স্পর্শ কোণ, পৃষ্ঠটান সম্পর্কিত কয়েকটি ঘটনা
- স্পর্শ কোণ (Angle of Contact)
কোনো কঠিন পদার্থকে কোনো তরলে ডুবালে দেখা যায় যে, তরল পদার্থ যেখানে কঠিন পদার্থটিকে স্পর্শ করে সেখানে তরল পদার্থের মুক্ততল বা উপরিতল অন্যান্য জায়গার মতো অনুভূমিক হয় না বরং তরলের মুক্ত তল হয় বেঁকে খানিকটা উপর ওঠে যায় অথবা খানিকটা নিচে নেমে যায় । দেখা গেছে, যে সকল তরল কঠিন পদার্থকে ভিজায় যেমন (পানি ও কাচ) সেক্ষেত্রে তরলতল খানিকটা উপর ওঠে যায় (চিত্র: ক) । পক্ষান্তরে যে সকল তরল কঠিন পদার্থকে ভিজায় না যেমন (পারদ ও কাচ) তাদের ক্ষেত্রে তরলতল খানিকটা নিচে নেমে যায় বা অবনমিত হয় (চিত্র: খ) ।
কঠিন ও তরলের স্পর্শ বিন্দু C থেকে বক্র তরল তলে স্পর্শক CA টানলে ঐ স্পর্শক কঠিনের পৃষ্ঠ CB-এর সাথে তরলের ভেতরে যে কোণ উৎপন্ন করে তাই স্পর্শ কোণ। চিত্রে হচ্ছে স্পর্শ কোণ ।
সংজ্ঞা : কঠিন ও তরলের স্পর্শ বিন্দু থেকে বক্র তরল তলে অঙ্কিত স্পর্শক কঠিন পদার্থের সাথে তরলের ভেতরে যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে উক্ত কঠিন ও তরলের মধ্যকার স্পর্শ কোণ বলে ।
সাধারণত যে সব তরলের ঘনত্ব কঠিন পদার্থের ঘনত্বের চেয়ে কম সেসব তরল পদার্থ সাধারণত কঠিন পদার্থকে ভেজায় এবং তাদের বেলায় স্পর্শ কোণ সূক্ষ্ম কোণ হয় অর্থাৎ 90° এর কম হয় । কাচ ও বিশুদ্ধ পানির বেলায় স্পর্শ কোণের মান প্রায় 8° । রূপা ও বিশুদ্ধ পানির মধ্যকার স্পর্শ কোণ প্রায় 90° । যে সব তরল পদার্থের ঘনত্ব কঠিন পদার্থের ঘনত্বের চেয়ে বেশি সেসব তরল পদার্থ সাধারণত কঠিন পদার্থকে ভেজায় না এবং তাদের বেলায় স্পর্শ কোণ স্থল কোণ অর্থাৎ 90° এর চেয়ে বেশি হয় । কাচ ও বিশুদ্ধ পারদের বেলায় স্পর্শ কোণের মান প্রায় 139° ।
স্পর্শ কোণ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে
১. কঠিন ও তরলের প্রকৃতির উপর ।
২. তরলের মুক্ততলের উপরস্থ মাধ্যমের উপর । যেমন পারদের উপর বায়ু থাকলে পারদ ও কাচের স্পর্শ কোণ যা হবে পারদের উপর পানি থাকলে স্পর্শ কোণ তা থেকে আলাদা হবে ।
৩. কঠিন ও তরল পদার্থের বিশুদ্ধতার উপর। তরল যদি বিশুদ্ধ না হয় বা কঠিন পদার্থের পৃষ্ঠে কোনো কিছু থাকলে স্পর্শ কোণ পরিবর্তিত হয়ে যায় । বিশুদ্ধ পানি ও পরিষ্কার কাচের মধ্যকার স্পর্শ কোণ প্রায় শূন্য । কিন্তু কাচে সামান্য পরিমাণেও তৈলাক্ত পদার্থ থাকলে স্পর্শ কোণের মান বৃদ্ধি পায় ।
কৈশিকতা (Capillarity)
অতি সূক্ষ্ম ও সুষম ছিদ্রবিশিষ্ট নলকে কৈশিক নল (capillary tube) বলে । কোনো কৈশিক কাচ নলের এক প্রান্ত তরলের মধ্যে খাড়া করে ডুবালে নলের ভেতর কিছু তরল তরলের মুক্ত তল থেকে উপরে ওঠে যায় বা নিচে নেমে আসে । যেসব তরল (যেমন পানি) কাচ নলকে ভিজিয়ে দেয় তাদের বেলায় নলের ভেতরকার তরলের তল (চিত্র: ক) ।
পাত্রের তরলের মুক্ততলের চেয়ে উপরে ওঠে যায় অর্থাৎ তরলের ঊর্ধ্বারোহণ বা অধিক্ষেপ হয় । যেসব তরল (যেমন পারদ) কাঁচ নলকে ভিজায় না তাদের বেলায় কাঁচ নলের ভেতরকার তরল স্তম্ভের উপরিতল পাত্রের তরলের (চিত্র: খ) মুক্ততলের চেয়ে নিচে নেমে আসে অর্থাৎ তরলের অবনমন বা অবক্ষেপ হয় । কৈশিক নলে তরলের এরকম অধিক্ষেপ বা অবক্ষেপকে কৈশিকতা বলে ।
তরলের পৃষ্ঠটানের জন্য এরূপ হয়ে থাকে । অধিক্ষেপের বেলায় নলের ভেতর তরলে উপরিতল অবতল থাকে এবং অর্বক্ষেপের বেলায় নলের ভেতর তরলের উপরিতল উত্তল থাকে । আসঞ্জন ও সংসক্তি বলের আপেক্ষিক মানের ওপর নির্ভর করে নলের ভেতরকার তরলের উপরিতলের বক্রতা কেমন হবে । আসঞ্জন বা সংসক্তি বলের মান কতটা হবে তা তরল ও কঠিন পদার্থের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে । যে তরল পদার্থ কঠিন পদার্থকে ভিজিয়ে দেয় (যেমন পানি ও কাঁচ) তার আসঞ্জন বল, যে তরল পদার্থ কঠিন পদার্থকে ভেজায় না (যেমন পারদ ও কাঁচ) তার আসঞ্জন বলের চেয়ে অনেক বেশি । আবার পানির সংসক্তি বল পারদের সংসক্তি বলের চেয়ে অনেক কম ।
দেখে গেছে,
(i) সংসক্তি বল =√2 × আসঞ্জন বল হলে কৈশিক নলে তরলের অবক্ষেপ বা অধিক্ষেপ হয় না, তরলের মুক্ত তল অনুভূমিক থাকে এবং স্পর্শ কোণ শূন্য অর্থাৎ \theta =0 \degree হয় ।
(ii) সংসক্তি বল >√2 × আসঞ্জন বল হলে কৈশিক নলে তরলের অবক্ষেপ হয়, তরলের মুক্ততল উত্তল হয় এবং স্পর্শ কোণ স্থুল কোণ অর্থাৎ \theta > 90 \degree হয় ।
(iii) সংসক্তি বল <√2 × আসঞ্জন বল হলে কৈশিক নলে তরলের অধিক্ষেপ হয়, তরলের মুক্ততল অবতল হয় এবং স্পর্শ কোণ সূক্ষ্ম কোণ অর্থাৎ \theta < 90 \degree হয় ।
একটি কৈশিক নলে-পানি যে উচ্চতা পর্যন্ত উঠতে পারে তার রাশিমালা নির্ণয় কর।
একটি কৈশিক নলকে পানি বা ঐ জাতীয় কোনো তরলের (যা নলকে ভিজায়) ভেতর খাড়াভাবে ডুবিয়ে রাখলে দেখা যায় যে, নলের মধ্যে তরল খানিকটা ওপরে ওঠে এবং তরল তল অবতল আকার ধারণ করে ।
ধরা যাক, তরল ও কঠিনের স্পর্শকোণ =\theta, তরল তল যেখানে নলের মধ্যে নলকে স্পর্শ করেছে সেখানে নলের ব্যাসার্ধ =r
নলের বাইরের তরল তল থেকে নলের ভেতরের তরলের নিম্ন প্রান্ত পর্যন্ত উচ্চতা =h
তরলের ঘনত্ব =\rho এবং তরলের পৃষ্ঠটান =T
নলের ভেতরের দেয়াল এবং তরলের স্পর্শ বিন্দু হতে বক্র তরল তলে স্পর্শক টানলে ঐ স্পর্শক বরাবর পৃষ্ঠটান T ভেতরের দিকে ক্রিয়া করবে । কৈশিক নলের ব্যাসার্ধ r হলে পরিধি হবে 2\pi r অর্থাৎ নলের ভেতরের দেয়ালে পানির স্পর্শরেখার দৈর্ঘ্য হবে 2\pi r । ফলে পৃষ্ঠটানের জন্য নলের দেয়াল স্পর্শক বরাবর ভেতরের দিকে 2\pi rT বল অনুভব করবে । নিউটনের তৃতীয় গতি সূত্রানুযায়ী দেয়ালও তরলের ওপর এর বিপরীতে বাইরের দিকে সমান বল 2\pi rT প্রয়োগ করবে । এ বল 2\pi rT কে দুটি লম্ব উপাংশে বিভাজিত করলে খাড়া ওপরের দিকে 2\pi rT cos \theta এবং এর সাথে লম্বভাবে অনুভূমিক বরাবর বাইরের দিকে 2\pi rT sin \theta পাওয়া যায়। নলের ব্যাসের বিপরীত দিকে ক্রিয়া করায় বল 2\pi rT sin \theta উপাংশগুলো জোড়ায় জোড়ায় পরস্পরের ক্রিয়া নাকচ করে দেবে ।
অতএব তরলের ওপর মোট উর্ধ্বমুখী বল হবে 2\pi rT cos \theta ।
যেহেতু এই ঊর্ধ্বমুখী বলের প্রভাবে তরল স্তম্ভ কৈশিক নলের মধ্যে উপরে উঠতে থাকে সুতরাং যখন তরল স্তম্ভের ওজন এই ঊর্ধ্বমুখী বলের সমান হয় তখন সাম্যাবস্থা সৃষ্টি হয় অর্থাৎ নলের মধ্যে তরল স্তম্ভ স্থির হয়ে যায় । এই অবস্থায় নলের বাইরের তরল তল হতে তরল স্তম্ভের নিম্নপ্রান্ত পর্যন্ত উচ্চতা h হলে এই তরল স্তম্ভের আয়তন হবে \pi r^{2}h এবং তরলের বক্র অংশের আয়তন v এর সমষ্টির সমান । অর্থাৎ নলের মধ্যস্থিত তরল স্তম্ভের মোট আয়তন = πr2h+v এবং এই তরলের ওজন =(\pi r^{2}h+v)\rho g
অতএব সাম্যাবস্থায়,
2 \pi r T \cos \theta=\left(\pi r^{2} h+v\right) \rho g \therefore T=\frac{\left(\pi r^{2} h+v\right) \rho g}{2 \pi r \cos \theta}এখন, v=ABCD সিলিন্ডারের আয়তন –AEB অর্ধগোলকের আয়তন
\begin{aligned} =& \pi r^{2} \cdot r-\frac{1}{2} \times \frac{4}{3} \pi r^{3}=\pi r^{3}-\frac{2}{3} \pi r^{3}=\frac{1}{3} \pi r^{3} \\ T &=\frac{\left(\pi r^{2} h+\frac{1}{3} \pi r^{3}\right) \rho g}{2 \pi r \cos \theta}=\frac{\pi r^{2}\left(h+\frac{r}{3}\right) \rho g}{2 \pi r \cos \theta} \\ \therefore T &=\frac{r \rho g\left(h+\frac{r}{3}\right)}{2 \cos \theta} \end{aligned}এখন কৈশিক নলটি যদি সরু হয় অর্থাৎ r এর মান খুবই কম হয়, তাহলে h-এর তুলনায় কে উপেক্ষা করা যায় ।
T=\frac{r h \rho g}{2 \cos \theta}বা, h=2 \frac{T \cos \theta}{r \rho g}
বিশুদ্ধ পানি ও পরিষ্কার কাচের মধ্যকার স্পর্শকোণ প্রায় 0° হওয়ায় cos θ≈1 ধরা হয় ।
সে ক্ষেত্রে পৃষ্ঠটান
\therefore T=\frac{r h \rho g}{2}∴ কৈশিক নলে পানি যে উচ্চতা পর্যন্ত উঠবে অর্থাৎ h= \frac{2T}{r \rho g}
পারদের মধ্যে একটি কৈশিক নল ডুবালে পারদ কাচ নলের মধ্যে নিচে নেমে যায় কেন?
চিত্রে r ব্যাসার্ধের একটি কৈশিক নলকে পারদে (যে তরল কাঁচ ভেজায় না) ডুবানো হয়েছে । এ ক্ষেত্রে স্পর্শ কোণ স্থুল কোণ অর্থাৎ 90\degree> \theta >180 \degree । নলের ভেতরের পারদ খানিকটা নিচে নেমে উত্তল আকার ধারণ করে । ফলে পৃষ্ঠটানের জন্য নলের দেয়াল স্পর্শক বরাবর ভেতরের দিকে 2 \pi rT বল অনুভব করবে । নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র অনুযায়ী দেয়ালও তরলের উপর এর বিপরীতে বাইরের দিকে সমান বল 2 \pi rT প্রয়োগ করবে ।
চিত্র থেকে দেখা যায় যে, প্রতিক্রিয়া বলের খাড়া উর্ধ্বমুখী কোনো উপাংশ নেই, আছে খাড়া নিম্নমুখী উপাংশ । এই নিম্নমুখী বলের ক্রিয়ায় কাঁচ নলে পারদ নিচের দিকে খানিকটা নেমে যায় ।
জুরিনের সূত্র (Jurin’s Law) : তরলের তাপমাত্রা স্থির থাকলে T, \theta এবং \rho -ও স্থির থাকে । সে ক্ষেত্রে 4 নং সমীকরণকে লেখা যায়,
h=\frac{K}{r}এখানে, K=\frac{2Tcos \theta }{ \rho g}= ধ্রুবক
সুতরাং h \propto \frac{1}{r}
অর্থাৎ কৈশিক নলে কোনো তরলের অধিক্ষেপ অথবা অবক্ষেপ নলের ব্যাসার্ধের ব্যস্তানুপাতিক । এটি জুরিনের সূত্র (Jurin’s Law) নামে পরিচিত ।
কৈশিক নলে পানি উপরে ওঠে আর পারদ নিচে নামে কেন?
স্পর্শ কোণ সূক্ষ্মকোণ অর্থাৎ 90 \degree এর চেয়ে ছোট হলে cos \theta ধনাত্মক হয় । ফলে (7.33) সমীকরণ অনুসারে h ধনাত্মক হয়। অর্থাৎ কৈশিক নলে এক্ষেত্রে তরল উপরে ওঠে ।
আবার স্পর্শ কোণ স্থুল কোণ অর্থাৎ 90 \degree এর চেয়ে বড় হলে cos \theta ঋণাত্মক হয় । ফলে (7:33) সমীকরণ অনুসারে h ও ঋণাত্মক হয় । অর্থাৎ এক্ষেত্রে তরল নিচে নামে ।
এ কারণেই কৈশিক নল পানিতে ডুবালে পানি নল বেয়ে উপরে ওঠে এবং পারদে ডুবালে পারদ নল বেয়ে নিচে নেমে যায় ।
পৃষ্ঠটান সম্পর্কিত কয়েকটি ঘটনা (Some Phenomena Related to Surface Tension)
১। পানির উপর দিয়ে পোকামাকড় হাঁটা : অনেক সময় দেখা যায় যে, পানির উপর দিয়ে মশা, মাছি বা অন্য কোনো পোকামাকড় হাঁটছে । এদের পা পানিতে ডুবে যাচ্ছে না । মনে হয় পানির উপর যেন একটি পাতলা পর্দা রয়েছে এবং এই পর্দার উপর দিয়ে পোকামাকড় চলাফেরা করছে । ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে, যেখানে পোকামাকড়ের পা পড়ছে সেখানে পানির পৃষ্ঠ একটু অবনমিত হচ্ছে । এটা সম্ভব হয় পানির পৃষ্ঠটানের কারণে । পৃষ্ঠটানের দরুন পানি বা যেকোনো তরলের পৃষ্ঠ বা মুক্ততল টানা স্থিতিস্থাপক পর্দার মতো আচরণ করে এবং ক্ষেত্রফল সঙ্কুচিত হতে চায় ।
২। সাবানের ফেনা : সাবান পানির পৃষ্ঠটান কমিয়ে দেয় । সাবানের দ্রবণের পৃষ্ঠটান পানির পৃষ্ঠটানের চেয়ে কম । সুতরাং এক ফোঁটা সাবানের দ্রবণ পানির ফোঁটার চেয়ে বেশি পৃষ্ঠতল বা ক্ষেত্র দখল করে । সুতরাং এটা কাপড়ের বেশি এলাকা ভিজিয়ে দেয় । সুতরাং সাবানের দ্রবণ কাপড়ের যেসব সূক্ষ্ম ছিদ্র পথে প্রবেশ করে সেখানে পানি প্রবেশ করতে পারে । ফলে সাবানের দ্রবণে কাপড় থেকে ময়লা বের করে আনতে পারে । সুতরাং সাবানের দ্রবণ পানির চেয়ে উত্তম উপায়ে কাপড় পরিষ্কার করতে পারে । সাবানের দ্রবণকে গরম করলে পানির পৃষ্ঠটান আরো কমে যায় ফলে কাপড় আরো বেশি পরিষ্কার হয় ।
৩। গাছে পানির পরিবহন : উদ্ভিদ বা গাছের গোড়ায় পানি দিলে সে পানি গাছের ডালপালা ও পাতায় পৌঁছে যায় । এর কারণ হলো : পানির পৃষ্ঠটানের কারণে গাছের কাণ্ডে অসংখ্য কৈশিক নলের ভিতর দিয়ে পানি উপরের দিকে উঠে এবং গাছের ডালপালা ও পাতায় পৌঁছায় । এ প্রক্রিয়ায় অসমোসীয় (osmotic) চাপেরও আংশিক ভূমিকা থাকে ।
৪। তরলের পৃষ্ঠে সুঁই ভেসে থাকা : পৃষ্ঠটান নিয়ে আলোচনার সময় আমরা বলেছি যে, কোনো সুঁইকে একটি টিস্যু পেপারের উপরে রেখে পানির মুক্ততলে রাখলে টিস্যু পেপার ভিজে ডুবে যায় কিন্তু সুঁইটি ভাসতে থাকে । এর কারণ হলো− পানিতে যেখানে সুইটি রয়েছে তার নিচে পানির পৃষ্ঠ কিছুটা অবনমিত হচ্ছে । ফলে পৃষ্ঠের ঐ স্থানটা অনুভূমিক থাকে না বরং পৃষ্ঠটানের জন্য এ বল অবনমিত পানি পৃষ্ঠের সাথে তীর্যকভাবে স্পর্শক বরাবর ক্রিয়া করে । পৃষ্ঠটানজনিত এ তীর্যকভাবে ক্রিয়াশীল বলের উল্লম্ব উপাংশ সুঁই-এর ওজনকে প্রশমিত করে, ফলে সুঁইটি না ডুবে সাম্যাবস্থায় ভেসে থাকে ।
৫। ছাতার কাপড় : ছাতার কাপড় বা তাঁবুর কাপড় বা রেইন কোটের কাপড়ে খুব সুক্ষ্ম ছিদ্র থাকে যার মধ্য দিয়ে বাতাস প্রবেশ করতে পারে কিন্তু বৃষ্টির পানির ফোঁটা প্রবেশ করতে পারে না— কাপড়ের উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যায় ।
৬। পানি কচুপাতাকে ভিজায় না কিন্তু আমপাতাকে ভিজায় : কঠিন ও তরলের মধ্যকার স্পর্শ কোণ অর্থাৎ 90° এর চেয়ে কম হলে তরল পদার্থ ঐ কঠিন পদার্থকে ভেজাবে । আর যদি স্পর্শকোণ স্থূলকোণ অর্থাৎ 90° এর চেয়ে বেশি হয় তাহলে তরল পদার্থ কঠিন পদার্থকে ভেজাবে না । কচুপাতা ও পানির মধ্যকার স্পর্শকোণ 90° এর চেয়ে বেশি হওয়ায় পানি কচু পাতাকে ভেজাতে পারে না। পক্ষান্তরে আম পাতা ও পানির মধ্যকার স্পর্শকোণ সূক্ষ্মকোণ হওয়ায় পানি আম পাতাকে ভেজায় ।
৭। কোন পরিষ্কার কাঁচপৃষ্ঠে পানি ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু পারদ ফোঁটার আকার ধারণ করে : আমরা জানি যে, পানির সাথে কাঁচের স্পর্শ কোণ সূক্ষ্ম কোণ ও পানির সাথে পারদের স্পর্শ কোণ স্থুলকোণ । এ ঘটনা পৃষ্ঠটানের কারণেই ঘটে থাকে । কাঁচের সাথে স্পর্শ কোণ θ এর মান স্থুল কোণে রাখার জন্য পারদকে ফোঁটার আকার ধারণ করতে হয় এবং কাঁচের সাথে স্পর্শ কোণ সূক্ষ্ম করার জন্য পানিকে ছড়িয়ে পড়তে হয় ।
৮। অশান্ত সমুদ্রকে শান্ত করা : তরলের পৃষ্ঠটান ধর্ম ব্যবহার করে অশান্ত সমুদ্রকে অনেকটা শান্ত করা যায় । সমুদ্রে খুব ঢেউ থাকলে অনেক সময় তেল ঢেলে দেয়া হয় শান্ত করার জন্য । বাতাস জোরে প্রবাহিত হওয়ার সময় পানির ওপর ভাসমান তেল ঢেউ-এর সাথে সামনের দিকে অগ্রসর হয় এবং পেছনে পরিষ্কার পানি থেকে যায় । পরিষ্কার পানির পৃষ্ঠটান তেল মিশ্রিত পানির চেয়ে বেশি হওয়ায় সামনের দিকের চেয়ে পেছনের দিকের পৃষ্ঠটান বেশি হয় । এ বর্ধিত পৃষ্ঠটান পেছনের দিকে বড় ঢেউ সৃষ্টিতে হঠাৎ বাধা দেয়, ফলে সমুদ্র শান্ত হয়ে যায় ।