10 Minute School
Log in

প্রজননতন্ত্রের সমস্যা (Problems of Reproductive System)

প্রজননতন্ত্রের সমস্যা (Problems of Reproductive System)

পুরুষ ও নারীর প্রজনন অক্ষমতা (Male and Female infertility) 

কোনো গর্ভনিরোধক পদার্থ বা পদ্ধতি ব্যবহার না করে এক বছর নিয়মিত দাম্পত্য জীবন কাটানোর পর ও যদি কোনো দম্পতি গর্ভধারণে ব্যর্থ হয় তখন তা প্রজনন অক্ষমতা বলে বিবেচিত হবে। দম্পতির পুরুষ সঙ্গী নারী সঙ্গী কিংবা উভয়েই প্রজননিক সমস্যায় ভুগতে পারে। অর্থাৎ তারা অনুর্বর (infertile)। অনুর্বর বলতে বোঝায়, নির্দিষ্ট নারী-পুরুষ দম্পতির সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা কম। তার মানে এ নয় যে তারা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম বা বন্ধ্যা (sterile)। বন্ধ্য বা বন্ধ্যা যাই বলি না কেন তারা কোনদিন সন্তান উৎপাদনে সক্ষম হবে না, কিন্তু অনুর্বর ব্যক্তি-দম্পত্তি চিকিৎসার চিকিৎসার কল্যাণে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানে সক্ষম। পৃথিবীর ১৫% দম্পতি অনুর্বর (infertile) কিন্তু মাত্র ১-২% দম্পতি বন্ধ্যা বা বন্ধ্য (sterile)। নিচে পুরুষ ও নারীর প্রজননিক সমস্যার কারণগুলো উল্লেখ করা হলো।

 

পুরুষে প্রজননিক সমস্যার কারণ (Cause of Male Infertility)

দম্পতির পুরুষ সদস্যে প্রজননিক সমস্যার মূলে রয়েছে নিচে বর্ণিত শুক্রাণুগত বিশৃঙ্খলা ।

১. বীর্যে শুক্রাণুর অনুপস্থিতি (Absence of sperm) : বীর্যে শুক্রাণুর অনুপস্থিতিকে আজ  অ্যাজোস্পার্মিয়া (azoospermia) বলে। শুক্রাণু উৎপাদন না হওয়া বা কোন প্রতিবন্ধকতার কারণে বীর্যে শুক্রাণু অনুপস্থিত থাকতে পারে।

২. বীর্যে শুক্রাণু সংখ্যার স্বল্পতা (Low sperm count) : বীর্যে শুক্রাণু সংখ্যার স্বল্পতাকে অলিগোস্পার্মিয়া (oligospermia) বলে। এক্ষেত্রে প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটার বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা ২০ মিলিয়নের কম থাকে। অলিগোস্পার্মিয়ার নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা নেই।

৩. শুক্রাণুর অস্বাভাবিকতা (Abnormal sperm) : অনেক শুক্রাণু ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছতে বা নিষেক ঘটাতে অক্ষম। দুটি লেজ থাকা, লেজবিহীন, মস্তকবিহীন বা অস্বাভাবিক আকৃতি ইত্যাদি হলো শুক্রাণুর অস্বাভাবিকতা।

৪. অটোইম্যুনিটি (Autoimmunity) : নিজের শুক্রাণুর প্রতি বিশেষ ইম্যুন প্রতিক্রিয়া ৫-১০% পুরুষ বন্ধ্যাতের কারণ। রক্তে শুক্রাণু প্রতিরোধী আয়ন থাকা এক ধরনের ইম্যুন প্রতিক্রিয়া।

৫. শুক্রাণুর অকালপতন (Premature ejaculation) : নারী যৌনাঙ্গের অভ্যন্তরে পুরুষ যৌনাঙ্গ প্রবেশের আগেই শুক্রাণুর পতন ঘটে। অভিজ্ঞতা ও অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য এ অবস্থা কাটিয়ে উঠা সম্ভব ।

৬. পুরুষত্বহীনতা (Impotence) : যৌনাঙ্গের দৃঢ়তা রক্ষায় ব্যর্থতাও অন্যতম প্রজননিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। তবে উপযুক্ত মনোবৈজ্ঞানিক উপদেশ এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হতে পারে।

 

নারীতে প্রজননিক সমস্যার কারণ (Cause of Female Infertility)

নারীদেহে যে সব কারণে প্রজননিক সমস্যা দেখা যায় তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ নিচে বর্ণনা করা হলো।

১. ডিম্বপাতে ব্যর্থতা (Failure to ovulate) : প্রায় ১০% নারী ডিম্বপাতে ব্যর্থ বলে প্রজননিক বিষয়েও বিফল হয়। ডিম্বপাতে ব্যর্থ হওয়ার পিছনে প্রধান কারণ হচ্ছে হরমোনঘটিত। কখনও হাইপোথ্যালামাস বা পিটুইটারি গ্রন্থি স্বাভাবিকভাবে হরমোন ক্ষরণে ব্যর্থ হয়। ফলে ডিম্বাণুর ফলিকল (ডিম্ব থলি) পরিস্ফুটিত হয় না, ডিম্বপাতও ঘটে না। অন্যদিকে, ডিম্বাশয় থেকে স্বাভাবিক হরমোনগুলো ক্ষরিত না হওয়ায় কিংবা ডিম্বাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হলে নির্ধারিত হরমোন ক্ষরিত হয় না বলে ডিম্বপাত ঘটে না। তবে খুশির কথা এই যে ৯০% ক্ষেত্রে হরমোন ক্ষরণে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সংশ্লেষিত হরমোন ভাল কাজ দেয় । 

২. ডিম্বনালির ক্ষত (Damage to the oviducts) : প্রায় ৩৫% নারীর প্রজননিক সমস্যা হিসেবে ডিম্বনালির সংক্রমণজনিত বা এন্ডোমেট্রিওসিস (endometriosis) নামক অবস্থার কারণকে দায়ী করা হয়। এসব সমস্যার কারণে ডিম্বনালি পথে ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে জরায়ুতে বহন করতে পারে না।

৩. জরায়ুর ক্ষত (Uterus damage) : প্রায় ৫-১০% নারী জরায়ু-ক্ষতজনিত সমস্যার কারণে প্রজননিক জটিলতায় ভোগে। এমন ক্ষেত্রে গর্ভধারণ সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে গর্ভাবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা কিংবা গর্ভপাত ঠেকানো। জরায়ুতে ছোট-বড় টিউমার হলে শল্য চিকিৎসায় সারানো যায় । গর্ভনিরোধক দ্রব্যাদি ব্যবহারে ভাল কাজ করে। কখনওবা। জন্মগতভাবে বিকৃত গড়নের জরায়ু দেখা যায়।

৪. সার্ভিক্স বা জরায়ু গ্রীবার ক্ষত (Cervix damage) : গর্ভপাতের কারণে কিংবা সন্তান জন্মদানকালে সার্ভিক্সে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। ক্ষতের টিস্যু সার্ভিক্সকে সংকীর্ণ করে দেয়, মিউকাস ক্ষরণ বন্ধ করে দিতে পারে । সার্ভিক্সের মিউকাসের মাধ্যমে জরায়ুতে শুক্রাণু সহজে পৌছাতে পারে। সার্ভিক্স বেশি প্রশস্ত হলে তিন মাস বয়সি ভ্রূণগর্ভপাতের শিকার হতে পারে।

৫. শুক্রাণুর প্রতি অ্যান্টিবডি (Antibodies to sperm) : কিছু দুর্লভ ক্ষেত্রে নারী তার স্বামীর শুক্রাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে। জরায়ু, সার্ভিক্স (জরায়ু-গ্রীবা) ও ডিম্বনালিতে এগুলো পাওয়া যায়। ওষুধ প্রয়োগে অনাক্রম্যতন্ত্র দমিয়ে রেখে সমস্যার সমাধান করতে পারলেও আইভিএফ (IVF) সবচেয়ে ভালো পন্থা বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

 

পুরুষ ও নারীর প্রজনন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (Imbalance of Reproductive Hormones of Male and Female) 

প্রজননতন্ত্র মানুষের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গতন্ত্র। এর সুষ্ঠু কর্মকান্ডও সম্পন্ন হয় কয়েকটি প্রধান ও অপ্রধান প্রজননিক হরমোনের সক্রিয়তায়। এসব হরমোনের কার্যকারিতায় পরিচিত নারী ও পুরুষ একেক সময় একেক রূপে। অবির্ভূত হয় বলে মনে হয়। নিচে পুরুষ ও নারীর প্রজনন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

 

নারীর প্রজনন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (Imbalance of female reproductive hormones)

ডিম্বাশয় থেকে অনেক হরমোন ক্ষরিত হয়। তার মধ্যে ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরনঅ্যান্ড্রোজেন প্রধান। এসব হরমোনের ক্ষরণের মাত্রা কম-বেশি হলে স্বভাবতই ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে। নিচে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো –

ইস্ট্রোজেন সংক্রান্ত ভারসাম্যহীনতা (Estrogen-related imbalances)

উচ্চমাত্রার ইস্ট্রোজেন : ৩৫ বছরের বেশি বয়স্ক নারীর দেহে উচ্চ মাত্রার ইস্ট্রোজেন থাকে। এ সংক্রান্ত জটিলতাকে বয়স ও রজঃচক্রজনিত স্বাভাবিক সমস্যা হিসেবে মেনে নিয়ে নারীরা দিন কাটায়। উচ্চমাত্রার ইস্ট্রোজেনের ফলে যে সব লক্ষণ প্রকাশ পায় তার মধ্যে রয়েছে প্রাক-রজঃচক্রীয় সিন্ড্রোম (pre-menstrual syndrome, PMS)। এর ফলে স্তন ফুলে যায়, স্পর্শকাতর ও ব্যথাকাতর হয়; শরীরে পানি জমে, ওজন বেড়ে যায়; ব্রণ উঠে, স্তনবৃন্ত থেকে স্রাব নির্গত হয়; ভালো ঘুম হয় না, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়; দুর্বল লাগে; মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন, স্তনব্যথা, পিঠের নিচে ব্যথা। মিষ্টি ও নোনতা খাবারের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে; আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে; কোনো কাজে মন বসে না; স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে; সহবাসে অনাগ্রহ জন্মে, কিংবা গর্ভপাত ও হতে পারে।

নিম্নমাত্রার ইস্ট্রোজেন : রজঃনিবৃত্তকালে নিম্নমাত্রার ইস্ট্রোজেন থাকা স্বাভাবিক। তবে কারও জরায়ু অপসারিত হলে, কেমোথেরাপি বা বিকিরণ থেরাপির সম্মুখীন হলে তাদের শরীরেও ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়। ইস্ট্রোজেন মাত্রা কম হলে যোনিদেশের চারপাশের প্রাচীর পাতলা হয়ে শুকিয়ে যায় যে কারণে সহবাস কষ্টদায়ক হয়। এর ফলে ইউরেথার প্রাচীরও পাতলা হয়ে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তা ছাড়া, অবসাদ, রাতে ঘাম হওয়া, মনোযোগে বিঘ্ন ঘটা, সন্ধিব্যথা, ত্বক শুষ্ক হওয়া, মাথাব্যথা, মাইগ্রেন, আতংকগ্রস্ত থাকা ইত্যাদিও কম এস্ট্রোজেনের কুফল ।

প্রোজেস্টেরন সংক্রান্ত ভারসাম্যহীনতা (Progesterone-related imbalances)

উচ্চমাত্রার প্রোজেস্টেরন : প্রোজেস্টেরন সাধারণত রজঃচক্রকালে ক্ষরিত হয়। যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার করে। তাদের দেহে এ হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। অবসাদ ও যন্ত্রণাহরণকারী বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবনেও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যায়, রজঃস্রাবের পরিমাণ কমে যায় এবং ইউরেথ্রার প্রাচীরে প্রভাব বিস্তার করে। দেহে উচ্চমাত্রার প্রোজেস্টেরনের লক্ষণ হচ্ছে- বুকে ব্যথাপ্রবণতা ও স্ফীত হওয়া, অস্থির মেজাজ, অতিরিক্ত ঘুমভাব, কার্যকর এস্ট্রোজেন স্বল্পতা ইত্যাদি।

নিম্নমাত্রার প্রোজেস্ট্রেরন : নারীদেহে প্রোজেস্টেরন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হরমোনের একটি। দেহের অনেক সূক্ষ কাজের উদ্দীপক ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এটি অন্যতম মৌলিক হরমোন যা প্রয়োজনে এস্ট্রোজেন ও কর্টিসোন উৎপন্ন করে। দেহে নিম্নমাত্রার প্রোজেস্টেরনের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনুর্বরতা, পিত্তথলির অসুখ, অনিয়মিত রজঃচক্র, রজঃচক্রের সময় রক্তজমাট, স্তনব্যথা, শুষ্ক যোনিদেশ, কম ব্লাড-সুগার, অবসাদ, ম্যাগনেসিয়াম স্বল্পতা প্রভৃতি।

অ্যান্ড্রোজেন সংক্রান্ত ভারসাম্যহীনতা (Androgenic imbalance)

উচচমাত্রার অ্যান্ড্রোজেন : নারীদেহে অ্যান্ড্রোজেনের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে প্রয়োজনে এস্ট্রোজেন স্ত্রীহরমোনে পরিবর্তিত হওয়া। এসব হরমোন রজঃনিবৃত্তির আগে, সময়কালীন ও পরবর্তী সময় জননতন্ত্র, অস্থি, যকৃত ও পেশিসহ দেহের অন্যান্য অঙ্গ ও সেগুলোর কাজকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। যৌন উত্তেজনা ও মিলনেও অ্যান্ড্রোজেন প্রভাব বিস্তার করে। দেহে উচ্চমাত্রার অ্যান্ড্রোজেন উপস্থিতির প্রধান লক্ষণ হচ্ছে- অনুর্বরতা, অনিয়মিত হওয়া বা একেবারে না হওয়া, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (Polycystic Ovary Syndrome, PCOS) অস্বাভাবিক স্থান লোমশ হওয়া (যেমন-মুখমন্ডল, ঠোট প্রভৃতি জায়গায়), চুল কমে যাওয়া, ব্রণ দেখা দেয় ভালো কোলেস্টেরল কমে যাওয়া, খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া, উদরের চতুর্দিক ঘিরে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি।

নিম্নমাত্রার অ্যান্ড্রোজেন : নিম্নমাত্রার অ্যান্ড্রোজেনে সব বয়সের নারীরা বিভিন্ন জটিলতায় ভুগতে পারে। তবে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে প্রাক রজঃনিবৃত্ত ও রজঃনিবৃত্তকালীন নারী। এ সময় পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার দেখা দিতে পারে এবং হাড়ের ক্ষয় হতে পারে। অবসাদ, উত্তেজনা হাস, ভাল মন্দের বাছবিচার থাকে না, যোনিদেশে শুষ্কতা প্রভৃতি নিয়মাবা অ্যান্ড্রোজেনসংক্রান্ত জটিলতার লক্ষণ।

 

পুরুষে প্রজনন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (Male reproductive hormone imbalance) 

টেস্টোস্টেরন পুরুষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমোন। জননক্ষম পুরুষে এটি নিয়মিত শুক্রাশয়ে উৎপন্ন ও রক্তসোতে প্রবাহিত হয়ে দেহ সুস্থ রাখে । এ হরমোন পুরুষে গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যের (পেশল দেহ, দাড়ি-গোঁফের প্রকাশ, কষ্ঠ পরু ও স্বর গভীর করে তোলে, যৌনাঙ্গ সুগঠিত ও বড় করে) প্রকাশ ঘটায়। এ হরমোন যৌন উদ্দীপনাকে তাড়িত করে এবং FSH (Follicle Stimulating Hormone)-এর সহযোগিতায় শুক্রাণু সৃষ্টিতে উদ্দীপনা যোগায়। বয়স্ক পুরুষে যাদের যৌনশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, কিছু গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যের বিলোপ ঘটে। তারা হরমোন প্রতিস্থাপনার মাধ্যমে পুনর্যৌবন ফিরে পেতে চায় কিন্তু এতে হিতে বিপরীত ফল হয়, প্রস্টেট গ্রন্থির ক্যান্সার ও অ্যাথেরোফ্লেরোসিস-এর আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়।

সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষে টেস্টোস্টেরনের ভারসাম্যহীনতা প্রকট হয়ে উঠে । গড়ে ৪০-৫০ বছরের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা নিচে বর্ণিত লক্ষণগুলোর মাধ্যমে স্পষ্ট হতে থাকে ।

১. অবসাদগ্রস্ত ও দুর্বল অনুভব : এ লক্ষণ নানাভাবে প্রকাশ হতে পারে, যেমন- খাওয়ার পর ক্লান্তিবোধ,  স্বাভাবিকের চেয়ে কম কাজ করতে পারা, সারাদিনের সামগ্রিক কাজের পারফরম্যান্স নিচুমাত্রার এবং সারাদিন অবসাদগ্রস্থ থাকা। তা ছাড়া, মিলন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া, ঘাম হওয়া, গায়ে ব্যথা হওয়া, যৌনাঙ্গ কর্মক্ষম না হওয়া প্রভৃতিও টেস্টোস্টেরন হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফল।

২. অকালে বুড়িয়ে যাওয়া : দৈহিক ও মানসিকভাবে বুড়িয়ে যাওয়া এ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফল। চুল পাতলা বা ধূসর হয়ে যাওয়া, হাড়ের ঘনত্ব ও চামড়ার ঔজ্জ্বল্য কমে যাওয়া, কোমরে চর্বি জমা, স্মরণ শক্তি কমে যাওয়া, ঘুম না হওয়া প্রভৃতি এ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে ঘটে।

৩. অসুখিভাব : টেস্টোস্টেরন হরমোনের ভারসাম্যহীনতায় নিজের প্রতি বিশ্বাস ও সম্মানবোধ কমে যায় । দুশ্চিন্তা, স্নায়ুদৌর্বল্য বেড়ে যাওয়া, বিষন্নতায় ভোগা, কোনো ধরনের উদ্যোগ বা প্রতিযোগিতাহীনতার প্রকাশ, উত্তেজিত হয়ে উঠা প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।

৪. যৌন উত্তেজনা কমে যাওয়া : টেস্টোস্টেরনের ভারসাম্যহীনতায় যৌন উত্তেজনা কমতে কমতে একেবারে কমে যায়। এমনকি যৌনাঙ্গ উত্থানেও অক্ষম হয়ে পড়ে। পুরুষে টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৩৫০-১২৩০ ন্যানোগ্রাম [এক ন্যানোগ্রাম = এক গ্রামের ১০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ]। এভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোনের অভাবে যৌন উত্তেজনা হ্রাস, যৌনাকাঙ্ক্ষার অনুপস্থিতি ও পৌরষত্বের প্রকাশহীনতাকে অ্যান্ড্রোপজ (andropause) বলে। অ্যান্ডোপজকে নারীর মেনোপজ (menopause) এর সঙ্গে তুলনা করা হয়।