প্রভাবক কী? এর প্রকারভেদ আলোচনা কর (Catalyst and its types)
যে সব রাসায়নিক পদার্থ বিক্রিয়কের উপস্থিত থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি বা হ্রাস করে এবং বিক্রিয়া শেষে নিজে গঠন ও ভরে অপরিবর্তিত থাকে, তাকে প্রভাবক বা অনুঘটক বলে। প্রভাবকের উপস্থিতিতে বিক্রিয়ার গতি প্রভাবান্বিত প্রভাবন (catalysis) বলে।
প্রভাবকের বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত দুটো প্রধান ভূমিকা বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে :
(১) প্রতিটি প্রভাবক সংশ্লিষ্ট বিক্রিয়ায় বিক্রিয়কের সক্রিয়ণ শক্তি (activation energy) কে হ্রাস করে বিক্রিয়াটি নতুনভাবে, নিম্নশক্তির ধারায় বা মেকানিজমে সংঘটিত করে।
(২) প্রভাবক উভমুখী বিক্রিয়ার সম্মুখমুখী ও পশ্চাৎমুখী উভয় বিক্রিয়ার গতিকে বৃদ্ধি করে। প্রভাবক বিহীন কোনো বিক্রিয়ায় যে পরিমাণ ‘উৎপাদ’ তৈরি হয়; ঐ বিক্রিয়ায় প্রভাবক ব্যবহার করে একই পরিমাণ ‘উৎপাদ’ কম সময়ে তৈরি করা সম্ভব হয়। তখন ঐ বিক্রিয়াটি অধিকতর দ্রুত সম্পন্ন হয় মাত্র।
(৩) প্রভাবক কোনো উভমুখী বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থাকে পরিবর্তন করতে পারে না।
(৪) প্রভাবকের কার্যকারিতা অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট বিক্রিয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রভাবক ব্যবহৃত হয়।
(৫) বিক্রিয়া শেষে প্রভাবকের ভরের বা গঠনের কোনো পরিবর্তন ঘটে না।
(৬) সামান্য পরিমাণ প্রভাবকে বিক্রিয়ার বেগ কাঙ্ক্ষিত মানে বৃদ্ধি বা হ্রাস করতে পারে।
(৭) বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবক একটি সরলতম বিকল্প পথ সৃষ্টি করে যাতে সক্রিয়ণ শক্তি হ্রাস পায়।
কার্যভিত্তিক প্রভাবসমূহকে নিম্নোক্ত চার শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় :
১। ধনাত্মক প্রভাবক (Positive Catalyst): যে প্রভাবক কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার স্বাভাবিক গতিকে আরো বৃদ্ধি করে, তাকে ধনাত্মক প্রভাবক বলে এবং এ বিষয়টিকে ধনাত্মক প্রভাবন বলে। যেমন, পটাসিয়াম ক্লোরেট \left(\mathrm{KClO}_{5}\right) কে উত্তপ্ত করে \mathrm{O}_{2} গ্যাস প্রস্তুতকালে ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড \left(\mathrm{MnO}_{2}\right) ধনাত্মক প্রভাবকরূপে ক্রিয়া করে।
2 \mathrm{KClO}_{3}(s) \stackrel{\Delta, \mathrm{MnO}_{2}}{\longrightarrow} 2 \mathrm{KCl}(s)+3 \mathrm{O}_{2}(g)২। ঋণাত্মক প্রভাবক (Negative Catalyst): যে প্রভাবক কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার স্বাভাবিক গতিকে হ্রাস করে, তাকে ঋণাত্মক প্রভাবক বলে এবং বিষয়টিকে ঋণাত্মক প্রভাবন বলে। যেমন, \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}_{2} কক্ষ তাপমাত্রায় বিয়োজিত হয়ে পানি ও \mathrm{O}_{2} গ্যাস উৎপন্ন করে। কিন্তু কয়েক ফোঁটা ফসফরিক এসিড \mathrm{H}_{3} \mathrm{PO}_{4} যোগ করলে \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}_{2} এর বিয়োজন হ্রাস পায়।
\begin{array}{l} 2 \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}_{2}(a q) \stackrel{25^{\circ} \mathrm{C}} {\longrightarrow} 2 \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}(l)+\mathrm{O}_{2}(g) \text { [স্বাভাবিক বিয়োজন] } \\ 2 \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}_{2}(a q) \stackrel{\mathrm{H}_{3} \mathrm{PO}_{4}} {\longrightarrow} 2 \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}(l)+\mathrm{O}_{2}(g) \text { [বিয়োজন মন্থর] } \end{array}৩। অটো প্রভাবক বা স্ব-প্রভাবক (Auto Catalyst): কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন পদার্থের একটি নিজেই প্রভাবকের ধর্ম সম্পন্ন হয় এবং তা নিজেই ঐ বিক্রিয়ার গতিকে বৃদ্ধি করে, তাকে অটো প্রভাবক বা স্ব-প্রভাবক বলে এবং এ বিষয়টিকে প্রভাবন বলা হয়। যেমন, অক্সালিক এসিডের দ্রবণে \mathrm{H}_{2} \mathrm{SO}_{4} মিশ্রিত \mathrm{KMnO}_{4} দ্রবণ ফোঁটায় ফোঁটায় যোগ করলে প্রথমে পারম্যাঙ্গানেট গোলাপী বর্ণ ধীরে ধীরে দূর হয়। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই দ্রবণে কিছু \mathrm{Mn}^{2+} আয়ন উৎপন্ন হওয়া মাত্রই \mathrm{KMnO}_{4} দ্রবণের গোলাপী বর্ণ দ্রুত দূর হয়। এক্ষেত্রে উৎপন্ন \mathrm{MnSO}_{4} এর ম্যাঙ্গানিজ আয়ন \left(\mathrm{Mn}^{2+}\right) স্ব-প্রশন ক্রিয়া করে এবং এর ক্রিয়াকে স্ব-প্রভাবন বলা হয়।
5(\mathrm{COOH})_{2}+2 \mathrm{KMnO}_{4}+3 \mathrm{H}_{2} \mathrm{SO}_{4} \longrightarrow \mathrm{K}_{2} \mathrm{SO}_{4}+2 \mathrm{MnSO}_{4}+10 \mathrm{CO}_{2}+8 \mathrm{H}_{2} \mathrm{O}অক্সালিক এসিড K-পারম্যাঙ্গানেট
৪। আবিষ্ট প্রভাবক : কোনো বিক্রিয়ার একটি বিশেষ বিক্রিয়কের প্রভাবে তার অপর বিক্রিয়কের সাথে তৃতীয় কোনো পদার্থের বিক্রিয়া ঘটে; কিন্তু পৃথকভাবে তাদের মধ্যে কোনো বিক্রিয়া ঘটে না। তখন ঐ বিশেষ বিক্রিয়কটিকে পরের বিক্রিয়া আবিষ্ট প্রভাবক বলে এবং তার এরূপ ক্রিয়াকে আবিষ্ট প্রভাবন বলা হয়। যেমন, সোডিয়াম সালফাইট \left(\mathrm{Na}_{2} \mathrm{SO}_{3}\right) এর প্রবণে \mathrm{O}_{2} গ্যাস চালনা করলে \left(\mathrm{Na}_{3} \mathrm{AsO}_{3}\right) জারিত হয়ে \mathrm{Na}_{2} \mathrm{SO}_{4} উৎপন্ন হয়; কিন্তু অনুরূপ অবস্থায় সোডিয়াম আর্সেনাইট \left(\mathrm{Na}_{3} \mathrm{AsO}_{3}\right) অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয় না। অথচ সোডিয়াম সালফাইট ও আর্সেনাইটের মিশ্র দ্রবণে O_{2} গ্যাস চালনা করলে উভয়েই জারিত হয়।
পৃথকভাবে :
2 \mathrm{Na}_{2} \mathrm{SO}_{3}(a q)+\mathrm{O}_{2}(g) \longrightarrow 2 \mathrm{Na}_{2} \mathrm{SO}_{4}(a q) \mathrm{Na}_{3} \mathrm{AsO}_{3}(a q)+\mathrm{O}_{2}(g) \longrightarrow \text { কোনো বিক্রিয়া ঘটে না। }মিশ্রিতভাবে :
\mathrm{Na}_{2} \mathrm{SO}_{3}(a q)+\mathrm{Na}_{3} \mathrm{AsO}_{3}(a q)+\mathrm{O}_{2}(g) \longrightarrow \mathrm{Na}_{2} \mathrm{SO}_{4}(a q)+\mathrm{Na}_{3} \mathrm{AsO}_{4}(a q)এক্ষেত্রে সোডিয়াম সালফাইটের প্রভাবে সোডিয়াম আর্সেনাইট জারিত হয়। তাই এক্ষেত্রে \mathrm{Na}_{2} \mathrm{SO}_{3} হলো আবিষ্ট প্রভাবক।
প্রভাবক সহায়ক এবং প্রভাবক বিষ কী (Catalyst Promotor)?
যে সব রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতিতে বা প্রভাবে বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত কোনো প্রভাবকের প্রভাবন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তাদেরকে প্রমোটর বলে। যেমন, হেবার পদ্ধতিতে \mathrm{N}_{2} ও \mathrm{H}_{2} গ্যাস থেকে অ্যামোনিয়া \left(\mathrm{NH}_{3}\right) উৎপাদনকালে লৌহচুর্ণ প্রভাবকের সাথে সামান্য পরিমাণে মলিবডেনাম ধাতুর \left(\mathrm{Mo}\right) গুঁড়া মিশানো হলে লৌহ প্রভাবকের প্রভাবন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই এক্ষেত্রে \mathrm{Mo} ধাতু হলো \mathrm{Fe} প্রভাবকের সহায়ক বা প্রমোটর।
N_{2}(g)+3 H_{2}(g) \stackrel{F e, M o}{\leftrightharpoons} 2 N H_{3}(g)
প্রভাবক বিষ (Catalyst Poison): যে সব রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতিতে বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত কোনো প্রভাবকের প্রভাবন ক্রিয়া হ্রাসপ্রাপ্ত হয় অথবা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, তাদেরকে সংশ্লিষ্ট প্রভাবকের বিষ বলে। সাধারণত ধূলাবালি, সালফার গুঁড়া, আর্সেনিক অক্সাইড \left(\mathrm{As}_{2} \mathrm{O}_{3}\right) ইত্যাদি প্রভাবক বিষরূপে কাজ করে। স্পর্শ পদ্ধতিতে \mathrm{SO}_{2} গ্যাস থেকে \mathrm{SO}_{3} গ্যাস উৎপাদনকালে \mathrm{SO}_{2} গ্যাসের সাথে সামান্য পরিমাণে আর্সেনিক অক্সাইড উপস্থিত থাকলে, তখন ঐ বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত প্লাটিনাম \left(\mathrm{Pt}\right) প্রভাবকের প্রভাবন ক্রিয়াকে হ্রাস করে দেয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে \left(\mathrm{As}_{2} \mathrm{O}_{3}\right) প্রভাবক বিষরূপে ক্রিয়া করে।
2 \mathrm{SO}_{2}(g)+\mathrm{O}_{2}(g) \stackrel{\Delta, \mathrm{ Pt}}{\leftrightharpoons} 2 \mathrm{SO}_{3}(g)প্রশ্ন : প্রভাবকের ভৌত সমসত্ত্ব এবং অসমসত্ত্ব প্রভাবন কী ?
উত্তর:
১। সমসত্ত্ব প্রভাবন (Homogeneous Catalysis)
যে প্রভাবনের ক্ষেত্রে প্রভাবকসহ বিক্রিয়ার সব পদার্থ একই ফেস (Phase) বা ভৌত অবস্থায় বর্তমান থাকে তাকে সমসত্ত্ব প্রভাবন বলে। এক্ষেত্রে প্রভাবক, বিক্রিয়ক ও উৎপাদ সবই গ্যাস বা তরল বা দ্রবণে থাকে।
i. গ্যাসীয় দশার ক্ষেত্রে (In the case of gaseous phases): লেড প্রকোষ্ঠ পদ্ধতিতে \mathrm{H}_{2} \mathrm{SO}_{4} উৎপাদনে নাইট্রিক অক্সাইড \left(\mathrm{NO}\right) প্রভাবকের উপস্থিতিতে বায়ুমন্ডলের অক্সিজেন দ্বারা সালফার ডাইওক্সাইডের জারণ ঘটে। এক্ষেত্রে প্রভাবক, বিক্রিয়ক ও উৎপাদ সবই গ্যাসীয় দশায় বর্তমান আছে। তাই এটি একটি সমসত্ত্ব প্রভাবনের উদাহরণ।
2 \mathrm{SO}_{2}(g)+\mathrm{O}_{2}(g) \stackrel{\mathrm{NO}(g)}{\longrightarrow} 2 \mathrm{SO}_{3}(g)ii. তরল দশার ক্ষেত্রে (In the case of liquid phase): সুক্রোজ বা ইক্ষুচিনির আর্দ্র বিশ্লেষণ খনিজ এসিড হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে প্রভাবক, বিক্রিয়ক এবং উৎপাদক সবই তরল দশায় বর্তমান আছে। এটি একটি সমসত্ত্ব প্রভাবনের উদাহরণ।
\mathrm{C}_{12} \mathrm{H}_{22} \mathrm{O}_{11}(a q)+\mathrm{H}_{2} \mathrm{O}(l) \stackrel{\mathrm{H}^{+}(a q)}{\longrightarrow} \mathrm{C}_{6} \mathrm{H}_{12} \mathrm{O}_{6}(a q)+\mathrm{C}_{6} \mathrm{H}_{12} \mathrm{O}_{6}(a q)২। অসমসত্ত্ব প্রভাবন (Heterogeneous Catalysis)
যে প্রভাবনের ক্ষেত্রে প্রভাবকটি বিক্রিয়ার বিক্রিয়ক ও উৎপাদ থেকে ভিন্ন দশায় থাকে, তাকে অসমসত্ত্ব প্রভাবন বলে। এ ক্ষেত্রে প্রভাবক কঠিন দশায় এবং বিক্রিয়ক তরল বা গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে।
i. সূক্ষ্ম প্লাটিনাম চুর্ণ প্রভাবকের উপস্থিতিতে সংস্পর্শ পদ্ধতিতে \mathrm{SO}_{2} এর জারণ ঘটে। এক্ষেত্রে প্রভাবক, বিক্রিয়ক ও উৎপাদ ভিন্ন ভিন্ন ভৌত দশায় আছে। এটি একটি অসমসত্ত্ব প্রভাবনের উদাহরণ।
2 \mathrm{SO}_{2}(g)+\mathrm{O}_{2}(g) \stackrel{\mathrm{Pt}(s)}{\longrightarrow} 2 \mathrm{SO}_{3}(g)ii. কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন (C=C) যুক্ত ইথিন গ্যাস ও অসম্পৃক্ত ভিজিটেবল অয়েল এর প্রভাবকীয় হাইড্রোজেনেশন থেকে ইথেন ও ডালডা ঘি বা মারজারিন উৎপাদন প্রক্রিয়া হলো অসমসত্ত্ব প্রভাবন। এতে Ni বা, Pt ধাতুর গুঁড়া ব্যবহৃত হয়।
\mathrm{H}_{2} \mathrm{C}=\mathrm{CH}_{2}(g)+\mathrm{H}_{2}(g) \frac{\mathrm{Ni}}{150^{\circ} \mathrm{C}} \longrightarrow \mathrm{H}_{3} \mathrm{C}-\mathrm{CH}_{3}(g)- প্রভাবনের ক্রিয়া-কৌশল (Mechanism of Catalysis)
তোমরা নিশ্চয়ই অবাক হয়ে ভাবছ প্রভাবক কোনো বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করেও কীভাবে তা বিক্রিয়াকে প্রভাবান্বিত করে। প্রকৃতপক্ষে প্রভাবকসমূহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রভাবন কাজ করে। এসব প্রক্রিয়াকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
(ক) অন্তর্বর্তী যৌগ গঠন প্রক্রিয়া (Formation of intermediate compound)
(খ) অধিশোষণের মাধ্যমে প্রভাবন (Catalysis through adsorption)
(ক) সমসত্ত্ব প্রভাবনের ক্রিয়া কৌশল (Strategies of homogeneity effect):
অন্তর্বর্তী যৌগ গঠন : সমসত্ত্ব প্রভাবনের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী যৌগ গঠন কৌশল কার্যকর। এ কৌশলের মূলে রয়েছে প্রভাবক কোনো একটি বিক্রিয়কের সাথে অস্থায়ী অন্তর্বর্তী যৌগ গঠন করে। এরপর এ যৌগটি অন্য বিক্রিয়কের সাথে বিক্রিয়া করে উৎপাদ তৈরি করে, সে সাথে প্রভাবকের পুনর্জন্ম (regeneration) হয়। এ প্রভাবক আবার একই সাথে বিক্রিয়া করে। অর্থাৎ সামগ্রিক বিক্রিয়া কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপে প্রভাবক নিঃশেষিত হয়। শেষ ধাপে তা পুনরায় সৃষ্টি হয়। ফলে প্রভাবকের সামগ্রিক পরিমাণ ঠিক থাকে। যেমন,
\mathrm{NO} গ্যাস প্রভাবকের উপস্থিতিতে বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা \mathrm{SO}_{2} এর জারণ বিক্রিয়া অন্তর্বর্তী যৌগ গঠন কৌশল দ্বারা ঘটে। প্রথম ধাপে নাইট্রিক অক্সাইড প্রথম বিক্রিয়ক অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে নাইট্রোজেন ডাইওক্সাইড হচ্ছে অন্তর্বর্তী যৌগ। এটি দ্বিতীয় বিক্রিয়ক \mathrm{SO}_{2} এর সাথে বিক্রিয়া করে মূল উৎপাদ সালফার ট্রাইওক্সাইড \left(\mathrm{SO}_{3}\right) উৎপন্ন করে, সাথে নাইট্রিক অক্সাইড পুনরায় সৃষ্টি হয়।
\text { (১) } 2 \mathrm{NO}(g)+\mathrm{O}_{2}(g) \longrightarrow 2 \mathrm{NO}_{2}(g)প্রভাবক বিক্রিয়ক-১ অন্তর্বর্তী যৌগ
\text { (২) } 2 \mathrm{NO}_{2}(g)+2 \mathrm{SO}_{2}(g) \longrightarrow 2 \mathrm{SO}_{3}(g)+2 \mathrm{NO}(g)অন্তর্বর্তী যৌগ বিক্রিয়ক-২ উৎপাদ প্রভাবক
\begin{aligned} \text { নিট বিক্রিয়া : } &\left.2 \mathrm{NO}(g)+2 \mathrm{SO}_{2}(g)+\mathrm{O}_{2}(g) \rightarrow 2 \mathrm{SO}_{3}(g)+2 \mathrm{NOg}\right)(2) \\ & \text { বা, } 2 \mathrm{SO}_{2}(g)+0_{2}(g) \stackrel{\mathrm{NO}_{2}(g)}{\longrightarrow} 2 \mathrm{SO} 3(g) \text { । } \end{aligned}(খ) অসমসত্ত্ব প্রভাবনের ক্রিয়া কৌশল (Strategies of heterogeneous effect): অধিশোষণের মাধ্যমে প্রভাবন : অসমসত্ত্ব প্রভাবনের বেলায় অধিশোষণ দ্বারা নিম্নোক্ত চাপ ধাপে প্রভাবন কৌশল শেষ হয়। সাধারণ বিক্রিয়া দ্বারা তা ব্যাখ্যা করা হলো –
A_{2}(g)+B_{2}(g) \stackrel{\text { CatM }}{\longrightarrow} 2 A B(g)প্রথম ধাপ (First step): গ্যাসীয় বিক্রিয়ক অণুগুলো \left(A_{2}\right. ও \left.B_{2}\right) সঠিক স্থানিক বিন্যাস মতে প্রভাবক (CatM) এর পৃষ্ঠতলে অধিশোষিত হয়। অর্থাৎ ধাতুর খালি d অরবিটালের সাথে দুর্বল রাসায়নিক বন্ধনসহকারে এক-আণবিক স্তর সৃষ্টি করে।
দ্বিতীয় ধাপ (Second step): এ ধাপে অধিশোষিত অবস্থায় অণুর সমযোজী বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে। সঠিক স্থানিক বিন্যাসের ফলে পাশাপাশি অণুর মধ্যে সার্থক সংঘর্ষ সংখ্যা বেড়ে যায় এবং নিম্নশক্তির সক্রিয়ণকৃত জটিল যৌগ গঠন করে।
তৃতীয় ধাপ (Third step): এ ধাপে অস্থায়ী সক্রিয়ণকৃত জটিল যৌগ বিয়োজিত হয়ে নতুন অণু সৃষ্টি হয় এবং প্রভাবক পৃষ্ঠে তখনও আটকে থাকে। বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি ধাতব প্রভাবকে শোষিত এবং পরে তা বিক্রিয়ক অণুকে যোগান দেয়।
চতুর্থ ধাপ বা শেষ ধাপ (Fourth or last step): শেষ ধাপে উৎপাদ অণুসমূহ (C ও D) প্রভাবকের পৃষ্ঠতলে থেকে বিমুক্ত হয়।
উদাহরণ (Example): হেবার পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন হতে অ্যামোনিয়া সংশ্লেষণ আয়রন প্রভাবক ব্যবহৃত হয়। এ সময় প্রথমে আয়রন চূর্ণের পৃষ্ঠতলে \mathrm{N}_{2} ও \mathrm{H}_{2} রাসায়নিকভাবে অধিশোষিত হয়। এর ফলে \mathrm{N}_{2} এবং \mathrm{H}_{2} অণুর মধ্যেকার N\equiv N ও H-H বন্ধনের দৃঢ়তা হ্রাস পায়। ফলে অধিকতর সহজভাবে তারা প্রথমে \mathrm{NH} এবং পরে দ্রুত \mathrm{NH}_{2} ও সবশেষে \mathrm{NH}_{3} অণু উৎপন্ন করে এবং প্রভাবকের পৃষ্ঠতল থেকে মুক্ত হয়।
প্রশ্ন : প্রভাবক কিরূপে বিক্রিয়ার হারকে প্রভাবিত করে (Catalysts affect the reaction rate)?
প্রভাবক দ্বারা প্রভাবিত বিক্রিয়ার সক্রিয়ণ শক্তির মাত্রা ও অপ্রভাবিত অবস্থায় সক্রিয়ণ শক্তি চিত্রে দেখানো হলো। চিত্র থেকে দেখা যায় যে, প্রভাবিত বিক্রিয়ার সক্রিয়ণ শক্তি অপ্রভাবিত বিক্রিয়ার সক্রিয়ণ শক্তি অপেক্ষা কম। অর্থাৎ প্রভাবকের উপস্থিতির কারণে বিক্রিয়ার সক্রিয়ণ শক্তি কমে। অতএব প্রভাবকের সাধারণ পরিচয় হলো প্রভাবক এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যার উপস্থিতি বিক্রিয়ার সক্রিয়ণ শক্তি হ্রাস করে এবং একে সরলতার বিক্রিয়া পথ প্রদান করে। প্রভাবক ব্যবহার করলে তা প্রকৃতপক্ষে বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে আবার পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হয়।
প্রভাবক ব্যবহার না করে বিক্রিয়া ঘটালে যে সক্রিয়ণকৃত অবস্থার মাধ্যমে বিক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তার সক্রিয়ণ শক্তি \left(E_{1}\right) তথা স্থিতিশক্তি বেশি। ফলে তা সৃষ্টি কষ্টকর। অপ্রভাবিত অবস্থায় বিক্রিয়কের প্রয়োজনীয় সক্রিয়ণ শক্তির মাত্রা \left(E_{1}\right) বেশি হয়, এ কারণে বিক্রিয়া দ্রুত বেগে অনুষ্ঠিত হতে পারে না (চিত্র দ্রষ্টব্য)।
অপরদিকে প্রভাবকসহকারে সামগ্রিক বিক্রিয়া ভিন্ন পথ ধরে সম্পন্ন হয়। এ পথে যে সক্রিয়ণকৃত অবস্থার সৃষ্টি হয়, তার সক্রিয়ণ শক্তি \left(E_{2}\right) অপ্রভাবিত অবস্থার তুলনায় কম। তথা এ পথে যে সক্রিয়ণকৃত অবস্থার সৃষ্টি হয় তার স্থিতিশক্তি অপ্রভাবিত অবস্থার তুলনায় কম। অর্থাৎ, প্রভাবকের উপস্থিতিতে বিক্রিয়কের প্রয়োজনীয় সক্রিয়ণ শক্তি মাত্রা \left(E_{2}\right) পূর্বের তুলনায় কম; এ কারণে বিক্রিয়া দ্রুততর বেগে সম্পন্ন হয়। প্রভাবক ব্যবহারে বিক্রিয়ায় সক্রিয়ণ শক্তি প্রভাবক দ্বারা হ্রাস পায় =\left(E_{1}-E_{2}\right) \mathrm{kJ} \mathrm{mol}^{-1}।
- বিক্রিয়ার হারের উপর প্রভাব বিস্তারকারী নিয়ামকসমূহ (Factors that influence the rate of a reaction)
রাসায়নিক বিক্রিয়ার হার নিম্নোক্ত নিয়ামকের উপর নির্ভর করে। যেমন;
(১) বিক্রিয়কের প্রকৃতি (Nature of Reactants)
(২) বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা (Concentration of the Reactants)
(৩) তাপমাত্রা (Temperature)
(৪) চাপমাত্রা (Pressure)
(৫) বিক্রিয়কের পৃষ্ঠতল ক্ষেত্রফল (Surface area of the Reactants)
(৬) প্রভাবক (Catalyst) ও
(৭) আলোর উপস্থিতি (Presence of Light)
(১) বিক্রিয়কের প্রকৃতি (Nature of Reactants): বিভিন্ন বিক্রিয়ার হার বিভিন্ন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ভিন্ন ভিন্ন বিক্রিয়কের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে এবং সে কারণেই বিক্রিয়ার হার বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন, একই অবস্থাধীনে চিনির আর্দ্র বিশ্লেষণ বিক্রিয়ার হার কখনো মিথাইল অ্যাসিটেটের আর্দ্র বিশ্লেষণ বিক্রিয়ার হার সমান হয় না।
\underset{\text { চিনি }}{\mathrm{C}_{12} \mathrm{H}_{22} \mathrm{O}_{11}}+\mathrm{H}_{2} \mathrm{O} \stackrel{\mathrm{H}^{+}}{{\longrightarrow}} \underset{\text { গ্লুকোজ }}{\mathrm{C}_{6} \mathrm{H}_{12} \mathrm{O}_{6}} \dots \dots \dots \dots \dots \dots \text {[বিক্রিয়ার হার কম]}
\underset{\text { মিথাইল অ্যাসিটেট }}{\mathrm{CH}_{3} \mathrm{COOCH}} +\mathrm{H}_{2} \mathrm{O} \stackrel{\mathrm{H}^{+}}{\longrightarrow} \underset{\text { অ্যাসিটিক এসিড }} {\mathrm{CH}_{3} \mathrm{COOH}} + \underset{\text { মিথানল }} {\mathrm{CH}_{3} \mathrm{OH}} \dots \dots \text {[বিক্রিয়ার হার বেশি]}
(২) বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা (Concentration of the Reactants): ভরক্রিয়া সূত্রানুসারে কোন বিক্রিয়ার হার এর বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা সমানুপাতিক, সময় অতিক্রমের সাথে সাথে বিক্রিয়কের ঘনমাত্রার হ্রাস ঘটে। তাই সময় অতিক্রান্ত হবার সাথে সাথে বিক্রিয়ার হারও হ্রাস পায়।
আবার বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি করলে বিক্রিয়ার গতিবেগ বৃদ্ধি পায়। কারণ ঘনমাত্রা বাড়লে প্রতি একক আয়তনে বিক্রিয়কের সংখ্যা বাড়ে, পারস্পরিক সংঘর্ষ বাড়ে। এতে বেশি সংখ্যক বিক্রিয়ক অণু সক্রিয়ণ শক্তি অর্জন করে বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে। যেমন- সোডিয়াম থায়োসালফেট ও \mathrm{HCl} এসিডের মধ্যে বিক্রিয়াটির যে কোন একটি বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি করলে প্রতি ক্ষেত্রে সালফারের অধঃক্ষেপণ হার বৃদ্ধি পায়।
\mathrm{Na}_{2} \mathrm{~S}_{2} \mathrm{O}_{3}(a q)+2 \mathrm{HCl}(a q) \longrightarrow S(s)+2 \mathrm{NaCl}(a q)+\mathrm{H}_{2} \mathrm{O}(l)+\mathrm{SO}_{2}(g)(৩) তাপমাত্রা (Temperature): সাধারণত তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বিক্রিয়ার হারও বৃদ্ধি পায়। যেমন, সোডিয়াম থায়োসালফেট \left(\mathrm{Na}_{2} \mathrm{~S}_{2} \mathrm{O}_{3}\right) এবং \mathrm{HCl} এসিডের বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় 20^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় সালফারের অধঃক্ষেপণ হার যত হয়; 30^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রায় সালফারের অধঃক্ষেপণ হার দ্বিগুণের বেশি হয়।
\mathrm{Na}_{2} \mathrm{~S}_{2} \mathrm{O}_{3}(a q)+2 \mathrm{HCl}(a q) \longrightarrow \mathrm{S}(s)+2 \mathrm{NaCl}(a q)+\mathrm{H}_{2} \mathrm{O}(l)+\mathrm{SO}_{2}(g)- তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বিক্রিয়ক অণু বা আয়নগুলোর গতিবেগ বৃদ্ধি পায়।
- অণুগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের হার বৃদ্ধি পায়।
- অধিকতর সংখ্যক অণু বিক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সক্রিয়ণ শক্তি লাভ করে থাকে।
গ্যাসীয় মাধ্যমে বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে চাপ বৃদ্ধি করলে তখন গ্যাসের আয়তন সংকুচিত হয়। এতে অল্প আয়তনে তুলনামূলকভাবে বেশি সংখ্যক গ্যাসীয় অণু থাকে। ফলে পদার্থের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ঘনমাত্রা বৃদ্ধির সাথে গ্যাসের অণুগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই অধিক সংখ্যক বিক্রিয়ক অণুর পক্ষে সক্রিয়ণ শক্তি অর্জন করা সম্ভব হয়। বেশি সংখ্যক বিক্রিয়ক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে বলে বিক্রিয়ার হারও বৃদ্ধি পায়।
(৪) বিক্রিয়কের পৃষ্ঠতল ক্ষেত্রফল (Surface area of the Reactants): কঠিন বিক্রিয়কের পৃষ্ঠতল ক্ষেত্রফল যত বৃদ্ধি পাবে বিক্রিয়কের হারও তত বৃদ্ধি পাবে। যেহেতু কণার আকার ক্ষুদ্র হলে এর পৃষ্ঠতল ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পায়, তাই ক্ষুদ্র কণাবিশিষ্ট বিক্রিয়কের বিক্রিয়ার হার বৃহৎ কণাবিশিষ্ট বিক্রিয়কের বিক্রিয়ার হার অপেক্ষা অধিক হবে। যেমন, একই ভরের বড় টুকরার চুনাপাথর ও ছোট টুকরার চুনাপাথরের উপর সমপরিমাণ 1\mathrm{M} \mathrm{HCl} দ্রবণ যোগ করলে দেখা যায় ছোট টুকরার চুনাপাথরের সাথে HCl এর বিক্রিয়ায় একই সময়ে অধিক \mathrm{CO}_{2} গ্যাস উৎপন্ন হয়।
\mathrm{CaCO}_{3}(s)+2 \mathrm{HCl}(a q) \longrightarrow \mathrm{CaCl}_{2}(a q)+\mathrm{CO}_{2}(g)+\mathrm{H}_{2} \mathrm{O}(l)পরীক্ষা (Experiment): তিনটি ফ্লাস্কে বড় টুকরার, মাঝারি টুকরার ও ছোট টুকরার চুনাপাথর সমপরিমাণ ওজন করে নেওয়া হয়। এবার প্রতিটি ফ্লাস্ক কর্কের সাহায্যে থিসেল ফানেল ও নির্গম নল যোগ করা হয় এবং এদের মধ্যে সমপরিমাণ 1\mathrm{M} \mathrm{HCl} দ্রবণ যোগ করা হয়। বিক্রিয়ার ফলে নির্গত \mathrm{CO}_{2} গ্যাসকে দাগকাটা গ্যাস জারে সংগ্রহ করা হয়। ১ মিনিট পর উৎপন্ন \mathrm{CO}_{2} এর মোট আয়তন পরিমাপ করে রেকর্ড করা হয়। এবার \mathrm{CO}_{2} গ্যাসের আয়তন (mL) কে Y-অক্ষ ও সময় (min) X-অক্ষে বরাবর ধরে লেখচিত্র ১৩.৫ অঙ্কন করা হল। লেখচিত্রে রেখা A বড় আকারের, রেখা B মাঝারি আকারের ও রেখা C ছোট আকারের চুনাপাথর \left(\mathrm{CaCO}_{3}\right) এর জন্য পাওয়া গেল।
পর্যবেক্ষণ (Observation): লেখচিত্র মতে দেখা যাচ্ছে, ছোট টুকরার \mathrm{CaCO}_{3} এর ক্ষেত্রে \mathrm{CO}_{2} অতি দ্রুত উৎপন্ন হয়েছে অর্থাৎ বিক্রিয়াটি 1.5 মিনিটে শেষ হয়েছে। মাঝারি ও বড় আকারের \mathrm{CaCO}_{3} ক্ষেত্রে \mathrm{CO}_{2} অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে উৎপন্ন। হয়েছে। মাঝারি টুকরার বেলায় 3 মিনিট এবং বড় টুকরার বেলায় 5 মিনিটে বিক্রিয়াটি শেষ হয়েছে।
সিদ্ধান্ত (Decision): ব্যাখ্যা ছোট আকারের \mathrm{CaCO}_{3} এর পৃষ্ঠতল সবচেয়ে বেশি এবং বড় আকারের চুনাপাথরের পৃষ্ঠতল সবচেয়ে কম। চুনাপাথরের পৃষ্ঠতল বৃদ্ধির ফলে বিক্রিয়ক \mathrm{HCL} এর সংস্পর্শে আসার সুযোগ বেশি হয় এবং বিক্রিয়ার সুযোগও বেশি হয়। সুতরাং, বিক্রিয়কের পৃষ্ঠতল বৃদ্ধির ফলে বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পায় তা প্রমাণিত হল –
(৫) প্রভাবক (Catalyst): প্রভাবক বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধি বা হ্রাস করে। যেমন, ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড মিশ্রিত পটাসিয়াম ক্লোরেটকে উত্তপ্ত করলে দ্রুত হারে অক্সিজেন নির্গত হয়। কিন্তু বিক্রিয়া শেষে ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইডের কোনরূপ পরিবর্তন সাধিত হয় না। \mathrm{MnO}_{2} ছাড়া একই তাপমাত্রায় বিক্রিয়া অনেক ধীর গতির হয়।
(৬) আলো (Light): আলো এক প্রকার শক্তি; তাই আলোর প্রভাবে অনেক রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। আলোর প্রভাবে যে সব বিক্রিয়া ঘটে তাদেরকে সালোক রাসায়নিক বিক্রিয়া (photo chemical reaction) বলা হয়। এ সব ক্ষেত্রে আলোর প্রভাবে বিক্রিয়ক পদার্থের বন্ধন ভেঙে গিয়ে পরমাণু বা ফ্রি-রেডিকেল উৎপন্ন হয় এবং বিক্রিয়া চলতে থাকে। যেমন, (i) অন্ধকারে \mathrm{H}_{2} গ্যাস ও \mathrm{Cl}_{2} গ্যাস কোন বিক্রিয়া করে না; কিন্তু আলোর উপস্থিতিতে \mathrm{H}_{2} এবং \mathrm{Cl}_{2} গ্যাস দ্রুতগতিতে বিক্রিয়া করে বলে বিস্ফোরণ ঘটে এবং \mathrm{HCl} গ্যাস উৎপন্ন করে। এক্ষেত্রে আলোর প্রভাবে ক্লোরিন অণু অধিক সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণুতে পরিণত হয়। ফলে প্রবলভাবে বিক্রিয়া ঘটে।
\begin{array}{l} \mathrm{Cl} \bullet \bullet \mathrm{Cl} \stackrel{\mathrm{hv}}{\longrightarrow} 2 \mathrm{Cl} \bullet \\ \mathrm{H}_{2}+\mathrm{Cl} \bullet \longrightarrow \mathrm{HCl}+\mathrm{H} \bullet \\ \mathrm{H}+\mathrm{Cl} \longrightarrow \mathrm{HCl} \end{array}(i) আলোর ছটায় সিলভার লবণ যেমন \mathrm{AgBr} বিয়োজিত হয়ে কালো বর্ণের সিলভার কণা ও ব্রোমিন উৎপন্ন করে। এ বিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে ফটোগ্রাফির ফিল্ম তৈরি করা হয়।
এক্ষেত্রে ব্রোমাইড আয়ন \left(\mathrm{Br}^{-}\right) অথবা আয়োডাইড আয়ন \left(\mathrm{I}^{-}\right) আলো শোষণ করে একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে এবং ঐ ইলেকট্রন সিলভার আয়ন \left(\mathrm{Ag}^{+}\right) গ্রহণ করে ধাতব সিলভারে বিজারিত হয়।
\begin{array}{lll} A g B r & \stackrel{h v} \longrightarrow A g^{+}+B r^{-} \\ B r^{-} & \stackrel{h v} \longrightarrow \frac{1}{2} B r_{2}+e^{-} \\ A g^{+}+e^{-} & \longrightarrow A g(s) \end{array}
প্রশ্ন : বিক্রিয়ার হারের উপর তাপমাত্রার প্রভাব সম্পর্কিত আরহেনিয়াস সমীকরণ প্রতিষ্ঠা কর (Establishing Arrhenius equation regarding the effect of temperature on the reaction rate)?
উত্তর:
১৮৮৯ সালে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী এস. আরহেনিয়াস (Arrhenius) সর্বপ্রথম বিক্রিয়ার হারের উপর তাপমাত্রার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে, সাধারণভাবে প্রতি 10^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বিক্রিয়ার হার প্রায় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। তাপমাত্রার সাথে বিক্রিয়া হারের এ Exponential বৃদ্ধিকে নিচের সম্পর্কের মাধ্যমে দেখানো যায় –
বিক্রিয়ার হার \propto e^{\frac{-E_{a}}{R T}}
[ e^{\frac{-E_{a}}{R T}}= সক্রিয়ণশক্তি প্রাপ্ত অণুর ভগ্নাংশ যারা বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার উপযুক্ততা অর্জন করে।]
এখানে, E_{a} = বিক্রিয়ার সক্রিয়ণ শক্তি
R সার্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক
আবার, যেহেতু তাপমাত্রা বাড়লে কার্যকর সংঘর্ষ সংখ্যার সাথে সমানুপাতিকভাবে বিক্রিয়ার হার বাড়ে। তাই – বিক্রিয়ার হার \propto N (N= কার্যকর সংঘর্ষ সংখ্যা)
\therefore সার্বিকভাবে, বিক্রিয়ার হার \propto N e^{-\frac{E_{a}}{R T}}
বা, বিক্রিয়ার হার =X N e^{\frac{-E_{a}}{R T}} (এখানে, X সমানুপাতিক ধ্রুবক। একে স্টেরিক ফ্যাক্টরও বলা হয়)
তবে বিক্রিয়কের ঘনমাত্রাসহ অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত থাকলে স্থির তাপমাত্রায় বিক্রিয়ার হারও স্থির এবং তা বেগ ধ্রুবকের সমানুপাতিক অর্থাৎ, বিক্রিয়ার হার \propto k।
\therefore \quad k=X N e^{\frac{-E_{a}}{R T}}k=A e^{-\frac{E_{a}}{R T}} (A হচ্ছে আরহেনিয়াস ফ্যাক্টর) বা কম্পাঙ্ক গুনাঙ্ক বা Pre-exponential factor)
এ সমীকরণটি আরহেনিয়াস সমীকরণ (Arrhenius equation) নামে পরিচিত যা তাপমাত্রা ও সক্রিয়ণ শক্তির সাথে বিক্রিয়ার হার ধ্রুবকের সম্পর্ক নির্দেশ করে।
আরহেনিয়াস সমীকরণের উভয় পাশে ln নিয়ে পাওয়া যায় –
\ln K=\ln A-\frac{E_{a}}{R T}
বা, \ln K=-\left(\frac{E_{a}}{R T}\right) \frac{1}{T}+\ln A \ldots \ldots \ldots \ldots .(i)
বা, 2.303 \log K=-\left(\frac{E_{a}}{R T}\right) \frac{1}{T}+2.303 \log A
বা, \log K=\log A-\frac{E_{a}}{2.303 R} \cdot \frac{1}{T} \ldots \ldots \ldots \ldots \ldots (ii)
দুটি ভিন্ন তাপমাত্রা T_{1} এবং T_{2} তে বেগ ধ্রুবকের মান যথাক্রমে k_{1} এবং k_{2} হলে আরহেনিয়াস সমীকরণকে নিম্নরুপে প্রকাশ করা যায়।
\log k_{1}=\log A-\frac{E_{a}}{2.303 R} \cdot \frac{1}{T_{1}}এবং, \log k_{2}=\log A-\frac{E_{a}}{2.303 R} \cdot \frac{1}{T_{2}}
\therefore \log k_{2}-\log k_{1}=\frac{E_{a}}{2.303 R}\left(\frac{1}{T_{1}}-\frac{1}{T_{2}}\right)বা, \log \frac{k_{2}}{k_{1}}=\frac{E_{a}}{2.303 R}\left(\frac{T_{2}-T_{1}}{T_{1} T_{2}}\right)
একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন বিক্রিয়ার হার ধ্রুবক ও সক্রিয়ণ শক্তির মান জানা থাকলে অন্য কোন তাপমাত্রায় ঐ বিক্রিয়ার হার ধ্রুবকের মান উপরের সমীকরণের সাহায্যে নির্ণয় করা যায় অথবা দুটি ভিন্ন তাপমাত্রায় কোন বিক্রিয়ার হার ধ্রুবকের মান জানা থাকলে ঐ বিক্রিয়ার সক্রিয়ণ শক্তির মান উপরের সমীকরণের সাহায্যে নির্ণয় করা যায়।
সমীকরণ (i) থেকে এটি স্পষ্ট হয়, \operatorname{lnk} বনাম \frac{1}{T} এর লেখচিত্র আঁকলে চিত্র এর ন্যায় একটি সরলরেখা পাওয়া যাবে। সরলরেখার ঢাল হবে -\frac{E_{a}}{R}। যদি \log k এর বিপরীত বসিয়ে লেখচিত্র আঁকা যায়, তবে প্রাত সরলরেখা ঢাল হবে –\frac{E_{a}}{2.303 R} \mid। সুতরাং, লেখচিত্র থেকেও সক্রিয়ণ শক্তি E_{a} হিসাব করা যায়। আরহেনিয়াস সমীকরণ শুধু সমসত্ত্ব গ্যাসীয় বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে নয় বরং দ্রবণে সংঘটিত বিক্রিয়া কিংবা অসমসত্ত্ব বিক্রিয়ার ক্ষেত্রেও এটি সমানভাবে প্রযোজ্য।
দেখাও যে, তাপমাত্রা 10^{\circ} \mathrm{C} বৃদ্ধি করলে বিক্রিয়ার হারও দ্বিগুণ হয়।
কোন বিক্রিয়ার সক্রিয়ণ শক্তি জানা থাকলে 10^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিক্রিয়ার হার দ্বিগুণ হয়, তা আরহেনিয়াসের সমীকরণ থেকে প্রমাণ করা যায়। যেমন,
উদাহরণ ১ : মনে করি, কোন বিক্রিয়ার অণুসমূহের প্রয়োজনীয় সক্রিয়ণ শক্তি, E_{a}=50 \mathrm{kjmol}^{-1} বা, 50000 \mathrm{Jmol}^{-1}। সুতরাং, আরহেনিয়াস সমীকরণ মতে সংশ্লিষ্ট বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে 300 \mathrm{~K} তাপমাত্রায়50 \mathrm{~kJ} \mathrm{~mol}^{-1} সক্রিয়ণ শক্তি প্রাপ্ত মোট অণুর ভগ্নাংশ \left(e^{\frac{-E_{a}}{R T}}\right) নিম্নরূপে হিসাব করা যায় :
e^{\frac{-E_{a}}{R T}}=e^{\frac{-50.000}{8.3 \times 300}}=e^{-20.08}=1.90 \times 10^{-9}=\frac{19}{10^{10}}অর্থাৎ, 300 K তাপমাত্রায় 10^{10} টি অণুর মধ্যে কেবলমাত্র 19 টি অণু ঐ সক্রিয়ণ শক্তি পেয়ে বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। আবার, 310 K তাপমাত্রায় একই বিক্রিয়ায় ঐ একই সক্রিয়ণ শক্তি প্রাপ্ত মোট অণুর ভগ্নাংশ হল :
e^{\frac{-E_{a}}{R T}}=e^{\frac{-50.000}{8.3 \times 310}}=e^{-19.48}=3.63 \times 10^{-9}=\frac{36.3}{10^{10}}অর্থাৎ, 310 K তাপমাত্রায় 10^{10} টি অণুর মধ্যে কেবলমাত্র 36 টি অণু ঐ সক্রিয়ণ শক্তি পেয়ে বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। সুতরাং, 10 K বা 10^{\circ} \mathrm{C} তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে একই বিক্রিয়ায় দ্বিগুণ সংখ্যক বিক্রিয়ক অণু সক্রিয়ণ শক্তি লাভ করে বিক্রিয়ার হার দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে।