10 Minute School
Log in

উদ্ভিদ প্রজনন (Plant Reproduction)

উদ্ভিদ প্রজনন প্রক্রিয়া (Plant Reproduction Process)

যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ এক বা একাধিক উদ্ভিদ তৈরি করে, তাকে উদ্ভিদ প্রজনন (Plant Reproduction) বলে।

পুংগ্যামিট তৈরি (Formation of male gamete)

Plant Reproduction

Plant Reproduction

 

Plant Reproduction

 

Plant Reproduction

স্ত্রী গ্যামিটোফাইটের সৃষ্টি (Formation of female gametophyte)

Plant Reproduction

ডিম্বকের গঠন (Structure of ovule)

Plant Reproduction

ডিম্বকের প্রকার (Types of ovule)

ovule-plant-reproduction

নিষেক ক্রিয়া (Fertilization)

স্ত্রী গ্যামিট ও পুরুষ গ্যামিটের যৌন মিলন প্রক্রিয়া হল নিষেক। 

পরাগধাণী থেকে পরাগরেণুর মাধ্যমে পুং গ্যামিট সচল হয়ে নিশ্চল স্ত্রী গ্যামিটের কাছে গমন করে এবং নিষেক ঘটায়।

নিষেক প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে দেখানো হল : 

   fertilization-plant-reproduction

দ্বি-নিষেক (Double fertilization) 

দ্বিনিষেকক্রিয়া বা দ্বি-নিষেক (Double fertilization) : একই সময়ে ডিম্বাণুর সাথে একটি পুংগ্যামিটের মিলন ও সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে অপর পুংগ্যামিটের মিলন প্রক্রিয়াকে দ্বিনিষেকক্রিয়া (double fertilization) বা দ্বিগর্ভাধান প্রক্রিয়া বলে। দ্বিনিষেক আবৃতবীজী উদ্ভিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য (নগ্নবীজী উদ্ভিদের Ephedra-তে দ্বিনিষেক আবিস্কৃত হয় ১৯৯০ সালে- এটি ব্যতিক্রম)। 

এ প্রক্রিয়ায় একটি পুংগ্যামিট ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় এবং অপর একটি পুংগ্যামিট সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে মিলিত হয়; ফলে ডিম্বাণু জাইগোটে পরিণত হয় এবং ডিপ্লয়েড অবস্থাপ্রাপ্ত হয় কিন্তু সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস ট্রিপ্লয়েড অবস্থাপ্রাপ্ত হয়। সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে একটি পুংগ্যামিটের মিলনকে ত্রিমিলন (triple fusion) বলা হয়। কারণ এতে দুটি মেরু নিউক্লিয়াস ও একটি পুংনিউক্লিয়াস—এ তিনটি নিউক্লিয়াসের মিলন ঘটে।

নিষেক ও দ্বিনিষেকের মধ্যে পার্থক্য (Difference between fertilization and double fertilization)

পার্থক্যের বিষয় নিষেক দ্বি-নিষেক
১. সংঙ্গা স্ত্রীগ্যামিট তথা ডিম্বাণুর সাথে ১টি পুংগ্যামিটের যৌন মিলনের নাম নিষেক। নিষেকের সময় প্রায় একই সাথে ১টি পুংগ্যামিট ডিম্বাণুর সাথে এবং অন্য ১টি পুংগ্যামিট সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের সাথে মিলিত হওয়াকে দ্বি-নিষেক বলে।
২. কোন উদ্ভিদে ঘটে এটি অধিকাংশ উদ্ভিদে হয়ে থাকে। এটি কেবলমাত্র আবৃতবীজী উদ্ভিদে সংঘটিত হয়। 

(ব্যক্তবীজী Ephedra ব্যতিক্রম) 

৩. গ্যামিটের প্রয়োজনীয়তা শুধুমাত্র ১টি পুংগ্যামিটের প্রয়োজন হয়। ২টি পুংগ্যামিটের প্রয়োজন হয়।
৪. ফলাফল শুধুমাত্র ভ্রুণের উৎপত্তি হয়। ভ্রুণ ও সস্যটিস্যু উৎপন্ন করে।

নিষেক পরবর্তী পরিণতি (After effects of fertilization)

নিষেকের ফলে হওয়া জাইগোট বা ঊস্পোর

মাইটোটিক বিভাজন এবং আদিভ্রুণ তৈরি

পূর্ণাঙ্গ ভ্রুণ তৈরি
সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস (2n) ও শুক্রাণু (n) এর মিলন

ট্রিপ্লয়েড (3n) ও এন্ডোসপমি নিউক্লিয়াস গঠন

এন্ডোসপমি টিস্যু গঠন (সম্য)

plant-reproduction

নিষেকর পর গর্ভাশয় (ডিম্বাশয়) এবং ডিম্বকের বিভিন্ন পরিবর্তন

 

নিষেকর পর গর্ভাশয় (ডিম্বাশয়) এবং ডিম্বকের বিভিন্ন পরিবর্তন
নিষেকের আগে নিষেকের পরে বিকশিত হলে
১। গর্ভাশয় ১। ফল
২। গর্ভাশয় প্রাচীর ২। ফলত্বক
৩। ডিম্বক ৩। বীজ
৪। ডিম্বক বহিঃত্বক বা এক্সাইন ৪। টেস্টা (বীজ বহিঃত্বক)
৫। ডিম্বক অন্তঃত্বক বা ইন্টাইন ৫। টেগমেন (বীজ অন্তঃত্বক)
৬। নিউসেলাস বা ভ্রূণপোষক টিস্যু ৬। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিঃশেষ হয়ে যায়, কিঞ্চিৎ থাকলে তা পেরিম্পার্ম (পরিভ্রণ) হয়।
৭। ডিম্বাণু বা এগ ৭। ভ্রূণ (embryo) 
৮। সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াস ৮। এন্ডোস্পার্ম বা সস্য।
৯। সহকারি কোষ বা সিনারজিড ৯। নষ্ট হয়ে যায়।
১০। অ্যান্টিপোডাল বা প্রতিপাদকোষ ১০। নষ্ট হয়ে যায়।
১১। মাইক্রোপাইল বা ডিম্বকরন্ধ্র ১১। বীজের মাইক্রোপাইল (বীজরন্ধ্র)
১২। হাইলাম বা ডিম্বকনাভী ১২। হাইলাম (বীজনাভী)।
১৩। ফিউনিকুলাস বা ডিম্বকনাড়ী ১৩। বীজের বোঁটা (বীজবৃন্ত) 
১৪। ক্যালাজা বা ডিম্বকমূল ১৪। নষ্ট হয়ে যায় (বীজমূল)।

অযৌন জনন

পুং স্ত্রী গ্যামিটের মিলন ছাড়া যে প্রজনন ঘটে তা অযৌন জনন।

পার্থেনোজেনেসিস (Parthenogenesis)

হ্যাপ্লয়েড পার্থেনোজেনেসিস  যখন স্বাভাবিক মায়োসিস প্রক্রিয়ায় ডিম্বাণু সৃষ্টি হলেও তা নিষিক্ত না হয়ে সরাসরি ভ্রূণের সৃষ্টি করে তখন তাকে হ্যাপ্লয়েড পার্থেনোজেনেসিস  বলে। এ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট উদ্ভিদও হ্যাপ্লোয়েড হয় এবং অনুর্বর হয়। Solanum nigrum, Orchis maculata উদ্ভিদে অনিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়।
ডিপ্লয়েড পার্থেনোজেনেসিস  যখন স্বাভাবিক মায়োসিস প্রক্রিয়ার বদলে মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ডিম্বানু (2n) সৃষ্টি হয় এবং পরে ভ্রূণে পরিণত হয় তাকে ডিপ্লয়েড পার্থেনোজেনেসিস  বলে। Parthenium argentatum Taraxacum albidum উদ্ভিদে ডিপ্লয়েড পার্থেনোজেনেসিস  হতে দেখা যায়। 
কৃত্রিম পার্থেনোজেনেসিস  বাহ্যিক আবেশের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে বহু উদ্ভিদে পার্থেনোজেনেসিস  ঘটানো সম্ভব। পুংগ্যামিট ডিম্বাণুতে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এরূপ উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী পদার্থ প্রয়োগ করে নিষেক ছাড়াই ডিম্বাণু থেকে ভ্রূণ উৎপন্ন করা হয়। এক্স-রে প্রয়োগে, ইমাস্কুলেশনের পর পরাগায়ন বিলম্বিত করে বা বেলভিটান জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করে কৃত্রিম উপায়ে পার্থেনোজেনেসিস  ঘটানো সম্ভব।
অ্যান্ড্রোজেনেসিস নিষেকক্রিয়া ছাড়া শুক্রাণু থেকে ভ্রূণ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে অ্যান্ড্রোজেনেসিস (androgenesis) বলে।
অ্যাপোস্পোরি ডিম্বকের (ovule) যেকোনো দেহকোষ থেকে (যেমন- ডিম্বক ত্বক, নিউসেলাস) ডিপ্লয়েড ভ্রূণথলি (embryo sac) সৃষ্টি হতে পারে। ডিম্বকের দেহকোষ থেকে সৃষ্ট ডিপ্লয়েড ভ্রূণথলির ডিপ্লয়েড ডিম্বাণুটি হতে নিষেক ছাড়াই ভ্রূণ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যাপোস্পোরি। অ্যাপোস্পোরি প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট উদ্ভিদ ডিপ্লয়েড হয় এবং মাতৃ উদ্ভিদের সমগুণসম্পন্ন হয়। Hieracium উদ্ভিদে এরূপ হতে দেখা যায়।
অ্যাডভেনটিটিভ এমব্রায়োনি ডিম্বকের ডিম্বক ত্বক বা নিউসেলাসের যেকোনো কোষ হতে ভ্রূণথলি গঠন ছাড়াই (অ্যাপোস্পোরিতে ভ্রূণথলি গঠিত হয়) ভ্রূণ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যাডভেনটিটিভ এমব্রায়োনি (adventitive embryony)
অ্যাপোগ্যামি ডিম্বাণু ছাড়া ভ্রূণথলির অন্য যেকোনো কোষ (যেমন- সহকারি কোষ, প্রতিপাদকোষ ইত্যাদি) থেকে ভ্রণ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে অ্যাপোগ্যামি বলে। এক্ষেত্রে নিষেক ছাড়াই ভ্রূণ সৃষ্টি হয়। Allium-এ এরূপ লক্ষ্য করা যায়।
অ্যাগামোস্পার্মি ডিম্বাণু, ভ্রূণথলি বা ডিম্বকের অন্যান্য কোষ থেকে নিষেক ছাড়া ভ্রূণ তৈরির এসব প্রক্রিয়াকে সামগ্রিকভাবে বলা হয় অ্যাগামোস্পার্মি (aganospermy)। 
সিউডোগ্যামি অ্যাগামোস্পার্মি অনুপ্রেরণা সৃষ্টির জন্য পরাগায়ন আবশ্যকীয় হলে তাকে বলা হয় সিউডোগ্যামি (Pseudogamy)

উদ্ভিদের কৃত্রিম প্রজনন (Artificial reproduction of plants)

দুটি বিসদৃশ নির্বাচিত উদ্ভিদের মধ্যে যেখানে প্রাকৃতিক উপায়ে পরাগায়ন ও প্রজনন ঘটানো সম্ভব সেখানে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে পরাগায়ন ঘটিয়ে উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন সাধন করে উন্নত জাত বা প্রকরণ সৃষ্টি করাকে উদ্ভিদের কৃত্রিম প্রজনন বলে। এ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট উদ্ভিদকে সংকর (hybrid) উদ্ভিদ বলা হয়। উন্নত নতুন প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে হাইব্রিডাইজেশন (hybridization) তথা সংকরায়ন অন্যতম।

সংকরায়ন হল উদ্ভিদ সুপ্রজননের এমন একটি পদ্ধতি যেখানে এক বা একাধিক জিনগত বৈশিষ্ট্যে ভিন্ন দুই বা ততোধিক উদ্ভিদের মধ্যে ক্রস করিয়ে নতুন ভ্যারাইটি (জাত) উদ্ভাবন করা হয়।

ভিন্নতর জেনেটিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত দুই বা ততোধিক উদ্ভিদের মধ্যে ক্রস (cross) করানোর প্রক্রিয়াকে বলা হয় কৃত্রিম হাইব্রিডাইজেশন (artificial hybridization) সাধারণত উন্নত বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত নতুন প্রকরণ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এটি করা হয়।

কৃত্রিম হাইব্রিডাইজেশন এর কৌশল (Techniques of artificial hybridization)

১। প্যারেন্ট নির্বাচন 

২। প্যারেন্টের কৃত্রিম স্বপরাগায়ন 

৩। প্যারেন্ট উদ্ভিদের ইমাঙ্কুলেশন 

৪। ব্যাগিং 

৫। ক্রসিং 

৬। লেবেলিং 

৭। বীজ সংগ্রহ

৮। বীজ বপন ও F1 উদ্ভিদের উদ্ভব

৯। F1 বংশধরে ব্যবহার ও নতুন প্রকরণ সৃষ্টি

সংকরায়ন পদ্ধতির সতর্কতা (Precaution of hybridization method) :

১। প্যারেন্ট নির্বাচন করার সময় তাদের পার্থক্যগুলো সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করতে হয়। 

২। ইমাঙ্কুলেশন ও পরাগায়নের সময় হাত, সুঁচ, চিমটা, তুলি প্রভৃতি স্পিরিট দিয়ে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হয়। 

৩। লক্ষ্য রাখতে হবে, ইমাস্কুলেশনের সময় যেন একটি পুংকেশরও থেকে না যায় এবং গর্ভকেশরের যেন কোনো
    ক্ষতি না হয়।

৪। ব্যাগিং ঠিকমতো করতে হবে এবং এর মধ্যে বায়ু প্রবেশের জন্য সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকতে হবে। 

৫। সংকর বীজ সংগ্রহ এবং এক্ষেত্রে কলা-কৌশল গ্রহণ সঠিকভাবে নিতে হবে।