খাদ্য, পুষ্টি ও ভিটামিন
খাদ্যের উপাদান সমূহ, তাদের বর্ণনা ও অভাবজনিত রোগ
- একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রায় ২৫০০-৩০০০ কিলোক্যালরি শক্তির সমপরিমাণ খাদ্য প্রয়োজন।
- প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৩০০-৫০০ গ্রাম শর্করা প্রয়োজন (যারা দৈনিক হালকা ব্যায়াম করেন)।
- প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৩৩-৬৬ গ্রাম আমিষ প্রয়োজন।
- একজন স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক ৫০-৬০ গ্রাম চর্বির প্রয়োজন হয়।
- একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন মোট ২.৫-৩ লিটার পানি পান করা উচিত।
খাদ্যের মুখ্য পুষ্টি উপাদানসমূহ হলো-
১. শর্করা ২. আমিষ ৩. স্নেহ ৪. ভিটামিন ৫. খনিজ ৬. পানি
শর্করা, আমিষ ও স্নেহ
শর্করা জাতীয় খাদ্যে ১ : ২ : ১ অনুপাতে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন থাকে।
গঠন অনুসারে শর্করা তিন প্রকার। যথা-
- মনোস্যাকারাইড (গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, গ্যালাক্টোজ)
- ডাইস্যাকারাইড (মল্টোজ, ল্যাকটোজ, সুক্রোজ)
- পলিস্যাকারাইড (স্টার্চ, সেলুলোজ)
ঘাসে সেলুলোজ থাকে, যাতে বিটা-গ্লাইকোসাইডিক বন্ধন আছে যা মানুষের পাকস্থলী হজম করতে পারে না। তাই মানুষ ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ খেতে পারে না।
- শর্করা পরিপাকের জন্য প্রয়োজন – এনজাইম (অ্যামাইলেজ, মল্টেজ, ল্যাকটেজ) ও হরমোন (ইনসুলিন, গ্লুকোকর্টিকয়েড)।
- আমিষ পরিপাকের জন্য প্রয়োজন – এনজাইম (প্রোটিয়েজ ও পেপটাইডেজ) এবং হরমোন (থাইরক্সিন)।
- স্নেহ পরিপাকের জন্য প্রয়োজন – এনজাইম ( ট্রিপসিন, লাইপেজ, কোলাজিনেজ), হরমোন (থাইরক্সিন)।
উদ্ভিদে শর্করা জমা থাকে স্টার্চরূপে। আর প্রাণীদের জমা থাকে গ্লাইকোজেন হিসেবে। মানবদেহে গ্লাইকোজেন জমা হয় যকৃত-এ।
- ১ গ্রাম শর্করা = ৪ কিলোক্যালরি শক্তি
- ১ গ্রাম আমিষ = ৪ কিলোক্যালরি শক্তি
- ১ গ্রাম স্নেহ = ৯ কিলোক্যালরি শক্তি
আমিষ জাতীয় খাবারের একক অ্যামিনো এসিড, যা যুক্ত হয়ে পলিপেপটাইড গঠন করে।
মানবদেহে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো এসিড ৯টি (মিথিওনিন, থ্রিওনিন, ফিনাইল এলানিন, হিস্টিডিন, লাইসিন, লিউসিন, ট্রিপটোফ্যান, আইসোলিউসিন, ভ্যালিন)। তবে আরজিনিন ও হিস্টিডিন শিশুদের প্রয়োজন।
ন্যাচারাল প্রোটিনের কোড নেম হলো Protein P-49.
আমিষের অভাবে শিশুদের কোয়াশিয়রকর ও মেরাসমাস নামক রোগ হয়।
ভিটামিন
ভিটামিনের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক গোল্যান্ড হপকিন্স।
ভিটামিন দুই ধরনের –
- পানিতে অদ্রবণীয় কিন্তু স্নেহজাতীয় পদার্থে দ্রবণীয় – এ, ডি, ই, কে।
- পানিতে দ্রবণীয় – বি কমপ্লেক্স, সি।
ভিটামিন এ, সি, ই কে বলা হয় এন্টি-অক্সিডেন্ট ভিটামিন।
খনিজ
আমাদের দেহ যে সকল পদার্থ নিয়ে গঠিত তার ৪% খনিজ। প্রয়োজনীয় খনিজ লবণের প্রায় ৭৫% ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস।
সুষম খাদ্য
যে খাদ্য গ্রহণ করলে মানব দেহের প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য উপাদান পরিমাণ অনুযায়ী পাওয়া যায় তাকে সুষম খাদ্য বলে।
সুষম খাদ্যে শর্করা, আমিষ ও স্নেহ জাতীয় খাদ্যের অনুপাত হলো ৪:১:১।
- দুধ থেকে বানানো দই এ ল্যাকটোবেসিলাস ও স্ট্রেপটোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে যা হজমে সহায়তা করে।
- একটি ডিম হতে ৬০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
BMR, BMI
Body Metabolic Rate (BMR)- পূর্ণ বিশ্রামরত অবস্থায় মানবশরীরে ব্যবহৃত শক্তির পরিমাণ।
Body Mass Index (BMI)- মানবদেহের গঠন ও চর্বির একটি সূচক।
বিএমআই = দেহের ওজন (কেজি)/ (দেহের উচ্চতা – মিটার)^২
আদর্শ বিএমআই= ১৮.৫-২৪.৯
বিএমআই মান | ওজনের ধরণ |
১৮.৫ এর নিচে | শরীরের ওজন কম |
১৮.৫-২৪.৯ | সুস্বাস্থ্যের আদর্শ মান |
২৫-২৯.৯ | শরীরের ওজন অতিরিক্ত |
৩০-৩৪.৯ | ওবেসিটির প্রথম স্তর |
৩৫-৩৯.৯ | ওবেসিটির দ্বিতীয় স্তর |
৪০ এর উপরে | অতিরিক্ত স্থূলতা। মৃত্যুঝুঁকির আশঙ্কা |