মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম (Periodic Properties of Elements)
পর্যায় সারণিতে অবস্থিত মৌলগুলোর কিছু ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম, যেমন- ধাতব ধর্ম, অধাতব ধর্ম, পরমাণুর আকার, গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক, আয়নীকরণ শক্তি, তড়িৎ ঋণাত্মকতা, ইলেকট্রন আসক্তি ইত্যাদি ধর্মগুলোকে পর্যায়বৃত্ত ধর্ম (Periodic Properties of Elements) বলা হয়।
নিচে মৌলসমূহের পর্যায়বৃত্ত ধর্মগুলোকে(Periodic Properties of Elements) নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-
ধাতব ধর্ম (Metallic Properties)
যে সকল মৌল চকচক করে, আঘাত করলে শব্দ হয় তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে তাদেরকে ধাতু বলে। আবার যে সকল মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় তাদেরকে ধাতু বলে। ধাতুর ইলেকট্রন ত্যাগের ধর্মকে ধাতব ধর্ম (Metallic Properties) বলে।
যে মৌলের পরমাণু যত সহজ ইলেকট্রন ত্যাগ করতে পারবে, সেই মৌলের ধাতব ধর্ম তত বেশি হবে। পর্যায় সারণিতে যে কোনো পর্যায়ের বাম থেকে ডানে গেলে ধাতব ধর্ম হ্রাস পায় এবং উপর থেকে নিচে গেলে ধাতব ধর্ম বৃদ্ধি পায়।
অধাতব ধর্ম (Non-metallic properties)
যে সকল মৌল চকচক করে না, আঘাত করলে শব্দ হয় না, তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে না, তাদেরকে অধাতু বলে। আবার যে সকল মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয় তাদেরকে অধাতু বলে। অধাতুর ইলেকট্রন গ্রহণের ধর্মকে অধাতব ধর্ম (Non-metallic properties) বলে।
যে মৌলের পরমাণু যত সহজে ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারবে, সেই মৌলের অধাতব ধর্ম তত বেশি হবে। পর্যায় সারণিতে যেকোনো পর্যায়ের বাম থেকে ডানে গেলে অধাতব ধর্ম বৃদ্ধি পায় এবং উপর থেকে নিচে গেলে অধাতব ধর্ম হ্রাস পায়। যে সকল মৌল কোনো কোনো সময় ধাতুর মতো আবার কোনো কোনো সময় অধাতুর মতো আচরণ করে তাদেরকে অর্ধধাতু বা অপধাতু বলে। যেমন- সিলিকন (Si) একটি অপধাতু। পর্যায় সারণির যে কোনো পর্যায়ে বাম দিকের মৌলগুলো সাধারণত ধাতু, মাঝের মৌলগুলো অপধাতু এবং ডান দিকের মৌলগুলো সাধারণত অধাতু।
পরমাণুর আকার/ ব্যাসার্ধ (Size of Atom/Atomic Radius)
কোন গ্রুপের উপর থেকে যত নিচে নামা হয় পারমাণবিক সংখ্যা ততই বাড়তে থাকে। এর ফলে শক্তিস্তরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। একই সাথে পরমাণুর আকারও বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ এই গ্রুপের উপর থেকে নিচে যেতে থাকলে বাইরের দিকে একটি নতুন করে শক্তিস্তর যুক্ত হতে থাকবে এবং এর ফলে পরমাণুর আকারও বাড়তে থাকে। আবার কোনো পর্যায়ে যত বাম দিক থেকে ডান দিকে যাওয়া যায়, পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে শক্তিস্তর সংখ্যা একই থাকে কিন্তু ইলেকট্রন সংখ্যা বাড়তে থাকে।
আবার কোনো পর্যায়ে যত বাম দিক থেকে ডান দিকে যাওয়া যায়, পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে শক্তিস্তর সংখ্যা একই থাকে কিন্তু ইলেকট্রন সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে নিউক্লিয়াসের অধিক প্রোটন সংখ্যা এবং নিউক্লিয়াসের বাইরের অধিক ইলেকট্রন সংখ্যার মধ্যে আকর্ষণ বেশি হয়। ফলে ইলেকট্রনগুলোর শক্তিস্তর নিউক্লিয়াসের কাছে চলে আসে। ফলে পরমাণুর আকার ছোট হয়ে যায়।
আয়নীকরণ শক্তি (Ionization energy)
গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের এক মোল পরমাণু থেকে এক মোল ইলেকট্রন অপসারণ করে এক মোল ধনাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন তাকে ঐ মৌলের আয়নিকরণ শক্তি(Ionization energy) বলে।
একই গ্রুপের উপর থেকে নিচে নামলে আকার বাড়ার সাথে সাথে নিউক্লিয়াস থেকে বাইরের স্তর দূরে যেতে থাকে। যার ফলে ইলেকট্রনের ওপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ কমতে থাকে, এ কারণে বাইরের স্তর থেকে ইলেকট্রন অপসারণে কম শক্তির প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ আয়নিকরণ শক্তিও কম। একই পর্যায়ে বাম থেকে ডানে যেতে থাকলে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে শক্তিস্তর বাড়ে না। কিন্তু ইলেকট্রন সংখ্যা বাড়তে থাকে। এতে ইলেকট্রনগুলোর ওপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায় যার ফলে ইলেকট্রন অপসারণে বেশি শক্তি লাগে অর্থাৎ আয়নিকরণ শক্তি বৃদ্ধি পায়।
ইলেকট্রন আসক্তি (Electron Affinity)
গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের বিচ্ছিন্ন এক মোল গ্যাসীয় পরমাণুতে এক মোল ইলেকট্রন স্থাপন করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে শক্তি নির্গত হয় তাকে ঐ মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি (Electron Affinity) বলে।
একই গ্রুপের ওপর থেকে নিচে নামলে পরমাণুর ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পায়, আকার বাড়ার সাথে সাথে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াস থেকে দূরে যেতে থাকে ফলে নিউক্লিয়াস দ্বারা ইলেকট্রনের ওপর আকর্ষণ হ্রাস পেতে থাকে। যার ফলে অসীম থেকে একটি ইলেকট্রন এতে যুক্ত করতে কম শক্তি নির্গত হয় অর্থাৎ ইলেকট্রন আসক্তি কম হয়। একই পর্যায়ে বাম থেকে ডানে যেতে থাকলে আকার কমতে থাকে ফলে নিউক্লিয়াস বহিস্থঃশক্তিস্তরের ইলেকট্রনকে প্রবল ভাবে আকর্ষণ করে। যার ফলে অসীম থেকে একটি ইলেকট্রন বহিস্থঃ শক্তিস্তরে যুক্ত হতে বেশি শক্তি নির্গমন হয়, অর্থাৎ ইলেকট্রন আসক্তি বৃদ্ধি পায়।
তড়িৎ ঋণাত্মকতা (Electronegativity)
সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ অবস্থায় শেয়ারকৃত ইলেকট্রনকে নিজের দিকে টেনে নেয়ার প্রবণতাকে তড়িৎ ঋণাত্মক (Electronegativity) বলে।
কোনো পর্যায়ের যত বাম থেকে ডানে যাওয়া যায় পরমাণুর আকার তত হ্রাস পেতে থাকে। অর্থাৎ ইলেকট্রনগুলোর ওপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায় এবং তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর কোনো গ্রুপে যত উপর থেকে নিচে নামা হয় পরমাণুর আকার তত বাড়তে থাকে অর্থাৎ ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াস থেকে দূরে সরে যায়, তাই ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ কমতে থাকে। ফলে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মানও কমতে থাকে ।
মৌলসমূহের পর্যায়বৃত্ত ধর্মসমূহের সাথে পর্যায় ও গ্রুপের সম্পর্ক (The relation of the elements to the periodic trends in stages and groups)
পর্যায়বৃত্ত ধর্ম | পর্যায়গত প্রবণতা | গ্রুপ বা শ্রেণিগত প্রবণতা |
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বা আকার | বাম থেকে ডান দিকে হ্রাস | ওপর থেকে নিচের দিকে বৃদ্ধি |
ধাতব ধর্ম | বাম থেকে ডান দিকে হ্রাস | ওপর থেকে নিচের দিকে বৃদ্ধি |
অধাতব ধর্ম | বাম থেকে ডান দিকে বৃদ্ধি | ওপর থেকে নিচের দিকে হ্রাস |
আয়নীকরণ শক্তি | বাম থেকে ডান দিকে বৃদ্ধি | ওপর থেকে নিচের দিকে হ্রাস |
ইলেকট্রন আসক্তি | বাম থেকে ডান দিকে বৃদ্ধি | ওপর থেকে নিচের দিকে হ্রাস |
তড়িৎ ঋণাত্মকতা | বাম থেকে ডান দিকে বৃদ্ধি | ওপর থেকে নিচের দিকে হ্রাস |