0.7 V এবং জার্মেনিয়ামের জন্য এই  ভোল্টেজের মান 0.3 V

(iii) B  বিন্দু থেকে P বিন্দু পর্যন্ত প্রবাহ  I_{F}এর মান ভোল্টেজ বৃদ্ধির সাথে সাথে সূচকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। এর জন্য BP অঞ্চলকে সুচকীয় অঞ্চল বলে।

 

বিপরীত ঝোঁকের ক্ষেত্রে

(i) বিপরীত ঝোঁক V_{P} বৃদ্ধির সঙ্গে বিপরীত কারেন্ট বৃদ্ধি পেয়ে L_{0}-তে পৌছায়। এরপর বিপরীত ভোল্টেজ বাড়ালেও কারেন্ট L_{0}স্থির থাকে। L_{0}কারেন্টকে ‘বিপরীত সম্পৃক্ত কারেন্ট (reverse saturation current) বা ক্ষরণ কারেন্ট (leakage current) বলে। এই কারেন্ট p এবং n-অঞ্চলে স্বল্পসংখ্যক সংখ্যালঘু বাহকের দ্বারা তৈরি হয়। এর মান সাধারণত কয়েক \mu A। ভোল্টেজ পরিবর্তনের জন্য সংখ্যালঘু বাহকের সংখ্যা পরিবর্তন হয় না বলে ভোল্টেজ অনেক বাড়ালেও কারেন্ট স্থির থাকে। এই প্রবাহকে Reverse saturated current বলে। সিলিকন ডায়োডের ক্ষেত্রে এর মান 1 \mu A। শুধুমাত্র তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে সংখ্যালঘু বাহকের সংখ্যার পরিবর্তন হয়।

(ii) বিপরীত বায়াস ভোল্টেজ বৃদ্ধি করে একটি ক্রান্তি (critical) মানে পৌছালে দেখা যায় যে বিপরীত কারেন্ট হঠাৎ করে অনেকগুণ বেড়ে যায়। এই সময় p-n জাংশনের রোধ সম্পূর্ণরুপে ভেঙ্গে যায় বা জাংশনের বিভব বাধা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে মনে হয়। তাই এই বিশেষ ভোল্টেজকে বলা হয় ব্রেকডাউন ভোল্টেজ (breakdown voltage)। চিত্রে R বিন্দু ইহা নির্দেশ করে। ব্রেকডাউন ভোল্টেজে পৌছে গেলে সাধারণত জাংশন ডায়োডের কার্যক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থায় ডায়োড পরিবাহীর ন্যায় আচরণ করে। এই ক্রিয়াকে জেনার ক্রিয়া বলে। বিজ্ঞানী মি. জেনার এই ক্রিয়া প্রথমে লক্ষ করেন।

p- জাংশন ডায়োডে রিভার্স বায়াসে ভোল্টেজ বৃদ্ধি করার সাথে সাথে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না। কিন্তু ক্রমাগত ভোল্টেজ বৃদ্ধি করা হলে দেখা যায় হঠাৎ করে এক পর্যায়ে প্রবাহের মান দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে ডায়াডে কী ঘটে—ব্যাখ্যা কর।

রিভার্স বায়াস ভোল্টেজ বৃদ্ধি করতে থাকলে ইলেকট্রনের গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং সেমিকন্ডাক্টর ডায়োডের পরমাণু থেকে ইলেকট্রন বেরিয়ে আসে। এ পর্যায়ে জাংশনে ইলেকট্রনের ধ্বস নামে ফলে প্রবাহ দ্রুত বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। রিভার্স কারেন্ট বা প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে ডিপলেশন লেয়ার অঞ্চলে বা p-n জাংশনের সংযোগস্থলে রোধের পতন ঘটে। এই পর্যায়কে অ্যাভালেন্স ব্রেকডাউন (avalence breakdown) বলে। এ পর্যায়ে ডায়োড তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। ব্রেকডাউন ভোল্টেজের পর জাংশন সাধারণত স্থায়ীভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

আদর্শ ডায়োড : যে সকল ডায়োড সম্মুখ বেঁকে থাকা কালে একটি নিখুঁত পরিবাহী এবং বিপরীত ঝোঁকে থাকা কালে অন্তরকের ন্যায় আচরণ করে তাকে আদর্শ ডায়োড বলে। সকল ক্ষেত্রে আমরা আদর্শ ডায়োড বিবেচনা করি।

গতীয় রোধ (Dynamic resistance) : p-n জাংশনে বহিস্থঃ ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হলে তড়িৎ প্রবাহে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় তাকে গতীয় রোধ বলে। চিত্র ১০.১৩-এ লক্ষণীয় যে p-n জাংশনে সম্মুখবর্তী ঝোঁক প্রয়োগে সামান্য বিভব পার্থক্য বৃদ্ধি করলে জাংশনে বিদ্যুৎ প্রবাহমাত্রা অনেক বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বিপরীত ঝোঁক প্রয়োগে বিভব পার্থক্য অনেক বৃদ্ধির জন্যও বিদ্যুৎ প্রবাহমাত্রার বৃদ্ধি খুবই সামান্য। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, সম্মুখবর্তী ঝোঁক প্রয়োগে জাংশনের রোধ খুবই কম হয়। I—V লেখ বৈশিষ্ট্যের যে কোনো দুটি বিন্দু P ও Q-এ বিভব পার্থক্য \Delta V-এর জন্য বিদ্যুৎ প্রবাহের যে পরিবর্তন \Delta I হয়, এর অনুপাতই জাংশনের রোধ। একে জাংশনের গতীয় রোধ বলে। সুতরাং গতীয় রোধ, \mathrm{R}=\frac{\Delta \mathrm{V}}{\Delta \mathrm{l}} \Omega

ডায়োডের ক্ষেত্রে বিমুখী রোধের মান সম্মুখী রোধের মানের চেয়ে বহুগুণ বেশি। যেমন- Ge এর ক্ষেত্রে বিমুখী ও সম্মুখী রোধের অনুপাত 40000 : 1 এবং Si এর ক্ষেত্রে 1000000 : 1।

হোলের থেকে মুক্ত ইলেকট্রনের শক্তি বেশি থাকে কেন? 

হোলের মাধ্যমে তড়িৎ পরিবহন হতে হলে ইলেকট্রনকে লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে হয়। এক্ষেত্রে ইলেকট্রনে সীমাবদ্ধ একটি পথ অনুসরণ করতে হয়। কিন্তু মুক্ত ইলেকট্রনের মাধ্যমে তড়িৎ পরিবহনের সময় ইলেকট্রন নিজের খুশিমতো আঁকাবাঁকা পথে চলার সুযোগ পায়। ইলেকট্রনের গতির এ পথ সীমাবদ্ধ নয়। তাই ইলেকট্রনের শক্তি হোলের চেয়ে বেশি থাকে।

p—n জাংশনে ডিপ্লেশন লেয়ার চার্জ নিরপেক্ষ কেন ?

একটি p টাইপ ও একটি n টাইপ অর্ধপরিবাহীকে একত্রে যুক্ত করলে p—n জাংশন গঠিত হয়। p অঞ্চলে সংখ্যাগুরু বাহক হোল এবং n অঞ্চলে সংখ্যাগুরু বাহক ইলেকট্রন থাকে। যখন একত্রে সংযুক্ত করা হয় তখন n অঞ্চলের ইলেকট্রনগুলো p অঞ্চলের হোল দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় জাংশনের দিকে ছুটে যায়। সংযোগস্থলে হোল ইলেকট্রন একত্রে মিশে গিয়ে চার্জ নিরপেক্ষ হয়। এই কারণে p–n জাংশন ডায়োড-এর ডিপ্লেশন লেয়ার চার্জ নিরপেক্ষ।

একমুখীকরণ Rectification 

একমুখীকরণের ধারণা (Concept Of Rectification)

 যে পদ্ধতিতে পরিবর্তী প্রবাহকে (A.C.) একমুখী প্রবাহে (D.C.) পরিবর্তন করা হয় তাকে একমুখীকরণ বা রেকটিফিকেশন (rectification) বলে এবং যে বর্তনী এই কাজে ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় একমুখীকারক বা রেকটিফায়ার (rectifier)।

একমুখীকারক (rectifier) দুই ধরনের। যথা— (ক)অর্ধতরঙ্গ একমুখীকারক এবং (খ)পূর্ণতরঙ্গ একমুখীকারক। AC তরঙ্গ সময়ের সাথে সাথে দিক পরিবর্তন করে কিন্তু ডায়োডের ভেতর দিয়ে যাওয়ার পর একমুখী তরঙ্গ বা DC উৎপন্ন হয়।

 

ব্রীজ রেকটিফিকেশন (Bridge rectification)

পরিবর্তী প্রবাহকে পূর্ণ তরঙ্গ একমুখীকরণ দু’ভাবে করা হয়। যথা- (ক)একটি ট্রান্সফরমার ও দুটি জাংশন ডায়োডের সাহায্যে এবং (খ)একটি ট্রান্সফরমার ও চারটি জাংশন ডায়োডের সাহায্যে। শেষোক্ত পদ্ধতিকে ব্রীজ রেকটিফিকেশন পদ্ধতি বলে। DC পাওয়ার সাপ্লাই-এর জন্য ব্রীজ রেকটিফায়ার বহুল ব্যবহৃত ও কার্যকর বর্তনী।

ইনপুটে ভোল্টেজ কমানোর জন্য ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়। এই ট্রান্সফরমারের সাথে চারটি ডায়োড D1, D2, D3, ও D4, সংযোগ দিয়ে ব্রীজ তৈরি করা হয়। চিত্রে MN প্রান্তের সঙ্গে এসি ইনপুট সংযোগ দেয়া হয়েছে এবং P ও B জাংশনের সঙ্গে একটি রোধ R_{L} যুক্ত করা হয়েছে। একে লোড (Load) বলে। এই রোধের দুই প্রান্ত হতে আউটপুট পাওয়া যায়।

ইনপুটের ধনাত্মক অর্ধচক্রের জন্য (Positive half cycle) ট্রান্সফরমারের গৌণ কুণ্ডলীর M প্রান্ত ধনাত্মক (+ve) এবং N প্রান্ত ঋণাত্মক (-ve) হয়। এই অবস্থায় ডায়োড D1D3, সম্মুখ ঝোঁক (Forward bias) প্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে ডায়োড D2D4, বিপরীত ঝোঁক (Reverse bias) প্রাপ্ত হয়। এই অবস্থায় বর্তনীতে বিদ্যুৎ MEABCFN পথে প্রবাহিত হয় এবং R এর দুই প্রান্তে ভোল্টেজ পাওয়া যায়।

আবার ঋণাত্মক অর্ধচক্রের জন্য (Negative half cycle) ট্রান্সফরমারের গৌণ কুণ্ডলীর N প্রান্ত ধনাত্মক এবং M প্রান্ত ঋণাত্মক হয়। এই অবস্থায় ডায়োড D2, ও D4, সম্মুখ ঝোঁক প্রাপ্ত হয়। এই অবস্থায় বর্তনীতে বিদ্যুৎ NFABCEM পথে প্রবাহিত হয়। সুতরাং AC প্রতিক্ষেত্রে ইনপুটের প্রত্যেক অর্ধচক্রের জন্য বিদ্যুৎ লোড রোধ R_{L}এর মধ্য দিয়ে একই দিক AB দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং প্রতিক্ষেত্রে R_{L}-এ ভোল্টেজ ড্রপ হয়।

পূর্ণ তরঙ্গ একমুখীকরণে দুটি অনুরূপ ডায়োড ব্যবহার করা হয় কেন ?

পূর্ণ তরঙ্গ একমুখীকরণে দুটি অনুরূপ ডায়োড ব্যবহার করা হয়। কারণ দুটি ডায়োডের তড়িৎ প্রবাহ অনুরূপ না হলে রোধের ভেতর দিয়ে প্রবাহের ওঠানামা বেশি হয়।

রেকটিফায়ার বর্তনীতে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমারের গৌণ কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা মুখ্য কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা অপেক্ষা কম রাখা হয় কেন ?

ট্রান্সফরমার দ্বারা ভোল্টেজ কমানোর জন্য গৌণ কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা কম রাখা হয়। ভোল্টেজ কম না হলে। ডায়োড পুড়ে যাবে। সাধারণত ডায়োডে ভোল্টেজের মান 15V এর নিচে রাখা হয় ।