10 Minute School
Log in

ধ্বনিতত্ত্ব ও ধ্বনি পরিবর্তন

ধ্বনিতত্ত্ব(Phonology)

ভাষায় ব্যাবহৃত সকল ধ্বনির আলোচনা, ব্যাবহারবিন্যাস ও উচ্চারণ বিশ্লেষণকে ধ্বনিতত্ত্ব( Phonology) বলে। ভাষা ও বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় এর মাঝে ধ্বনিতত্ত্ব ( phonology) এর আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা।

কোনো ভাষার বাক্-প্রবাহকে সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে আমরা কিছু মৌলিক ধ্বনি পাই। বাংলা ভাষার মৌলিক ধ্বনিগুলোকে প্রধান দুইভাগে বিভক্ত করা হয়-

  1. স্বরধ্বনি
  2. ব্যঞ্জনধ্বনি

স্বরধ্বনি

যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় না, তাদেরকে বলা হয় স্বরধ্বনি।যেমন- অ, আ, ই, উ ইত্যাদি।

ব্যঞ্জনধ্বনি

যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও না কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় বা ঘর্ষণ তৈরি হয়, তাদেরকে বলা হয় ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন- ক, চ, ট, ত, প ইত্যাদি।

বর্ণ

ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে বলা হয় বর্ণ। বাংলা ভাষায় দুই ধরনের বর্ণ আছে-

  • স্বরধ্বনি দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে বলা হয় স্বরবর্ণ। যেমন- অ, আ, ই, উ ইত্যাদি।
  • ব্যঞ্জনধ্বনি দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে বলা হয় ব্যঞ্জনবর্ণ। যেমন- ক, খ, গ, ঘ ইত্যাদি।

বাংলা বর্ণমালা

বর্ণমালা

  • যে কোনো ভাষায় ব্যবহৃত লিখিত বর্ণসমষ্টিকে সেই ভাষার বর্ণমালা বলা হয়। 
  • বাংলা বর্ণমালায় মোট পঞ্চাশটি বর্ণ রয়েছে।
  • এখানে স্বরবর্ণ এগারটি
  • এবং ব্যঞ্জনবর্ণ ঊনচল্লিশটি
  • বিশেষ জ্ঞাতব্য, ঐ, ঔ – এ দুটি দ্বিস্বর বা যৌগিক স্বরধ্বনি চিহ্ন। যেমন- অ + ই = ঐ, অ + উ = ঔ

স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ

স্বরবর্ণের দুটি রূপ আছে-

  • প্রাথমিক বা পূর্ণ রূপ: স্বরবর্ণ যখন নিরপেক্ষ বা স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয়, তখন এর পূর্ণরূপ লেখা হয়।
  • সংক্ষিপ্ত স্বর বা কার: স্বরধ্বনি যখন ব্যঞ্জনধ্বনির সাথে সংযুক্ত হয়ে উচ্চারিত হয়, তখন সেটি লেখার সময় সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয়। স্বরবর্ণের এই সংক্ষিপ্ত রূপকে কার বলে।

ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ

  • ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে ফলা।
  • সংক্ষিপ্ত রূপে যে ব্যঞ্জন বর্ণটি যুক্ত হয়, তার নামানুসারে ফলার নামকরণ হয়।

বর্গীয় ধ্বনি

  • ক থেকে ম পর্যন্ত পঁচিশটি স্পর্শধ্বনিকে উচ্চারণ স্থানের উপর ভিত্তি করে পাঁচটি গুচ্ছ বা বর্গে বিভক্ত করা হয়েছে। 
  • প্রতি গুচ্ছের প্রথম ধ্বনির নামানুসারে সে গুচ্ছের সবগুলো ধ্বনিকে বলা হয় ওই বর্গীয় ধ্বনি।

উচ্চারণের স্থা

উচ্চারণের স্থানের নামানুসারে ব্যঞ্জনধ্বনিগুলোকে পাঁচভাগে ভাগ করা হয়-

  1. কণ্ঠ্য বা জিহ্বামূলীয়
  2. তালব্য বা অগ্রতালুজাত
  3. মূর্ধন্য বা পশ্চাৎ দন্তমূলীয়
  4. দন্ত্য বা অগ্র দন্ত্যমূলীয়
  5. ওষ্ঠ্য

ধ্বনি উচ্চারণে ব্যবহৃত প্রত্যঙ্গ

ধ্বনি উচ্চারণের জন্য যেসব প্রত্যঙ্গগুলো ব্যবহৃত হয়- ঠোঁট (ওষ্ঠ ও অধর), দাঁতের পাটি, দন্তমূল, অগ্রদন্তমূল, অগ্রতালু, শক্ত তালু, পশ্চাৎ তালু, নরম তালু, মূর্ধা ইত্যাদি।

পরাশ্রয়ী বর্ণ

  • ং, ঃ, ঁ – এই বর্ণগুলো স্বাধীনভাবে স্বতন্ত্র বর্ণ হিসেবে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয় না। 
  • এ বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি অন্য ধ্বনির সঙ্গে মিলিত হয়ে একত্রে উচ্চারিত হয়। 
  • তাই এ বর্ণগুলোকে বলা হয় পরাশ্রয়ী বর্ণ।

নাসিক্য ধ্বনি

  • যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস-নিঃসৃত বায়ু মুখবিবর ছাড়াও নাসারন্ধ্র দিয়ে বের হয়, অর্থাৎ উচ্চারণের সময় নাসিকার সাহায্য নিতে হয়, তাদের বলা হয় অনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি।
  • নাসিক্য ধ্বনির বর্ণগুলোকে বলে নাসিক্য বর্ণ। এগুলো হল- ঙ,‌ ঞ, ণ, ন, ম।

যৌগিক স্বর

  • পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে দ্রুত উচ্চারণের সময় তা একটি সংযুক্ত স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হয়।
  • এরূপ একসঙ্গে উচ্চারিত দুটি মিলিত স্বরধ্বনিকে যৌগিক স্বর বা দ্বি-স্বর বলা হয়।
  • বাংলায় পঁচিশটি যৌগিক স্বরধ্বনি আছে।

স্পর্শ ব্যঞ্জন

ক থেকে ম পর্যন্ত পাঁচটি বর্গের মোট পঁচিশটি ধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বার সঙ্গে অন্য বাগযন্ত্রের কোনো অংশের কিংবা ওষ্ঠের সঙ্গে অধরের স্পর্শ ঘটে ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বাধা পেয়ে বেরিয়ে যায়। বাধা পেয়ে স্পষ্ট হয় বলে এদের বলা হয় স্পর্শ ব্যঞ্জন বা স্পৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি। উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি দুই ধরনের-

  1. অঘোষ
  2. ঘোষ

অঘোষ ধ্বনি 

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী ‌অনুরণিত হয় না, তাকে অঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন- ক, খ, চ, ছ ইত্যাদি।

ঘোষ ধ্বনি

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয়, তাকে বলে ঘোষ ধ্বনি। যেমন- গ, ঘ, জ, ঝ ইত্যাদি।

অল্পপ্রাণ ধ্বনি 

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের চাপের স্বল্পতা থাকে, তাকে অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে। যেমন- ক, গ, চ, জ ইত্যাদি।

মহাপ্রাণ ধ্বনি

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের চাপের আধিক্য থাকে, তাকে বলে মহাপ্রাণ ধ্বনি। যেমন- খ, ঘ, ছ, ঝ ইত্যাদি।

উষ্মধ্বনি

  • যে ব্যঞ্জনের উচ্চারণে বাতাস মুখবিবরে কোথাও বাধা না পেয়ে কেবল ঘর্ষণপ্রাপ্ত হয় এবং শিশ ধ্বনির সৃষ্টি করে, সেটিকে বলে উষ্মধ্বনি।
  • এ বর্ণগুলোকে বলা হয় উষ্ম বর্ণ।
  • শ,ষ,স- এ তিনটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি অঘোষ অল্পপ্রাণ, আর হ ঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনি।

অন্তঃস্থ ধ্বনি

স্পর্শ বা উষ্ম ধ্বনির মাঝে আছে বলে য,র,ল,ব-এ ধ্বনিগুলোকে অন্তঃস্থ ধ্বনি বলা হয়। আর বর্ণগুলো হলো, অন্তঃস্থ বর্ণ।

ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ

ক-বর্গীয় ধ্বনি

জিহ্বামূলীয় বা কণ্ঠ্য স্পর্শধ্বনি।

চ-বর্গীয় ধ্বনি

তালব্য স্পর্শধ্বনি।

ট-বর্গীয় ধ্বনি

এগুলোর উচ্চারণে জিহ্বা উল্টো হয় বলে এদের নাম দন্তমূলীয় প্রতিবেষ্টিত ধ্বনি। এগুলো ওপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশ, অর্থাৎ মূর্ধায় স্পর্শ করে উচ্চারিত হয় বলে, এদের বলা হয় মূর্ধন্য ধ্বনি।

ত-বর্গীয় ধ্বনি

ত, থ, দ, ধ, ন –  এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বা সম্মুখে প্রসারিত হয় এবং অগ্রভাগ ওপরের দাঁতের পাটির গোড়ার দিকে স্পর্শ করে। এদের বলা হয় দন্ত্য ধ্বনি।

প-বর্গীয় ধ্বনি 

  • প, ফ, ব, ভ, ম – এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণে ওষ্ঠের সঙ্গে অধরের স্পর্শ ঘটে। তাই এদের ওষ্ঠ্যধ্বনি বলে।
  • য বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি সাধারণত সম্মুখ তালু স্পর্শ করে উচ্চারিত হয়। এজন্য ধ্বনিটিকে বলা হয় তালব্য ধ্বনি।
  • র বর্ণে জিহ্বাগ্রকে কম্পিত করা হয়। তাই একে কম্পনজাত ধ্বনি বলা হয়।
  • ল বর্ণে দুই পাশ দিয়ে বায়ু নিঃসৃত হয় বলে একে পার্শ্বিক ধ্বনি বলা হয়।
  • বাংলা বর্ণমালায় বর্গীয়-ব ও অন্তঃস্থ-ব এর আকৃতিতে কোনো পার্থক্য নাই।
  • আগে বর্গীয় ও অন্তঃস্থ দুই রকমের ‘ব’ বর্ণের লিখিত রূপ এবং উচ্চারণ আলাদা ছিল। এখন আকৃতি ও উচ্চারণ অভিন্ন বলে ‘অন্তঃস্থ-ব’কে বর্ণমালা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত প্রস্তাবে অন্তস্থ য-ও অন্তঃস্থ ব দুটি অর্ধ্বস্বর, প্রথমটির উচ্চারণ অয় বা ইয় (y) এবং দ্বিতীয়টির উচ্চারণ অব বা অও (w)-র মতো।

ধ্বনির পরিবর্তন (Phonological Change)

ধ্বনির পরিবর্তন ১৬ ভাবে করা যায়।

স্বরাগম

আদি স্বরাগম / Prosthesis 

উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা অন্য কোনো কারণে শব্দের আদিতে স্বরধ্বনি এলে তাকে বলে আদি স্বরাগম। যেমন: স্কুল > ইস্কুল, স্টেশন > ইস্টিশন।

মধ্য স্বরাগম, বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি / Anaptyxis

সময় সময় উচ্চারণের সুবিধার জন্য সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনি আসে। একে বলা হয় মধ্য স্বরাগম বা বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি। যেমন:

  • অ: রত্ন > রতন, ধর্ম > ধরম, স্বপ্ন > স্বপন, হর্ষ > হরষ।
  • ই: প্রীতি > পিরীতি, ক্লিপ > কিলিপ, ফিল্ম > ফিলিম।

অন্ত্যস্বরাগম / Apotheosis 

কোনো কোনো সময় শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসে। এরূপ স্বরাগমকে বলা হয় অন্ত্যস্বরাগম। যেমন: দিশ > দিশা, পোখত্ > পোক্ত, বেঞ্চ > বেঞ্চি, সত্য > সত্যি।

অপিনিহিতি

পরের ই-কার আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগে ই-কার বা উ-কার উচ্চারিত হলে, তাকে অপিনিহিতি বলে। যেমন: আজি > আইজ, সাধু > সাউধ, রাখিয়া > রাইখ্যা, বাক্য > বাইক্য।

অসমীকরণ

একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে যখন স্বরধ্বনি যুক্ত হয়, তখন তাকে বলে অসমীকরণ। যেমন: ধপ + ধপ > ধপাধপ, টপ + টপ > টপাটপ।

স্বরসঙ্গতি

একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন: দেশি > দিশি, বিলাতি > বিলিতি, মুলা > মুলো।

প্রগত স্বরসঙ্গতি

আদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তিত হলে তাকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলা হয়। যেমন: মূলা > মূলো, শিকা > শিকে, তুলা > তুলো।

স্বরসঙ্গতি 

অন্ত্যস্বরের কারণে আদ্যস্বর পরিবর্তিত হলে পরাগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন: আখো > আখুয়া > এখো।

মধ্যগত স্বরসঙ্গতি

আদ্যস্তর ও অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধ্যস্বর পরিবর্তিত হলে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন: বিলাতি > বিলিতি।

ধ্বনির পরিবর্তন

  • আদ্য ও অন্ত্য – দুই স্বরই পরস্পর প্রভাবিত হলে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন: মোজা > মুজো।
  • পূর্বস্বর উ-কার হলে পরবর্তী স্বর ও-কার হয়। যেমন: মুড়া > মুড়ো, চুলা > চুলো।
  • বিশেষ নিয়মে উড়–নি>উড়নি, এখনি> এখুনি হয়।

সম্প্রকর্ষ 

দ্রুত উচ্চারণের জন্য শব্দের আদি, অন্ত্য বা মধ্যবর্তী কোনো স্বরধ্বনির লোপকে বলা হয় সম্প্রকর্ষ । যেমন: বসতি > বসইত, জানালা > জান্লা।

আদি স্বরলোপ / Aphesis : 

যেমন: অলাবু > লাবু > লাউ, উদ্ধার > উধার > ধার।

মধ্য স্বরলোপ / Syncope

অগুরু > অগ্রু, সুবর্ণ > স্বর্ণ।

অন্ত্য স্বরলোপ / Apocope : 

আশা > আশ, আজি > আজ, চারি > চার (বাংলা), সন্ধ্যা > সঞঝা > সাঁঝ।

ধ্বনি বিপর্যয়

শব্দের মধ্যে দুটি ব্যঞ্জনের পরস্পর পরিবর্তন ঘটলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমন: ইংরেজি বাক্স > বাংলা বাস্ক, জাপানি রিক্সা > বাংলা রিস্কা।

সমীভবন

শব্দমধ্যস্থ দুটি ভিন্ন ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে অল্প-বিস্তর সমতা লাভ করে। এ ব্যাপারকে বলা হয় সমীভবন । যেমন: জন্ম > জম্ম, কাঁদনা > কান্না।

প্রগত সমীভবন

পূর্ব ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে। পরবর্তী ধ্বনি পূর্ববর্তী ধ্বনির মতো হয়, একে বলে প্রগত সমীভবন। যেমন: চক্র > চক্ক, পকৃ > পক্ক, পদ্ম > পদ্দ, লগ্ন > লগ্গ।

পরাগত সমীভবন 

পরবর্তী ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ধ্বনির পরিবর্তন হয়, একে বলে পরাগত সমীভবন । যেমন: তৎ + জন্য > তজ্জন্য, তৎ + হিত > তদ্ধিত, উৎ + মুখ > উন্মুখ।

অন্যোন্য সমীভবন

যখন পরস্পরের প্রভাবে দুটো ধ্বনিই পরিবর্তিত হয়, তখন তাকে বলে অন্যোন্য সমীভবন। যেমন: সংস্কৃত-সত্য > প্রাকৃত-সচ্চ, সংস্কৃত-বিদ্যা > প্রাকৃত-বিজ্জা।

দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জন-দ্বিত্ব

  • দুটো সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলে। যেমন: শরীর > শরীল, লাল > নাল।
  • কখনো কখনো জোর দেওয়ার জন্য শব্দের অন্তর্গত ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়, একে বলে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্ব। যেমন: পাকা > পাক্কা, সকাল > সক্কাল।

ব্যঞ্জন বিকৃতি

শব্দের মধ্যে কোনো কোনো সময় কোনো ব্যঞ্জন পরিবর্তিত হয়ে নতুন ব্যঞ্জনধ্বনি ব্যবহৃত হয়। একে বলে ব্যঞ্জন বিকৃতি। যেমন: কবাট > কপাট, ধোবা > ধোপা, ধাইমা > লাইমা।

ধ্বনিচ্যুতি বা ব্যঞ্জনচ্যুতি

পাশাপাশি সমউচ্চারণের দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে তার একটি লোপ পায়। এরূপ লোপকে বলা হয়, ধ্বনিচ্যুতি বা ব্যঞ্জনচ্যুতি। যেমন: বউদিদি > বউদি, বড় দাদা > বড়দা।

অন্তর্হতি

পদের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্তর্হতি। যেমন: ফাল্গুন > ফাগুন, ফলাহার > ফলার, আলাহিদা > আলাদা।

অভিশ্রুতি

বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সাথে মিলে গেলে এবং তদনুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে, তাকে বলে অভিশ্রুতি। যেমন: ‘করিয়া’ থেকে অপিনিহিতির ফলে ‘কইরিয়া’ কিংবা বিপর্যয়ের ফলে ‘কইরা’ থেকে অভিশ্রুতিজাত ‘করে’।