খাদ্য সংরক্ষণের বিভিন্ন কৌশল (Different Mechanism of Food Safety)
❒ খাদ্য সংরক্ষণের বিভিন্ন কৌশল (Different Mechanism of Food Safety) আলোচনা কর।
১। শুষ্ককরণ (Drying Process) : রোদে শুকিয়ে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়। এতে খাদ্যের উপর পানির পরিমাণ কমে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হয়।
২। শীতলীকরণ (Cooling Process): এ পদ্ধতিতে নিম্ন তাপমাত্রায় অণুজীবের পুনরুৎপাদন এবং বংশবিস্তার হ্রাস পায়। তাছাড়া যে সকল এনজাইম খাদ্য পচনে সাহায্য করে এদের কার্যকলাপ হ্রাস পায়, ফলে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে।
৩। ভ্যাকুয়ামপ্যাকিং : বায়ুশূণ্য পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় O_{2} পায় না। ফলে অণুজীব মারা যায় এবং খাদ্য সংরক্ষিত অবস্থায় থাকে।
৪। লবণ যুক্তকরণ/কিউরিং (Curing): অসমোসিস পদ্ধতিতে লবণ মাছ, মাংস থেকে আর্দ্রতা সরিয়ে নেয়। তাছাড়া লবণ ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম নামক অণুজীব যা খাদ্য পচনজনিত বিষ ক্রিয়া সৃষ্টি করে এর বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ করে।
৫। চিনিযুক্তকরণ : চিনির শিরাপ বা কেলাস আকারে ফল সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে খাদ্য কেলাসন না হওয়া পর্যন্ত চিনিতে রান্না করা হয়। প্রক্রিয়াকৃত খাদ্য শুষ্ক অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। যেমন- লাউ, কুমড়ো এদের মোরোব্বা এ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়।
৬। পিকলিং (Pickling): এটি হচ্ছে খাদ্যকে কোনো Anti-microbial তরলে সংরক্ষণ করা। এতে খাদ্যকে কোনো তরলে ডুবিয়ে রাখা হয় যাতে ব্যাকটেরিয়া এবং অণুজীব ধ্বংস হয়। সাধারণত অ্যালকোহল, সরিষার তেল, ব্রাইন (NaCl এর গাঢ় জলীয় দ্রবণ) এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
৭। লাইযুক্তকরণ (Liquidation): লাই দ্রবণ হিসেবে NaOH বা KOH বা Na_{2}CO_{3} এর দ্রবণ ব্যবহৃত হয়। এ দ্রবণ খাদ্যকে এতে বেশি ক্ষারীয় করে যে ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না। তাছাড়া লাই দ্রবণ চর্বিকে সাবানায়ন করে। এতে খাদ্যের গঠন এবং স্বাদ পরিবর্তন হয়।
৮। জেলিকরণ (Jelly): খাদ্যকে এমন একটি পদার্থের সাথে রান্না করা হয় যা শীতল করলে কঠিন জেল এ পরিণত হয়। এক্ষেত্রে পানির পরিমাণ কমে খাদ্য সংরক্ষিত হয়।
৯। Smoking বা ধুমায়িতকরণ: খাদ্যদ্রব্যকে কাঠ পুড়িয়ে ধোঁয়া তৈরি করে সে ধোঁয়াতে উন্মুক্ত করে সংরক্ষণ করা হয়। এতে খাদ্যের সেলফ লাইফ বাড়ে বা অনেকদিন টাটকা থাকে।
১০। তেজস্ক্রিয় রশ্মি (Radioactive rays): গামা রশ্মি, UV রশ্মি, IR রশ্মি প্রয়োগ করে খাদ্য সংরক্ষণ করা যায়। এর সাহায্যে অণু জীব বিনষ্ট করা হয়। অনুজীব বংশবিস্তার করতে পারেনা।
❒ বিভিন্ন খাদ্য সংরক্ষকের সহনীয় মাত্রা :
প্রিজারভেটিভ |
ব্যবহারে সর্বোচ্চ হ্রাস |
|
১ |
বেনজোয়িক এসিড বা সোডিয়াম বেনজয়েট | 0.1% |
২ |
প্রোপনয়িক এসিড বা প্রোপানয়েট লবণ |
0.1 |
৩ |
সরবিক এসিড সরকেট |
0.2% |
৪ | SO_{2} বা সালফাইট |
500ppm |
৫ | প্যারাফিন বা প্যারাবোন |
0.1% |
৬ |
NO_{2}বা SO_{3} লবণ |
100-200ppm |
৭ | BHT, BHA, TBHQ |
200ppm |
খাদ্য কৌটাজাতকরণ প্রণালী (Canning Process)
❒ খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ (Food Canning) কী?
উত্তর: দীর্ঘ সময় ধরে খাদ্যের খাদ্যমান যাতে অপরিবর্তিত থাকে এজন্য খাদ্যকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কৌটায় বা মোড়কে আবৃত করে রেখে খাদ্যকে খাওয়ার উপযোগী করে রাখার ব্যবস্থাকে খাদ্য কৌটাজাতকরণ বলে।
❒ খাদ্যদ্রব্য মোড়কীকরণের জন্য কৌটা বা মোড়ক এর বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
১। পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত
২। বিষাক্ত নয়
৩। হালকা ওজন বিশিষ্ট
৪। সহজে স্থানান্তর যোগ্য
৫। আর্দ্রতা প্রতিরোধক
৬। বায়ুরোধী
৭। সহজে খোলা ও বন্ধ করা যায়
৮। মোটামুটি স্থায়িত্ব এবং অল্পদামী
এর উদ্দেশ্য হলো কৌটাজাত খাদ্য যাতে তার স্বাভাবিক বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ না হারায় ও বহুদিন পর্যন্ত ভালোভাবে রাখা যায়।
কৌটাজাতকরণের সতর্কতা (Canning Process Warning) :
কৌটাজাতকরণ সঠিকভাবে অনুসৃত না হলে ঐ খাদ্যবস্তুতে ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটে এবং তাদের থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত উৎসেচক বা টক্সিন যুক্ত হয়। খাদ্যবস্তুর এ অবস্থাকে বটুলিজম (botulism) বলে । বটুলিজমের কারণে ফুড-পয়জনিং বা খাদ্য বিষাক্ত হয়। এরূপ খাদ্য গ্রহণে মানুষের মৃত্যুও ঘটতে পারে। সুতরাং কৌটাজাতকরণ সঠিকভাবে শেখা ও পদ্ধতিগতভাবে সঠিক নিয়মে সম্পন্ন করা অত্যাবশ্যক। এর জন্য প্রধান শর্ত হলো সর্বাধিক বিশুদ্ধ কাঁচামাল বা উপাদান (freshest ingredients) ব্যবহার করা।
খাদ্যবস্তু কৌটাজাতকরণ বা ক্যানিং এর প্রক্রিয়া (Food Canning Process):
টিনের তৈরি কৌটা বা ক্যানের মধ্যে ছোট ছোট আকারে খাদ্যবস্তু আবদ্ধ রেখে ঐ কৌটাগুলোকে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা যেমন বেশি অম্লীয় খাদ্যবস্তুর (\mathrm{pH}<4.6) বেলায় 82^{\circ} \mathrm{C} থেকে 100^{\circ} \mathrm{C} এবং কম অম্লীয় খাদ্যবস্তু, মাছ-মাংসের (\mathrm{pH}>4.6) বেলায় 115^{\circ} \mathrm{C} থেকে 121^{\circ} \mathrm{C} পর্যন্ত উত্তপ্ত করলে, খাদ্যবস্তু পচন ও বিনষ্টকারী ব্যাকটেরিয়া (মাইক্রোঅর্গানিজম) মরে যায়। উত্তপ্তকরণ কালে কৌটার ভেতরে ফুটানো পানি ও কিছু খালি অংশ থাকে। কাঁচা খাদ্যবস্তু যেমন কাঁচা সবজি তখন সিদ্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় কৌটায় আবদ্ধ খাদ্যবস্তু ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হয়ে যায়। প্রক্রিয়ায় শেষের দিকে কৌটাটি প্রায় বায়ুশূন্য অবস্থায় থাকে এবং বাতাসে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া খাদ্যবস্তুর সংস্পর্শে আসতে পারে না। ফলে কৌটাবদ্ধ খাদ্যবস্তু নিরাপদে সংরক্ষিত থাকে।
❒ খাদ্য কৌটাজাতকরণের ধাপসমূহ (Steps to food packaging) বর্ণনা কর।
খাদ্য কৌটাজাতকরণের ধাপসমূহ প্রবাহচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হল
❒ ব্লাঞ্চিং (Blanching) কি?
ফুটন্ত পানিতে বা সদ্য উৎপাদিত বাষ্পে প্রস্তুতকৃত তথা খোসা ছড়ানো ও টুকরা করা খাদ্যবস্তুর টুকরাগুলোকে 5-10 min তাপ প্রয়োগ করা হয়। এ প্রক্রিয়াকে ব্লাঞ্চিং বলে। এ প্রক্রিয়ার ফলে খাদ্য সামগ্রী পরিষ্কার হয় এবং খাদ্য সামগ্রীর আয়তন কমে যাওয়ায় ভালো ভাবে কোটাজাতকরণ করা যায়। অনেক সময় অসহনীয় ও অগ্রহণযোগ্য ঘ্রাণও দূর হয়। কোনো কোনো শাকসবজির গায়ে পিচ্ছিল পদার্থসমূহ দূর করে। তাছাড়া এ পদ্ধতি কিছু অণুজীবকে মেরে ফেলে এবং খাদ্যস্থিত এনজাইমকে পুরোপুরি ধ্বংস করে। বেশি পাকা ফল এর ক্ষেত্রে ব্লাঞ্চিং করা হয় না।
❒ এগজস্টিং বা বায়শূন্যকরণ বলতে কী বুঝ?
একটি বিশেষ পদ্ধতির সাহায্যে খাদ্যবস্তুসহ পাত্রে ঢাকনা লাগানোর আগে পাত্রের ভিতরের বাতাস নিষ্কাশন করা হয়। বাতাস বের করার এ প্রক্রিয়াকে বাতাস নিঃসরণ পদ্ধতি বলে। এই পদ্ধতিতে পাত্রের মুখের ঢাকনা আলগা করে দিয়ে ফুটন্ত পানিতে পাত্রের \frac{2}{3} অংশ ডুবিয়ে উত্তাপ দিলে বাষ্পের উর্ধ্বগতিতে পাত্রের ভিতরের বাতাস বের হয়ে আসে। পাত্রের ভিতরের তাপমাত্রা 80^{\circ} \mathrm{C} হলে বাতাস সম্পূর্ণ দূরীভূত হয় এবং জলীয় বাষ্প সে স্থান দখল কর। এর জন্য খাদ্যদ্রব্যের স্বাভাবিক রং, গন্ধ ও স্বাদ নষ্ট হয় না O_{2} এর অভাবে জীবাণু জনাতে পারে না, রাসায়নিক ক্রিয়া ঘটে না এবং কৌটার অভ্যন্তরে মরিচা ধরার সম্ভাবনা ও থাকে না। খাদ্য ভর্তি কৌটাকে এগজষ্টিং ও সিলিং করার দুটি পদ্ধতি আছে। যেমন,
(ক) পানি-স্ফুটনবাথ পদ্ধতি (Boiling water bath method) ও
(খ) চাপ কৌটাজাতকরণ পদ্ধতি (Pressure canning method)
(ক) পানি-স্ফুটনবাথ পদ্ধতিতে এগজষ্টিং : পানি স্ফুটন পদ্ধতি দ্বারা টমেটো, বিভিন্ন টক জাতীয় ফল, লবণ-মশলা মিশ্রিত কিছু সবজি সংরক্ষণ করা হয়। এসব টক ফলের pH মান 4.6 বা এর কম হয়। এ প্রক্রিয়ায় খাদ্যবস্তুতে নির্দিষ্ট মাত্রায় লেমন জুস (বা সায়ট্রিক এসিড) যোগ করা হয়। অধিক অম্লীয় পরিবেশে মারাত্মক বিপদজনক ক্লসট্রিডিয়াম বটুলিনাম স্পোর বিনষ্ট হয় বলে এদের টক্সিনও উৎপন্ন হয় না। তাই পানি-স্ফুটন বাথ পদ্ধতিতে অধিক অম্লীয় বা টকযুক্ত খাদ্যবস্তু নিরাপদে সংরক্ষণ করা যায়।
এ পদ্ধতিতে খাদ্যভর্তি কৌটাগুলোকে একটি বড় আকারের Water bath এর মধ্যে কাঠের তাক বা রেকের (rack এর) ওপর দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ রাখা হয়। এরপর Water bath এ পানি ঢেলে কৌটাগুলোকে 1-2 ইঞ্চি পানির উচ্চতায় রাখা হয়। শেষে Water bath এর ঢাকনি হালকা করে লাগানো হয়। এখন ওয়াটার বার্থটিকে সমভাবে তাপপ্রয়োগে 180^{\circ} \mathrm{F} থেকে 212^{\circ} \mathrm{F} (অর্থাৎ 82^{\circ} \mathrm{C} – 100^{\circ} \mathrm{C}) তাপমাত্রা পর্যন্ত টকজাতীয় ফল ও সবজিকে এগজষ্টিং করার জন্য 10 মিনিট, উত্তপ্ত করা হয়। ফলে কৌটা ও খাদ্যবস্তুর মধ্যস্থিত বায়ু তথা O_{2}গ্যাস বের হয়ে পড়ে। তাই টিনের কৌটায় ভেতরে মরিচা পড়ে না। O_{2}এর অভাবে ব্যাকটেরিয়া জন্মায় না। এগজষ্টিং শেষে তাড়াতাড়ি করে কৌটার মুখের ঢাকনি ভালোভাবে সিলড করা হয়।
(খ) চাপ কৌটাজাতকরণ পদ্ধতি এগজষ্টিং : চাপ কৌটাজাতকরণ পদ্ধতি হলো খাদ্যবস্তু সংরক্ষণের একমাত্র নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে মুরগি ও পশুর মাংস, সামুদ্রিক মাছ, দুগ্ধজাত খাদ্য, সকল প্রকার সবজি (বাঁশ কোরল, কচি ভুট্টা, সবুজ মটরশুটি ইত্যাদি) সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
এ সব খাদ্যবস্তু কম অম্লধর্মী হওয়ায় এদের P^{H} মান 4.6 এর বেশি থাকে। এ কম অম্লীয় পরিবেশে বিপদজনক টক্সিন উৎপন্নকারী ক্লসট্রিডিয়াম বটুলিনাম স্পোর জন্মাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই এ সব ক্ষেত্রে চাপ কৌটাকরণ পদ্ধতি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয়। এ পদ্ধতিতে খাদ্যবস্তু ভর্তি কৌটাগুলোকে একটি বড় আকারের প্রেসার ক্যানার (pressure canner) এর মধ্যে কাঠের তাক বা রেকের ওপর দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ রাখা হয়। পানি ঢেলে কৌটাগুলোকে 2-3 ইঞ্চি পানির উচ্চতায় সম্পূর্ণ ডুবিয়ে রাখা হয়।
প্রেসার ক্যানারের ঢাকনি হালকাভাবে বন্ধ করা হয়। এগজষ্টিং করার জন্য প্রেসার ক্যানারকে 180^{\circ} \mathrm{F} থেকে 212^{\circ} \mathrm{F} অর্থাৎ\left.82^{\circ} \mathrm{C}-100^{\circ} \mathrm{C}\right) তাপমাত্রা পর্যন্ত 10 মিনিট উত্তপ্ত করা হয়। তখন কৌটায় ভেতরের O_{2}বের হয়ে পড়ে। এগজষ্টিং শেষে কৌটার মুখে ঢাকনি লাগিয়ে ভালোভাবে সিলড করা হয়। এগজষ্টিং দ্বারা কৌটায় O_{2}মুক্ত হয়, এর ফলে ক্লসট্রিডিয়াম বটুলিনাম বৃদ্ধি পেতে পারে না।
❒ স্টেরিলাইজিং (Sterilizing) কী?
খাদ্যবস্তুকে তাপ প্রয়োগে সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করার পদ্ধতিকে স্টেরিলাইজিং বলে। কৌটা সিলিং করার পর স্টেরিলাইজিং বা রিটটিং করা হয়। যেসব খাদ্যে এসিড বেশী থাকে তাদেরকে 90-100^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় প্রায় 30 মিনিট যাবৎ স্টেরিলাইজ করা হয়। যেসব খাদ্যে এসিড কম থাকে তাদেরকে 120-135^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় প্রায় 1.5 থেকে 2 ঘণ্টা ধরে স্টেরিলাইজড করা হয়। এর ফলে কৌটার মধ্যে সব অণুজীব মরে যায়। সবজিজাত খাদ্য মাছ, মাংস সংরক্ষণে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এতে ক্ষতিকর ক্লসট্রিডিয়াম বটুলিনামের স্পোর সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।
❒ পাস্তরাইজেশন (Pasteurization) কী?
তাপ প্রয়োগে দুধকে বা তরল খাদ্যকে জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়াকে পাস্তুরাইজেশন বলে। 100°\mathrm{C} তাপমাত্রা বা এর নীচে কম তাপমাত্রায় জীবাণু ধ্বংস করার প্রক্রিয়াকে পাস্তুরাইজেশন বলে। ফলজাত দ্রব্যের সংরক্ষনের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া জীবাণু ধ্বংস করা হয়। এজন্য তাপমাত্রা ও সময় এমনভাবে নির্ধারণ করা হয় যাতে ঈষ্ট ও মোল্ড ধ্বংস প্রাপ্ত হয় এবং বিভিন্ন এনজাইম ও ব্যাকটেরিয়া নিষ্ক্রিয় হয়। দুইভাবে একাজ সম্পন্ন করা হয়।
(i) উচ্চ তাপমাত্রায় পাস্তুরায়ন- এ পদ্ধতিতে প্রায় 74-75°\mathrm{C} তাপমাত্রায় ১৬ থেকে ২০ সেকেন্ড উত্তপ্ত করা হয়।
(ii) অতি উচ্চ তাপমাত্রায় পাস্তরায়ন- এ পদ্ধতিতে 138-140°\mathrm{C} তাপমাত্রায় মাত্র ২ সেকেন্ড উত্তপ্ত করা হয়। একে Ultra পাস্তরিত দুধ বলে।
❒ বিভিন্ন প্রকার ফলের কৌটাজাতকরণ (Canning of different types of fruits) বর্ণনা কর।
আনারস (Pineapple)
কৌটাজাতকরণের জন্য পুরোপুরি পাকা আনারস নির্বাচন করা হয়। মুকুল, কান্ডসহ অন্যান্য অভক্ষণীয় অংশ দূর করে প্রয়োজনানুসারে ছোট ছোট টুকরা (Slice) করা হয়। পরবর্তীতে আকারের ভিত্তিতে এগুলো গ্রেডিং (greading) করা হয়। এরপর স্লাইসগুলো উপযুক্ত মাত্রার ক্যানে ভর্তি করা হয় এবং তাতে পরে 40% চিনির সিরাপ গরম অবস্থায় যোগ করা হয়। এরপর ক্যানকে এগজসটিং (exhausting) করে সিল (seal) করা হয় এবং ফুটন্ত পানিতে সিল করা ক্যানকে 20-30 মিনিট প্রসেসিং (proessing) করে ঠাণ্ডা করা হয়।
কমলা (Orange)
পুরোপুরি পরিপক্ব কমলা বেছে নিয়ে 2-3 দিন ধরে কিউরিং করা হয়। খোসা ছাড়িয়ে কোষগুলো পৃথক করা হয় এবং 0.5% হাইড্রোক্লোরিক (HCl) দ্রবণে 30 মিনিট ডুবিয়ে 2.5% লাই দ্রবণে 90°C তাপমাত্রায় 30 – 60 sec রাখা হয়। তারপর 1% হাইড্রোক্লোরিক এসিড দ্রবণে 3 মিনিট রেখে ধুয়ে নিয়ে বীজগুলো দূর করা হয়। ক্যানে ভর্তি করে 0.25% সাইট্রিক এসিডযুক্ত 40% গরম চিনির সিরাপ (sirup) যোগ করা হয় এরপর এগজস্টিং করে সিল করা হয় ও গরম পানিতে ({ 83}^{\circ} \mathrm{C}) তাপমাত্রায় 35 মিনিট প্রসেস করা হয়।
আম (Mango)
সম্পূর্ণ পাকা ও হৃষ্টপুষ্ট আঁটসাট আম বেছে নিয়ে ধৌত করে খোসা ছাড়ানো হয় এবং সাইস করা হয়। তারপর এগুলো ক্যানে ভরে গরম সিরাপ (৪০% চিনির) যোগ করা হয়। এই সিরাপে 0.25% সাইট্রিক এসিড যোগ করা হয়। এরপর এগজস্টিং ও সিল করে 20-30 মিনিট ফুটন্ত পানিতে প্রসেসিং করা হয়।
কাঁঠাল (Jackfruit)
প্রাকৃতিকভাবে পাকা ও মাঝারি নরম ধরনের বড় কোয়াবিশিষ্ট কাঁঠাল নির্বাচন করা হয়। শুধু হলুদ কোয়াগুলো বীজ থেকে আলাদা করা হয়। প্রতিটি কোয়া সম্পূর্ণ অবস্থায় অথবা অর্ধেক করে নেওয়া যেতে পারে ! কোয়াগুলো ক্যানে ভর্তি করে 0.25% সাইট্রিক এসিড যোগ করে 40% মাত্রার চিনির সিরাপ যোগ করতে হয়। এরপর এগজস্টিং সল করে 20-30 মিনিট ধরে প্রসেসিং করার পর দ্রুত ঠান্ডা করা হয়।
পেয়ারা (Guava)
প্রথমত, ছোট বীজবিশিষ্ট পরিপক্ক পেয়ারা বেছে নিয়ে ধৌত করা হয়। দ্বিতীয়ত, 2.5% লাই দ্রবণে 1-2 মিনিট রেখে পুনরায় পানি দিয়ে ধুয়ে 0.25% এসিডযুক্ত পানিতে 4-5 মিনিট ডুবিয়ে রাখা হয়। তারপর দ্রবণ থেকে তুলে আবার ধুয়ে প্রতিটি পেয়ারা সুবিধানুযায়ী 2-4 টুকরা করা হয়। টুকরাগুলো ক্যানে ভরে 0.06 সাইট্রিক এসিড ও 0.125% এসকরবিক এসিডবিশিষ্ট 10% গরম চিনির সিরাপ যোগ করা হয়। এরপর এগজস্টিং করে সিল করা হয় এবং 20-30 মিনিট ফুটন্ত পানিতে প্রসেস করে ঠান্ডা করা হয়
❒ বাঁশকোরল কৌটাজাতকরণের পদ্ধতি (Method of bamboo coral canning) বর্ণনা কর।
বাঁশকোরল মধ্যে 4.5% শর্করা, আঁশ এর পরিমাণ 0.9%, প্রোটিন 1.6% চর্বি 0.3%। এছাড়া ভিটামিন A, B_{1}, B_{2} ও C থাকে। এটি-
১। এটি রুচি বাড়ায় ও হজমে সাহায্য করে।
২। ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
৩। রক্তচাপ ও রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমায়।
বাঁশ অঙ্কুরিত হওয়ার পর এ কচি অংশ 15-16 cm লম্বা হলে মাটির পাত্র দ্বারা ঢেকে দেওয়া হয়। বেশ কয়েকদিন এভাবে রাখলে বাঁশ পাত্রের ভেতরে কুন্ডলী আকারে বড় হয়ে থাকে। পরে পাত্র ভেঙ্গে বাঁশকোরল সংগ্রহ করে এর নরম অংশ সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি সরাসরি বা মাছ মাংসের সাথে মিলিয়ে রান্না করা হয়।
পদ্ধতি : প্রথমে বাঁশকোরল সংগ্রহ করে পরিষ্কার করে অপ্রয়োজনীয় অংশ পরিহার করতে হয়। এরপর নির্দিষ্ট আকারে পরিণত করা হয়। অতঃপর ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করা হয় বা ব্লাঞ্চিং করা হয়। অতঃপর বাঁশকোরলের টুকরাগুলোকে উপযোগী পাত্র বা কৌটার মধ্যে নেওয়া হয়। কোটার মধ্যে 7-8% NaCl দ্রবণ যোগ করা হয় যা প্রিজারভেটিভ হিসেবে কাজ করে। অতঃপর কৌটা এগজস্টিং করার পর সিলিং করা হয় । অতঃপর স্টেরিলাইজড কৱা হয় । শেষে লেভেলিং করে গুদামজাত করা হয়।
❒ মটরশুটি সংরক্ষণ বা গুদামজাত করার পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর।
এক্ষেত্রে পরিপক্ক এবং পুষ্ট দানাযুক্ত মটরশুটি সংরক্ষণ করা হয়। এগুলোকে 88-92{ }^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় প্রায় 5 min ব্লাঞ্চিং করা হয়। পানি থেকে তুলে এনে ঠান্ডা করা হয়। অতঃপর খোসা অপসারণ করে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে পানি সরিয়ে নেওয়া হয়। অতঃপর সংরক্ষণকারী কৌটায় মটর দানাগুলো ভর্তি করে 1.5% NaCl দ্রবণ এবং কখনো কখনো 2.5% চিনির দ্রবণ যোগ করা হয়। অতঃপর কৌটাকে এগজস্টিং করে সিলিং করা হয়। এরপর স্টেরিলাইজড করে লেভেলিং এরপর গুদামজাত করা হয়।
❒ কাঁচা মাছ কৌটাজাকরণের পদ্ধতি (Method of Raw fish Canning) বর্ণনা কর।
মাছে Protein এর পরিমাণ 14-20%, চর্বি 0.2-20%, খনিজ লবণ 1-1.8%, ভিটামিন 0.2-1%, কঠিন পদার্থ 24-35% মাছের চর্বিতে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকায় সব বয়সের মানুষের জন্য এটি হজমযোগ্য। মাছে এই অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড জারণ ক্রিয়ার প্রতি খুবই সংবেদনশীল। তাই এটি সহজে পচে যেতে পারে। তাছাড়া মাছ Low Acid Food হওয়ায় সহজে বিভিন্ন অণুজীব দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
পদ্ধতির বর্ণনা :
১। সতেজ এবং স্বাস্থ্যবান মাছ নির্বাচন করা হয়।
২। মাছের মাথা কেটে অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট আকারের টুকরা করা হয়।
৩। মাছের টুকরাগুলোকে NaCl দ্রবণে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখা হয়। এতে মাছের ভিতর জমাট বাঁধা রক্ত এবং অন্যান্য ময়লা বেরিয়ে আসে।
৪। মাছের অপ্রয়োজনীয় তরল এবং গন্ধ দূর করার জন্য ব্লাঞ্চিং করা হয়। এতে মাছের অণুজীব মারা যায়। অতঃপর এ টুকরোগুলোকে ZnO এর প্রলেপযুক্ত কৌটার মধ্যে ভর্তি করা হয়। এতে ZnO এবং মাছের ভিতরকার সালফাইড বিক্রিয়া করে ZnS গঠন করে যা মাছের বর্ণ সৃষ্টি করে।
৫। কৌটাবদ্ধ মাছের মধ্যে 2% NaCl দ্রবণ যোগ করা হয়।
৬। অতঃপর কৌটাকে এগজস্টিং করে সিলিং করা হয়।
৭। সবশেষে কৌটা স্টেরিলাইজড করে লেভেলিং করা হয় এবং গুদামজাতকরণ করা হয়।
❒ মাংস সংরক্ষণ বা কৌটাজাতকরণের পদ্ধতি (Method of Meat Canning) বর্ণনা কর।
মাংসে পানি 75%, প্রোটিন 19%, চর্বি 2.5%, কার্বোহাইড্রেট 0.3%, অ্যামিনো এসিড 1.65%, অজৈব লবণ 0.65%, ল্যাকটিজ এসিড 0.9%। সুস্থ, সবল পশুর মাংসে সাধারণত অনুজীব কম থাকে। তবে মাংস সংগ্রহ বা কাটার সময় অণুজীব দ্বারা সহজে আক্রান্ত হয়। এ অণুজীবগুলো প্রোটিন এবং অ্যামাইনো এসিডের N_{2}কে গ্রহণ করে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। এর ফলে মাংসের মধ্যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া চর্বির জারণ ক্রিয়ার ফলেও মাংস নষ্ট হয়ে টক স্বাদ যুক্ত হয় ।
পদ্ধতিঃ
১। সুস্থ, সবল দেহের অধিকারী মাঝারি বয়সের পশু নির্বাচন করা হয়।
২। এরপর পশু জবাই করে অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো বাদ দেওয়া হয়।
৩। মাংসকে নির্দিষ্ট আকারে টুকরা করে বিশুদ্ধ পানিতে ধুয়ে চাপ প্রয়োগে মুক্ত পানি বের করে নেওয়া হয়।
৪। অতঃপর ক্যান বা কৌটার মধ্যে মাংসের টুকরাগুলো ভর্তি করে এর মধ্যে 2% NaCl দ্রবণ এবং মাঝেমধ্যে 2% চিনির দ্রবণ নিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
৫। অতঃপর মাংস ভর্তি কৌটাকে এগজস্টিং করে সিলিং করা হয়।
৬। অতঃপর স্টেবিলাইজড করে লেভেলিং করে গুদামজাত করা হয়।
❒ বটুলিজম (Botulism) কী?
উত্তর: খাদ্যবস্তু ঠিকমত ক্যানিং না হলে ঐ খাদ্যবস্তুতে বিষক্রিয়া জনিত এক প্রকার রোগ যা ক্লোসট্রিডিয়াম বটুলিনাম নামক এক ধরনের অনুজীবের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে সৃষ্টি হয়।
❒ রাসায়নিক খাদ্য সংরক্ষণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বর্ণনা কর।
উত্তর: অধিকাংশ রাসায়নিক খাদ্য সংরক্ষক ব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে। তাই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মাত্রার মধ্যে এগুলো ব্যবহারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। নিচে কিছু অতিপরিচিত খাদ্য সংরক্ষকের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ব্যাখ্যা দেওয়া হলো-
১. সোডিয়াম নাইট্রাইট : এটি মাছ ও মাংসে ব্যবহৃত একটি পরিচিত খাদ্য সংরক্ষক। এটি মাংসের প্রোটিনের সাথে বিক্রিয়া করে নাইট্রোসো অ্যামিন গঠন করে যা ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। জার্মান, নরওয়ে প্রভৃতি উন্নত দেশ একে বিষাক্ত খাদ্য সংরক্ষক হিসেবে বিবেচনা করে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। নাইট্রাইট হিমোগ্লোবিনের সাথে বিক্রিয়া করে মেথিমোগ্লোবিন গঠন করে, ফলে রক্তে O_{2} পরিবহনে বাধার সৃষ্টি হয়।
২. সাইট্রিক এসিড : প্রাকৃতিকভাবে সংগৃহীত সাইট্রিক এসিডের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে বিভিন্ন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন কৃত্রিম সাইট্রিক এসিড খাদ্য সংরক্ষক হিসেবে ব্যবহার করলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এর ফলে এজমা, এলার্জি প্রভৃতির সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
৩. বেনজোয়েট : এটি ময়দা, ঘি, জুস, মদ, আচার, প্রভৃতিতে ব্যবহার করা হয়। বেনজোয়েটযুক্ত খাবার খেলে এলার্জি এমনকি মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব রাখতে পারে। বেনজোয়েটযুক্ত খাবার ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ অনেক সময় তাপ, আলো এবং দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের ফলে খাদ্যের ভিটামিন C এর সাথে বেনজয়িক এসিড বিক্রিয়া করে বেনজিন গঠন করে। এই বেনজিন ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
৪. ব্রোমেট \left(\operatorname{BrO}_{3}^{-}\right) : এটি সাদা ময়দা পাউরুটিতে ব্যবহার করা হয়। এগুলো ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
৫. BHA & BHT: এগুলো মাংস, বেকারিফুড, স্ন্যাকস, মদ চুয়িংগাম, ক্যান্ডি, জেলি প্রভৃতি সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এগুলো ব্যবহারে ক্যান্সার ঝুঁকি আৃছে।
৬. সালফাইট : এটি মূলত ফল, শুকনো ফল, বিভিন্ন ধরনের কর্ণ সিরাপ, ওয়াইন জিনগার, ক্যান ও অলিভ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এধরনের খাদ্য সংরক্ষক গ্রহণে মাথাব্যথা, হার্টের ব্যথা, এলার্জি ও ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
৭. ফরমালডিহাইড (\mathrm{H}-\mathrm{CHO}) : এটি খুবই শক্তিশালী জীবাণুনাশক। বিল্ডিং এর দেয়াল, তাক, মেঝে প্রভৃতি জীবাণুমুক্ত করতে একে ব্যবহার করা হয়। এটি মোল্ডের বিরুদ্ধেও খুবই কার্যকর কিন্তু বিষক্রিয়ার জন্যে খাদ্যে একে ব্যবহার করা যায় না। মিথান্যাল জীবের প্রোটিনের অ্যামিনো গ্রুপের সাথে বন্ধন তৈরি করে বিধায় প্রোটিন নষ্ট হতে পারে না বিধায় মিথান্যাল জীববিজ্ঞানের নমুনা সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয়। \mathrm{H}-\mathrm{CHO} এর 40% জলীয় ফরমালিন বলে। ফরমালিন যুক্ত খাবার খেলে ক্যান্সার হয়।
❒ মাছ থেকে কিরূপে ফরমালিন দূর করা যায়?
উত্তর:
- পরীক্ষায় দেখা গেছে পানিতে প্রায় ১ ঘন্টা মাছ ভিজিয়ে রাখলে ফরমালিনের মাত্রা শতকরা ৬১ ভাগ কমে যায়।
- লবণাক্ত পানিতে ফরমালিন দেওয়া মাছ ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ফরমালিনের মাত্রা কমে যায়।
- প্রথমে চাল ধোয়া পানিতে ও পরে সাধারণ পানিতে ফরমালিন যুক্ত মাছ ধুলে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ ফরমালিন দূর হয়।
- সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো ভিনেগার ও পানির মিশ্রণে (পানিতে ১০% আয়তন অনুযায়ী) ১৫ মিনিট মাছ ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ ফরমালিনই দূর হয়।
- খাওয়ার আগে ১০ মিনিট গরম লবণ পানিতে ফল ও সবজি ভিজিয়ে রাখতে হবে।
❒ অনুমোদিত প্রিজারভেটিড এর তালিকা নির্ণয় কর।
প্রিজারভেটিভ |
ব্যবহারের সর্বোচ্চ মাত্রা | ব্যবহারযোগ্য খাদ্য সামগ্রী |
সরবিক এসিড (পটাশিয়াম সরবেট) |
0.2% |
মাংস, মাছ, ডিম, ফল, পোল্টিজাত খাদ্য, কেক। |
বেনজোয়িক এসিড (সোডিয়াম বেনজোয়েট) |
0.1% |
কার্বনেটেড পানীয়, আচার, কৌটাজাত ফল, ক্যান্ডি, সয়াসস, জ্যাম, ফলের রস, বেভারেজ, পাস্টিক বোতলজাত জুসে। |
4-হাইড্রক্সি বেনজয়িক এসিড ও ইথাইল এস্টার |
0.1% | কার্বনেটেড পানীয়, ফলের জুস, জ্যাম, সয়াসস, কেক, বেভারেজ। |
কার্বন ডাইঅক্সাইড |
0.1 – 0.4% | কার্বনেটেড পানীয়, ওয়াইন। |
নিসিন | 0.2% |
উদ্ভিজ্জ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য, মাংস, ডেইরি খাদ্য। |
পোপানয়েট (ক্যালসিয়াম পোপানয়েট ও সোডিয়াম প্রোপানয়েট) | 0.1% |
পাউরুটি, পেষ্ট্রি, সয়াসস, পাস্তা জাতীয় খাদ্য। |
ইরাইথোরবিক এসিড |
150 ppm | মাংস, মাংসজাত খাদ্য, মাছ, মাছজাত খাদ্য, আচার। |
পটাশিয়াম নাইট্রেট |
200 ppm | আচার, সস, মাংস, পনির। |
ইথাইল লরাইল অর্জিনেট |
200 ppm |
পনির, মাংস, মাছ, সস, স্যুপ, টমেটো কেচাপ। |
মিথাইল প্যারবিন | 1000 ppm |
প্যাকেটজাত মাছ, মাংস, জ্যাম, জেলি, আচার, টমেটো কেচাপ। |
পটাশিয়াম ল্যাকটেট |
জ্যাম, জেলি, আচার, টমেটো, পেস্ট, সাইট্রাসযুক্ত খাবার, সলিড মাংস। |
|
পটাশিয়াম থায়োসালফেট | 500 ppm |
মন্টলিকার মধু, পেকটিনযুক্ত জ্যাম, জেলি, আচার, টমেটো সস, কেচাপ |
❒ পাস্তুরাইজেশন (Pasteurization) এবং স্টেরিলাইজেশনের (Sterilization) মধ্যে পার্থক্য লিখ।
পাস্তুরাইজেশন |
স্টেরিলাইজেশন |
১. 100°C বা এর কম তাপমাত্রায় জীবাণু ধ্বংস করার প্রক্রিয়াকে পাস্তুরাইজেশন বলে। |
১. 100°C বা এর অধিক তাপমাত্রায় জীবাণু ধ্বংস করার প্রক্রিয়াকে স্টেরিলাইজেশন বলে। |
২. তরল খাবার থেকে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক জাতীয় জীবাণু দূর হয়। |
২. তরল ও কঠিন খাবার থেকে সব জীবাণু দূরীভূত হয়। |
৩. এটি ধীর প্রক্রিয়া। |
৩. এটি দ্রুত প্রক্রিয়া। |
❒ প্রশ্ন: জ্যাম এবং জেলি (Jam & Jelly) কী?
উত্তর: ফলের খোসা ছড়ানোর পর ছোট ছোট বিচিযুক্ত ফলকে কুচি কুচি করে বা ক্রাসিং করে প্রয়োজনীয় প্রিজারভেটিভসহ সংরক্ষণ করলে জ্যাম তৈরী হয়। আবার ফলের রস বা ফলকে সিদ্ধ করে ছেঁকে বিচিমুক্ত তরলকে প্রয়োজনমত প্রিজারভেটিভসহ সংরক্ষণ করলে জেলি তৈরী হয়। জ্যাম ও জেলি উভয়েই সমগোত্রীয় এবং প্রায় একই পদ্ধতিতে উৎপাদিত ও সংরক্ষিত হয়ে থাকে। তবে জ্যাম তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় ফলের শাঁস ও মন্ড। কিন্তু জেলি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন ফলের স্বচ্ছ পেকটিন নির্যাস। জেলির ক্ষেত্রে সমাপ্তি স্ফুটনাংক 105° সেন্টিগ্রেড এবং এতে চিনির পরিমাণ 65% থাকা উচিত।
কেবলমাত্র চিনি, এসিড, পেকটিন গুড়া, ভোজ্য রঙ ও গন্ধ সহযাগে উৎপাদিত জেলিকে সিনথেটিক, জেলি বলে। এতে আদৌ কোনো ফল ব্যবহার করা হয় না।