স্টোকসের সূত্র, অন্ত্যবেগ বা প্রান্তিক বেগ, সান্দ্রতা সংক্রান্ত ঘটনাবলি
স্টোকসের সূত্র (Stokes’ law)
কোনো সান্দ্র মাধ্যম (তরল বা গ্যাস) দিয়ে যদি কোনো বস্তু গতিশীল হয় তাহলে এটি এর স্পর্শে থাকা প্রবাহী পদাথের স্তরগুলোকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে । এতে প্রবাহীর বিভিন্ন স্তরের মধ্যে আপেক্ষিক গতির সৃষ্টি হয় । ফলে গতিশীল বস্তুটির উপর একটি সান্দ্র বল কাজ করে । এ বল বস্তুর গতিকে মন্থর করতে চায় ।
r ব্যাসার্ধের কোনো গোলক সান্দ্রতার তরলের ভেতর দিয়ে চলার সময় v বেগ প্রাপ্ত হলে, তরলের সান্দ্রতার জন্য গোলকের গতিকে বাধাদানকারী বল F হবে,
F=6 \pi r \eta v
বল প্রবাহীর সান্দ্রতাঙ্কের সমানুপাতিক, গোলকের বেগের সমানুপাতিক এবং গোলকের ব্যাসার্ধের সমানুপাতিক । এ বল গোলকটি যে দিকে গতিশীল তার বিপরীত দিকে ক্রিয়া করবে । একে স্টোকসের সূত্র বলে ।
কোনো বস্তু যদি অভিকর্ষের প্রভাবে কোনো তরলের মধ্য দিয়ে পতিত হয়, তাহলেও স্টোকসের সূত্র প্রযোজ্য হয় । তখন হয় তরলের সান্দ্রতাঙ্ক ।
স্টোকসের সূত্র শুধু অসীম বিস্তৃতির (infinite extent) প্রবাহীর বেলায় খাটে । যদি গোলকটি অত্যন্ত দ্রুত চলতে থাকে এবং এর ফলে প্রবাহীর প্রবাহ স্রোতরেখা গতি না হয় তাহলে এ সূত্র ভালো খাটবে না ।
অন্ত্যবেগ বা প্রান্তিক বেগ (Terminal Velocity)
স্টোকসের সূত্র থেকে, কোনো বস্তুর উপর বাধাদানকারী বল এর বেগের সমানুপাতিক । যদি v=0 হয়, F=0 এবং v বাড়লে F বাড়ে । এ থেকে বলা যায় যে, কোনো সান্দ্র প্রবাহী দিয়ে যদি কোনো গোলক অভিকর্ষের প্রভাবে পতিত হয় তাহলে আদিতে অভিকর্ষজ ত্বরণের জন্য এর বেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে কিন্তু যুগপৎভাবে এর উপর বাধাদানকারী বল F বৃদ্ধি পায় ফলে বস্তুটির নিট ত্বরণ কমতে থাকে । এক সময় বস্তুটির নিট ত্বরণ শূন্য হয় । বস্তুটি তখন ধ্রুব বেগ নিয়ে পতিত হতে থাকে । এই বেগকে বলা হয় অন্ত্যবেগ বা প্রান্তিক বেগ । যেমন বায়ুর ভিতর দিয়ে শিলার পতন, নদীর বা সমুদ্রের পানিতে ভারী ও কঠিন বস্তুর পতনে একই ঘটনা ঘটে । এগুলোর পড়ার সময় এক সময় নিট ত্বরণ শূন্য হয় এবং সমবেগে পড়তে থাকে ।
মনে করা যাক, কোনো সান্দ্র তরলের ভেতর একটি গোলক পতিত হচ্ছে । গোলকের উপর ক্রিয়াশীল বল হলো-
(ক) নিম্নমুখী বল তথা গোলকের ওজন W
(খ) উর্ধ্বমুখী বল তথা প্লবতা U এবং
(গ) উর্ধ্বমুখী বাধাদানকারী বল তথা সান্দ্র পশ্চাৎটান F ।
আদিতে নিম্নমুখী বল W উর্ধ্বমুখী বল U+F এর চেয়ে বড় । ফলে গোলকটির নিম্নমুখী ত্বরণ থাকে । গোলকটির বেগ বৃদ্ধির সাথে সান্দ্র পশ্চাৎটান ও বৃদ্ধি পায়, ফলে U + F এক সময় W এর সমান হয় । তখন গোলকটি নিচের দিকে চলতে থাকে এবং এর উপর নিট বল কাজ করে না এবং এর বেগ একটি ধ্রুব সর্বোচ্চ মান লাভ করে, একে বলা হয় অন্ত্যবেগ v । এখন,
গোলকের ভর m, ব্যাসার্ধ r, আয়তন V এবং উপাদানের ঘনত্ব \rho_{s} হলে, এর ওজন
W=m g=V \rho_{s} g=\frac{4}{3} \pi r^{3} \rho_{s} gতরলের ঘনত্ব \rho_{s} হলে, প্লবতা
U= অপসারিত তরলের ওজন =V \rho_{f} g=\frac{4}{3} \pi r^{3} \rho_{f} g
প্রবাহীর সান্দ্রতা সহগ হলে, স্টোকসের সূত্রানুসারে সান্দ্র পশ্চাৎটান, F=6 \pi r \eta v
গোলকটি অন্ত্যবেগ প্রাপ্ত হলে,
F+U=W
বা, 6 \pi r \eta v+\frac{4}{3} \pi r^{3} \rho_{f} g=\frac{4}{3} \pi r^{3} \rho_{s} g \\
বা, 6 \pi r \eta v=\frac{4}{3} \pi r^{3} g\left(\rho_{s}-\rho_{f}\right)
বা, v=\frac{2 r^{2}\left(\rho_{s}-\rho_{f}\right) g}{9 \eta}
অনেক সময় আমরা দেখতে পাই পানির মধ্যে বায়ুর বুদবুদ উপরে ওঠে । এক্ষেত্রে অন্ত্যবেগের সমীকরণ হলো
v=\frac{2 r^{2}\left(\rho_{f}-\rho_{s}\right) g}{9 \eta}যেখানে f= পানির ঘনত্ব এবং s বায়ুর বুদবুদের ঘনত্ব
যেহেতু বায়ু বুদবুদের ঘনত্ব s পানির ঘনত্বের তুলনায় অনেক কম sf তাই s কে উপেক্ষা করে উপরিউক্ত সমীকরণকে বায়ু বুদবুদের জন্য লেখা যায়,
v=\frac{2 \pi^{2} \rho_{f} g}{9 \eta}সান্দ্রতা সংক্রান্ত ঘটনাবলি (Few Phenomena regarding Viscosity)
১। শীতল পানির চেয়ে গরম পানির গতি দ্রুততর হয় । এর কারণ তরলের প্রবাহগতি নির্ভর করে এর সান্দ্রতা ধর্মের উপর । যে তরলের সান্দ্রতা যত কম তার দ্রুতি তত বেশি । পানিকে উত্তপ্ত করা হলে এর সান্দ্রতা সহগ হ্রাস পায়, ফলে এর গতি দ্রুততর হয় ।
২। অবাধভাবে পতনশীল বৃষ্টির ফোঁটা পতনের সময় এর বেগ বৃদ্ধি পেয়ে উচ্চ বেগ প্রাপ্ত হওয়ার কথা, কিন্তু তা হয় না । এর কারণ হলো বৃষ্টির ফোঁটা যখন বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে পড়তে থাকে অভিকর্ষের কারণে এর বেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সান্দ্রতার কারণে এর উপর বায়ুমণ্ডলের বাধাদানকারী বলও বৃদ্ধি পেতে থাকে । এক সময় ফোঁটাটির নিট ত্বরণ শূন্য হয় । ফোঁটাটি তখন ধ্রুববেগ নিয়ে পড়তে থাকে। এ বেগকে অন্ত্য বেগ বা প্রান্তিক বেগ বলে ।
সুতরাং অন্ত্য বেগ প্রাপ্তির কারণে অবাধভাবে পতনশীল বৃষ্টির ফোঁটা উচ্চ বেগ প্রাপ্ত হয় না ।