রাসায়নিক বিক্রিয়া (Chemical Reactions)
পদার্থের প্রকৃতি, ধর্ম এবং তাদের পরিবর্তন রসায়ন পাঠের মূল বিষয়। পদার্থের এই পরিবর্তন আবার দুইভাবে হয়। কখনো ভৌত পরিবর্তন, কখনো বা রাসায়নিক পরিবর্তন।
ভৌত পরিবর্তন (Physical Change) :
যদি কোনো পদার্থের অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক গঠনের কোনো পরিবর্তন না ঘটে শুধুমাত্র বাহ্যিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে তবে তাকে ভৌত পরিবর্তন (Physical Change) বলে।
যেমন : এক খন্ড বরফকে কক্ষ তাপমাত্রায় রেখে দিলে তা পরিবেশ থেকে তাপ গ্রহণ করে আস্তে আস্তে গলে তরল পানিতে পরিণত হয়। আবার পানিকে তাপ প্রদান করে 100°C এ উন্নীত করলে সেটি জলীয় বাষ্পে পরিণত করে। এখানে কঠিন বরফ, তরল পানি এবং জলীয় বাষ্প –এ তিনটি পদার্থের সংকেত একই হলেও এরা একই পদার্থের বিভিন্ন অবস্থা। পদার্থের এরূপ পরিবর্তনকে ভৌত পরিবর্তন বলে।
রাসায়নিক পরিবর্তন (Chemical Change):
যদি কোনো পদার্থের বাহ্যিক তাপমাত্রা ও চাপের পরিবর্তন করলে কিংবা অন্য পদার্থের সংস্পর্শে আনলে তা পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থে পরিণত হলে সেই পরিবর্তনকে রাসায়নিক পরিবর্তন (Chemical Change) বলে।
এক্ষেত্রে পূর্বের পদার্থের অনুর মধ্যে বন্ধনসমূহের ভাঙনের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন আয়ন বা পরমাণু সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে আয়ন বা পরমাণুর মধ্যে নতুন বন্ধনে নতুন পদার্থ সৃষ্টি হয়।
যেমন : মিথেন গ্যাসকে অক্সিজেনে পোড়ালে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস, জলীয় বাষ্প ও তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়।
\mathrm{CH_4(s)+ O_2(g) \rightarrow CO_2(g) + H_2O(l)}আবার, ক্যালসিয়াম কার্বনেট হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, কার্বন-ডাই অক্সাইড ও পানি উৎপন্ন করে।
\mathrm{CaCO_3(s)+ HCl(aq)\rightarrow CaCl_2(aq) + CO_2(g)+ H_2O(l)}এই দুইটি ঘটনাই রাসায়নিক পরিবর্তন।
রাসায়নিক বিক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ (Classification of Chemical Reactions)
রাসায়নিক পরিবর্তন সংঘটনের সময় যেসব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে থাকে তাদেরকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিভাগ করা যায়। যেমন:
একমুখী বিক্রিয়া (Irreversible Reaction)
যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থগুলো উৎপাদে পরিণত হতে পারে, কিন্তু উৎপাদ পদার্থগুলো পুনরায় বিক্রিয়কে পরিণত হতে পারে না, তাকে একমুখী বিক্রিয়া বলে।
যেমন- ক্যালসিয়াম কার্বনেটকে খোলা পাত্রে নিয়ে তাপ দিলে ক্যালসিয়াম কার্বনেটকে কঠিন চুন এবং গ্যাসীয় তে পরিবর্তিত হতে দেখা যাবে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড খোলা পাত্র থেকে অপসারিত হলে তা থেকে পুনরায় ক্যালসিয়াম কার্বনেট উৎপন্ন করা যাবে না।
সুতরাং এটি একমুখী বিক্রিয়া।
অর্থাৎ, কোনো বিক্রিয়াকে একমুখী করা যাবে-
(i) খোলা পাত্র ব্যবহার করে
(ii) অধ:ক্ষেপণ সৃষ্টি করে
(iii) উৎপাদ হতে কোনো পদার্থ অপসারণ করা।
একমুখী বিক্রিয়ার সমীকরণে ডানমুখী তীর চিহ্ন ( \rightarrow ) ব্যবহৃত হয়।
\mathrm{CaCO_3(s) \rightarrow CaO(s) + CO_2(g)}উভমুখী বিক্রিয়া (Reversible Reaction)
যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থ বিক্রিয়া করে উৎপাদে পরিণত হয়, আবার উৎপাদ পদার্থগুলো বিক্রিয়া করে পুনরায় বিক্রিয়কে পরিণত হয়, তাকে উভমুখী বিক্রিয়া বলে।
- বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদ হওয়ার বিক্রিয়া হলো সম্মুখমুখী বিক্রিয়া।
- উৎপাদ থেকে বিক্রিয়কে পরিণত হওয়ার বিক্রিয়া হলো পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়া/ বিপরীতমুখী বিক্রিয়া।
- উভমুখী বিক্রিয়ার বিপরীতমুখী দুটি অর্ধতীর চিহ্ন ( ⇌ ) ব্যবহৃত হয়।
তোমরা জেনে অবাক হবে যে আসলে সব বিক্রিয়াই উভমুখী, তবে কিছু বিক্রিয়ায় সম্মুখমুখী বিক্রিয়ার তুলনায় পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়ায় হার এত কম থাকে, যে বিক্রিয়াকে একমুখী মনে হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, বিক্রিয়ক বলতে সেসকল পদার্থের কথা বুঝানো হচ্ছে, যেগুলো বিক্রিয়ায় অংশ নেয় এবং বিক্রিয়া শেষে নিজে পরিবর্তিত হয়। আর উৎপাদ হচ্ছে বিক্রিয়কের পরিবর্তিত পদার্থ/পদার্থসমূহ।
তাপোৎপাদী বিক্রিয়া (Exothermic Reaction)
যে বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদ উৎপন্ন হওয়ার সময় তাপশক্তি উৎপন্ন হয় তাকে তাপোৎপাদী বিক্রিয়া বলে।
এখানে Fe চূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
∙ প্রভাবক হচ্ছে সেসকল রাসায়নিক পদার্থ যারা বিক্রিয়ায় অংশ নিয়ে বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি বা হ্রাস করে কিন্তু বিক্রিয়া শেষে অপরিবর্তিত থাকে।
⇨ বিক্রিয়া তাপ: একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হতে তাপের যে পরিবর্তন হয় তাকে বিক্রিয়া তাপ বলে।
∙ বিক্রিয়া তাপ △H দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
∙ তাপ উৎপাদন হলে △H এর মান ঋণাত্মক হয়।
সুতরাং যেকোন তাপোৎপাদী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে লিখা যায় ,
তাপহারী বা তাপশোষী বিক্রিয়া (Endothermic Reaction)
যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপশক্তির শোষণ ঘটে তাকে তাপহারী বিক্রিয়া বলে।
\mathrm{N_2 (g) + O_2 (g) + 180 KJ \rightleftharpoons 2NO(g)}অথবা,
\mathrm{N_2 (g) + O_2(g) \rightleftharpoons 2NO(g); \Delta H=\pm180KJ}⇨ যেই বিক্রিয়ায় তাপশক্তির শোষণ ঘটে, সেখানে △H এর মান ধনাত্মক।
⇨ তোমরা নিশ্চয়ই চিন্তা করছ যে △H এর মান ধনাত্মক আর কখন ঋণাত্মক হবে সেটি কে বলে দিয়েছে! আসলে কাউকে বলে দিতে হবে না, তোমরা নিজেরাই দেখবে এখন।
আসলে, △H = পুরাতন বন্ধন ভাঙ্গার জন্য মোট শক্তি – নতুন বন্ধন গঠনে নির্গত শক্তি
এভাবে, যেই বিক্রিয়ায় তাপশক্তি উৎপন্ন হয়, সেখানে △H ঋণাত্মক, যেই বিক্রিয়ায় শোষিত হয়, সেখানে △H এর মান ধনাত্মক।