একবীজপত্রী উদ্ভিদের মূলের অন্তর্গঠন (The root structure of monocotyledonous plants)
১। বহিঃস্টিলীয় অঞ্চল :
স্টিলি অঞ্চলের বাইরের অঞ্চল হলো বহিঃস্টিলীয় অঞ্চল। এই অঞ্চল এপিব্লেমা থেকে এন্ডোডার্মিস পর্যন্ত বিস্তৃত। এতে নিম্নলিখিত টিস্যুগুলো দেখা যায়।
(ক) এপিব্লেমা ৰা মূলত্বক (Epiblema) : মূলত্বক অতি ঘনভাবে সন্নিবেশিত একসারি প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত। মূলত্বকে বেশ কিছু এককোষী মূলরোম দেখতে পাওয়া যায় । হিসাব করে দেখা গিয়েছে একটি রাই উদ্ভিদের মূলরোমসমূহের মিলিত দৈর্ঘ্য ১০০০ কি.মি.।
কাজ : পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করা এবং অভ্যন্তরীণ অংশকে রক্ষা করা।
(খ) কর্টেক্স (Cortex; L : bark or rind) : মূল বা কাণ্ডের বহিঃত্বক এবং স্টিলির মধ্যবর্তী টিস্যুকে কটেক্স বলা হয়। তরুণ মূলের সবচেয়ে বড় অংশই কর্টেক্স। পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট অনেক সারি প্যারেনকাইমা কোষস্তর নিয়ে কর্টেক্স গঠিত। কোষগুলোর মধ্যে আন্তঃকোষীয় ফাঁক বিদ্যমান, কখনো কখনো বায়ুকুঠুরী থাকতে পারে।
(গ) এন্ডোডার্মিস (Endodermis; Cro : endo-within, derma-skin) : এন্ডোডার্মিস কর্টেক্স টিস্যুর সবচেয়ে ভেতরে পৃথক ধরনের একসারি কোষের একটি স্তর। এটি কর্টেক্স-এরই একটি অংশ। এন্ডোডার্মিস কোষগুলো পিপাকৃতির, পাশাপাশি দুটি কোষের মাঝখানে কোনো ফাঁক নেই, এরা অত্যন্ত ঘনভাবে সন্নিবেশিত থাকে। এন্ডোডার্মিসের প্রতিটি কোষ ক্যাসপারিয়ান স্ট্রিপ (Casparian strip) নামক একটি চর্বিময় ফিতা দ্বারা আবৃত থাকে। এই স্ট্রিপ কোষপ্রাচীরের নিচে নিরবচ্ছিন্নভাবে অবস্থিত। এর ভেতর দিয়ে পানিও অতিক্রম করতে পারে না। প্রয়োজনীয় পানি, আয়ন এবং অন্যান্য দ্রব্য কোষপ্রাচীর ও কোষমেমব্রেন দিয়ে অতিক্রম করে মূলের জাইলেম কোষে পৌছে।
কাজ: কর্টেক্স কোষ খাদ্য সঞ্চয় করে, আন্তঃকোষীয় ফাঁকে অক্সিজেন থাকায় কোষীয় শ্বসনে সাহায্য করে। এন্ডোডার্মিস পেরিসাইকল হতে কর্টেক্সকে পৃথক করে রাখে এবং বিভিন্ন আয়ন ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে।
২। অন্তঃস্টিলীয় অঞ্চল :
পেরিসাইকল থেকে মজ্জা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল। এতে নিম্নলিখিত টিস্যুগুলো দেখা যায়।
(ক) পেরিসাইকল (Pericycle) বা পরিচক্র : এটি একসারি পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট ছোট প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত। কোষগুলো খুব ঘনভাবে সন্নিবেশিত।
কাজ : নাইট্রোজেন জাতীয় খাদ্য ছাড়া অন্যান্য খাদ্য সঞ্চয় করা।
(খ) ভাস্কুলার বান্ডল (Vascular bundle) বা পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ : জাইলেম বা ফ্লোয়েম গুচ্ছের সংখ্যা ছয়ের অধিক। এরা ভিন্ন ব্যাসার্ধে অরীয়ভাবে এবং চক্রাকারে সাজানো থাকে। প্রোটোজাইলেম পরিধির দিকে এবং মেটাজাইলেম কেন্দ্রের দিকে থাকে অর্থাৎ জাইলেম বহিঃস্থ প্রকার (exarch)।
কাজ : খাদ্যদ্রব্য পরিবহন করা।
(গ) মজ্জা রশ্মি বা সংযোজক টিস্যু (Medullary ray or conjunctive tissue) : পাতলা প্রাচীরযুক্ত প্যারেনকাইম জাতীয় যে সব কোষ জাইলেম ও ফ্লোয়েম গুচ্ছকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে এরাই মজ্জা রশ্মি বা সংযোজক টিস্যু গঠন করে।
কাজ : পরিচক্র ও মজ্জার মধ্যে সংযোগ রক্ষা করা।
(ঘ) পিথ (Pith) বা মজ্জা : মূলের কেন্দ্রস্থলে প্যারেনকাইমা জাতীয় কোষ দিয়ে গঠিত অংশকেই মজ্জা বলে। তুলনামূলকভাবে কচু মূলে মজ্জা বড়।
কাজ : খাদ্য সঞ্চয় করা।
একবীজপত্রী উদ্ভিদ মূলের অন্তর্গঠনগত শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যসমূহ (The identifying features of the root structure of monocotyledonous plants):
- ত্বকে কিউটিকল অনুপস্থিত। এতে এককোষী মূলরোম থাকে।
- অধঃত্বক অনুপস্থিত।
iii. কর্টেক্স-এ অধঃত্বক নাই, কেবল অন্তঃত্বক আছে।
- পরিচক্র একসারি কোষ দিয়ে গঠিত।
- ভাস্কুলার বান্ডল অরীয় এবং একান্তরভাবে সজ্জিত।
- মেটাজাইলেম কেন্দ্রের দিকে এবং প্রোটোজাইলেম পরিধির দিকে অবস্থিত।
vii. জাইলেম বা ফ্লোয়েম গুচ্ছের সংখ্যা ৬ এর অধিক। (দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ মূলে এই সংখ্যা সাধারণত ২-৪টি)।
viii. মজ্জা বৃহৎ।
একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ডের অন্তর্গঠন (The stem structure of monocotyledonous plants)
- ভুট্টা কাণ্ড
-
- এপিডার্মিস (Epidermis) বা বহিঃত্বক
- গ্রাউন্ড টিস্যু (Ground tissue)
- হাইপোডার্মিস (Hypodermis) বা অধঃত্বক
- কটেক্স (Cortex)
- ভাস্কুলার বান্ডল (Vascular bundle) বা পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ
- (i) জাইলেম (Xylem)
- (ii) ফ্লোয়েম (Phloem)
- মজ্জা ও মজ্জা রশ্মি
(ক) ভুট্টা কাণ্ড (Corn stalks)
১। এপিডার্মিস (Epidermis) বা বহিঃত্বক : এটি সবচেয়ে বাইরের স্তর। বহিঃত্বক একসারি চ্যাপ্টা প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত। কোষগুলোর বহিঃপ্রাচীর কিউটিকল যুক্ত।
কাজ : (i) অভ্যন্তরীণ অংশকে রক্ষা করা এবং (ii) পানির অপচয় রোধ করা।
২। গ্রাউন্ড টিস্যু (Ground tissue) : গ্রাউন্ড টিস্যু দুই অংশে বিভক্ত; যথা :
(i) হাইপোডার্মিস (Hypodermis) বা অধঃত্বক : এটি একাধিক সারি স্ক্লেরেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত। বহিঃত্বকের ঠিক নিচেই অধঃত্বক অবস্থিত।
কাজ : কাণ্ডকে দৃঢ়তা প্রদান করা।
(ii) কটেক্স (Cortex) : বহু সারি প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। অধঃত্বকের নিচ হতে কাণ্ডের কেন্দ্র পর্যন্ত এ অঞ্চল বিস্তৃত। এ অঞ্চলের কোষগুলোর আন্তঃকোষীয় ফাঁক আছে।
কাজ : (i) খাদ্য সঞ্চয় করা ও (ii) পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ ধারণ করা।
৪। ভাস্কুলার বান্ডিল (Vascular bundle) বা পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ : ভাঙ্গুলার বান্ডল সংখ্যায় অনেক। এরা গ্রাউন্ড টিস্যুতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো থাকে। বান্ডলগুলো সমপার্শ্বীয় এবং বদ্ধ। পরিধির দিকে অধিক সংখ্যক অবস্থিত। এরা অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির এবং ঘন সন্নিবেশিত। প্রতিটি ভাস্কুলার বান্ডল স্ক্লেরেনকাইমা কোষের আবরণী দিয়ে পরিবেষ্টিত। শুধু ফ্লোয়েম ও জাইলেম দিয়ে ভাস্কুলার বান্ডল গঠিত। এতে কোনো ক্যাম্বিয়াম নেই। প্রতিটি বান্ডল নিম্নলিখিত অংশ নিয়ে গঠিত।
(i) জাইলেম (Xylem) : জাইলেম টিস্যুর গঠন অনেকটা ইংরেজি ‘Y’ অথবা ‘V’ অক্ষরের মতো।
মেটাজাইলেম ‘Y’ এর দুই বাহুতে এবং প্রোটোজাইলেম লেজের দিকে অবস্থিত। প্রতিটি বান্ডলে প্রোটোজাইলেমের নিচে একটি ছোট গহ্বর দেখা যায়। কেন্দ্রের দিকের প্রোটোজাইলেম ও এর আশপাশের প্যারেনকাইমা কোষ বিনষ্ট হয়ে এ গহ্বর সৃষ্টি হয়।
কাজ: পানি ও খনিজ লবণ পরিবহন করা।
(ii) ফ্লোয়েম (Phloem): এটি জাইলেম টিস্যুর Y বা V -এর দুটি বাহুর মাঝখানে অবস্থিত। সীভনল এবং সঙ্গীকোষ দিয়ে ফ্লোয়েম গঠিত। এতে কোনো ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা নেই।
কাজ : প্রস্তুতকৃত খাদ্য পরিবহন করা।
৫। মজ্জা ও মজ্জা রশ্মি (Marrow and marrow ray:): এতে ছোট মজ্জা আছে কিন্তু সুস্পষ্ট মজ্জা রশ্মি নেই।
(খ) কলাবতীর কাণ্ড [(ভৌম পুষ্পদণ্ড) (Flowering Scape of Canna)]
সাধারণ বৈশিষ্ট্য :-
প্রস্থচ্ছেদে পরিধি থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত টিস্যুস্তরগুলো নিম্নরূপে বিন্যস্ত থাকে।
১। ত্বক (Epidermis) : এক সারি ঘনসন্নিবিষ্ট ক্ষুদ্র আয়তাকার প্যারেনকাইমা কোষ দ্বারা গঠিত। ত্বকের বহিঃপ্রাচীর কিউটিকলযুক্ত।
২। কর্টেক্স (Cortex) : ত্বকের নিচে দুই সারি বড় বহুভুজাকার বর্ণহীন প্যারেনকাইমা কোষ দ্বারা গঠিত।
৩। ক্লোরেনকাইমা (Chlorenchyma) : কর্টেক্সের নিচে এক (বা দুই) সারি ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত প্যারেনকাইমা কোষ থাকে। একে ক্লোরোফাইলাস স্তর বলে।
৪। স্ক্লেরেনকাইমা (Sclerenchyma) : মাঝে মাঝে স্ক্লেরেনকাইমার কতগুলো স্তুপ ক্লোরোফাইলস টিস্যু সংলগ্ন হয়ে অবস্থান করে।
৫। ভিত্তি টিস্যু (Ground tissue) : পাতলা প্রাচীরযুক্ত বড় প্যারেনকাইমা কোষের অবিচ্ছিন্ন গুর। কোষগুলোর মাঝে প্রচুর আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকে।
৬। ভাস্কুলার বান্ডল (Vascular bundle) : বিভিন্ন আকৃতির অসংখ্য বান্ডল ভিত্তিটিস্যুতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকে। প্রতিটি বান্ডল সংযুক্ত, সমপার্শ্বীয় ও বদ্ধ। প্রতিটি বান্ডলের উপরে ও নিচে স্ক্লেরেনকাইমার টিস্যুর অসম্পূর্ণ বান্ডল আবরণী থাকে। জাইলেমে একটি বড় মেটাজাইলেম ও কয়েকটি ছোট প্রোটোজাইলেম থাকে।
৭। মজ্জা (Pith) : কেন্দ্রস্থলে সুস্পষ্ট মজ্জা অনুপস্থিত।
কারণসহ শনাক্তকরণ (Reason identification)
১। ত্বক কিউটিকলযুক্ত।
২। ভাস্কুলার বান্ডল সংযুক্ত ও সমপার্শ্বীয়।
– অতএব এটি কাণ্ড।
৩। বহুকোষী ত্বকরোম নেই।
৪। অসংখ্য ভাস্কুলার বান্ডল ভিত্তিটিস্যুতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো।
৫। ভাস্কুলার বান্ডল বদ্ধ প্রকৃতির।
-অতএব এটি একবীজপত্রী কাণ্ড।
– উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রদত্ত নমুনাটি একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাণ্ড।
একবীজপত্রী উদ্ভিদ কাণ্ডের অন্তর্গঠনগত শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যসমূহ (Identification features of monocotyledonous plant stems)
১। সাধারণত কাণ্ডরোম অনুপস্থিত।
২। বহিঃত্বকে কিউটিকল উপস্থিত।
৩। অধঃত্বক আছে এবং সাধারণত স্ক্লেরেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত।
৪। ভাঙ্গুলার বান্ডলগুলো গ্রাউন্ড টিস্যুতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো।
৫। মেটাজাইলেম পরিধির দিকে এবং প্রোটোজাইলেম কেন্দ্রের দিকে অবস্থিত।
৬। ভাস্কুলার বান্ডল সংযুক্ত, সমপার্শ্বীয় ও বদ্ধ (জাইলেম ও ফ্লোয়েমের মাঝে ক্যাম্বিয়াম নেই) প্রকৃতির।