প্রসঙ্গ কাঠামো (Reference Frame)
কোন বস্তুর গতি বর্ণনার জন্য প্রথমেই আমাদের একটি স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা বা প্রসঙ্গ কাঠামো পছন্দ করে নিতে হয়। যে দৃঢ়বস্তুর সাপেক্ষে কোন স্থানে কোন বিন্দু বা বস্তুকে সুনির্দিষ্ট করা হয় তাকে প্রসঙ্গ কাঠামো (Reference Frame) বলে।
একমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো (One dimensional reference frame):
একমাত্রিক বা রৈখিক গতির ক্ষেত্রে যে সরলরেখা বরাবর বস্তুটি গতিশীল প্রথমেই তার একটি বিন্দুকে মূলবিন্দু এবং একটি দিককে ধনাত্মক ধরে নিতে হয়। সেই সরলরেখাটিকে X, Y বা Z যেকোন একটি অক্ষ হিসেবে নামকরণ করা হয়। সাধারণত আমরা ভূ-পৃষ্ঠ বরাবর সরলরৈখিক গতির ক্ষেত্রে একমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামোতে অক্ষটিকে X-অক্ষ ধরে থাকি। আর খাড়া উপর নিচ বরাবর একমাত্রিক কাঠামোতে Y-অক্ষ ধরে থাকি। কিন্তু এমন কোন ধরাবাধা নিয়ম নেই। এ প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে যাবতীয় পরিমাপ করতে হয়।
দ্বিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো (Two dimensional reference frame):
কোন বস্তু যদি একটি সমতলে গতিশীল থাকে তাহলে তার গতিকে দ্বিমাত্রিক গতি বা সমতলীয় গতি বলা হয়। দ্বিমাত্রিক গতি বর্ণনার জন্য আমাদের দুটি অক্ষের তথা দ্বিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামোর প্রয়োজন হয়।দ্বিমাত্রিক স্থানে সুবিধাজনক যেকোন একটি বিন্দুকে মূল বিন্দু ধরে, ঐ বিন্দুকে ছেদকারী পরস্পর লম্ব দুটি সরলরেখা আঁকা হয়। সাধারণত যেকোন একটি সরলরেখাকে X-অক্ষ এবং অপরটিকে Y-অক্ষ ধরা হয়। টেবিলের বা ঘরের কোন দেয়াল বা মেঝেতে পিপড়ার গতি দ্বিমাত্রিক গতির উদাহরণ।
ত্রিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামো (Three dimensional reference frame):
কোন বস্তু যদি কোন স্থানে (space) গতিশীল থাকে তাহলে তার গতিকে ত্রিমাত্রিক গতিবা স্থানিক গতি বলা হয়। ত্রিমাত্রিক গতি বর্ণনার জন্য আমাদেরকে তিনটি অক্ষের তথা ত্রিমাত্রিক প্রসঙ্গ কাঠামোর প্রয়োজন হয়। ত্রিমাত্রিক স্থানে সুবিধাজনক যেকোন একটি বিন্দুকে মূল বিন্দু ধরে ঐ বিন্দুকে ছেদকারী পরস্পর লম্ব তিনটি সরলরেখা বিবেচনা করা হয়। এ সরলরেখা তিনটিকে X, Y ও Z -অক্ষ ধরা হয়। কোন কক্ষে একটি উড়ন্ত মাছির গতি ত্রিমাত্রিকগতির উদাহরণ।বিভিন্ন প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোন বস্তুর অবস্থান ও গতি বিষয়ক বিভিন্ন রাশির মান বিভিন্ন হতে পারে।
প্রসঙ্গ কাঠামোতে গতির প্রকারভেদ:
রৈখিক বা একমাত্রিক গতি: সোজা সড়কে গাড়ির গতি।
সমতলীয় বা দ্বিমাত্রিক গতি: গতি সমতলের উপর সীমাবদ্ধ। যেমন-দেওয়াল বা মেঝের উপর পিপড়ার গতি, টেবিলের উপর মার্বেলের গতি।
স্থানিক গতি বা ত্রিমাত্রিক গতি: কোন স্থানে পাখির গতি স্থানিক গতি।
চলন গতি: একটি পাথরকে কিছু উঁচু হতে ফেলে দিলে তা খাড়া সরল রেখায় নিচের দিকে পড়ে।
চলন গতি দুই ধরনের:
সরল চলন গতি/ঋজু গতি: পড়ন্ত অথবা সরল পথ বরাবর বস্তুর গতি।
বক্র চলন গতি: আকাবাকা বা বক্র পথে চলন্ত জীপের বা রেলগাড়ির গতি।
ঘূর্ণন গতি: বৈদ্যুতিক পাখার গতি, ঘড়ির কাটার গতি, যাতার গতি।
পর্যায় গতি/পর্যায়বৃত্ত গতি: ঘড়ির কাটার গতি, বাষ্প ও পেট্রোল ইঞ্জিনের সিলিন্ডারের মধ্যে পিষ্টনের গতি, দোলনার গতি, বৈদ্যুতিক পাখার গতি।
দোলন গতি: দেয়াল ঘড়ির গতি।
বিভিন্ন প্রকার প্রসঙ্গ কাঠামোর উদাহরণ:
দ্বিমাত্রিক স্থান: ফুটবল খেলার মাঠে একটি গতিশীল ফুটবল দ্বিমাত্রিক স্থানে দৌড়াচ্ছে। পাতলা কাগজ, পাতলা ধাতব পাত্র ইত্যাদি দ্বিমাত্রিক বস্তু।
ত্রিমাত্রিক স্থান: টেবিল, চেয়ার, ইট, পাথর ইত্যাদি ত্রিমাত্রিক বস্তু।
জড় এবং অজড় প্রসঙ্গ কাঠামো (Inertial and non-inertial Reference Frame)
জড় প্রসঙ্গ কাঠামোকে গ্যালিলীয় প্রসঙ্গ কাঠামো বা নিউটনীয় প্রসঙ্গ কাঠামোও বলা হয়।জড় প্রসঙ্গ কাঠামো হলো সে প্রসঙ্গ কাঠামো যার মধ্যে নিউটনের গতিসূত্র অর্জন করা যায়। এরা পরস্পরের সাপেক্ষে ধ্রুব বেগে গতিশীল।
সংজ্ঞা: পরস্পরের সাপেক্ষে ধ্রুব বেগে গতিশীল যে সব প্রসঙ্গ কাঠামোতে নিউটনের গতিসূত্র অর্জন করা যায় তাদেরকে জড় প্রসঙ্গ কাঠামো বলে।