ডাইইলেকট্রিক বা পরাবৈদ্যুতিক পদার্থ
কিছু কিছু অন্তরক পদার্থ আছে যারা তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না ঠিকই; কিন্তু বৈদ্যুতিক ফলাফল প্রভাবিত করতে পারে। এই সকল পদার্থকে তড়িৎ ক্ষেত্রে স্থাপন করলে এদের পৃষ্ঠতলে আবিষ্ট আধানের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এদের মধ্য দিয়ে কোনো তড়িৎ প্রবাহিত হয় না। এই ধরনের পদার্থকে পরাবৈদ্যুতিক পদার্থ বা পরাবিদ্যুৎ বলে।
তড়িৎ ক্ষেত্রের মধ্যে একটি ডাইইলেকট্রিক পদার্থ রাখলে পরমাণুগুলোর ধনাত্মক চার্জ তড়িৎ ক্ষেত্রের দিকে এবং ঋণাত্মক চার্জ তড়িৎ ক্ষেত্রের বিপরীত দিকে সামান্য সরে যায়, ফলে প্রতিটি অণু এক একটি তড়িৎ দ্বিমেরুতে পরিণত হয়। এভাবে সৃষ্ট দ্বিমেরু আবেশ প্রক্রিয়াকে পোলারায়ন (Polarization) বলে। যে সকল অপরিবাহী পদার্থকে তড়িৎ ক্ষেত্রের মধ্যে স্থাপন করলে পোলারায়ন ঘটে তাদেরকে ডাইইলেকট্রিক বলে। তাই বলা যায়, সকল অপরিবাহী ডাইইলেকট্রিক নয় কিন্তু সকল ডাইইলেকট্রিক অপরিবাহী। ডাইইলেকট্রিক হচ্ছে উচ্চ পোলারায়িত অপরিবাহী। তাই ধারকে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য ডাইইলেকট্রিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যেমন মিথেন \left(\mathrm{CH}_{4}\right), পানি, অভ্র (Mica), প্লাস্টিক, সিরামিক, রাবার, অ্যাম্বার, কাঁচ ইত্যাদি।
পরাবৈদ্যুতিক পদার্থের অণুর মধ্যে আধানের অবস্থান অনুযায়ী পরাবৈদ্যুতিক পদার্থকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়:
(i) অমেরুবর্তী পদার্থ (Non-polar substance) এবং
(ii) মেরুবর্তী পদার্থ (Polar substance)
ডাইইলেকট্রিক বা পরাবৈদ্যুতিক পদার্থ (Dielectric material)
(i) অমেরুবর্তী পদার্থ (Non-polar substance) :
যে সকল পদার্থের অণুর ধনাত্মক আধান বণ্টনের কেন্দ্র এবং ইলেকট্রনসমূহের বণ্টনের কেন্দ্র একই বিন্দুতে থাকে তাদেরকে অমেরুবর্তী পদার্থ বলে। এদের কোনো স্থায়ী তড়িৎ দ্বিমেরু থাকে না ;
চিত্র ২.১৭
কিন্তু তড়িৎ ক্ষেত্রে স্থাপন করলে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধান বণ্টনের কেন্দ্রের সামান্য আপেক্ষিক সরণ ঘটে; ফলে তড়িৎ দ্বিমেরুর সৃষ্টি হয় [চিত্র ২.১৭(খ)]। অমেরুবর্তী পদার্থের উদাহরণ মিথেন \left(\mathrm{CH}_{4}\right), \mathrm{H}_{2}, \mathrm{Cl}_{2}, \mathrm{O}_{2}, \mathrm{~N}_{2}, \mathrm{CO}_{2} ইত্যাদি। অমেরুবর্তী বা অ-পোলার (non-polar) ডাইইলেকট্রিক পদার্থের দ্বিমেরু ভ্রামক শূন্য হয়।
(ii) মেরুবর্তী পদার্থ (Polar substance) :
যে সকল পদার্থের অণুর ইলেকট্রনসমূহের বণ্টনের কেন্দ্র এবং ধনাত্মক আধান বণ্টনের কেন্দ্র একই বিন্দুতে অবস্থিত না থেকে সামান্য ব্যবধানে থাকে তাদেরকে মেরুবর্তী পদার্থ বলে ।
[চিত্র ২.১৮]
মেরুবর্তী পদার্থের উদাহরণ হলো অ্যামোনিয়া (\mathrm{NH}_{3}), পানি \left(\mathrm{H}_{2} \mathrm{O}\right), \mathrm{HF}, \mathrm{HCl}, \mathrm{CO} ইত্যাদি। এই পদার্থের প্রতিটি অণুর স্থায়ী দ্বিমেরু ভ্রামক থাকে।
ডাইইলেকট্রিক বা পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক (Dielectric constant)
দুটি বিন্দুর চার্জের মধ্যবর্তী মাধ্যম শূন্য (vacuum) বা বায়ু হলে এদের মধ্যে ক্রিয়াশীল বলের মান
F_{0}=\frac{1}{4 \pi \epsilon_{o}} \frac{q_{1} q_{2}}{r^{2}} \ldots (i)
এখানে \epsilon_{o}= শূন্য মাধ্যমের ভেদনযোগ্যতা
আবার, অন্য যে কোনো মাধ্যমে এই ক্রিয়াশীল বলের মান
F=\frac{1}{4 \pi \epsilon} \frac{q_{1} q_{2}}{r^{2}} \ldots (ii)
এখানে \epsilon= শূন্য মাধ্যমের ভেদনযোগ্যতা
সমীকরণ (i)-কে সমীকরণ (ii) দ্বারা ভাগ করে পাওয়া যায়,
\frac{F_{O}}{F}=\frac{\epsilon}{\epsilon_{o}}=k= পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক \ldots \quad \ldots (ii)
\therefore \quad k=\frac{\epsilon}{\epsilon_{o}}=\frac{F_{o}}{F}= দুটি বিন্দু চার্জের জন্য একই দূরত্বে \frac{\text { শূন্য বা বায়ু মাধ্যমে বল }}{\text { অন্য মাধ্যমে বল }}
বা k=\frac{\epsilon}{\epsilon_{o}}=\frac{\text { মাধ্যমের ভেদনযোগ্যতা }}{\text { শূন্যা মাধের ভেদনযোগ্যতা }}
k-কে পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক বা ডাইইলেকট্রিক ধ্রুবক বা তড়িৎ মাধ্যমাঙ্ক বলে। অনেক ক্ষেত্রে এই ধ্রুবককে আপেক্ষিক ভেদ্যতা বলা হয়। অর্থাৎ দুটি নির্দিষ্ট বিন্দু চার্জ একই নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকলে শূন্য বা বায়ু মাধ্যমে তাদের মধ্যে ক্রিয়াশীল বল এবং একই দূরত্বে অন্য কোনো মাধ্যমে তাদের মধ্যে ক্রিয়াশীল বলের অনুপাতকে পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক বলে। একই জাতীয় দুটি রাশির অনুপাত হেতু k-এর কোনো একক নাই।
ডাইইলেকট্রিক বিকল্প সংজ্ঞা (Dielectric Alternative definition):
কোনো ধারকের পরিবাহী পাত দুটির মধ্যে শূন্য মাধ্যমের পরিবর্তে অন্য কোনো অন্তরক পদার্থ থাকলে ধারকের ধারকত্ব যত গুণ বৃদ্ধি পায় তাকে ওই অন্তরকের পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক (dielectric constant) বা আপেক্ষিক ভেদনযোগ্যতা \left(\epsilon_{r}\right) বা তড়িৎ মাধ্যাঙ্ক (k) বলে।
ধরা যাক, একটি সমান্তরাল পাত ধারকের মধ্যবর্তী স্থানে বায়ু বা শূন্য মাধ্যম রেখে ধারকত্ব পাওয়া গেল C_{o} এবং পাত দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব অপরিবর্তিত রেখে পাতদ্বয়ের মাঝে অন্য কোনো অন্তরক মাধ্যম রেখে ধারকত্ব পাওয়া গেল C। এই দুই ধারকত্বের অনুপাতকে পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক বা আপেক্ষিক ভেদ্যতা বলে।
অর্থাৎ, k=\frac{c}{c_{o}}=\frac{\text { অন্তরক পদার্থপূর্ণ ধারকের ধারকত্ব }}{\text { বা শূন্য মাধ্যমপূণ্ণ ধারকের ধারকত্ব }} \cdots (2.39)
উল্লেখ্য, পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকের মান সর্বদাই 1-এর চেয়ে বেশি হয়।
পরাবৈদ্যুতিক বা ডাইইলেকট্রিক ধ্রুবকের তাৎপর্য (Significance of dielectric constant)
“কোনো মাধ্যমের পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক 2.5”–এর অর্থ এই যে, শূন্য বা বায়ু মাধ্যমে অবস্থিত দুটি বিন্দু চার্জের মধ্যকার বল এবং একই দূরত্বে অন্য কোনো মাধ্যমে অবস্থিত ওই বিন্দু চার্জ দুটির মধ্যকার পারস্পরিক বল অপেক্ষা 2.5 গুণ বেশি। অর্থাৎ শূন্য বা বায়ু মাধ্যমে এবং অন্য কোনো মাধ্যমে সমদূরত্বে অবস্থিত দুটি বিন্দু চার্জের মধ্যকার পারস্পরিক বলের অনুপাত 2.5।
আবার, ধারকত্বের সাহায্যে বলা যায় যে ওই মাধ্যমপূর্ণ ধারকের ধারকত্ব বায়ু বা শূন্য মাধ্যমপূর্ণ ধারকের চেয়ে 2.5 গুণ বেশি। অর্থাৎ ওই মাধ্যমপূর্ণ ধারকের ধারকত্ব ও শূন্য বা বায়ু মাধ্যমপূর্ণ ধারকের ধারকত্বের অনুপাত 2:5।
বিভিন্ন ডাইইলেকট্রিক পদার্থ ও ডাইইলেকট্রিক ধ্রুবক (Different dielectric substances and dielectric constants)
ডাইইলেকট্রিক পদার্থ(Dielectric material) | ডাইইলেকট্রিক ধ্রুবক(Dielectric constant) |
পানি (Water) | 20.0 |
অভ্র (Mica) | 7.0 |
কাঁচ (Glass) | 5.10 |
ইবোনাইট (Ebonite) | 2.8 |
মোমে ভেজানো কাগজ (Wax soaked paper) | 2.7 |
পলিথিন (Polythene) | 2.3 |
বায়ু (Air) | 1.05 |
শূন্যস্থান (Vacuum) | 1.00 |