10 Minute School
Log in

ক্রিস্টালয়েড, কোলয়েড, সাসপেনশন, কোয়াগুলেশন | Crystalloid, Colloid, Suspension, Coagulation

  প্রশ্ন: ক্রিস্টালয়েড, কোলয়েড কী?

উত্তর: ইংরেজ বিজ্ঞানী টমাস গ্রাহাম (Thomas Graham) কে কোলয়েড রাসায়নের জনক বলা হয়। পার্চমেন্ট কাগজ অথবা প্রাণীজ বা উদ্ভিজ্জ ঝিল্লির ভিতর দিয়ে পদার্থের জলীয় দ্রবণের অতিক্রম করার ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানী গ্রাহাম পদার্থগুলোকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেন। এগুলো হলো ক্রিস্টালয়েড ও কোলয়েড। যেসব পদার্থ পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় পার্চমেন্ট কাগজ অথবা প্রাণীজ বা উদ্ভিজ্জ ঝিল্লির মধ্য দিয়ে যেতে পারে, সেগুলো হলো ক্রিস্টালয়েড। সোডিয়াম ক্লোরাইড, চিনি, ইউরিয়া ইত্যাদি ক্রিস্টালয়েড-এর উদাহরণ। অন্যদিকে, যেসব পদার্থ পানি দ্রবীভূত অবস্থায় পার্চমেন্ট কাগজ অথবা প্রাণীজ বা উদ্ভিজ্জ ঝিল্লির মধ্য দিয়ে যেতে পারে না, সেগুলো হলো কোলয়েড। স্টার্চ, গ্লু, জিলেটিন, অ্যালবুমিন, প্রোটিন ইত্যাদি কোলয়েড-এর উদাহরণ। কোলয়েড কোনো বিশেষ শ্রেণির পদার্থ নয়, এটি পদার্থের একটি বিশেষ অবস্থা মাত্র। কারণ একই পদার্থ কোনো একটি মাধ্যমে ক্রিস্টালয়েডের মতো আচরণ করলেও অপর একটি মাধ্যমে কোলয়েডের মতো আচরণ করতে পারে। 

উদাহরণ : \mathrm{NaCl} পানি সম্পূর্ণরূপে দ্রবীভূত হয় এবং এই অবস্থায় ক্রিস্টালয়েডের মতো আচরণ করে, কিন্তু বেনজিনে \mathrm{NaCl} কোলয়েডের মতো আচরণ করে। একইভাবে সালফার অ্যালকোহলে ক্রিস্টালয়েডের মতো আচরণ করে, কিন্তু পানিতে কোলয়েডের মতো আচরণ করে। 

আবার ক্রিস্টালয়েড শব্দটির প্রয়োগেও বিশেষ যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ হিমোগ্লোবিন, ডিমের অ্যালবুমিন প্রভৃতি কোলয়েডকে কেলাসাকারে পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে, শর্ত বা বিক্রিয়ার নিয়ামকের পরিবর্তন ঘটিয়ে কোনো ক্রিস্টালয়েডকে কোলয়েডে এবং কোনো কোলয়েডকে ক্রিস্টালয়েডে পরিবর্তন করা যায়। সুতরাং কোলয়েড কোনো বিশেষ শ্রেণির পদার্থ নয়, এটি পদার্থের একটি বিশেষ অবস্থা মাত্র।

  প্রকৃত দ্রবণ, কোলডীয় দ্রবণ ও সাসপেনশন কী? 

উত্তর: ডিসপার্শন সিস্টেম (Dispersion System) : দুটি পদার্থের সমসত্ত্ব মিশ্রণ যেখানে একটি পদার্থ (কঠিন, তরল বা গ্যাসীয়) অপর একটি পদার্থের (কঠিন, তরল বা গ্যাসীয়) মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কঠিন কণা বা তরল বিন্দু বা গ্যাসীয় বুদবুদ হিসেবে বিস্তৃত থাকে তাকে বিস্তার বা ডিসপার্শন তন্ত্র বলে। বিস্তৃত দশার কণার আকারের উপর ভিত্তি করে বিস্তার মাধ্যমে তিন প্রকার। এগুলো হলো,

১। প্রকৃত দ্রবণ (True solution) 

২। কোলয়েডীয় দ্রবণ (Colloidal solution) এবং

৩। সাসপেনশন (Suspension)। 

১। প্রকৃত দ্রবণ (True solution):

কোনো দ্রাবকে মিশ্রিত দ্রব্য পদার্থ 10^{-4} cm কিংবা আরও ক্ষুদ্রতর ব্যাসবিশিষ্ট কণায় বিভাজিত হয়ে এবং দ্রাবকের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে গিয়ে যে সমসত্ত্ব মিশ্রণ গঠন করে, তাকে প্রকৃত দ্রবণ বলে। 

ব্যাখ্যা : এ ধরনের দ্রবণে দ্রবীভূত দ্রব্য কণাগুলোর আকার অতি ক্ষুদ্র হওয়ায় এগুলোকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও দেখা যায় না। এক্ষেত্রে দ্রাব্য কণাগুলো ফিল্টার পেপার ও পার্চমেন্ট পেপার অথবা প্রাণীজ বা উদ্ভিজ্জ ঝিল্লির মধ্যে দিয়ে সহজেই চলে যেতে পারে। এরূপ দ্রবণের একটি উল্লেখ্যযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, অনেকদিন রেখে দিলেও দ্রব্য কণাগুলো থিতিয়ে পড়ে না। উদাহরণ- পানির মধ্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড বা চিনি দ্রবীভূত হয়ে প্রকৃত দ্রবণ তৈরি করে। 

২। কোলয়েডীয় দ্রবণ (Colloidal solution) :

যখন একটি পদার্থ (বিস্তৃত দশা) অপর একটি পদার্থের (বিস্তার মাধ্যমে) মধ্যে 10^{-7} থেকে 10^{-5} cm ব্যাসবিশিষ্ট্য কণারূপে বিস্তৃত থেকে একটি অস্বচ্ছ এবং অসমসত্ত্ব কিন্তু স্থায়ী মিশণ উৎপন্ন করে, তাকে কোলয়েডীয় দ্রবণ বলে। কোলয়েড কণাগুলো সাধারণ ফিল্টার কাগজের মধ্য দিয়ে সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে কিন্তু পার্চমেন্ট কাগজ অথবা প্রাণীজ বা উদ্ভিজ্জ ঝিল্লির মধ্য দিয়ে যেতে পারে না। 

ব্যাখ্যা : কোলয়েডীয় দ্রবণের কণাগুলোর আকার প্রকৃত দ্রবণের দ্রব কণাগুলোর আকার অপেক্ষা বড় হলেও এগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। তবে আল্ট্রা-অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে কণাগুলোকে দেখা যায়। এরূপ দ্রবণের কণাগুলো স্বতস্ফূর্তভাবে থিতিয়ে পড়ে। উদাহরণ : সদ্য অধঃক্ষিপ্ত ফেরিক হাইড্রক্সাইডের সঙ্গে পানি ও অল্প পরিমাণ ফেরিক ক্লোরাইড মিশিয়ে ভালোভাবেকালে গাঢ় বাদামি বর্ণের কোলয়েডীয় দ্রবণ পাওয়া যায়। 

৩. সাসপেনশন (Suspension) :

একটি পদার্থ (সাধারণত কঠিন) অপর একটি পদার্থের মধ্যে (সাধারণত তরল) 10^{-5} cm অধিক ব্যাসার্ধবিশিষ্ট কণারূপে বিভাজিত হয়ে বিস্তৃত থাকলে যে অসমসত্ত্ব এবং অস্থায়ী মিশ্রণ উৎপন্ন হয়, তাকে সাসপেনশন বলে। 

ব্যাখ্যা : সাসপেনশনে কণাগুলোকে খালি চোখে দেখা যেতেও পারে বা নাও পারে, তবে সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে অবশ্যই দেখা যায়। এই মিশ্রণের কণাগুলো সাধারণ ফিল্টার কাগজ বা পার্চমেন্ট কাগজের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে না এবং এরূপ মিশ্রণকে স্থিরভাবে রেখে দিলে বিস্তৃত কণাগুলো আস্তে আস্তে পাত্রের তলদেশে থিতিয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে কণার আকার (>500nm)

  প্রশ্ন: কোলয়েড এবং কোলয়েডীয় অবস্থা (Colloid and Collaidal state) লিখ। 

উত্তর: একটি পদার্থ (কঠিন, তরল বা গ্যাসীয়) অপর একটি পদার্থের (কঠিন, তরল বা গ্যাসীয়) মধ্যে 10^{-7} থেকে 10^{-5} cm ব্যাসবিশিষ্ট  কণারূপে বিস্তৃত থেকে যে দ্বি-দশাবিশিষ্ট স্থায়ী অসমসত্ত্ব সিস্টেম উৎপন্ন করে, তাকে কোলয়েড বলে।

কোলয়েডীয় অবস্থা (Collaidal state):

কোনো পদার্থ (কঠিন, তরল বা গ্যাসীয়) যখন অপর একটি পদার্থের মধ্যে (কঠিন, তরল বা গ্যাসীয়) ক্ষুদ্র কণায় 10^{-7} , 10^{-5} cm ব্যাসবিশিষ্ট) বিভাজিত হয়ে অবস্থান করে, তখন প্রথমোক্ত পদার্থটি শেষোক্ত পদার্থের মধ্যে কোলডীয় অবস্থায় আছে বলা হয়। উদাহরণ: জলীয় মাধ্যমে আর্সেনিয়াস সালফাইডের কণাগুলো বা বেনজিন মাধ্যমে সোডিয়াম ক্লোরাইডে কণাগুলো কোলয়েডীয় অবস্থায় থাকে। 

কোলয়েডীয় সিস্টেমে উপস্থিত বিভিন্ন দশাসমূহ: 

কোলয়েড সিস্টেমে দুটি দশা বর্তমান :

(ক) বিস্তৃত দশা :

কোলয়েড সিস্টেমে যে দশাটি 10^{-7} – 10^{-5} cm ব্যাসবিশিষ্ট কণারূপে অপর দশার মধ্যে সমভাবে বিস্তৃত থাকে তাকে বিস্তৃত দশা বলে। উদাহরণ, গোন্ড সলে গোল্ডের কণাগুলো হলো বিস্তৃত দশা।

(খ) বিস্তার মাধ্যম :

কোলয়েডে যে দশায় বিস্তৃত দশার কণাগুলো সমভাবে ছড়িয়ে থাকে, তাকে বিস্তার মাধ্যম বলে। উদাহরণ : গোল্ড সলে গোল্ডের কণাগুলো পানির মধ্যে বিস্তৃত থাকে। এখানে পানি হলো বিস্তার মাধ্যম।

কোলয়েডের একটি পরিচিত উদাহরণ হলো, কুয়াশা। এতে রয়েছে অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরের জলীয় কণা (বিস্তৃত দশা), যা বায়ুতে (বিস্তার মাধ্যম) বিস্তৃত রয়েছে। সাধারণ দ্রবণের চেয়ে কোলয়েডীয় দ্রবণের পার্থক্য হলো- বিস্তৃত কণা। কোলয়েডীয় কণাগুলো সাধারণ অণুর চেয়ে বৃহৎ। যদিও এদেরকে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমেও দেখা যায় না।

  প্রশ্ন: কোলয়েডের শ্রেণিবিন্যাস (Classificaiton of Colloids) কর।

 উত্তর: কোলয়েডের শ্রেণিবিন্যাস বিভিন্নরূপে করা যায়। যেমন-

১। বিস্তৃত দশা ও বিস্তার মাধ্যমের ভৌত অবস্থার ওপর ভিত্তি করে।

২। বিস্তার মাধ্যমের প্রতি বিস্তৃত দশার আসক্তির ওপর ভিত্তি করে।

৩। বিস্তৃত দশার কণার প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে।

(ক) বিস্তৃত দশা ও বিস্তার মাধ্যমের ভৌত অবস্থার উপর ভিত্তি করে কোলয়েডের শ্রেণিবিন্যাস :

বিস্তৃত দশা ও বিস্তার মাধ্যমে ভৌত অবস্থার ওপর ভিত্তি করে কোলয়েডকে নিম্নলিখিত আটটি শ্রেণ‍ীতে ভাগ করা যায়

বিস্তৃত দশা বিস্তার মাধ্যম কোলয়েডের নাম উদাহরণ
১। কঠিন কঠিন কঠিন সল রঙিন কাচ, রুবি কাচ (Au/glass) জেম স্টোন, সংকর ধাতু প্রভৃতি।
২। কঠিন তরল সল রং, মিল্ক অব ম্যাগনেশিয়া, গোল সল, সিলভার সল, সালফার সল।
৩। কঠিন গ্যাসীয় কঠিন এরোসল ধোয়া, বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা প্রভৃতি।
৪। তরল কঠিন জেল জেলি, পনির, দই, জুতার কালি প্রভৃতি।
৫। তরল তরল ইমালসন দুধ, পানিতে তেল বা তেলে পানি, শ্যাম্পু, ক্রিম ইত্যাদি।
৬। তরল গ্যাসীয় তরল এরোসল কুয়াশা, মেঘ প্রভৃতি।
৭। গ্যাসীয় কঠিন কঠিন ফোম ঝামা পাথর (সিলিকেট যৌগের মধ্যে বায়ু), কেক প্রভৃতি।
৮। গ্যাসীয় তরল ফোম সাবানের ফেনা, সোডা ওয়াটার (পানি মধ্যে ঈষ্ট গ্যাস) প্রভৃতি।

একটি গ্যাস অপর একটি গ্যাসের সাথে যে কোনো অনুপাতে মিশ্রিত হয়ে সমসত্ত্ব মিশ্রণ তৈরি করে,  তাই গ্যাস মিশণের ক্ষেত্রে কোলয়েডীয় সিস্টেম সম্ভব নয়।

সল (sol): যে সমস্ত কোলয়েড সিস্টেমে বিস্তৃত দশা কঠিন ও বিস্তার মাধ্যম তরল, তাদের সল বলে। 

উদহরণ- গেন্ড সল, সালফার সল, আর্সেনিয়াস সালফাইড সল প্রভৃতি। গোল্ড সল, সালফার সল ও আর্সেনিয়াস সালফাইড সলে যথাক্রমে গোল্ড, সালফার ও আর্সেনিয়াস সালফাইড-এর কণা বিস্তৃত দশা হিসেবে থাকে। এগুলোর প্রতিক্ষেত্রেই পানি হলো বিস্তার মাধ্যমবিস্তার মাধ্যমের প্রকৃতি অনুযায়ী সলের নামকরণ :

বিস্তৃত দশা বিস্তার মাধ্যম সল-এর নাম
কঠিন পানি হাইড্রোসল [গোল্ড সল, Fe(OH)_{3}; সল]
কঠিন অ্যালকোহল অ্যালকোসল [কোলডিয়ন]
কঠিন বেনজিন বেনজোসল (বেনজিনে পলিস্টাইরিন বা রাবারের সল
কঠিন/ তরল বায়ু বা গ্যাস এরোসল (ধোঁয়া, কুয়াশা)

এরোসল (Aerosol): এরোসল একটি কোলয়েডীয় সিস্টেম যার বিস্তার মাধ্যম বায়ু বা গ্যাস। এটি দুই প্রকার

১। কঠিন এরোসল, যেখানে বিস্তৃত দশাটি কঠিন (ধোয়া, বায়ুতে ভাসমান ধূলো প্রভৃতি)।

২। তরল এরোসল, যেখানে বিস্তৃত দশাটি তরল (কুয়াশা, মেঘ প্রভৃতি)।

ইমালসন (Emulsion): একটি তরল পদার্থের মধ্যে অমিশ্রণীয় অপর একটি তরল পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দুর আকারে (ব্যাস 10^{-5}10^{-4} cm) বিস্তৃত থেকে যে কোলয়েড সিস্টেম গঠন করে তাকে ইমালসন বলে। 

উদাহরণ : দুধ, মাখন ইত্যাদি। এক্ষেত্রে বিস্তৃত দশা ও বিস্তার মাধ্যম উভয়েই তরল।

ফোম (Foam): ফোম একটি কোলয়েডীয় সিস্টেম যার বিস্তৃত দশা গ্যাস। এটি দুই প্রকার-

 ১। কঠিন ফোম, যেখানে বিস্তার মাধ্যম কঠিন (ঝামাপাথর, কেক প্রভৃতি)।

২। তরল ফোম, যেখানে বিস্তার মাধ্যম তরল (সাবানের ফেনা, সোডা ওয়াটার প্রভৃতি)।

  প্রশ্ন: ইমালসন (Emulsion) কী? 

উত্তর: কোনো একটি তরল পদার্থের মধ্যে যদি একটি অমিশ্রনীয় অপর একটি তরল পদার্থ গোলাকার কণারূপে ছাড়ানো থাকে তাহলে উক্ত মিশ্রণকে ইমালসন বলে। কণার ব্যাস 0.1\mu – 1\mu পর্যন্ত হয়। 1\mu = 10^{-4} cm। কোলয়েড এর একটি শ্রেণিবিভাগ হলো ইমালসন। যেমন- দুধ, মাখন, কডলিভার তেল ইত্যাদি।

  প্রশ্ন: কোয়াগুলেশন বা জমাটকরণ (Coagulation) বলতে কী বুঝ?

উত্তর: যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোলয়েডীয় দ্রবণে কোনো রাসায়নিক পদার্থ যোগ করে কোলয়েডীয় কণার স্থিতিশীলতায় বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়। যাতে বিস্তৃত মাধ্যম বা দশার কণাগুলো ক্রমাগতভাবে একত্র হয়ে বড় কণায় রূপান্তরিত হয় এবং এ সময়ে কোলয়েডের মধ্যে অধঃক্ষিপ্ত হয় তাকে কোয়াগুলেশন বা জমাটকরণ বলে। যে সব পদার্থ বা তড়িৎ বিশ্লেষ্য যোগ করে অধঃক্ষিপ্ত করা হয় তাদেরকে কোয়াগুলেটিং এজেন্ট বা কোয়াগুলেন্ট বলা হয়। যেমন- \mathrm{As}_{2} \mathrm{~S}_{3}, \mathrm{FeSO}_{4}, \mathrm{FeCl}_{3} পটাশ এলাম, \mathrm{Al}_{2}\left(\mathrm{SO}_{4}\right)_{3}

কোলয়েড বহুদিন ধরে রেখে দিলে বা সামান্য পরিমাণ তড়িৎ বিশ্লেষ্য যোগ করলে জমাটকরণ ঘটতে পারে বা হতে পারে। সাধারণত কোলয়েওড কণাগুলো একই চার্জযুক্ত হওয়ায় এরা পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। ফলে জমাট বাঁধে না। কিন্তু তড়িৎ বিশ্লেষ্য যোগ করলে কোলয়েড কণার চার্জ প্রশমিত হয়। ফলে কণাগুলো পরস্পরের নিকটে আসার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকে না এবং জমাট বাধে। সাধারণত কোয়াগুলেন্ট এর সক্রিয় আয়নের চার্জ বা যোজনী যত বেশি হবে এর জমাট বাঁধানোর ক্ষমতাও তত বেশি হবে। এ নিয়মকে হার্ডি-শুলজে-লিনডার-পিকটন নীতি বলে। এ নিয়মানুসারে বা নীতি অনুসারে আয়নগুলোর কোয়াগুলেশন ক্ষমতা নিম্নরূপ-

\mathrm{Al}^{3+}>\mathrm{Ba}^{2+}>\mathrm{Na}^{+} \text {একইভাবে } \mathrm{PO}_{4}{ }^{3-}>\mathrm{SO}_{4}{ }^{2-}>\mathrm{Cl}^{-}

নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে জমাটকরণ বা কোয়াগুলেশন করা হয়-

১। তড়িৎ বিশ্লেষ্য যোগ করে। 

২। দুটি বিপরীত চার্জের কোলয়েড মিশ্রিত করে। 

৩। বাষ্পীকরণ বা বাষ্পীভবনের মাধ্যমে। 

৪। দ্রবণ ঘূর্ণনের মাধ্যমে।

  স্বাভাবিক অবস্থায় দুধ জমাটবদ্ধ না হওয়ার কারণ কী? 

দুধ এক ধরনের ইমালশন যেখানে বিস্তার মাধ্যম হচ্ছে পানি এবং বিস্তৃত দশা হচ্ছে চর্বি। চর্বি জাতীয় পদার্থ লিপিড নামে পরিচিত এবং ছোট দানা হিসেবে বিস্তৃত থাকে। চর্বির দানাগুলোতে ট্রাই গ্লিসারল অণুসমূহ ফসফোলিপিড এবং প্রোটিনের সমন্বয়ে তৈরি পাতলা পদার মোড়কে আবদ্ধ থাকে। এ পাতলা পর্দার চর্বির দানাগুলোকে পরস্পর যুক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখে এবং দুধে বিদ্যমান বিভিন্ন এনজাইম থেকে একে রক্ষা করে। তাছাড়া দুধে যে প্রোটিন আছে তার মধ্যে পেপটাইড বন্ধন বিদ্যমান। এ বন্ধনগুলো চর্বির দানাগুলোকে জমাটবদ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা করে।