দুধ থেকে মাখন তৈরী ও মাখন থেকে ঘি তৈরী
❒ দুধ থেকে মাখন তৈরির বা পৃথকীকরণ এর ধাপগুলো বর্ণনা কর।
দুধ থেকে মাখন পৃথকীকরণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত ধাপগুলো সংগঠিত হয়-
❒ ক্রীম প্রশমিত করার প্রয়োজন পড়ে কেন?
সাধারণত পৃথকীকরণ আদর্শ ক্রীমে 0.15 থেকে 0.3% ল্যাকটিক এসিড থাকে। যদি ক্রীমে এর চেয়ে বেশি এসিড থাকে, তাহলে \mathrm{Ca}(\mathrm{OH})_{2}, \mathrm{NaHCO}_{3} যোগ করে অ্যাসিডিটি 0.15 থেকে 0.3% এ নিয়ে আসা হয়। এতে ক্রীম প্রশমন হলে দুধে এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দ্রবীভূত হয়ে মাখন উৎপাদন কমে যায়। তাই দুধের P^{H} মান 5.9-7.1 ঐ রাখার জন্য ক্ষার যোগ করে প্রশমিত করা হয়।
❒ এজিং বলতে কী বুঝ?
পাস্তুরিত ক্রীমকে কয়েক ঘন্টা স্থিরভাবে ঠান্ডা করার পদ্ধতিকে Aging বলে। Aging এর ফলে ক্রীম চার্নিং যোগ্য হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না ক্রীম এর চর্বির দানাগুলো আংশিক জমাট বাঁধে বা কেলাসিত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত Aging করতে হবে। ক্রীম ঠিকমতো Aging না করলে এবং পর্যাপ্ত কেলাসন না হলে ক্রীম অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি হারাবে। ফলে উৎপন্ন মাখন সন্তোষজনক হবে না। অতি নিম্ন তাপমাত্রায় Aging কৃত ক্রীমের চার্নিং কঠিন হয় এবং এর প্রক্রিয়াকাল দীর্ঘ হয়। তবে চর্বির দানাগুলো খুব দৃঢ়ভাবে জমাট বাঁধে।
আবার, উচ্চ তাপমাত্রায় Aging করা হলে চার্নিং এর জন্য সময় কম লাগে এবং উৎপন্ন মাখন তুলনামূলক ভাবে কোমল হয়। তাই Aging এর জন্য অত্যানুকুল তাপমাত্রা হচ্ছে 5-10^{\circ} \mathrm{C} এবং সময় 15-16 ঘন্টা।
❒ ক্রীমের রাইপোনিং (Riponing the cream) বলতে কী বুঝ?
কখনও কখনও ক্রীমের তথা মাখনের মিষ্টতা, স্বাদ ইত্যাদি পরিবর্তন করার জন্য পাস্তুরাইজেশনের পর ক্রীমের Cutane বা বিভিন্ন অণুজীব মেশানো হয় যাকে (Riponing) রাইপোনিং বলা হয়। রাইপেনিং এর সময় বিভিন্ন ধরনের অণুজীব যোগ করা হয়। এর ফলে ক্রীমের কার্বোহাইড্রেট ভেঙ্গে ল্যাকটিক এসিড, অ্যাসিটোন, মিথাইল কাৰ্বিনল এবং ডাই অ্যাসিটাল উৎপন্ন করে। মাখনে ডাই এসিটাল 0.1-0.3 ppm থাকলে নিম্ন স্বাদযুক্ত এবং 0.4-0.8 ppm থাকলে মধ্যম স্বাদযুক্ত এবং 0.9-2 ppm থাকলে পূর্ণ স্বাদযুক্ত হয়।
❒ দুধের উপাদানগুলো উল্লেখ কর।
দুধের উপাদানগুলো নিম্নরূপ-
১। পানি : দুধে পানির পরিমাণ 87-90% দুধের P^{H}মান 6.5 -6.75
২। কার্বোহাইড্রেট : দুধের প্রধান কার্বোহাইড্রেট হচ্ছে ল্যাকটোজ যা একটি ডাই স্যাকারাইড। এটি গ্যালাক্টোজও গুকোজ এ দুটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। ল্যাকটোজ কেবলমাত্র দুধেই পাওয়া যায়। এর পরিমাণ আনুমানিক 5%
৩। প্রোটিন : দুধের অধিকাংশ \mathrm{N}_{2} প্রোটিন হিসেবে থাকে। তবে প্রোটিনের পরিমাণ প্রজাতির উপর নির্ভর করে। দুধের প্রোটিনকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়। \mathrm{N}_{2} গ্যাস দুধকে জারিত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
i) ক্যাজেইন (Casein)/ক্যাসিন
ii) ল্যাকটালবুমিন/হোয়েপ্রোটিন (whey protein)
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের এনজাইম এদের মধ্যে আছে। এর পরিমাণ 3 – 4%
৪। চর্বি : এতে চর্বির পরিমাণ 3.5 – 6%। এটি প্রধানত ট্রাই গ্লিসারাইড হিসেবে থাকে।
৫। খনিজ পদার্থ : এর পরিমাণ প্রায় 1 \% \mathrm{Ca}, \mathrm{Mg}, \mathrm{K}, \mathrm{Na}, \mathrm{Cl}^{-} ও \mathrm{CO}_{3}^{2-}– লবণ থাকে যা শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুধে লৌহ জাতীয় পদার্থ কম থাকে।
৬। ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ : দুধের ভিটামিনগুলো চর্বিতে দ্রবণীয় থাকে। ভিটামিন A, ভিটামিন B, ভিটামিন C, ভিটামিন E দুধের মধ্যে বিদ্যমান যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে।
উপাদান | গরু | মহিষ | ছাগল | ভেড়া | মানুষ | |
১ | পানি | 87.43 | 82.76 | 87.00 | 80.61 | 87.43 |
২ | শর্করা (ল্যাক্টোজ) | 6.98 | 5.48 | 4.27 | 4.81 | 6.98 |
৩ | চর্বি | 3.75 | 7.38 | 4.25 | 7.9 | 3.75 |
৪ | আমিষ | 1.63 | 3.6 | 3.52 | 5.23 | 3.75 |
৫ | খনিজ লবণ (KCl/100g) | 0.71 | 0.78 | 0.86 | 0.9 | 0.21 |
৬ | শক্তি (kCal)/100g | 66 | 110 | 60 | 95 | 72 |
❒ মাখন থেকে ঘি উৎপাদনের পদ্ধতি বর্ণনা কর।
ঘি হলো পরিশোধিত মাখন। মাখনকে উত্তপ্ত করে বিগলিত করার পর ছাকন করে অবাঞ্চিত উপাদান পৃথক করার পর অবশিষ্ট স্বচ্ছ হলুদ বর্ণের তরলই ঘি।
প্রস্তুতি: লোহা বা অ্যালুমিনিয়াম কড়াইয়ে মাখন নিয়ে মৃদু তাপে ধীরে ধীরে উত্তপ্ত করা হয়। মাখন প্রথমে 30^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় গলতে শুরু করলেও সম্পূর্ণরূপে 64^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। 94^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় বেশির ভাগ পানি বাষ্পাকারে অপসারিত হয়। এই অবস্থায় এটি ঘন হয়ে যায় এবং বুদবুদের সৃষ্টি হয়। অতঃপর 110^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় অবাঞ্চিত উপাদানসমূহ উপরিতলে ভেসে উঠে দানাদার আকার ধারণ করে। 120^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় এই দানাগুলো কড়াইয়ের নিচে জমা হতে শুরু করে ও উপরের তরল অবস্থায় ছোট ছোট বুদবুদের সৃষ্টি হয়।
এই অবস্থায় মিশ্রণটিকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা করা হয়। উপরিস্তর হতে ছাঁকন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তরল ঘি পৃথক করা হয়। এভাবে প্রাপ্ত ঘি জিঙ্কের আবরণযুক্ত টিনের পাত্রে বা কৌটায় সংরক্ষণ করা হয়। ঘি কখনোই লোহা বা তামার পাত্রে সংরক্ষণ করা উচিত নয়। দুধের উৎস এবং এখন হতে ঘি উৎপাদনের সময় তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে ঘি এর স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধ পরিবর্তিত হতে পারে।
❒ মাখন এর মত ঘি নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হয় না কেন?
মাখন এ লবণের জলীয় দ্রবণ বা পানি এবং চর্বি থাকে, পানি থাকার কারণে মাখন সহজেই অণুজীব দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তাই মাখন অণুজীবের সংরক্ষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফ্রিজে বা নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। অপরদিকে ঘি হলো পানি বিহীন চর্বি যা মাখনে উপস্থিত চর্বি হতে অনেক পরিশোধিত। তাছাড়া ঘি এর মধ্যে লবণের পরিমাণ অনেক কম। তাই ঘি পানি বিহীন এবং পরিশোধিত বলে স্বাভাবিক তাপমাত্রাতে বেশ দীর্ঘদিন যাবৎ ঘি সংরক্ষণ করা যায়। অর্থাৎ নিম্ন তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া ঘি প্রস্তুতির সময় এন্টিঅক্সিডেন্ট সৃষ্টি হয় তাই এটি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সহজে জারিত হতে পারে না।