10 Minute School
Log in

পারমাণবিক শোষণ বর্ণালিবিশ্লেষণ (Atomic Absorption, UV visible Spectroscopy)

নমুনার ধাতব আয়ন শনাক্তকরণে একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হল পারমাণবিক বর্ণালি বিশ্লেষণ । বিভিন্ন ধরনের নমুনার ধাতব আয়ন শনাক্তকরণে এ পদ্ধতিটি ব্যবহৃত হয় । যেমন- পানি, রক্ত, মাটি এবং খাদ্য নমুনার ক্ষেত্রে । উদাহরণস্বরূপ রক্তরসে অ্যালুমিনিয়াম উদ্ভিদ, মাটির এবং পানির নমুনায় ক্যালসিয়াম, কপার-সংকরে কপার, সমুদ্রের পানিতে ক্রোমিয়াম, উদ্ভিদে লৌহ এই পদ্ধতি ppm রেঞ্জে শনাক্তকরণে খুবই কার্যকর । তবে পদ্ধতির উন্নয়ন সাপেক্ষে আরও সূক্ষ্ম লেভেলেও কার্যকর ।

পারমাণবিক শোষণের মূলনীতিঃ বোর পরমাণু মডেলের অন্যতম দু’টি স্বীকার্য হলো-

পরমাণুর ইলেকট্রনসমূহ নির্দিষ্ট শক্তির কতগুলো বৃত্তাকার স্থায়ী নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে আবর্তন করে । এ সকল কক্ষপথে আবর্তন কালে ইলেকট্রন কোন শক্তি শোষণ বা বিকিরণ করে না ।

তবে বহিরাগত উৎস থেকে শক্তি প্রয়োগ করা হলে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিক্রমণরত ইলেকট্রনগুলো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি শোষণ করে উত্তেজিত হয়ে শক্তিস্তরে স্থানান্তরিত হয় । বহিরাগত শক্তির উৎস সরিয়ে নিলে উচ্চস্তরের উত্তেজিত ইলেকট্রনগুলো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি বিকিরণ করে নিম্নতর শক্তি স্তরে (অধিকতর স্থায়ী) ফিরে আসে । এভাবে ইলেকট্রনের এক শক্তিস্তর থেকে অন্য শক্তিস্তরে স্থানান্তরকালে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তির শোষণ অথবা বিকিরণই হলো পারমাণবিক বর্ণালির মূলনীতি ।

প্রত্যেক ধাতু বৈশিষ্ট্যমূলক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বা কম্পাঙ্কের আলো শোষণ করে ।
পারমাণবিক শোষণ বর্ণালিবিশ্লেষণ

অউত্তেজিত বাষ্পায়িত ধাতব পরমাণু বহিঃস্থ উৎস হতে বৈশিষ্ট্যমূলক কম্পাঙ্কের আলোক রশ্মি শোষণ করে উত্তেজিত হয় যা নিম্নশক্তির অবস্থা হতে উত্তেজিত অবস্থায় স্থানান্তর করে ।

UV-visible spectroscopy

সূচনাঃ তাড়িৎ চৌম্বকীয় রশ্মির 200nm হতে 400nm তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মিকে অতিবেগুনী (Ultraviolet) এবং 400nm হতে 750nm তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মিকে দৃশ্যমান অঞ্চল বলা হয় । কম আকর্ষণে আবদ্ধ ইলেকট্রনসমূহ যেমন নন-বন্ডিং ইলেকট্রন বা পাই-বন্ডিং ইলেকট্রন উত্তেজিত বা উচ্চ শক্তিস্তরে উন্নীত করার জন্য অতিবেগুনী-দৃশ্যমান অঞ্চলের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রশ্মির বিকিরণ যথেষ্ট । এই অঞ্চলে আলোকরশ্মি শোষণ করার জন্য অণুসমূহকে অবশ্যই কনজুগেটেড দ্বি-বন্ধন থাকতে হবে । অণুতে খুব বেশি পরিমাণে কনজুগেশন থাকলে অণুটি দৃশ্যমান অঞ্চলে রশ্মি শোষণ করবে ।

মূলনীতিঃ আণবিক অরবিটাল তত্ত্ব (molecular orbital theory) অনুযায়ী যখন কোন যৌগকে UV-visible বা অতিবেগুনী দৃশ্যমান রশ্মি দ্বারা উত্তেজিত করা হয় তখন ইলেকট্রন বন্ডিং অরবিটাল (bonding orbital) হতে অ্যান্টিবন্ডিং অরবিটালে (anti-bonding orbital) স্থানান্তরিত হয় । ইলেকট্রনের এ স্থানান্তরে ইলেকট্রনীয় বর্ণালীর সৃষ্টি হয় । 𝜋 বন্ধন যুক্ত যৌগ সমূহে রশ্মি শোষিত হলে ইলেকট্রন সর্বোচ্চ অধিকৃত আণবিক অরবিটাল (Highest occupied molecular orbit, HOMO) হতে উচ্চতর শক্তির নিম্নতর অনধিকৃত অরবিটালে (Lowest unoccupied molecular orbital, LUMO) তে প্রবেশ করে । এক্ষেত্রে সাধারণত 4টি ইলেকট্রনীয় স্থানান্তর দেখা যায় ।

<span;>এ স্থানান্তরের ক্রম হলো n → 𝜋* < 𝜋 → 𝜋* < n → 𝜎* < 𝜎 → 𝜎* । এ স্থানান্তরের ইলেকট্রন একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মি শোষণ করে । UV-visible বর্ণালীর ক্ষেত্রে  𝜎 → 𝜎* স্থানান্তর কম হয় কারণ সিগমা বন্ধন নিউক্লিয়াস কর্তৃক অধিক আকৃষ্ট হয় ফলে 𝜎- বন্ধন ইলেকট্রন 190 nm হতে 800 nm তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মির দ্বারা উত্তেজিত হয় না ।

UV-visible রশ্মির কোন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অণু কর্তৃক শোষিত হবে তা নির্ভর করে অণুর ইলেকট্রনীয় কাঠামোর উপর যে সব অণুর ইলেকট্রনের স্থানান্তরের জন্য অধিক শক্তির প্রয়োজন তারা কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মি শোষণ করে । কনজুগেটেড বা একান্তর দ্বি-বন্ধন যুক্তযৌগে 𝜋 → 𝜋* ইলেকট্রন স্থানান্তরের সময় একান্তরের জন্য রশ্মির শোষণ মাত্রা কম হয় । ফলে কোন জৈব যৌগে যত বেশি কনজুগেশন থাকে সেই যৌগের অধিশোষণে তত বেশি হয় এবং সেই যৌগ তত বেশি দৃশ্যমান বর্ণালির দিকে স্থানান্তরিত হয় ।

প্রয়োগঃ

১. UV-visible বৰ্ণালী প্রধানত কোন নমুনায় যৌগের ঘনমাত্রা নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয় ।

২. যৌগে কার্যকরী গ্রুপের উপস্থিতি নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয় ।

৩. জৈব ও অজৈব যৌগের পরিমাণগত বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয় ।

৪. জৈব যৌগের শনাক্তকরণ ও কাঠামোগত বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয় ।

GC (গ্যাস ক্রোমোটোগ্রাফী)

যে বিশ্লেষণী পদ্ধতিতে স্থির তরল স্তর বা নিষ্ক্রিয় কঠিন অবলম্বকের সংস্পর্শে বাহক গ্যাস (He বা N_2) প্রবাহিত করে মিশ্রণ থেকে উপাদানসমূহকে পৃথকভাবে আঙ্গিক ও মাত্রিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে পৃথকীকরণ করা হয় তাকে গ্যাস ক্রোমোটোগ্রাফী বলে ।

গ্যাস ক্রোমোটোগ্রাফী মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ, শনাক্তকরণ ও পরিমাণ নির্ণয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ পৃথকীকরণ কৌশল । প্রকৃতপক্ষে গ্যাস ক্রোমোটোগ্রাফী কলাম ক্রোমোটোগ্রাফীর অন্তর্ভুক্ত । এখানে সচল মাধ্যম হিসেবে হিলিয়াম, নাইট্রোজেন বা হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহৃত হয় যাদের বাহক গ্যাস বলে । গ্যাস ক্রোমোটোগ্রাফী পরিশোষণ ও বিভাজন দুই শ্রেণির । পরিশোষণের ক্ষেত্রে স্থির মাধ্যম কঠিন ও সচল মাধ্যম গ্যাস বলা হয় । এ জাতীয় ক্রোমোটোগ্রাফীকে গ্যাস কঠিন ক্রোমোটোগ্রাফী বা GSC বলে । বিভাজন শ্রেণির ক্ষেত্রে স্থির মাধ্যম তরল ও সচল মাধ্যমে গ্যাস হয় । এ জাতীয় ক্রোমোটোগ্রাফীকে গ্যাস তরল ক্রোমোটোগ্রাফী বা GLC বলে । GSC ও GLC কে একত্রে GC দ্বারা বুঝানো হয় ।

বৈশিষ্ট্যঃ

১. GC তে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অন্যান্য ক্রোমোটোগ্রাফীর তুলনায় ব্যয় বহুল ।

২. GC সহজে ও দ্রুততার সাথে মিশ্রণ পৃথকীকরণ করতে সক্ষম ।

৩. GC তে কলামের তাপমাত্রা ব্যাপক পরিসরে পরিবর্তন হয় ।

৪. GC বিশেষত জৈব যৌগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ।

৫. GC এর সাম্য খুব দ্রুত স্থাপিত হয় ।

GC এর প্রয়োগঃ

১. মাতাল ড্রাইভারদের রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ নির্ণয়ে GC ব্যবহৃত হয় ।

২. হাইড্রোকার্বন ও পেট্রোলিয়াম বিশ্লেষণে GC ব্যবহৃত হয় ।

৩. অ্যালকোহল ও ফেনল পৃথক করতে GC ব্যবহৃত হয় ।

HPLC(High Performance Liquid Chromatography):

উচ্চ দক্ষতা তরল ক্রোমোটোগ্রাফীকে সংক্ষেপে HPLC বলে । যার পূর্ণনাম High Performance Liquid Chromatography । তরল ক্রোমাটোগ্রাফির সাথে গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফীর তত্ত্ব ও যান্ত্রিক ব্যবস্থা সমন্বয় ঘটিয়ে যে উচ্চতর দক্ষতা সম্পন্ন ক্রোমাটোগ্রাফী পাওয়া যায় তাকে উচ্চ দক্ষতা তরল ক্রোমাটোগ্রাফী বলে । এর সাহায্যে বিভিন্ন ঔষধ, যৌগ বা আয়ন শনাক্ত করা যায়  । 

গ্যাস ক্রোমেটোগ্রাফি ও উচ্চ দক্ষতার তরল ক্রোমেটোগ্রাফ এর পার্থক্য তুলনা কর ।

গ্যাস ক্রোমেটোগ্রাফি ও উচ্চ দক্ষতার তরল ক্রোমেটোগ্রাফ এর পার্থক্য তুলনা