10 Minute School
Log in

নন-রেডক্স বিক্রিয়া (Non Redox Reaction) ও বিশেষ ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া

এমন অনেক বিক্রিয়া আছে যেখানে ইলেকট্রনের আদান-প্রদান ঘটে না। এসব বিক্রিয়াকে আলাদা আলাদা শ্রেণিতে রাখা হয়েছে

এক বা একাধিক বিক্রিয়ক থেকে নতুন যৌগ উৎপন্ন করার সময় বিক্রিয়কে বিদ্যমান মৌলসমূহের মধ্যে ইলেকট্রনের আদান-প্রদান না হলে ঐ বিক্রিয়াকে নন-রেডক্স বিক্রিয়া বলে

এই পর্যায়ে তোমরা প্রশমন ও অধ:ক্ষেপণ বিক্রিয়া সম্পর্কে জানবে

১. প্রশমন বিক্রিয়া (Nutralization Reaction):

যে বিক্রিয়ায় জলীয় দ্রবণে এসিড ও ক্ষার বিক্রিয়া করে পরস্পর প্রশমিত হয়ে লবণ ও পানি উৎপন্ন করে তাকে প্রশমন বিক্রিয়া বলে

  • এ ধরনের বিক্রিয়াকে এসিড-ক্ষার বিক্রিয়াও বলে

\mathrm{HCl}(\mathrm{aq})+\mathrm{NaOH}(\mathrm{aq}) {\rightarrow} \mathrm{NaCl}(\mathrm{aq})+ \mathrm{H_2O}(\mathrm{l})

এক্ষেত্রে এসিড \mathrm{HCl} থেকে \mathrm{H^+} এবং ক্ষার \mathrm{NaOH} থেকে \mathrm{OH^-} পরস্পর বিক্রিয়া করে পানি উৎপন্ন করে। \mathrm{NaCl} জলীয় দ্রবণে \mathrm{Na^+} এবং \mathrm{Cl^-} আয়ন হিসেবে থাকে

সুতরাং \mathrm{Na^+}\mathrm{Cl^-} দর্শক আয়ন

\mathrm{Na^+}+\mathrm{OH^-}+\mathrm{H^+}+\mathrm{Cl^-} {\rightarrow} \mathrm{Na^+Cl^-}+ \mathrm{H_2O};\Delta H=-57.34\text{ kJ}

  • প্রশমন বিক্রিয়ায় সর্বদাই তাপ উৎপন্ন হয়। তীব্র এসিড ও ক্ষার এর বিক্রিয়ায় \Delta H=-57.34\text{ kJ}! একে প্রশমন তাপ বলে। [ প্রশমন তাপ = 1mol পানি উৎপন্ন করতে প্রয়োজনীয় তাপ]

২. অধ:ক্ষেপণ বিক্রিয়া (Precipitation Reaction):

যে বিক্রিয়ায় তরল বিক্রিয়ক পদার্থ বিক্রিয়া করে কঠিন ও অদ্রবণীয় উৎপাদে পরিণত হয় তাকে অধ:ক্ষেপণ বিক্রিয়া বলে

একই দ্রাবকে দুটি যৌগ মিশ্রিত করলে তারা পরস্পর বিক্রিয়া করে তাদের মধ্যে কোনোটি যদি ঐ দ্রাবকে অদ্রবণীয় বা খুবই কম দ্রবণীয় হয় তবে তা বিক্রিয়া পাত্রের তলায় কঠিন অবস্থায় তলানি হিসেবে জমা হয় যাকে অধ:ক্ষেপ বলে

যেমন:

    Non Redox Reaction

কিছু অদ্রবণীয় যৌগ: 

\mathrm{BaSO_4, PbSO_4, AgCl, CaSO_4, BaCl_2, CuS, PbS, PbI_2, Fe(OH)_2, AgBr}

\Rightarrow \mathrm{Fe(OH)_2} এর অধঃক্ষেপের রং সবুজ

  \mathrm{KMnO_4}এর অধঃক্ষেপের রং বাদামি

কিছু অধঃক্ষেপণ বিক্রিয়ায় ইলেকট্রনের স্থানান্তর ঘটে

বিশেষ ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া (Special types of Chemical Reaction)

কিছু কিছু বিক্রিয়া আছে যারা রেডক্স বা নন-রেডক্স শ্রেণিতে পড়ে না। এমন কিছু বিক্রিয়া সম্পর্কে জানব এখন

৩. আর্দ্র বিশ্লেষণ/পানি বিশ্লেষণ (Hydrolysis) বিক্রিয়া:

কোনো যৌগের দুই অংশ পানির বিপরীত আধানবিশিষ্ট দুই অংশের সাথে যুক্ত হয়ে নতুন যৌগ যেই বিক্রিয়ায় উৎপন্ন করে তাকে আর্দ্রবিশ্লেষণ বিক্রিয়া বলে

\mathrm{SiCl}_4+\mathrm{H}_2 \mathrm{O} \rightarrow \mathrm{Si}(\mathrm{OH})_4+4 \mathrm{HCl}

\mathrm{Al}(\mathrm{OH})_3(\mathrm{s})+3 \mathrm{HCl}(a q)

আর্দ্রবিশ্লেষণ বিক্রিয়ায় অনেক সময় অস্বচ্ছ দ্রবণীয় যৌগ উৎপন্ন হয়। এটি অল্প মাত্রায় দ্রবণীয় হওয়ায় যৌগটি অধঃক্ষেপিত হয়ে যায় যেমনটা হয়েছে ২য় বিক্রিয়ায়, এক্ষেত্রে \mathrm{Al}(\mathrm{OH})_3 অধঃক্ষেপ

৪. পানিযোজন (Hydration) বিক্রিয়া :

আয়নিক যৌগ কেলাস গঠনের সময় নির্দিষ্ট সংখ্যক পানির অণুর সাথে যুক্ত হয়। এই পানির অণুকে কেলাস বলে এবং এই বিক্রিয়াকে পানিযোজন বিক্রিয়া বলে

 যেমন: \mathrm{CuSO_4} এর সাথে 5 অণু পানি যুক্ত হয়ে পেন্টা হাইড্রেট কপার (II) সালফেট উৎপন্ন করে।

পানিযোজন (Hydration)

           

পানিযোজন ও সংযোজন বিক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য হল সংযোজন বিক্রিয়ায় ইলেকট্রনের স্থানান্তর হয়, যা পানিযোজন বিক্রিয়ায় হয় না। এছাড়া বিক্রিয়া দুটি একই রকম

৫. সমাণুকরণ (Isomerisation) বিক্রিয়া:

যে বিক্রিয়ায় অণুতে বিদ্যমান পরমাণুসমূহ পুনঃবিন্যস্ত হয়ে নতুন যৌগ গঠন করে তাকে সমাণুকরণ (Isomerisation) বিক্রিয়া বলে

সমানুকরণ (Isomerisation)    

এখানে অ্যামোনিয়াম সায়ানেট ও ইউরিয়াতে একই মৌলের একই সংখ্যক পরমাণু আছে। এক্ষেত্রে তাদের বন্ধনে পরিবর্তন আসায় তাদের গঠন ভিন্ন এবং তারা ভিন্ন যৌগ হয়েছে। 

যখন দুটি যৌগের আণবিক সংকেত একই থাকে কিন্তু গাঠনিক সংকেত ভিন্ন হয় তখন তাদেরকে পরস্পরের সমাণু বলে

 সুতরাং অ্যামোনিয়াম সায়ানেট ও ইউরিয়া পরস্পর সমাণু

৬. পলিমারকরণ (Polymerization) বিক্রিয়া:

প্রভাবক, উচ্চ চাপ ও তাপের প্রভাবে যখন এক বা একাধিক যৌগের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি বৃহদাকার অণু গঠণ করে তখন তাকে পলিমারকরণ (Polymerization) বিক্রিয়া বলে

  বৃহদাকার অণুটিকে পলিমার এবং ক্ষুদ্রাকার অণুটিকে মনোমার বলে

  এই বিক্রিয়ায় অসংখ্য মনোমার থেকে পলিমার উৎপন্ন হয়। যেমন:

        পলিমারকরণ (Polymerization)