10 Minute School
Log in

ভাষা ও বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়

ভাষার রূপ

  • বাংলা ভাষার দুটি রূপ দেখা যায়। যথা-  ১। মৌখিক রূপ ও ২। লৈখিক বা লেখ্য রূপ।
  • মৌখিক রূপ দুই প্রকার। যথা- ১.চলিত কথ্য রীতি এবং ২.আঞ্চলিক কথ্য রীতি।
  • লৈখিক বা লেখ্য রূপ দুই প্রকার। যথা- ১. চলিত রীতি ও ২.সাধু রীতি।

সাধু রীতির বৈশিষ্ট্য

  • বাংলা লেখ্য সাধু রীতি সুনির্ধারিত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসরণ করে এবং এর পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট।
  • এ রীতি গুরুগম্ভীর ও তৎসম শব্দবহুল।
  • সাধু রীতি নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতার অনুপযোগী।
  • এ রীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ এক বিশেষ গঠনপদ্ধতি মেনে চলে।
  • উদাহরণ- মস্তক, চলিতেছে, করিবার, পড়িল ইত্যাদি। রহিম আসিয়া হাজির হইল

চলিত রীতির বৈশিষ্ট্য

  • চলিত রীতি পরিবর্তনশীল।
  • এ রীতি তদ্ভব শব্দবহুল।
  • এ রীতি সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য।
  • চলিত রীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের সহজতর রূপ ব্যবহার করা হয়।
  • মাথা, জুতো, তুলো, করার, পেয়েছিলেন, পড়ল ইত্যাদি। রহিম এসে হাজির হলো

বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডার

  • বাংলা ভাষায় যে শব্দসম্ভারের সমাবেশ হয়েছে, সেগুলোকে পণ্ডিতগণ কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন- ১। তৎসম শব্দ, ২। তদ্ভব শব্দ, ৩। অর্ধ-তৎসম শব্দ, ৪। দেশি শব্দ ও ৫। বিদেশি শব্দ।
  • তৎসম শব্দ – যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সোজাসুজি বাংলায় এসেছে এবং যাদের রূপ অপরিবর্তিত রয়েছে, তাদের বলা হয় তৎসম শব্দ। যেমন- চন্দ্র, নক্ষত্র, মনুষ্য ইত্যাদি।
  • তদ্ভব শব্দ – যেসব শব্দের মূল সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যায়, কিন্তু ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তন ধারায় প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তদ্ভব শব্দ। যেমন- হাত, চামার ইত্যাদি।
  • অর্ধ-তৎসম শব্দ – বাংলা ভাষায় যেসব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত আকারে ব্যবহৃত হয়, তাদের বলা হয় অর্ধ-তৎসম শব্দ। যেমন- গিন্নী, ছেরাদ্দ ইত্যাদি।
  • দেশি শব্দ – বাংলাদেশের আদিম অধিবাসীদের (যেমন: কোল, মুণ্ডা প্রভৃতি) ভাষা ও সংস্কৃতির কিছু কিছু উপাদান বাংলায় রক্ষিত রয়েছে। এসব শব্দকে দেশি শব্দ হিসেবে অভিহিত করা হয়। যেমন- কুলা, চোঙ্গা,‌ টোপর ইত্যাদি।
  • বিদেশি শব্দ – রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সংস্কৃতিগত ও বাণিজ্যিক কারণে বাংলাদেশে আগত বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বহু শব্দ বাংলায় এসে স্থান করে নিয়েছে। এসব শব্দকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। যেমন- ওজু, নামাজ, ইউনিয়ন ইত্যাদি।

বিদেশি শব্দ

আরবি শব্দ – 

ধর্মসংক্রান্ত শব্দ   প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক শব্দ  
ইসলাম, ঈমান, কোরবানি আদালত, আলেম, ইনসান

ফারসি শব্দ –

ধর্মসংক্রান্ত শব্দ    প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক শব্দ   বিবিধ শব্দ  
খোদা, গুনাহ, দোজখ কারখানা, চশমা, জবানবন্দি আদমি, আমদানি, জানোয়ার

অন্যান্য বিদেশি ভাষার শব্দ 

  • ইংরেজি শব্দ – ইউনিভার্সিটি, কলেজ, টিন, আফিম (Opium), অফিস (Office), বাক্স (Box) 
  • পর্তুগিজ  শব্দ – আনারস, আলপিন, আলমারি
  • ফরাসি শব্দ – কার্তুজ, কুপন
  • ওলন্দাজ শব্দ – ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ  
  • গুজরাটি শব্দ – কার্তুজ, কুপন 
  • পাঞ্জাবি শব্দ – চাহিদা, শিখ
  • তুর্কি শব্দ – চাকর, চাকু          
  • মায়ানমারের শব্দ – ফুঙ্গি, লুঙ্গি
  • চিনা শব্দ – চা, চিনি
  • জাপানি শব্দ – রিকশা, হারিকিরি

মিশ্র শব্দ

কোন কোন সময় দেশি ও বিদেশি শব্দের মিলনে শব্দদ্বৈত সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন- রাজা-বাদশা (তৎসম+ ফারসি), হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি) ইত্যাদি।

পারিভাষিক শব্দ

বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের ভাবানুবাদমূলক প্রতিশব্দকে পারিভাষিক শব্দ বলে। যেমন- অম্লজান = Oxygen, উদযান  = Hydrogen, নথি = File ইত্যাদি।

বাংলা ব্যাকরণ ও এর আলোচ্য বিষয় (Bengali Grammar & Its Discussible Topics)

ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা (Importance of Grammar)

  • ব্যাকরণ পাঠ করে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন প্রকৃতি সম্পর্কে জানা যায় ও সেসবের সুষ্ঠু ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।
  • লেখায় ও কথায় ভাষা প্রয়োগের সময় ভাষার শুদ্ধ-অশুদ্ধ রূপ নির্ধারণ সহজ হয়।

বাংলা ব্যাকরণ (Bengali Grammar)

যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন-প্রকৃতি ও স্বরূপ বিশ্লেষিত হয় এবং এদের সম্পর্ক ও সুষ্ঠু প্রয়োগবিধি আলোচিত হয়, তা-ই বাংলা ব্যাকরণ(Bengali Grammar)।

বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়(discussible topics of Bengali Grammar) চারটি। যথাঃ 

  • ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology) – ধ্বনির উচ্চারণপ্রণালি, উচ্চারণের স্থান, ধ্বনির প্রতীক বা বর্ণের বিন্যাস, ধ্বনিসংযোগ বা সন্ধি, ধ্বনির পরিবর্তন ও লোপ, ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান ইত্যাদি বাংলা ব্যাকরণে ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।
  • শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology) – এক বা একাধিক ধ্বনির অর্থবোধক সম্মিলনে শব্দ তৈরি হয়, শব্দের ক্ষুদ্রাংশকে বলা হয় রূপ। রূপ গঠন করে শব্দ। সেজন্য শব্দতত্ত্বকে রূপতত্ত্বও বলা হয়।
  • বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax) – বাক্যের সঠিক গঠনপ্রণালি, বিভিন্ন উপাদানের সংযোজন, বিয়োজন, এদের সার্থক ব্যবহারযোগ্যতা, বাক্যের মধ্যে পদের স্থান বা ক্রম, পদের রূপ পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় বাক্যতত্ত্বে আলোচিত হয়।
  • অর্থতত্ত্ব (Semantics) – শব্দের অর্থবিচার, বাক্যের অর্থবিচার, অর্থের বিভিন্ন প্রকারভেদ, যেমন- মুখ্যার্থ, গৌণার্থ, বিপরীতার্থ ইত্যাদি অর্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।

পারিভাষিক শব্দ

প্রাতিপদিক

বিভক্তিহীন নামশব্দকে প্রাতিপদিক বলে। যেমন- হাত, বই, কলম ইত্যাদি।

সাধিত শব্দ

মৌলিক শব্দ ব্যতীত অন্য সব শব্দকেই সাধিত শব্দ বলে। যথা- হাতা, গরমিল ইত্যাদি। সাধিত শব্দ দুই প্রকার- ১. নাম শব্দ ও ২. ক্রিয়া

প্রকৃতি ও প্রত্যয়

প্রত্যেক নামশব্দ ও ক্রিয়ার দুটি অংশ থাকে-

  • প্রকৃতি – যে শব্দকে বা কোনো শব্দের যে অংশকে আর কোন ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা যায় না, তাকে প্রকৃতি বলে। যেমন- হাতল = হাত + ল, এখানে হাত হলো ‘প্রকৃতি’
  • প্রত্যয় – শব্দ গঠনের উদ্দেশ্যে নাম প্রকৃতি এবং ক্রিয়া প্রকৃতির পরে যে শব্দাংশ যুক্ত হয়, তাকে প্রত্যয় বলে। যেমন- হাতল = হাত + ল, এখানে ল হলো ‘প্রত্যয়’।

উপসর্গ

শব্দ বা ধাতুর পূর্বে কিছু সুনির্দিষ্ট অব্যয় জাতীয় শব্দাংশ যুক্ত হয়ে সাধিত শব্দের অর্থ পরিবর্তন, সম্প্রসারণ, ও সংকোচন ঘটিয়ে থাকে। এগুলোকে বলা হয় উপসর্গ। যেমন- পরা, প্র, উপ ইত্যাদি। উপসর্গ তিন প্রকার:

  • সংস্কৃত উপসর্গ – প্র, পরা, অপ — এরূপ বিশটি তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ আছে। তৎসম উপসর্গ তৎসম শব্দ বা ধাতুর পূর্বে ব্যবহৃত হয়। যেমন- পরি + পূর্ণ = পরিপূর্ণ, এখানে ‘পরি’ সংস্কৃত উপসর্গ।
  • বাংলা উপসর্গ  – অ, অজ, অনা ইত্যাদি অব্যয় জাতীয় শব্দাংশ বাংলা উপসর্গ। খাঁটি বাংলা শব্দের আগে এগুলো ব্যবহৃত হয়। যেমন- অ + কাজ = অকাজ, এখানে ‘অ’ হলো বাংলা উপসর্গ। 
  • বিদেশি উপসর্গ – বিদেশি উপসর্গ বিদেশি শব্দের সাথেই ব্যবহৃত হয়। যেমন- বে + হেড = বেহেড, এখানে ‘বে’ হলো বিদেশি উপসর্গ।

অনুসর্গ

বাংলা ভাষায় যেসব শব্দ কখনো অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে পদরূপে বাক্যে ব্যবহৃত হয়, আবার কখনো কখনো শব্দবিভক্তির ন্যায় অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অর্থবৈচিত্র্য ঘটিয়ে থাকে, তাদের অনুসর্গ বলা হয়। যেমন- দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি।