10 Minute School
Log in

পদার্থবিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ (Development of Physics)

ভৌত রাশি এবং পরিমাপ  (Physical Quantities and Measurements)

পদার্থবিজ্ঞান (Physics)

বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থ আর শক্তি এবং এ দুইয়ের মাঝে যে অন্তঃক্রিয়া তা বোঝার চেষ্টা করে সেটা হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞান। বর্তমান সভ্যতার নানাভাবে বিজ্ঞানের এই প্রাচীনতম ও মৌলিক শাখা অর্থাৎ পদার্থবিজ্ঞান অবদান রেখেছে এবং রাখবে। পদার্থবিজ্ঞানকে ভিত্তি করে সভ্যতার অগ্রযাত্রার জন্য বিজ্ঞানীদের ল্যাবরেটরীতে করতে হয়েছে নানা ধরনের গবেষণা গবেষণা করতে গিয়ে প্রয়োজন পড়েছে নানা রাশির সূচক পরিমাপ, পরিমাপ করার জন্য কিভাবে একক গুলো গড়ে উঠেছে, সেগুলো কিভাবে পরিমাণ করতে হয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এর অধ্যায় আলোচনা করব।

এই অধ্যায়ের শেষে আমরা শিখব:

  • পদার্থবিজ্ঞানের  ক্রমবিকাশ ও পরিসর।
  • পদার্থবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য।
  • ভৌত রাশি এবং পরিমাপ।
  • পরিমাপের যন্ত্রপাতি সম্বন্ধে
  • পরিমাপের যথার্থতা, নির্ভুলতা বজায় রাখার কৌশল।

পদার্থবিজ্ঞানের পরিসর (Scope of Physics)

পদার্থবিজ্ঞানের অবদানের কথা শুরু করলে আর শেষ হবে না। সামান্য ক্লোরিন টুথপেস্ট থেকে শুরু করে যুদ্ধের তাণ্ডবলীলা তে ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্র উদ্ভাবনে পদার্থবিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে নানা প্রযুক্তি। বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা ও পদার্থবিজ্ঞান মিলে গড়ে উঠেছে Astrophysics (জ্যোতিপদার্থবিদ্যা), Chemical Physics (রসায়ন পদার্থবিজ্ঞান), Bio Physics (জৈব পদার্থ বিজ্ঞান), Geophysics (ভূপ্রকৃতিবিদ্যা) ইত্যাদি।

পঠন পাঠনের সুবিধার জন্য পদার্থবিজ্ঞান কে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

  • সনাতন পদার্থ বিজ্ঞান (Classical Physics): বলবিজ্ঞান (Mechanics), শব্দবিজ্ঞান (Lexicology), বিদ্যুৎ ও চৌম্বক বিজ্ঞান (Electromagnetism) এবং আলোকবিজ্ঞান এর আলোচিত বিষয় সমূহ।
  • আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান (Modern Physics): কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান এবং আপেক্ষিক তত্ত্ব ব্যবহার করে যে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান গড়ে উঠেছে সেগুলো হচ্ছে আণবিক ও পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান, নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞান,  কঠিন অবস্থার পদার্থবিজ্ঞান এবং পার্টিকেল পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদি আলোচ্য বিষয়।

পদার্থবিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ (Development of Physics)

পদার্থ বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ ইতিহাসকে তিনটি পর্বে বিভক্ত করা যায়। যথা:

  • আদিপর্ব
  • উত্থানপর্ব
  • আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা

আদি পর্ব (গ্রিক, ভারতবর্ষ, চীন এবং মুসলিম সভ্যতার অবদান)

Early episodes (contributions of Greek, Indian, Chinese and Muslim civilizations)

প্রাচীনকালে জ্যোতিবিদ্যা, আলোকবিদ্যা, গতিবিদ্যা এবং গণিতের গুরুত্বপূর্ণ শাখা জ্যামিতির সম্বন্বয়ে পদার্থবিজ্ঞান এর যাত্রা শুরু হয়। পদার্থবিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ ইতিহাস উন্মোচন করলেন আদিপর্বে যেসব বিজ্ঞানীদের নাম পাওয়া যায় তাদের অবদান নিম্নরূপ:

                              ছবি

                    নাম

       জন্মস্থান

                                   আবিষ্কার / কার্যবিবরন/অবদান

থেলিস (Thales)

থেলিস (Thales)

থেলিস

(Thales খ্রি:পূ: ৬২৪-৫৬৯ )

গ্রিস

  • সূর্যগ্রহণ এর ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন
  •  তিনি বলেছেন বৃত্তের ব্যাস বৃত্তকে সমদ্বিখণ্ডিত করে। লোডস্টোনের চৌম্বক ধর্ম সম্পর্কে জানতেন
পিথাগোরাস Pythagorus

পিথাগোরাস

(Pythagorus খ্রি:পূ: ৫২৭-৮৯৭)

গ্রিস

  • বিজ্ঞান গণিত ও সংগীতজ্যোতি বিজ্ঞান ও বিশ্বতত্ত্ব শরীর মন ও আত্মার সবকিছু সূত্রের সাহায্যে প্রকাশ করতে চেয়েছেন।
  • আগুন, মাটি, পানি, বায়ু এই চারটি মৌলের ধারণা দিয়েছেন।
  • কম্পমান তারের উপর তার অধিক স্থায়ী অবদান আছে।
  • তারের কম্পমান বিষয়ক বাদ্যযন্ত্র ও সংগীতের যে স্কেল আছে সেখানে তার অবদান বিদ্যমান।
Democritus

ডেমোক্রিটাস

(Democritus খ্রি:পূ: ৪৬০-৩৭০)

গ্রিস

  •  তিনি ধারণা দেন পরমাণু অবিভাজ্য একক রয়েছে যার নাম পরমাণু।
অ্যারিস্টটল Aristotle

অ্যারিস্টোটল

(Aristotle খ্রি:পূ: ৩১০-২০০)

গ্রিস

  • সবকিছুই মাটি পানি বাতাস ও আগুন দিয়ে তৈরি এই মতামত দেন।
  • তার মতে সূর্য, গ্রহ, ও নক্ষত্রগুলো পৃথিবী কে কেন্দ্র করে ঘুরছে।
  • বিজ্ঞানী প্লেটোও তার সাথে সম্মত ছিলেন।
Aristarcus

অ্যারিস্টার্কাস

(Aristrachus খ্রি:পূ: ৩১০-২৩০)

গ্রিস

  • সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের কথা বলেছেন যা সেলেউকাসক (খ্রি:পূ: ৩৫৮-২৮১) যুক্তি-তর্ক দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন।
Archimedes

আর্কিমিডিস

(Archimedes খ্রি:পূ: ২৮৭-২১২ )

গ্রিস

  • লিভারের নীতি আবিষ্কার করেন।
  • তরলে নিমজ্জিত বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল ঊর্ধ্বমুখী বলের সূত্র আবিষ্কার করে ধাতুর ভেজাল নির্ণয় করেন।
  • গোলীয় দর্পণে সূর্য রশ্মি কে কেন্দ্রীভূত করে আগুন ধরানোর কৌশল জানতেন।
eratosthenes

ইরাতোস্থিনিস (Enatosthenes খ্রি:পূ: ২৭৬-১৯৮)

গ্রিস

  •  সেই সময়ে সঠিকভাবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বের করেছিলেন।

এরপর কয়েক শতাব্দি কাল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মন্থর গতিতে চলে। এ সময় পশ্চিম ইউরোপীয় সভ্যতা গ্রহণ করেছিল বাইজানটাইন (পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য ও মুসলিম সভ্যতার) জ্ঞানের ধারা। এসময় আরবের বিজ্ঞানীরা যে অবদান রাখেন তা নিম্নরূপ এ আলোচনা করা হলো:

 

ছবি

নাম

জন্মস্থান

আবিষ্কার / কার্যবিবরন / অবদান

Jabir Ibn Hayyan

জাবির ইবনে হাইয়ান (Jabir ibn Hayyan খ্রিস্টাব্দ: ৭২১-৮১৩)

ইরান

  • আলকেমি’র উন্নতি সাধন করেন। ‘আলকেমি’ একদিন ছিল ধর্ম ও আধ্যাত্মিক যোগ তেমনি আবার রাসায়নিক শিল্প কৌশল ও কুশলতার সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল।   
  • আলকেমি থেকে বর্তমান কেমিস্ট্রির উদ্ভব।
Ibn Sina

ইবনে সিনা

(Ali al-Husayn ibn Sina খ্রিস্টাব্দ: ৯৮০-১০৩৭)

ইরান

  •  আলকেমি এর উন্নতি সাধন করেন।
  •  গ্রিক চিকিৎসাবিদ গ্যালেন (Galen জন্ম-১২৯) তত্ত্বের উন্নতি সাধন করেন।
Abu Abdullah Ibn Al-Khwazriz

আবু আব্দুল্লাহ ইবনে আল খোয়ারিজমি

(Abu Abdullah Ibn Al-Khwazriz খ্রিস্টাব্দ: ৭৮৩-৮৫০)

ইরান

  • বীজগণিত ও ত্রিকোণমিতির ভীত প্রতিষ্ঠা করেন।
  •  তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ আল জিবাল মুকাবিলা থেকে আলজেবরা শব্দের উৎপত্তি।
Ibn-Al-Haitham

ইবনে আল হাইয়াম

(Ibn-Al-Haitham খ্রিস্টাব্দ: ৯৬৫-১০৩৯)

ইরান

  • আলোক বিজ্ঞানের স্থপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় যেখানে আল হাজেন এর উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল।
Ibn Yunus

ইবনে ইউনুস

( খ্রিস্টাব্দ: ৯৫০-১০০৯)

মিশর

  • তার পূর্ববর্তী 200 বছরের জ্যোতি বিদ্যা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণের রেকর্ড জমা করে ‘হাকেমাইট অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল টেবিল’ নামক সারণি তৈরি করেন।
  • 995 সালে House of Science বিজ্ঞানাগার নির্মাণ করেন।
Al-Masudi

আল মাসুদী

(Al-Masudi খ্রিস্টাব্দ: ৮৯৬-৯৫৬)

ইরাক

  • প্রকৃতির ইতিহাস নিয়ে একটি এনসাইক্লোপিডিয়া দেখেন যেখানে বায়ুকলের উল্লেখ পাওয়া যায়।

তাছাড়া বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় বিখ্যাত কবি ওমর খৈয়াম (Omar Khaiyam, ১০১৯-১১৩৫), আল-বাত্তানী (Al Battani, ৮৫৮-৯২৯), আল-ফরাজী (Al Fargzi, মৃত্যু-৭৭) প্রভৃতি জ্যোতিবিদ, গণিতবিদ ও র্বিজ্ঞানীদের ভূমিকা ছিল।

তোমরা শুনে অবাক হবে যে গ্রিক ধারার জ্ঞানচর্চা ধারাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অবদান রেখেছেন অনেক ভারতীয় চীনা বিজ্ঞানীরাও। নিম্নে তাদের অবদান উল্লেখ করা হলো:

 

ছবি

নাম

জন্মস্থান

আবিষ্কার / কার্যবিবরন / অবদান

Shen Kuo

সেন কুয়ো

(Shen Kuo, ১০৩১-১০৯৫)

চীন

  •  চুম্বকের কাজে তার অবদান রয়েছে।
  •  ভ্রমণের সময় কম্পাস ব্যবহারের দিক নির্ণয়ের বিষয় উল্লেখ করেন।
আর্য ভট্ট  (Arya Bhatt, ৪৭৬-৫৫০)

আর্য ভট্ট

(Arya Bhatt, ৪৭৬-৫৫০)

ভারত

  • গাণিতিক প্রমাণের যোগফল পর্যালোচনা করেন।
  •  দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধানের প্রচেষ্টা নেন।
  •  শূন্যকে সত্যিকার অর্থে ব্যবহার করেন।
বরাহ মিহির  (Varahainihira,৫০৫-৫৮৭)

বরাহ মিহির

(Varahainihira,৫০৫-৫৮৭)

ভারত

  •  সিদ্ধান্ত নামক গ্রন্থে ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা তুলে ধরেন।
  •  যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ এর কাজ ও শূন্যের কাজ আলোচনা করেন।
ভাস্করাচার্য  (Bhaskaracharya, খ্রিস্টাব্দ ৭৮৩-৮৫০)

ভাস্করাচার্য

(Bhaskaracharya, খ্রিস্টাব্দ: ৭৮৩-৮৫০)

ভারত

  •  প্রাচীন ভারতের অন্যতম এই জ্যোতির্বিদ পৃথিবীর ব্যাস বের করতে সক্ষম হন যা হলো 7182 মাইল বর্তমানে তারা তাদের 926 মাইল।
  •  পাই (π) এর মান নির্ণয় করেন।

তাছাড়া ভারতীয় জ্যোতির্বিদ ব্রহ্মগুপ্ত বিজ্ঞানী কণাদের বিশেষ ভূমিকা ছিল।

এখানেই থেমে থাকেনি বিজ্ঞানের শুভযাত্রা। এরপর শুরু হয় প্রাকৃতিক ঘটনার যথার্থ কারণের অনুসন্ধান। মধ্যযুগের ত্রয়োদশ শতকের সবচেয়ে বড় পন্ডিত ছিলেন অ্যালবার্টাস ম্যাগনাস (Albertas Magnus, 193-1280) যার বৈজ্ঞানিক মানসিকতা ছিল লক্ষ্য করার মতো। বিজ্ঞানের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন রজার বেকন (Roger Bacon, 1220-1292) যিনি ছিলেন পরীক্ষামূলক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবক্তা। পনের শতকের শেষ দিকে চিত্র শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি (Leonardo Da Vinci, 1452-1219) যার বলবিদ্যা সম্পর্কে জ্ঞান ছিল, তিনি পাখির ওড়া পর্যবেক্ষণ করে উড়োজাহাজ মডেল তৈরি করেন।

Abvertus Magnus

 

 

বিজ্ঞানের উত্থানপর্ব (The rise of science)

ইউরোপের রেনেসাঁ যুগ অর্থাৎ ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপে একটি বিস্ময়কর বিপ্লবের শুরু হয়। মনে রাখার সুবিধার্থে ছক আকারে তাদের অবদান বিশ্লেষণ করা হলো:

ছবি

নাম

জন্মস্থান

আবিষ্কার / কার্যবিবরণ / অবদান

ডা: গিলবার্ট  (Gilbert, ১৫৪০-১৬০৩)

ডা: গিলবার্ট

(Gilbert, ১৫৪০-১৬০৩)

ইউরোপ

  •  চৌম্বকত্ব নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা ও তত্ত্ব প্রদান করেন।
স্নেল  (Snell, ১৫৯১-১৬২৬)

স্নেল

(Snell, ১৫৯১-১৬২৬)

ইউরোপ

  •  আলোর প্রতিসরণের সূত্র আবিষ্কার করেন।
হাইগেন  (Huygen, ১৬২৬-১৬৯৫)

হাইগেন

(Huygen, ১৬২৬-১৬৯৫)

ইউরোপ

  •  পেন্ডুলামের গতি পর্যালোচনা করেন, ঘড়ির যান্ত্রিক কৌশলের বিকাশ ঘটান, আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন।
রবার্ট হুক  (Robert Hooke, ১৬৩৫-১৭০৩)

রবার্ট হুক

(Robert Hooke, ১৬৩৫-১৭০৩)

ইউরোপ

  •  বিকৃতিকরণ বল (Distorting Force) এর ক্রিয়ার সংস্থাপক বস্তুর ধর্ম অনুসন্ধান করেন।
রবার্ট বয়েল  (Robert Boyle, ১৬২৭-১৬৯১)

রবার্ট বয়েল

(Robert Boyle, ১৬২৭-১৬৯১)

ইউরোপ

  •  বিভিন্ন চাপে গ্যাসের ধর্ম বের করার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান।
ভন গুয়েরিক  (Von Gueriche)

ভন গুয়েরিক

(Von Gueriche)

ইউরোপ

  •  বায়ুবাষ্প আবিষ্কার করেন।
রোমার  (Romer, ১৬৪৪-১৭১০)

রোমার

(Romer, ১৬৪৪-১৭১০)

ইউরোপ

  •  বৃহস্পতির একটি উপগ্রহের গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করে আলোর বেগ পরিমাপ করেন।
কোপারনিকাস  (Nicolaus Copernicus, ১৪৭৩-১৫৪৩)

কোপারনিকাস

(Nicolaus Copernicus, ১৪৭৩-১৫৪৩)

ইউরোপ

  •  তার একটি বইয়ের সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ব্যাখ্যা দেন।
কেপলার  (Johannes Kepler, ১৫৭১-১৬৩০)

কেপলার

(Johannes Kepler, ১৫৭১-১৬৩০)

ইউরোপ

  • উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পরিকল্পনা করেন। তার গুরু ট্রাইকো ব্রাহের পর্যবেক্ষণ লব্ধ তত্ত্ব দ্বারা গ্রহদের গতিপথ সম্পর্কে তার সূত্র যাচাই করেন।
  • কোপার্নিকাসের তত্ত্ব প্রমাণ করেন।
গ্যালিলিও  (Galileo Galilei, ১৫৬৪-১৬৪২)

গ্যালিলিও

(Galileo Galilei, ১৫৬৪-১৬৪২)

ইউরোপ

  •  বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রমাণের উদ্ভাবক।
নিউটন  (Isaac Newton, ১৬৪৩-১৭২৭)

নিউটন

(Isaac Newton, ১৬৪৩-১৭২৭)

ইউরোপ

  •  বলবিদ্যা ও মহাকর্ষ সূত্রের আবিষ্কারক।
  •  বিজ্ঞানী লিবনিজের সাথে মিলে ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন।
কাউন্ট রামফোর্ড  (Sir Benjamin Thomson Count Ramford, ১৭৫৩-১৮১৪)

কাউন্ট রামফোর্ড

(Sir Benjamin Thomson Count Ramford, ১৭৫৩-১৮১৪)

ইউরোপ

  • 1798 সালে দেখান যে, তাপ এক ধরনের শক্তি এবং যান্ত্রিক শক্তিকে তাপ শক্তিতে রূপান্তর করা যায়।
লর্ড কেলবিন  (1st Baron kelvin, ১৮২৪-১৯০৭)

লর্ড কেলভিন

(1st Baron kelvin, ১৮২৪-১৯০৭)

ইউরোপ

  •  তাপগতিবিজ্ঞানের (Thrmo Dynamics) এর দু’টি সূত্র দিয়েছেন  1850 সালে।
কুলম্ব  (Charles-Augustin de Coulomb, ১৭৩৬-১৮০৬)

কুলম্ব

(Charles-Augustin de Coulomb, ১৭৩৬-১৮০৬)

ইউরোপ

  •  1778 সালে বৈদ্যুতিক চার্জের ভেতরকার বলের জন্য সূত্র আবিষ্কার করেন।
ভোল্টা  (Alessandro Volta, ১৭৪৫-১৮২৭)

ভোল্টা

(Alessandro Volta, ১৭৪৫-১৮২৭)

ইউরোপ

  •  1800 সালে বৈদ্যুতিক মোটর আবিষ্কার করেন।
অরস্টেড  (Hans Christian Oersted, ১৭৭৭-১৮৫১

অরস্টেড

(Hans Christian Oersted, ১৭৭৭-১৮৫১

ইউরোপ

  •  1820 সালে দেখান বিদ্যুৎপ্রবাহ দিয়ে  চুম্বক তৈরি করা যায়।
Michael Farady, ১৭৯১-১৮৬৭

ফ্যারাডে ও হেনরি

(Michael Farady, ১৭৯১-১৮৬৭) (Henry Cavendish, ১৭৩১-১৮১০)

ইউরোপ

  •  1831 সালে দেখান যে চুম্বক দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়।

(Henry Cavendish, ১৭৩১-১৮১০)

 

ম্যাক্সওয়েল  (James Clerk Maxwell, ১৮০১-১৮৭৯)

ম্যাক্সওয়েল

(James Clerk Maxwell, ১৮০১-১৮৭৯)

ইউরোপ

  •  তার বিখ্যাত ম্যাক্সওয়েল সমীকরণ দিয়ে পরিবর্তনশীল বিদ্যুৎ ও চৌম্বকক্ষেত্রকে একই সূত্র নিয়ে দেখান যে, আলো আসলে একটা বিদ্যুৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ।

তবে ম্যাক্সওয়েলের আবিষ্কার সময়োপযোগী ছিল। কারণ 1801 সালে ইয়ৎ পরীক্ষার মাধ্যমে আলোর তরঙ্গ ধর্মের প্রমাণ করে রেখেছিলেন।

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা (Introduction to Modern Physics) :

উনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই বিজ্ঞানীরা দেখতে লাগলেন প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞান দিয়ে অনেক কিছুই প্রমাণ করা যাচ্ছে না । তারপর 1900 সালে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক কোয়ান্টাম তত্ত্ব আবিস্কার করেন যা ব্যবহার করে পরমাণুর স্থিতিশীলতা ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছিল।

এরপর ভারতের প্রফেসর সত্যেন্দ্রনাথ বসু বিকিরণ সংক্রান্ত কোয়ান্টাম সংখ্যায়ন তত্ত্বের সঠিক গাণিতিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, যারা স্বীকৃতিস্বরূপ এক শ্রেণির মৌলিক কণিকার নাম বোসন রাখা হয়। 1900 থেকে 1930 সালের এই সময়টিতে অনেক বড় বড় বিজ্ঞানী মিলে কোয়ান্টাম তত্ত্ব আবিষ্কার করেন।

1887 সালে মাইকেলসন ও মোরলি দেখান আলোর বেগ স্থির কিংবা গতিশীল সব মাধ্যমে সমান।

1931 সালে ডিরাক প্রতি পদার্থের অস্তিত্ব ঘোষণা দেন।

1895 সালে রন্টজেন X-Ray আবিষ্কার করেন।

1896 সালে বেকেরেল দেখান পরমাণুর কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ হয়।

1899 সালে পিয়ারে ও মেরি কুরি রেডিয়াম আবিষ্কার করেন।

সত্যেন বসু সত্যেন বোস সত্যেন্দ্রনাথ বসু

সাম্প্রতিক পদার্থবিজ্ঞান (Recent Physics) :

ইলেকট্রনিক্স এবং আধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কারের কারণে তৈরিকৃত এক্সেলেরেটর দিয়ে অনেক বেশি শক্তি এক্সেলেরেট করা সম্ভব হয় যা দিয়ে নতুন নতুন কণা আবিষ্কার করা হয়, এই কণাগুলো তাত্ত্বিক Standard Model দিয়ে সুবিন্যস্ত করা সম্ভব। কয়েকটি কণা দিয়ে সকল কণার গঠন ব্যাখ্যা করা সম্ভব হলেও ভর ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছিল না যার জন্য হিগস বোসন নামে কণিকার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যা 2013 সালে পরীক্ষাগারে সনাক্ত করা সম্ভব হয়।

1924 সালে হাবল দেখিয়েছিলেন সবগুলো গ্যালাক্সি একে অন্যের থেকে দূরে সরে যায়। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড প্রসারণশীল যা 14 বিলিয়ন বছর আগের “বিগ ব্যাং” নামক বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট।

পদার্থবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য (Objectives of Physics) :

বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করাই হচ্ছে পদার্থ বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য, যাকে তিনটি মূল ভাগে ভাগ করা যায়:

  • প্রকৃতির রহস্য উদঘাটন
  • প্রকৃতির নিয়মগুলো জানা
  • প্রকৃতির নিয়ম ব্যবহার করে প্রযুক্তি বিকাশ

প্রগতি রহস্য উদঘাটন (Discovering the mystery of progress) :

প্রাচীনকালে চীনে এক টুকরো লোডস্টোন অন্য এক টুকরোকে অদৃশ্য শক্তি দিয়ে আকর্ষণ থেকে চুম্বকত্ব, গ্রিসে আম্বর নামক পদার্থকে পশম দিয়ে ঘষার পর লোডস্টোন দুটিকে আকর্ষণ থেকে বিদ্যুৎ চুম্বকীয় বল (Electromagnetism), দুর্বল নিউক্লিয় বল (Electro weak force), এভাবে একের পর এক রহস্যের উন্মোচন করেছেন পদার্থবিদরা।

প্রকৃতির নিয়ম গুলো জানা (Knowing the laws of nature) :

মাধ্যাকর্ষণ বলের অস্তিত্ব থেকে নিউটন তার মহাকর্ষ সূত্র ব্যাখ্যা দেন যা দিয়ে যেমন একটি পড়ন্ত বস্তুর গতি ব্যাখ্যা করা যায়, তেমনি সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর প্রদক্ষিণকেও ব্যাখ্যা করা যায়। পদার্থবিজ্ঞানের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে তাত্ত্বিক গবেষণার পাশাপাশি রয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা যার মাধ্যমে প্রকৃতির নিয়মগুলো জানা যায় এবং এটাই পদার্থবিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য।

প্রকৃতির নিয়ম ব্যবহার করে প্রযুক্তি বিকাশ (Developing technology using the laws of nature) :

  • 1938 সালে অটোহান এবং স্ট্রেসম্যান দেখান নিউক্লিয়াসকে ভাঙলে যতটুকু ভর কমে তা শক্তি হিসেবে বের হয়, যেই সূত্র দিয়ে ‘নিউক্লিয়ার বোমা’ এর মতো মরণাস্ত্র ও মানুষের উপকারে ‘নিউক্লিয়ার বৈদ্যুতিক কেন্দ্র‘ (Nuclear Power) তৈরি করা হয়।
  • অর্ধপরিবাহীর সাথে বহির্জাত মৌল মিশিয়ে তৈরিকৃত ট্রানজিস্টর ও ডায়োড দিয়ে যা বর্তমান সভ্যতার ইলেকট্রনিক্সে অনেক বড় অবদান রেখেছে।