ABO ব্লাড গ্রুপ ও Rh ফ্যাক্টর-এর কারণে সৃষ্ট সমস্যা (ABO Blood Group and Problems due to Rh Factor)
ABO ব্লাড গ্রুপ (ABO Blood Group)
রক্তকণিকায় কতকগুলো অ্যান্টিজেন (antigen)-এর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর নির্ভর করে বিজ্ঞানী ল্যান্ডস্টেইনার মানুষের রক্তের যে শ্রেণিবিন্যাস করেন, তা ABO ব্লাড গ্রুপ বা সংক্ষেপে ব্লাড গ্রুপ (blood group) নামে পরিচিত।
মানুষের রক্তে A ও B-এই দুরকম অ্যান্টিজেন থাকতে পারে। অ্যান্টিজেন A ও B-র সাথে রক্তরসে কতকগুলো স্বতঃস্ফূর্ত অ্যান্টিবডি রয়েছে। এগুলোকে বলে a (বা anti-A) এবং b (anti-B)। এভাবে অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডির উপস্থিতির ভিত্তিতে সমগ্র মানবজাতির রক্তকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা যায়, যথা-A, B, AB ও O।
অ্যান্টিজেন (Antigen) ও অ্যান্টিবডির (Antibody) উপস্থিতির ভিত্তিতে রক্তের চারটি গ্রুপ
Rh ফ্যাক্টর (Rh Factor)
মানুষের লোহিত কণিকার ঝিল্লিতে রেসাস বানরের লোহিত কণিকার ঝিল্লির মতো এক প্রকার অ্যান্টিজেন রয়েছে। রেসাস বানরের নাম অনুসারে ঐ অ্যান্টিজেনকে রেসাস ফ্যাক্টর (Rhess factor) বা সংক্ষেপে Rh factor বলে।
লোহিত রক্তকণিকার প্লাজমামেমব্রেনে Rh ফ্যাক্টরের উপস্থিতি-অনুপস্থিতির ভিত্তিতে রক্তের শ্রেণিবিন্যাসকে Rh ব্লাড গ্রুপ বলে। Rh ফ্যাক্টরবিশিষ্ট রক্তকে \mathbf{R h}^{+} (Rh পজিটিভ) এবং Rh ফ্যাক্টরবিহীন রক্তকে \mathbf{R h}^{-} (Rh নেগেটিভ) রক্ত বলে।
বিজ্ঞানী Fisher মত প্রকাশ করেন যে, Rh ফ্যাক্টর মোট ৬টি সাধারণ অ্যান্টিজেনের সমষ্টি বিশেষ। এদের ৩ জোড়ায় ভাগ করা যায়, যেমন-C, c; D, d; E, e। এদের মধ্যে C, D, E হচ্ছে মেন্ডলীয় প্রকট এবং c, d, e হচ্ছে মেন্ডেলীয় প্রচ্ছন্ন। মানুষের লোহিত কণিকায় এক সংগে ৩টি অ্যান্টিজেন থাকে কিন্তু প্রতি জোড়ার দুটি উপাদান কখনও একসাথে থাকে না, যেমন-CDE, CDe, cDE এমন সন্নিবেশ সম্ভৰ, CDd অসম্ভব। মেন্ডেলীয় প্রকট অ্যান্টিজেন (C, D, E) যে রক্তে থাকে তাকে \mathbf{R h}^{+}রক্ত বলে। যে রক্তে মেন্ডেলীয় প্রচ্ছন্ন অ্যান্টিজেন (c, d, e) থাকে তাকে \mathbf{R h}^{-} রক্ত বলে।
Rh ফ্যাক্টরের কারণে সৃষ্ট সমস্যা (Problems due to Rh Factor)
১. রক্ত সঞ্চালনে জটিলতা (Complexity in Blood Transfusion) : Rh– রক্তবিশিষ্ট ব্যক্তির রক্তে \mathbf{R h}^{+} বিশিষ্ট রক্ত দিলে প্রথমবার গ্রহীতার দেহে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না, কিন্তু গ্রহীতার রক্তরসে ক্রমশ \mathbf{R h}^{+}অ্যান্টিজেনের বিপরীত অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হবে। এই অ্যান্টিবডিকে অ্যান্টি Rh ফ্যাক্টর বলে।
গ্রহীতা যদি দ্বিতীয়বার দাতার \mathbf{R h}^{+} রক্ত গ্রহণ করে তা হলে গ্রহীতার রক্তরসের অ্যান্টি Rh ফ্যাক্টরের প্রভাবে দাতার লোহিত রক্তকণিকা জমাট বেঁধে পিন্ডে পরিণত হবে। তবে একবার সঞ্চারণের পর যদি গ্রহীতা আর ঐ রক্ত গ্রহণ না করে তা হলে ধীরে ধীরে তার রক্তে উৎপন্ন সমস্ত অ্যান্টি Rh ফ্যাক্টর নষ্ট হয়ে যায় এবং গ্রহীতা স্বাভাবিক রক্ত ফিরে পায়।
২. গর্ভধারণজনিত জটিলতা (Complexity in Pregnancy) : সন্তানসম্ভবা মহিলাদের ক্ষেত্রে Rh ফ্যাক্টর খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন\mathbf{R h}^{-}(Rh নেগেটিভ) মহিলার সঙ্গে \mathbf{R h}^{+}(Rh পজিটিভ) পুরুষের বিয়ে হলে তাদের প্রথম সন্তান হবে \mathbf{R h}^{+}, কারণ\mathbf{R h}^{+} একটি প্রকট বিশিষ্ট। ভ্ৰণ অবস্থায় সন্তানের \mathbf{R h}^{+} ফ্যাক্টরযুক্ত লোহিত কণিকা অমরার মাধ্যমে মায়ের রক্তে এসে পৌছাৰে, ফলে মায়ের রক্ত Rh– হওয়ায় তার রক্তরসে অ্যান্টি Rh ফ্যাক্টর (অ্যান্টিবডি) উৎপন্ন হবে।
চিত্র : Rh ফ্যাক্টরের কারণে সৃষ্ট সমস্যা
অ্যান্টি Rh ফ্যাক্টর মায়ের রক্ত থেকে অমরার মাধ্যমে ভ্রুণের রক্তে প্রবেশ করলে ভ্রুণের লোহিত কণিকাকে ধ্বংস করে, ভ্রুণও বিনষ্ট হয় এবং গর্ভপাত ঘটে। এ অবস্থায় শিশু জীবিত থাকলেও তার দেহে প্রচন্ড রক্তাল্পতা এবং জন্মের পর জন্ডিস রোগ দেখা দেয়। এ অবস্থাকে এরিথ্রোরাস্টোসিস ফিটালিস (erythroblastosis foetalis) বলে।