10 Minute School
Log in

ট্রানজিস্টর বর্তনীর মৌলিক বিন্যাস ও ব্যবহার (Basic Configuration of Transistor circuits And Uses)

ট্রানজিস্টর বর্তনীর মৌলিক বিন্যাস  (The basic configuration of transistor circuits)

বর্তনীতে ট্রানজিস্টরের সংযোগ অনুসারে তিন ধরনের ট্রানজিস্টর বর্তনীর বিন্যাস পাওয়া যায়। এই বিন্যাসগুলার নামকরণ করা হয়েছে সাধারণ উপাদান (element) এর নাম অনুসারে। যেমন- সাধারণ পীঠ বিন্যাস, সাধারণ নিঃসারক বিন্যাস এবং সাধারণ সংগ্রাহক বিন্যাস।

১। সাধারণ পীঠ বিন্যাস (Common base, CB):

 এই বিন্যাসে পীঠ সাধারণ ধাতু হিসেবে থাকে। বর্তনীতে পীঠ ও নিঃসারক সংযোগে ইনপুট (input) এবং পীঠ ও সগ্রাহক সংযোগে আউটপুট (output) প্রান্ত গঠিত হয়। চিত্রে সাধারণ পীঠ বর্তনী দেখানো হল। উভয় প্রান্তের সাথে পীঠ সংযুক্ত থাকে বলে একে সাধারণ পীঠ বিন্যাস বলে।

২। সাধারণ নিঃসারক (Common emitter, CE) : 

এই বিন্যাসে নিঃসারক সাধারণ বাহু হিসেবে থাকে। বর্তনীতে নিঃসারক ও পীঠ সংযোগে ইনপুট এবং নিঃসারক ও সংগ্রাহক সংযোগে আউটপুট প্রান্ত গঠিত হয়। চিত্রে সাধারণ নিঃসারক বর্তনী দেখানো হলোউভয় প্রান্তের সাথে নিঃসারক সংযুক্ত থাকে বলে একে সাধারণ নিঃসারক বিন্যাস বলে।

৩। সাধারণ সংগ্রাহক (Common collector, CC) বিন্যাস : 

এই বিন্যাসে সংগ্রাহক সাধারণ বাহু হিসেবে থাকে। বর্তনীতে সগ্রাহক ও পীঠ সংযোগে ইনপুট এবং সগ্রাহক ও নিঃসারক সংযোগে আউটপুট প্রান্ত গঠিত হয়। চিত্রে সাধারণ সংগ্রাহক বর্তনী দেখানো হলোউভয় প্রান্তের সাথে সংগ্রাহক সংযুক্ত থাকে বলে একে সাধারণ সংগ্রাহক বিন্যাস বলে।

 

ট্রানজিস্টরের বৈশিষ্ট্য লেখ Characteristic graphs of transistor

ট্রানজিস্টরের বৈশিষ্ট্য লেখ Characteristic graphs of transistor

 

ট্রানজিস্টরের ব্যবহার (Use of a transistor)

অ্যামপ্লিফায়ার বা বিবর্ধক হিসেবে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার  (Use of a transistor as an amplifier)

অ্যামপ্লিফাই (Amplify) শব্দের অর্থ হচ্ছে কোনো কিছুর মান বাড়ানোযে যন্ত্র বা ডিভাইস (Device) এর অন্তর্গামীতে প্রদত্ত সংকেত বহির্গামীতে বিবর্ধিত করে তাকে এ্যামপ্লিফায়ার বলে।

ট্রানজিস্টর সিগন্যালকে দুই ভাবে বৃদ্ধি করতে পারে— (১) বেস কারেন্টের সাহায্যে কালেকটর কারেন্টকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং (২) আউটপুট রোধকে ইনপুটের রোধের তুলনায় অনেক বেশি মানের ব্যবহার করে।

ট্রানজিস্টরকে অ্যামপ্লিফায়ার হিসেবে ব্যবহারের সময় এমিটারকে সম্মুখ ঝোঁক বা বায়াসযুক্ত এবং কালেকটরকে বিপরীত ঝোঁক বা বায়াসযুক্ত রাখা হয়। ট্রানজিস্টরকে তিনটি প্রাথমিক বর্তনীর মাধ্যমে অ্যামপ্লিফায়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যথা—(১) কমন বেস (common base) বা সাধারণ পীঠ, (২) কমন এমিটার (common emitter) বা সাধারণ নিঃসারক এবং (৩) কমন কালেকটর (common collector) বা সাধারণ সংগ্রাহক অ্যামপ্লিফায়ার।

তিনটি বর্তনীর মধ্যে কমন এমিটার সার্কিটে ব্যবহৃত ট্রানজিস্টরের প্রবাহ বিবর্ধন এবং ক্ষমতা বিবর্ধন অনেক বেশি হওয়ায় এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।

n-p-n এমপ্লিফায়ার বর্তনী p-n-p এমপ্লিফায়ার বর্তনী

কমন এমিটার বিবর্ধক (Common Emitter Amplifier) 

বর্তনী চিত্র-এ একটি কমন এমিটার বিবর্ধকের বর্তনী সংযোগ দেখানো হয়েছে। চিত্রে (ক) একটি n-p-n এবং (খ) একটি p-n-p বিবর্ধকের বর্তনী চিত্র। এখানে বেস ও এমিটারের মধ্যে একটি দুর্বল ইনপুট সিগন্যাল প্রয়োগ করা হয় এবং কালেক্টর এবং এমিটারের মধ্যে থেকে আউটপুট নেওয়া হয়। কালেক্টর বর্তনীতে সংযুক্ত রোধ R_{c} থেকে বহির্গামী সংকেত গ্রহণ করা হয়। যেহেতু ইনপুট এবং আউটপুট উভয় ক্ষেত্রে এমিটার কমন (common), তাই এর নামকরণ কমন এমিটার বিবর্ধক।

ভালো বিবর্ধন পাওয়ার জন্য এসি সিগন্যাল ভোল্টেজ ছাড়াও এখানে একটি ব্যাটারি (V_{BB}) সার্কিটে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ডিসি, ভোল্টেজকে বলা হয় বায়াস ভোল্টেজ; এবং এর মান এমন হয় যেন এসি সিগন্যালের ঋণাত্মক অর্ধেকের সময় এমিটার বেস জাংশন সম্মুখ ঝোঁকে থাকে। তা না হলে এমিটার বেস জাংশন বিপরীত ঝোঁক প্রাপ্ত হবে এবং আউটপুট বর্তনীতে কোনো প্রবাহ থাকবে না, ফলে অ্যামপ্লিফায়ার বিশ্বস্ততা হারাবে।

 

n-p-n ট্রানজিস্টর অ্যামপ্লিফায়ারের কার্যপ্রণালি (Working principle of n-p-n transistor amplifier)

এমিটার বেস জাংশনে প্রযুক্ত সিগন্যালের ধনাত্মক অর্ধাংশের সময় জাংশনটির সম্মুখ ঝোঁক বৃদ্ধি পায়। ফলে অধিক পরিমাণ ইলেকট্রন এমিটার থেকে বেসের মধ্য দিয়ে কালেকটরে প্রবাহিত হয় এবং কালেকটর প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এই বর্ধিত কালেকটর প্রবাহ (I_{c}) কালেকটরের ভার রোধ (load resistance) R-তে অধিক পরিমাণে বিভব পতন (voltage drop) ঘটায়। অর্থাৎ, বহির্গামীতে অধিক ভোল্টেজ পাওয়া যায়। 

সিগন্যালের ঋণাত্মক অর্ধাংশের জন্য এমিটার বেস জাংশনের সম্মুখ ঝোঁক কমে যায় ফলে কালেকটর প্রবাহের মাত্রাও কমে যায়। কালেকটর প্রবাহ কম হওয়ায় বর্তনীর আউটপুট ভোল্টেজ (output voltage) কম হয় তবে তা ইনপুট সিগন্যাল থেকে বেশি হয়। এভাবে ট্রানজিস্টর দুর্বল ইনপুট সিগন্যালকে বিবর্ধিত আউটপুট সিগন্যালে পরিণত করে। এই বিবর্ধিত আউটপুটের এবং ইনপুটের মধ্যে দশা পার্থক্য 180^{\circ} হয়। চিত্রে কালেকটরের সম্পূর্ণ প্রবাহ সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে।

কালেক্টরের সম্পূর্ণ প্রবাহ সময়ের সাথে পরিবর্তন

কমন এমিটার বিবর্ধকের বিভিন্ন ধরনের বিবর্ধন (Different gains in common emitter amplifier)

কমন এমিটার বিবর্ধকের বিভিন্ন ধরনের বিবর্ধন রয়েছে। এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো :

(i) প্রবাহ বিবর্ধন গুণক (Current amplification factor) :

(ক) ডিসি প্রবাহ বিবর্ধন (DC current amplification, \boldsymbol{\beta}_{\boldsymbol{d} C}): V_{C E} স্থির থাকলে, সংগ্রাহক প্রবাহ I_{C}ও ভূমি প্রবাহ I_{B} -এর অনুপাতকে DC প্রবাহ বিবর্ধন বলে। সুতরাং,

\boldsymbol{\beta}_{d C}=\left(\frac{I c}{I_{B}}\right) V_{C E}

(খ) এসি প্রবাহ বিবর্ধন (AC voltage amplification, A_{V}):

V_{C E} স্থির থাকলে, সংগ্রাহক প্রবাহের পরিবর্তনও ভূমি প্রবাহের পরিবর্তন ও ভূমি প্রবাহ-এর অনুপাতকে এসি প্রবাহ বিবর্ধন বলে। সুতরাং,

\boldsymbol{\beta}_{a C}=\left(\frac{\Delta I_{C}}{\Delta I_{B}}\right) \boldsymbol{V}_{C E}

(ii) এসি ভোল্টেজ বিবর্ধন (AC voltage amplification, A_{V}) : আউটপুট ভোল্টেজের পরিবর্তন এবং ইনপুট ভোল্টেজের পরিবর্তনের অনুপাতকে এসি ভোল্টেজ বিবর্ধন বলা হয়। একে Av দ্বারা সূচিত করা হয়। অতএব,

A_{V}=\frac{\Delta V_{C E}}{\Delta V_{i n}}=\frac{\Delta I C \times R_{L}}{\Delta I_{B} \times R_{i n}}

         \begin{array}{l} =\left(\frac{\Delta I c}{\Delta I_{n}}\right)\left(\frac{R_{L}}{R_{\text {in }}}\right) \\ =\beta_{a c} \times\left(\frac{R_{L}}{R i n}\right) \end{array}

  এখানে R_{L}R_{\text {in }}যথাক্রমে আউটপুট ও ইনপুট রোধ।

 

এসি ক্ষমতা বিবর্ধন (AC power amplification):

 আউটপুট ক্ষমতার পরিবর্তন ও ইনপুট ক্ষমতার পরিবর্তনের অনুপাতকে এসি ক্ষমতা বিবর্ধন বলা হয়। একে  দ্বারা সূচিত করা হয়। অতএব,    

\begin{aligned} A_{p} &=\frac{\Delta V_{C E} \times \Delta I_{C}}{\Delta V_{i n} \times \Delta I_{B}}=\left(\frac{\Delta V_{C E}}{\Delta V_{i n}}\right)\left(\frac{\Delta I_{C}}{\Delta I_{B}}\right) \\ &=A_{V} \times B_{\mathrm{ac}} \end{aligned}

আবার, 

 \begin{aligned} A_{p} &=\frac{\Delta I c^{2} \times R_{L}}{\Delta I_{B}^{2} \times R_{i n}} \\ &=\left(\frac{\Delta I c}{\Delta I B}\right)^{2} \times\left(\frac{R_{L}}{R_{i n}}\right) \\ &=\beta_{\mathrm{ac}}^{2} \times \text { রোধের বিবর্ধন } \end{aligned}

 

প্রবাহ লাভ (Current gain)

সাধারণ নিঃসারক বিন্যাসের বেলায় বা কমন এমিটার বিবর্ধকে ইনপুট কারেন্ট হলো I_{B} এবং আউটপুট কারেন্ট I_{C}।  I_{B} এর সামান্য পরিবর্তনের জন্য -এর যে পরিবর্তন হয় তাকে প্রবাহ লাভ (B) বলে। অর্থাৎ V_{CE} ধ্রুব থাকলে I_{C} এর পরিবর্তন \Delta I_{C} এবং I_{B}এর পরিবর্তন \Delta I_{B} এর অনুপাতকে বলা হয় প্রবাহ লাভ। সুতরাং,

        প্রবাহ লাভ \beta=\left(\frac{\Delta I_{C}}{\Delta I_{B}}\right) V_{C E}

ভোল্টেজ লাভ (Voltage gain) 

অ্যামপ্লিফায়ারের বহির্গামী ভোল্টেজের (\left(\Delta V_{C E}\right)) পরিবর্তন এবং অন্তর্গামী ভোল্টেজের (\left(\Delta V_{B E}\right)) পরিবর্তনের অনুপাতকে ভোল্টেজ লাভ বলে। অর্থাৎ,

ভোল্টেজ লাভ, \begin{aligned} \Delta V_{C E}=v_{A} &=\frac{v_{0}}{v_{i n}}=\frac{\Delta v_{C E}}{\Delta V_{B E}} \\ &=\frac{\Delta I_{C} \times R_{2}}{\Delta I_{B} \times R_{f}} \\ &=\frac{\Delta I c}{\Delta I_{\beta}} \times \frac{R L}{R_{i}}=\beta=\frac{R_{L}}{R_{i}} \quad\left[\beta=\frac{\Delta I c}{\Delta I_{B}}\right] \end{aligned}

ক্ষমতা লাভ (Power gain)

বহির্গামী সিগন্যালের ক্ষমতা ও অন্তর্গামী সিগন্যালের ক্ষমতার অনুপাতকে অ্যামপ্লিফায়ারের ক্ষমতা লাভ বলে। অর্থাৎ, 

ক্ষমতা লাভ,  P_{A}=\frac{P_{0}}{P_{i}}

আবার,\mathrm{P}=I^{2} R

\begin{aligned} \therefore p_{0} &=(\Delta I C)^{2} \times R_{L} \\ p_{i} &=\left(I_{B}\right)^{2} \times R_{i} \\ P_{A} &\left.=\frac{(\Delta I c)^{2} \times R_{\mathrm{L}}}{\left(\Delta I_{B}\right)^{2} \times R_{i}} \times \frac{R L}{R_{i}}\right)=\left(\frac{\Delta I c}{\Delta I_{\beta}}\right)^{2} \times \frac{R L}{R_{i}} \\ &=\beta^{2} \times \frac{R L}{R_{i}} \\ &=\beta \times \beta \times \frac{R L}{R_{i}} \end{aligned}

 

প্রবাহ বিবর্ধন গুণক (Current amplification factor)

সাধারণ পীঠ বা কমন বেস বিবর্ধকের ক্ষেত্রে ইনপুট কারেন্ট হল I_{E} এবং আউটপুট কারেন্ট I_{C} I_{E}এর সামান্য পরিবর্তনের জন্য I_{C}-এর যে পরিবর্তন হয় তাকে প্রবাহ বিবর্ধন গুণক (α) বলে। সংগ্রাহক পীঠ ভোল্টেজ V_{C B} ধ্রুব থাকলে I_{C}I_{E}এর অনুপাতকে কারেন্ট বিবর্ধন গুণক বলে।

অর্থাৎ,

\begin{aligned} \alpha &=\left(\frac{I c}{I_{E}}\right) v_{\mathrm{CB}} \\ &=\left(\frac{\Delta I c}{\Delta I_{E}}\right) v_{\mathrm{CB}} \end{aligned}

\alpha এবং \beta এর মধ্যে সম্পর্ক

সমীকরণ হতে পাই, 

\mathrm{I}_{\mathrm{E}}=\mathrm{I}_{\mathrm{B}}+\mathrm{I}_{\mathrm{C}}

বা,\Delta \mathrm{I}_{\mathrm{E}}=\Delta \mathrm{I}_{\mathrm{B}}=\Delta \mathrm{I}_{\mathrm{C}}

বা, \Delta \mathrm{I}_{\mathrm{B}}=\Delta \mathrm{I}_{\mathrm{E}}-\Delta \mathrm{I}_{\mathrm{C}}

সমীকরণ  অনুসারে, \beta=\left(\frac{\Delta \mathrm{I}_{\mathrm{C}}}{\Delta I_{E}}\right)

 \begin{aligned} \beta &=\left(\frac{\Delta \mathrm{I}_{\mathrm{C}}}{\Delta I_{E}-\Delta \mathrm{I}_{\mathrm{C}}}\right) \\ &=\frac{\frac{\Delta \mathrm{I}_{\mathrm{C}}}{\Delta \mathrm{I}_{\mathrm{E}}}}{1-\frac{\Delta I_{C}}{\Delta I_{E}}} \\ &=\frac{\alpha}{1-\alpha} \quad\left[\alpha=\frac{\Delta I C}{\Delta I_{E}}\right] \end{aligned}

 

জানার বিষয় : সাধারণ ভূমি সংযোগে ব্যবহৃত ট্রানজিস্টরের চেয়ে সাধারণ নিঃসারক সংযোগে ব্যবহৃত ট্রানজিস্টরের প্রবাহ বিবর্ধন এবং ক্ষমতা বিবর্ধন অনেক বেশি হওয়ায় সাধারণ নিঃসারক সংযোগই বেশি গ্রহণযোগ্য।

ট্রানজিস্টরের বেস অংশ পাতলা করে তৈরি করা হয় কেন ?

ট্রানজিস্টরের মাঝে থাকে বেস আর দুই পাশে থাকে ইমিটার ও কালেকটর। বেস অংশ হালকা করে তৈরি করা হয় যাতে ইমিটার থেকে আসা অধিকাংশ চার্জ বাহক অংশ ভেদ করে কালেকটর অংশে চলে যেতে পারে।

ট্রানজিস্টর অ্যামপ্লিফায়ারের ব্যবহার

(১)ইন্টারকমে ব্যবহার করা হয়। 

(২) অ্যালার্ম সার্কিটে ব্যবহার করা হয়।

(৩) রেডিওতে ব্যবহার করা হয়

(৪) মাইকে ব্যবহার করা হয়।

অন্তর্গামী ও বহির্গামী রোধ

ট্রানজিস্টর অ্যামপ্লিফায়ারের কর্মক্ষমতা মূলত নির্ভর করে অন্তর্গামী রোধ \left(\mathrm{R}_{i}\right) ; বহির্গামী রোধ \left(\mathrm{R}_{\mathrm{o}}\right) ভার রোধ \left(\mathrm{R}_{\mathrm{L}}\right), প্রবাহ বিবর্ধন গুণাঙ্ক (\alpha), প্রবাহ লাভ (\beta), ভোল্টেজ লাভ \left(\mathrm{V}_{\mathrm{A}}\right) এবং ক্ষমতা লাভ \mathrm{P}_{\mathrm{A}}এর ওপর।

অন্তর্গামী রোধ (Input resistance) : ধুব কালেক্টর ইমিটারে ভোল্টেজে (V_{C E}) বেস-ইমিটার ভোল্টেজের সামান্য পরিবর্তন (\left(\Delta \mathrm{V}_{\mathrm{BE}}\right)) এবং এর ফলে বেস প্রবাহের পরিবর্তনের (\left(\Delta \mathrm{I}_{\mathrm{B}}\right)) অনুপাতকে অন্তর্গামী রোধ বা গতীয় রোধ (\left(\Delta \mathrm{R}_{\mathrm{V}}\right)) বলে। 

অর্থাৎ,

অন্তর্গামী রোধ R_{i}=\frac{\Delta V_{B E}}{\Delta I_{B}}, অ্যামপ্লিফায়ারের রোধ ইমিটার-বেস \Delta I_{B}, সম্মুখ দিকে ঝোঁকে থাকার কারণে অন্তর্গামী রোধের মান খুব কম হয়।

বহির্গামী রোধ (Output resistance) : ধ্রুব বেস প্রবাহে কালেক্টর-ইমিটার ভোল্টেজের পরিবর্তন, (\left(\Delta V_{C E}\right)) এবং এর ফলে কালেক্টর প্রবাহের পরিবর্তনের (\left(\Delta I_{C}\right)) অনুপাতকে বহির্গামী রোধ বলে। অর্থাৎ, বহির্গামী রোধ, 

      R_{i}=\frac{\Delta V_{C E}}{\Delta I_{C}}

অ্যামপ্লিফায়ারের কালেক্টর ইমিটার- কালেক্টর বিপরীত দিকে ঝোঁকে থাকার জন্য বহির্গামী রোধ উচ্চ মানের হয়।

সুইচ হিসেবে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার (Use of Transistor as switch)

যে কোনো আদর্শ সুইচকে ‘অন’ (On) করলে সেটি একটি সর্ট সার্কিট (short circuit) এবং ‘অফ’ (Off) করলে একটি ওপেন সার্কিট (Open circuit) তৈরি হয়। এছাড়া নিমিষেই এই আদর্শ সুইচ অফ অবস্থা থেকে ‘অন’ অবস্থায় বা অন’ অবস্থা থেকে ‘অফ অবস্থায় চলে যেতে পারে।

লোক চলিত সুইচ শব্দ চলিত সুইচ

একটি ট্রানজিস্টর আদর্শ সুইচের শর্তগুলো সঠিকভাবে পূরণ না করলেও সুইচ হিসেবে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক বর্তনীতে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। ট্রানজিস্টরে বেস বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ না চালালে কালেক্টর বর্তনীতে কোন তড়িৎ প্রবাহ চলে না। সুতরাং, ট্রানজিস্টরকে সুইচ হিসেবে ব্যবহার করা যায় যা বেস প্রবাহের পরিবর্তন ঘটিয়ে ‘অন’ ‘অফ’ করা যেতে পারে। চিত্রে একটি n-p-n ট্রানজিস্টর সাধারণ এমিটার সংযোগে দেখানো হয়েছে। এটি একটি সুইচ বর্তনী হিসেবে কাজ করে। ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের সুইচ তৈরি করা সম্ভব। যেমন— (ক) আলোক চালিত সুইচ (খ) শব্দ চালিত সুইচ (গ) তাপ চালিত সুইচ।

কার্যনীতি : চিত্রে V_{i}= ইনপুট ভোল্টেজ, V_{0}= আউটপুট ভোল্টেজ = VCE = কালেক্টর ও এমিটারের মধ্যে বিভব পার্থক্য।

(i) যখন V = 0, তখন বেস এমিটার জাংশনে কোনো ভোল্টেজ থাকে না, অর্থাৎ \mathrm{V}_{\mathrm{BE}}=0 হয়। ফলে বেস কারেন্ট \mathrm{I}_{\mathrm{B}}=0হয়। এখন যেহেতু \mathrm{I}_{\mathrm{B}}=0, সুতরাং কালেক্টর কারেন্ট \mathrm{I}_{\mathrm{C}}=0। চিত্র হতে আমরা পাই,

 \mathrm{V}_{0}=\mathrm{V}_{\mathrm{S}}-\mathrm{I}_{\mathrm{c}} \mathrm{R}_{\mathrm{L}}

এখন যেহেতু \mathrm{I}_{\mathrm{c}}=0, যখন \mathrm{V}_{\mathrm{i}}=0

\therefore \mathrm{V}_{0}=\mathrm{V}_{\mathrm{s}}, \mathrm{V}_{\mathrm{S}}= সরবরাহ ভোল্টেজ

(ii) V_{i}কে আস্তে আস্তে বৃদ্ধি করলে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত V_{i}>V_{1}অর্থাৎ \mathrm{V}_{i} \leq \mathrm{V}_{1}, ততক্ষণ বেস কারেন্ট I_{B} খুবই সামান্য বৃদ্ধি পায়; I_{C} ও সামান্য বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থায় ট্রানজিস্টরটি বিচ্ছিন্ন বা অফ (Cut-off) রয়েছে বলা হয়। তখন I c=0

(iii) এখন V_{i}বৃদ্ধি পেয়ে V_{2}হলে, কালেক্টর কারেন্ট উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং সে অবস্থায় R_{L}এর মধ্যে বিভব পতন প্রায় সরবরাহ ভোল্টেজ V_{s}এর সমান হয়। সমীকরণ (10.12) অনুসারে তখন V_{0}=0 হয়। ইনপুট ভোল্টেজ V_{i}এর মান V_{2}এর বেশি হলে I_{C}এর তেমন একটা পরিবর্তন ঘটে না বিধায় আউটপুট ভোল্টেজ V_{0} এর ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। এই অবস্থায় ট্রানজিস্টরটি সম্পৃক্ত (Saturated) হয়েছে বলা হয়।

সুতরাং দেখা যায় যে ইনপুট ভোল্টেজ পরিবর্তন করে ট্রানজিস্টরটি দুটি অবস্থানে পরিবর্তন করা যায়। একটি বিচ্ছিন্ন (cut off) অবস্থা \left(V_{o}=V_{s}\right) এবং অন্যটি সম্পৃক্ত (saturated) অবস্থা \left(V_{o}=0\right)। ট্রানজিস্টরের এই চালু এবং বন্ধ (on and off) অবস্থা ডিজিটাল কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয়। একটি ট্রানজিস্টর প্রতি সেকেন্ডে বহু লক্ষবার অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে। এক সুইচের আউটপুটকে অন্য সুইচের ইনপুট হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং বহু সংখ্যক সুইচকে যুক্ত করে অতি দ্রুততার সঙ্গে জটিল গাণিতিক হিসাব সম্পন্ন করা যায়।

আলোক চালিত ডায়োড বা Light operated switch কীভাবে কাজ করে ?

প্রত্যেকটি সুইচ সার্কিটে পীঠ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের জন্য একটি বিভব বিভাজক ব্যবহার করা হয়। এই সুইচ সার্কিটে সংযুক্ত বাল্বটি আলোর উপস্থিতিতে জ্বলে এবং অন্ধকারে নিভে যায়। এই কাজটি LDR (Light Dependent Registor) বা ফটো রেজিস্টারের দ্বারা করা হয়। যখন আলো থাকে না তখন এটি রোধ প্রাপ্ত হয় ফলে উৎস ভোল্টেজের সামান্য অংশ বর্তনীতে যুক্ত রোধক R এর দুই প্রান্তে পাওয়া যায়। ফলে বেস কারেন্ট খুব কম হয় এবং ট্রানজিস্টর অফ অবস্থায় থাকে। আবার আলোর উপস্থিতিতে LDR এর রোধ কয়েক শত ও’ম হয়। ফলে R এর দুই প্রান্তের ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায় এবং বেস কারেন্টও বৃদ্ধি পায় ফলে ট্রানজিস্টর অন হয় এবং আলো জ্বলে ওঠে। এভাবে ট্রানজিস্টর সুইচ হিসেবে কাজ করে।