10 Minute School
Log in

ধারকত্ব (Capacitance)

ধরা যাক কোনো পরিবাহীতে q পরিমাণ চার্জ দেওয়া হলে এর বিভব V পরিমাণ বাড়ে। V এর মান পরিবাহীর আকার, আয়তন, পারিপার্শ্বিক মাধ্যমের প্রকৃতি ও নিকটবর্তী অন্যান্য পরিবাহী সাপেক্ষে এর অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। উপরন্তু, নিকটবর্তী পরিবাহীগুলি অন্তরিত অথবা ভূমির সাথে যুক্ত কিনা তার ওপরও নির্ভর করে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে লেখা যায় q \propto V

বা,    \frac{q}{V} = ধ্রুবক = ধারকত্ব 

বা,   C=\frac{q}{V}

এই ধ্রুবকটিকে পরিবাহীটির ধারকত্ব (capacitance or capacity) বলা হয়। অর্থাৎ কোনো পরিবাহীর বিভব একক পরিমাণ বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ চার্জের প্রয়োজন হয় তাই ওই পরিবাহীর ধারকত্ব। এর মান পরিবাহীটির আধানের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে।

\text {ধারকত্ব} = \frac{আধান}{বিভব} 

একক : ধারকত্বের একক ফ্যারাড (F) এবং ক্ষুদ্রতম একক মাইক্রোফ্যারাড (\mu F)

কোনো ধারকের অন্তরীত ও ভূ-সংযুক্ত দুই পরিবাহীর মধ্যে এক একক বিভব বৈষম্য সৃষ্টি করতে তার অন্তরীত পরিবাহীতে যে পরিমাণ চার্জ প্রদান করতে হবে, একে উক্ত ধারকের ধারকত্ব বলে।

\therefore \text { কোনো ধারকের ধারকত্ব }=\frac{\text { অন্তরীত পরিবাহীর চার্জ }}{\text { দুই পরিবাহীর মধ্যে বিভব বৈষম্য }}

কোনো ধারকের ধারকত্ব নির্ভর করে তার দুই পরিবাহীর আকার ও আকৃতির ওপর এবং পরিবাহী দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব ও মাধ্যমের ওপর।

কোনো ধারকের ধারকত্ব 2 F বলতে বুঝায়– পাতদ্বয়ের মধ্যে 1 ভোল্ট বিভব পার্থক্য সৃষ্টি করতে অন্তরীত পরিবাহীতে 2 কুলম্ব চার্জ প্রদান করতে হবে। গঠন অনুসারে কয়েক রকমের ধারক আছে। যথা সমান্তরাল পাত ধারক, গোলকীয় পাত ধারক, নলাকৃতির ধারক ইত্যাদি। এখানে আমরা সমান্তরাল পাত ধারকের গঠন ও কার্য পদ্ধতি আলোচনা করব।

  • 1 ফ্যারাড ধারকত্ববিশিষ্ট একটি পরিবাহী তৈরি করা কি সম্ভব?—ব্যাখ্যা করো।

ধরি, পরিবাহীটি গোলকাকার। এখন আমরা জানি গোলাকার পরিবাহীর ধারকত্ব, C=4 \pi \epsilon_{o} r 1 ফ্যারাড ধারকত্বের জন্য পরিবাহীটির ব্যাসার্ধ হবে,

r=\frac{c}{4 \pi \epsilon_{0}}=\frac{1}{\frac{1}{9 \times 10^{9}}}=9 \times 10^{9} \mathrm{~m}

এই মান অত্যন্ত বড়ো যা পৃথিবীর ব্যাসার্ধের চেয়েও বেশি। সুতরাং 1 ফ্যারাড ধারকত্ববিশিষ্ট পরিবাহী তৈরি করা সম্ভব নয়।

ধারক বা তড়িৎ আধার (Capacitor or condenser)

স্থির তড়িৎবিদ্যায় ধারক বলতে কোনো বস্তুর ধারকত্ব বৃদ্ধি করার একটি কৃত্রিম ব্যবস্থা বুঝায়। সাধারণত একটি অন্তরীত ও অপর একটি ভূ-সংযুক্ত পরিবাহীর মধ্যবর্তী স্থানে বায়ু বা অন্য কোনো পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যমে পূর্ণ করে অন্তরীত পরিবাহীর ধারকত্ব বা চার্জ ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। কাজেই এরূপ একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থাকে একত্রে ধারক বলে।

পরিবাহীতে চার্জ সঞ্চিত রাখার যান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধারক বলে। অথবা, যে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে তড়িৎ সংরক্ষণ করে রাখা হয় তাকে ধারক বলে।

ধারক বা তড়িৎ আধার

চিত্র ১

ক্রিয়ানীতি (Strategy):

মনে করি A একটি অন্তরীত পরিবাহী। একে একটি তড়িৎ উৎপাদক যন্ত্রের সাথে যুক্ত করে ধন চার্জে চার্জিত করায় এটি ধন বিভব প্রাপ্ত হলো। B অপর একটি চার্জশূন্য বা অচার্জিত ভূ-সংযুক্ত পরিবাহী। একে A-এর নিকট স্থাপন করা হলো (চিত্র ১)। ফলে আবেশ প্রক্রিয়ায় B-এর নিকটবর্তী প্রান্তে ঋণ চার্জ এবং দূরবর্তী প্রান্তে ধন চার্জ আবিষ্ট হবে। B-কে ভূ-সংযুক্ত করায় পৃথিবী হতে ইলেকট্রন এসে এর ধন চার্জ নিষ্ক্রিয়  করবে। B-এর ঋণ চার্জ A -এর ওপর ঋণ বিভব উপরিস্থাপিত (superimpose) করবে। ফলে A-এর বিভব কিছুটা কমে যাবে। যেহেতুC = \frac{Q}{V}, সুতরাং A-এর ধারকত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং এটি অতিরিক্ত চার্জ গ্রহণ করতে পারবে। B-কে যতই A-এর সন্নিকটে আনা যাবে, A এর বিভব ততই কমবে। ফলে এর ধারকত্ব বৃদ্ধি পাবে। এরূপ একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থার নাম ধারক। উল্লেখ্য, B পাত ভূ-সংযুক্ত হওয়া একান্ত প্রয়োজনীয় নয়, তবে ভূ-সংযুক্ত হলে ধারকের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। 

কোনো একটি ধারকের মধ্যবর্তী মাধ্যম বায়ু হলে তাকে বায়ু মাধ্যম ধারক সংক্ষেপে বায়ু ধারক এবং কাঁচ  হলে তাকে কাঁচ মাধ্যম ধারক সংক্ষেপে কাঁচ ধারক বলে।

পরিবাহীর ধারকত্ব যে যে বিষয়ের ওপর নির্ভর করে  (Factors on which capacity of a conductor depends)

ধারকত্বের সংজ্ঞা অনুসারে, C = \frac{Q}{V}। কাজেই নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জের দরুন কোনো পরিবাহীর বিভব যে যে কারণে পরিবর্তিত হয়, সেসব কারণে তার ধারকত্বও পরিবর্তিত হবে। কারণগুলো নিম্নরূপ-

(ক) পরিবাহীর ক্ষেত্রফল (Area of conductor):

ক্ষেত্রফল যত বৃদ্ধি পায় পরিবাহীর ধারকত্ব তত বেড়ে যায়। গোলাকার পরিবাহীর ক্ষেত্রে আমরা জানি C=4 \pi \epsilon_{o} \mathrm{kr}। সুতরাং ব্যাসার্ধ r বৃদ্ধি পেলে তার ক্ষেত্রফল এবং সাথে সাথে ধারকত্ব C বৃদ্ধি পাবে। এটি সাধারণভাবে সব পরিবাহীর ক্ষেত্রে সত্য।

(খ) পরিবাহীর মধ্যবর্তী মাধ্যম (Intermediate medium of conductor):

পরিবাহীর মধ্যবর্তী মাধ্যমের পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকের ওপর তার ধারকত্ব নির্ভর করে। অপেক্ষাকৃত উচ্চ পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকসম্পন্ন মাধ্যমে পরিবাহীর ধারকত্ব বেশি হয় এবং নিম্ন পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকসম্পন্ন মাধ্যমে পরিবাহীর ধারকত্ব কম হয়। একটি পরিবাহীর ধারকত্ব শূন্যস্থানে বা বায়ুতে C_{o} এবং k পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকসম্পন্ন মাধ্যমে C_{k} হলে সমীকরণ হতে দেখানো যায় যে,

k=\frac{c_{k}}{c_{o}}=\frac{\text { কোনো মাধ্যমে একটি পরিবাহীর ধারকত্ব }}{\text { শূন্যানোনে বা বায়ুতে ওই পরিবাহীর ধারকত্ব }}

(গ) পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব (The distance between the two conductors):

সমান্তরাল পাত ধারকের মধ্যবর্তী দূরত্ব বৃদ্ধি পেলে ধারকত্ব কমে এবং দূরত্ব কমলে ধারকত্ব বৃদ্ধি পায়।

(ঘ) অপর কোনো পরিবাহী বা ভূ-সংযুক্ত পরিবাহীর সান্নিধ্য (Proximity to any other conductor or ground-connected conductor):

চার্জগ্রস্ত পরিবাহীর নিকটে অন্য কোনো চার্জশূন্য বা ভূ-সংযুক্ত পরিবাহী থাকলে বৈদ্যুতিক আবেশের দরুন পরীক্ষাধীন পরিবাহীর ধারকত্ব বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু পরীক্ষাধীন চার্জগ্রস্ত পরিবাহীর নিকটে সম-জাতীয় চার্জগ্রস্ত বস্তু থাকলে, পরীক্ষাধীন পরিবাহীর ধারকত্ব হ্রাস পাবে এবং বিপরীত জাতীয় চার্জগ্রস্ত বস্তু থাকলে তার ধারকত্ব বৃদ্ধি পাবে।

ধারকের ধারকত্ব বৃদ্ধি

চিত্র ২

  • ধারকের ধারকত্ব কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়?

ধারকের ধারকত্ব বৃদ্ধি করা যায়-

(১) ধারকের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বাড়িয়ে

(২) ধারকের পাতদ্বয়ের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে

(৩) পাতদ্বয়ের মধ্যে বেশি মানের ডাই-ইলেকট্রিক ধ্রুবকের পদার্থ স্থাপন করে এবং

(৪) পাতদ্বয়ের যেকোনো একটিকে ভূ-সংযুক্ত করে।

গোলাকার পরিবাহীর ধারকত্ব (Capacitance of a spherical conductor)

গোলাকার পরিবাহীর ধারকত্ব [চিত্র : ৩]

মনে করি শূন্য মাধ্যমে বা বায়ুতে অবস্থিত r (m) ব্যাসার্ধবিশিষ্ট একটি গোলাকার পরিবাহী A-এর কেন্দ্র O এবং গোলকটিতে +Q পরিমাণ চার্জ রয়েছে [চিত্র ৩]। ধরি গোলকের ধারকত্ব C এবং পৃষ্ঠের বিভব V। অতএব ধারকত্বের সংজ্ঞা অনুসারে, 

C = \frac{Q}{V}  অথবা, V = \frac{Q}{C}   …                    …                  …                (১)

আমরা জানি পরিবাহীতে চার্জ সমভাবে তার পৃষ্ঠের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই চার্জগ্রস্ত এ গোলকের কেন্দ্র হতে বলরেখাগুলো বের হয়ে আসছে মনে হবে। গোলকের কেন্দ্র O-এ +Q পরিমাণ চার্জ আছে কল্পনা করলেও ওই চার্জ হতে বলরেখাগুলো একইভাবে নির্গত হবে। এ কারণে চার্জগ্রস্ত গোলাকার পরিবাহীর ক্ষেত্রে সমস্ত চার্জ তার কেন্দ্রে অবস্থিত কল্পনা করা যায়।

\therefore  গোলাকার পরিবাহীর পৃষ্ঠে বিভব, V=\frac{1}{4 \pi \epsilon_{o}} \times \frac{Q}{r} \quad \cdots \quad   (২)

সমীকরণ (১) ও (২) অনুসারে, \frac{Q}{C}=\frac{1}{4 \pi \epsilon_{o}} \times \frac{Q}{r} 

\therefore \quad C=4 \pi \epsilon_{o} r         …                  …               …                (৩)

সুতরাং এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, 

১. k পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকসম্পন্ন মাধ্যমে গোলকের পৃষ্ঠে বিভব,

V=\frac{Q}{4 \pi \varepsilon_{o} k r}

কাজেই, C=\frac{Q}{V}=4 \pi \epsilon_{o} k r  …               …                       …               (৪)

এখানে \epsilon_{0}=8.854 \times 10^{-12} কুলম্ব^{2} /নিউটন-মিটা^{2}\left(C^{2} / N-m^{2}\right)

২. কোনো পরিবাহীর ধারকত্ব 1 ফ্যারাড বলতে বুঝায় যে, তার বিভব 1 ভোল্ট বৃদ্ধি করতে 1 কুলম্ব চার্জ দিতে হয় এবং পরিবাহীটির ধারকত্ব 9 \times 10^{9} \mathrm{~m} ব্যাসার্ধের একটি গোলাকার পরিবাহীর শূন্য মাধ্যমে বা বায়ুতে ধারকত্বের সমান।

৩. k এর একক ফ্যারাড/মিটার (F / m)

  • গোলাকার পরিবাহীর ব্যাসার্ধ বাড়ালে ধারকত্ব বৃদ্ধি পায় কেন?

আমরা জানি, গোলাকার পরিবাহীর ধারকত্ব C=4 \pi \epsilon_{o} r বা C \propto r এখানে r = গোলকের ব্যাসার্ধ। চার্জ গোলকের বাইরের পৃষ্ঠে অবস্থান করে। ব্যাসার্ধ বেশি হলে, গোলকের পৃষ্ঠ পর্যন্ত দূরত্ব বেশি হয়। তাই গোলাকার পরিবাহীর ব্যাসার্ধ বাড়ালে ধারকত্ব বাড়ে।

  • একই ব্যাসার্ধের দুটি ধাতব গোলকের একটি ফাঁপা ও একটি নিরেট। এদের একই তড়িৎ বিভবে চার্জিত করলে কোনটিতে বেশি চার্জ থাকবে?

ফাঁপা ও নিরেট যে কোনো গোলকের ধারকত্ব \left(C=4 \pi \epsilon_{o} k r\right) সমান হবে যদি পারিপার্শ্বিক মাধ্যম একই হয়। আবার পারিপার্শ্বিক মাধ্যম বায়ু হলে ধারকত্ব =4 \pi \epsilon_{o} r, যেখানে r = গোলকের ব্যাসার্ধ। উল্লিখিত গোলক দুটির ব্যাসার্ধ সমান। সুতরাং এদের ধারকত্ব সমান হবে। প্রযুক্ত বিভব V হলে প্রত্যেকটিতে চার্জের পরিমাণ Q=C V হবে। সুতরাং দুটি গোলকেই সমান তড়িৎ আধান বা চার্জ থাকবে।

তড়িৎ ধারকত্ব (Electric capacitance or capacity)

প্রত্যেক বস্তুরই তড়িৎ ধারণের একটি নির্দিষ্ট ক্ষমতা আছে। সাধারণত একে বস্তুর তড়িৎ ধারকত্ব বা সংক্ষেপে ধারকত্ব (capacitance) বলা হয়।

আমরা জানি, কোনো একটি পরিবাহীতে চার্জের পরিমাণ বাড়ালে তার তড়িৎ বিভব বেড়ে যায়। চার্জ এবং বিভব পরস্পরের সমানুপাতিক।

মনে করি কোনো একটি পরিবাহীতে Q পরিমাণ চার্জ যুক্ত করায় তার বিভব হলো V। অতএব আমরা লিখতে পারি,

Q \propto V বা, Q = ধ্রুবক \times V

        বা, Q=C V           …                     …                 …             (৫)

এখানে, C একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। এই ধ্রুবকই পরিবাহীর ধারকত্ব।

\therefore     চার্জ = ধারকত্ব \times বিভব 

এখন ভাষায় ধারকত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ধরি, V = 1 (একক)। 

\therefore    সমীকরণ (৫) হতে পাই, Q = C

অর্থাৎ কোনো পরিবাহীর বিভব এক একক বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ চার্জের প্রয়োজন হয় তাকে উক্ত পরিবাহীর তড়িৎ ধারকত্ব বলে। একে C দ্বারা ব্যক্ত করা হয়। এটি পরিবাহীর আকার, মাধ্যমের প্রকৃতি এবং অন্য বস্তুর সান্নিধ্যের ওপর নির্ভর করে।

কাজ ও বিভব উভয়ই স্কেলার রাশি হওয়ায় ধারকত্বও স্কেলার রাশি

  • পানির পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকের মান খুব বেশি। কিন্তু পানিকে ধারকের ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করা হয় না-ব্যাখ্যা কর।

পানির পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক অনেক বেশি; তবে বিশুদ্ধ অবস্থায় থাকলেই কেবল এটি ভালো অন্তরকের মতো আচরণ করে। কিন্তু পানিতে অপদ্রব্য দ্রবীভূত থাকলে পানি পরিবাহীর মতো আচরণ করে, তাই পানি ধারকের ডাইইলেকট্রিক হিসেবে উপযুক্ত নয়। তাছাড়া পানি তরল পদার্থ হওয়ায় এটি ধারকের ডাই-ইলেকট্রিক হিসেবেও সুবিধাজনক নয়

ধারকত্বের একক (Unit of capacitance)

ধারকত্বের এস. আই. বা ব্যবহারিক একক হলো ফ্যারাড (Farad)। বিখ্যাত বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের নাম অনুসারে এই এককের প্রচলন করা হয়েছে। ফ্যারাড একককে সংক্ষেপে F দ্বারা সূচিত করা হয়।

1 ফ্যারাড (1 Farad): কোনো পরিবাহীর বিভব 1 ভোল্ট বৃদ্ধি করতে যদি 1 কুলম্ব চার্জের প্রয়োজন হয়, তবে তার ধারকত্বকে 1 ফ্যারাড বলে।

  আমরা জানি,  C=\frac{Q}{V} \quad \therefore 1 F=\frac{1 C}{1 V} 

কিন্তু ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ফ্যারাড একক খুবই বড় হওয়ায় ক্ষুদ্র এককও ব্যবহার করা হয়। এসব ক্ষুদ্র এককের নাম মাইক্রো ফ্যারাড (\mu F) এবং মাইক্রোমাইক্রো ফ্যারাড বা পিকো ফ্যারাড (\mu \mu F or p F)

I F=10^{6} \mu F=10^{12} \mu \mu F   বা  p F 

বা, 1 \mu F=10^{-6} F

এবং 1 \mu \mu \mathrm{F}  বা 1 p F=10^{-12} \mathrm{~F}

সমান্তরাল পাত ধারকের ধারকত্ব (Capacitance of a parallel plate condenser)

সমান্তরাল পাত ধারকে দুটি সমান্তরাল ধাতব পাত আছে। এরা যথাক্রমে M ও N [চিত্র ৪]। পাত দুটি পরস্পর হতে সামান্য দূরে থাকে এবং এদের মধ্যে বায়ু অথবা অন্য কোনো পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যম যেমন প্যারাফিন, গন্ধক, কাচ, ইবোনাইট, অভ্র প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া পাত M কুপরিবাহী দণ্ড দ্বারা ভূমি হতে অন্তরীত অবস্থায় এবং পাত N ভূ-সংযুক্ত অবস্থায় থাকে।

সমান্তরাল পাত ধারকের ধারকত্বচিত্র ৪

কার্যনীতি (Policy):

মনে করি, ধারকের পাত দুটির প্রত্যেকটির ক্ষেত্রফল A, তাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব d এবং মধ্যবর্তী মাধ্যম বায়ু। এখন M পাতে +Q পরিমাণ চার্জ প্রদান করলে, M হতে নির্গত বলরেখাগুলো নিকটবর্তী ভূ-সংযুক্ত পরিবাহী N পাতের ওপর পড়বে। এর ফলে বৈদ্যুতিক আবেশ চরম হবে এবং N পাতের ভেতরের পৃষ্ঠের আবিষ্ট ঋণ চার্জ, M পাতের আবেশী ধন চার্জের সমান হবে। পাত দুটি পরস্পরের অতি নিকটে বলে M পাত হতে অভিলম্বভাবে বলরেখাগুলো বের হয়ে মোটামুটি পরস্পরের সমান্তরালে যেয়ে N পাতের ওপর পড়বে এবং পাত দুটির মধ্যে তড়িৎ প্রাবল্য সর্বত্র প্রায় সমান হবে। আবার যেহেতু ভূ-সংযুক্ত পাত N-এর বিভব শূন্য, কাজেই M পাতের বিভবকে MN-এর মধ্যকার বিভব বৈষম্য গণ্য করা যেতে পারে।

ধারকত্বের হিসাব (Capacity calculation):

সমান্তরাল পাতদ্বয়ের পৃষ্ঠের তড়িৎ প্রাবল্য এবং পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানের তড়িৎ প্রাবল্য একই হবে।

আমরা জানি, কোনো পাত্রের পৃষ্ঠে তড়িৎ প্রাবল্য E=\frac{\sigma}{\epsilon}=\frac{Q}{A \epsilon} ; এখানে, \sigma= = চার্জ ঘনত্ব, \epsilon= = মাধ্যমের ভেদনযোগ্যতা।

আমরা জানি, ধারকত্ব, C=\frac{Q}{V}=\frac{Q}{E d}=\frac{Q}{Q d / A \epsilon}=\frac{A \epsilon}{d} \quad[\because V=E d] 

সমান্তরাল পাত ধারকের ধারকত্ব, C=\frac{A \epsilon}{d}  

এবং বায়ু বা শূন্য মাধ্যমের জন্য ধারকত্ব, C=\frac{\epsilon_{o} A}{d} 

  • একটি ধারকের গায়ে 0.09 \mu F-220 V লেখা আছে। এ কথার অর্থ কী?

লেখাটি থেকে বোঝা যায় যে ওই ধারকের ধারকত্ব 0.09 \mu \mathrm{F} এবং এটি সর্বোচ্চ 220 \mathrm{~V} বিভব পার্থক্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। 220 \mathrm{~V}এর বেশি বিভব পার্থক্যে ধারকটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ধারকের শ্রেণি ও সমান্তরাল সংযোগ এবং তুল্য ধারকত্ব (Combination of series, parallel condensers and equivalent capacitance)

সুবিধামতো ধারকত্ব পাওয়ার জন্য একাধিক ধারক যুক্ত করা হয়। একে ধারকের সজ্জা বলে। এটি দুই প্রকারে করা যেতে পারে; যথা- 

(১) শ্রেণি বা সিরিজ সমবায় (Grouping in series)

(২) সমান্তরাল সমবায় (Grouping in Parallel)

তুল্য ধারকত্ব (Equivalent capacitance)

ধারকের কোনো সমবায়ের পরিবর্তে একটি ধারক ব্যবহার করলে যদি ধারকের পাতে চার্জ ও বিভব পার্থক্য সমবায়ের চার্জ ও বিভব পার্থক্যের সমান থাকে, তবে ওই ধারকের ধারকত্বকে সমবায়ের তুল্য ধারকত্ব বলে।

ধারকের শ্রেণি বা সিরিজ বিন্যাস (Combination of series capacitors)

যখন কতকগুলো ধারককে এমনভাবে যুক্ত করা হয় যাতে প্রথম ধারকের দ্বিতীয় পাত দ্বিতীয় ধারকের প্রথম পাতের সাথে, দ্বিতীয় ধারকের দ্বিতীয় পাত তৃতীয় ধারকের প্রথম পাতের সাথে ইত্যাদি একের পর এক যুক্ত থাকে এবং সর্বশেষ ধারকের শেষ পাত ভূ-সংযুক্ত থাকে তখন একে শ্রেণিবিন্যাস বলে। শ্রেণিবিন্যাসে অন্তর্ভুক্ত শেষ ধারকের শেষ পাত ছাড়া অন্য পাতগুলো পৃথিবী হতে অন্তরীত অবস্থায় থাকে। ৫ নং চিত্রে C_{1}, C_{2}, C_{3} ধারকত্বের তিনটি ধারক AB, CD, EF শ্রেণিবিন্যাসে আছে দেখানো হয়েছে।

ধারকের শ্রেণি বা সিরিজ বিন্যাসচিত্র ৫

প্রথম ধারকের প্রথম পাত A-তে Q পরিমাণ ধন চার্জ প্রদান করলে তড়িৎ আবেশের দরুন এর দ্বিতীয় পাত B-তে Q পরিমাণ ঋণ চার্জ এবং দ্বিতীয় ধারকের প্রথম পাত C-তে Q পরিমাণ ধন চার্জ আবিষ্ট হবে। দ্বিতীয় ধারকের প্রথম পাতের ধন চার্জের দরুন তার দ্বিতীয় পাতে Q পরিমাণ ঋণ চার্জ এবং তৃতীয় ধারকের প্রথম পাতে Q পরিমাণ ধন চার্জ আবিষ্ট হবে। এভাবে প্রত্যেক ধারকের প্রথম পাত Q পরিমাণ ধন চার্জ এবং দ্বিতীয় পাত Q পরিমাণ ঋণ চার্জ প্রাপ্ত হবে। প্রথম ধারকের দ্বিতীয় পাত দ্বিতীয় ধারকের প্রথম পাতের সাথে সংযুক্ত বলে তাদের বিভব সমান হবে। একই কারণে দ্বিতীয় ধারকের দ্বিতীয় পাত ও তৃতীয় ধারকের প্রথম পাতের বিভব সমান হবে। ধরা যাক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধারকের পাতদ্বয়ের মধ্যে বিভব বৈষম্য যথাক্রমে V_{1}, V_{2} V_{3} এবং সংযোজনের অন্তর্গত প্রথম পাত A এবং শেষ পাত F-এর মধ্যে বিভব বৈষম্য V, তা হলে, 

V=V_{1}+V_{2}+V_{3}

   এখন,  V_{1}=\frac{Q}{c_{1}{ }^{\prime}}, V_{2}=\frac{Q}{c_{2}{ }^{\prime}}, \quad ( V_{3}=\frac{Q}{c_{3}}

   \therefore \mathrm{V}=\frac{Q}{c_{1}}+\frac{Q}{c_{2}}+\frac{Q}{c_{3}}=Q\left(\frac{1}{c_{1}}+\frac{1}{c_{2}}+\frac{1}{c_{3}}\right) \ldots (৬)

কিন্তু যদি সমগ্র সংযোজনের পরিবর্তে C_{s} ধারকত্বের কোনো একটি ধারকের প্রথম পাতে Q পরিমাণ ধন চার্জ প্রদান করলে তার অন্তরীত ও ভূ-সংযুক্ত পাত দুটির মধ্যে বিভব বৈষম্য V হয়, তাহলে

\begin{array}{llll} \mathrm{V}=\frac{Q}{c_{s}} & \ldots & \ldots & (\text {৭}) \\ \text { সমীকরণ (2.47) } 3(2.48) \text { অনুসারে } \frac{Q}{c_{s}} & =Q\left(\frac{1}{c_{1}}+\frac{1}{c_{2}}+\frac{1}{c_{3}}\right) \end{array}

\therefore \quad \frac{1}{c_{s}}=\frac{1}{c_{1}}+\frac{1}{c_{2}}+\frac{1}{c_{3}} \quad \ldots \quad \ldots (৮)

C_{s} – ই হচ্ছে তুল্য ধারকত্ব।

অনুরূপভাবে দেখানো যায় যে, শ্রেণি সংযোজনের অন্তর্গত C_{1}, C_{2}, C_{3} \ldots \ldots . . C_{n} ধারকত্বের n টি ধারকের তুল্য ধারকত্ব C_{s} হলে,

\frac{1}{c_{s}}=\frac{1}{c_{1}}+\frac{1}{c_{2}}+\frac{1}{c_{3}}+\cdots \quad \ldots \ldots . .+\frac{1}{c_{n}}=\sum \frac{1}{c} 

সুতরাং শ্রেণি সংযোজনের অন্তর্ভুক্ত ধারকগুলোর ধারকত্বের বিপরীত মানের সমষ্টি তুল্য ধারকত্বের বিপরীত মানের সমান।

ধারকের সমান্তরাল সংযোগ (Combination of parallel capacitors)

যখন কতগুলো ধারককে এমনভাবে যুক্ত করা হয় যাতে প্রত্যেক ধারকের প্রথম পাত এক বিন্দুতে এবং দ্বিতীয় পাত অপর এক বিন্দুতে যুক্ত থাকে তখন একে ধারকের সমান্তরাল সংযোগ বলে।

2.24[চিত্র ৬]

৬ নং চিত্রে সমান্তরাল সংযোগের অন্তর্ভুক্ত C_{1}, C_{2},C_{3} ধারকত্বের তিনটি ধারকের প্রত্যেকের প্রথম পাত M বিন্দুতে এবং দ্বিতীয় পাত ভূ-সংযুক্ত অবস্থায় N বিন্দুতে যুক্ত আছে। এই অবস্থায় M বিন্দুতে Q পরিমাণ ধন চার্জ প্রদান করলে প্রত্যেক ধারকের পাত দুটির মধ্যে বিভব বৈষম্য সমান হবে এবং Q চার্জ ধারকত্ব অনুযায়ী ধারকগুলোতে ছড়িয়ে পড়বে।

ধরা যাক, C_{1}, C_{2},C_{3} ধারকত্বের ধারক তিনটিতে সঞ্চিত চার্জের পরিমাণ যথাক্রমে Q_{1}, Q_{2}Q_{3} এবং M ও N-এর মধ্যে বিভব বৈষম্য V

\begin{array}{l} \text { তাহলে } Q_{1}=C_{1} V, Q_{2}=C_{2} V, Q_{3}=C_{3} V \text { এবং } Q=Q_{1}+Q_{2}+Q_{3} \\ \therefore Q=C_{1} V+C_{2} V+C_{3} V \\ \qquad=\left(C_{1}+C_{2}+C_{3}\right) \mathrm{V} \quad \ldots \text {(৯)} \end{array} 

যদি সমগ্ৰ সমান্তরাল সংযোগের পরিবর্তে C_{p} ধারকত্বের একটি ধারকের প্রথম ও দ্বিতীয় পাত যথাক্রমে M ও N বিন্দুতে যোগ করে M বিন্দুতে Q পরিমাণ ধন চার্জ প্রদান করলে M ও N বিন্দুর মধ্যে বিভব বৈষম্য V হয়, তাহলে

\begin{array}{l} Q=C_{p} V=\left(C_{1}+C_{2}+C_{3}\right) V \\ \therefore \quad C_{p}=C_{1}+C_{2}+C_{3} \end{array}  

C_{p} হচ্ছে তুল্য ধারকত্ব।

একইভাবে দেখানো যায় যে, C_{1}, C_{2}, C_{3}, \ldots \ldots \ldots . C_{n} ধারকত্বের n টি ধারকের সমান্তরাল সংযোগের সমতুল্য তুল্য ধারকত্ব C_{p} হলে, 

C_{p}=C_{1}+C_{2}+C_{3}+\ldots \ldots+C_{n}=\sum C \quad \ldots \quad \ldots (১০)

সুতরাং, সমান্তরাল সংযোগের অন্তর্ভুক্ত ধারকগুলোর ধারকত্বের সমষ্টি সংযোজনের তুল্য ধারকত্বের সমান।

  • দেখাও যে, সমান ধারকত্বের দুটি ধারকের সমান্তরাল সমবায়ে থাকাকালীন ধারকত্ব শ্রেণিবদ্ধ সমবায়ে  থাকাকালীন সমতুল্য ধারকত্বের 4 গুণ।

ধরা যাক, প্রত্যেকটি ধারকের ধারকত্ব = C

এদের সমান্তরাল সমবায়ে তুল্য ধারকত্ব C_{p}=C+C=2 C \ldots (i)

আবার শ্রেণি সমবায়ে তুল্য ধারকত্ব \frac{1}{c_{s}}=\frac{1}{c}+\frac{1}{c}=\frac{2}{c} ; \quad C_{s}=\frac{c}{2} \ldots (ii)

(i) + (i) হতে পাই, \frac{c_{p}}{c_{s}}=2 C \times \frac{2}{c}=4 \quad \therefore \quad C_{p}=4 C_{s}

ধারকের স্থিতি বা সঞ্চিত শক্তি (Potential energy of a condenser or a capacitor)

মনে করি কোনো ধারকের একটি পাতকে ভূ-সলগ্ন করে অপর পাতটি V বিভবে চার্জিত করে ধারকটিকে চার্জিত করা হলো। ধারকটিকে চার্জিত করতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে হয়, তা-ই ধারকে স্থিতিশক্তিরূপে সঞ্চিত থাকে। এক্ষেত্রে একটি পাতকে বিভবে চার্জিত করতে যে কাজ করতে হয় তা-ই ধারককে চার্জিত করার জন্যে প্রয়োজনীয় কাজ এবং এটিই হলো ধারকের স্থিতিশক্তি। মনে করি V বিভবে চার্জিত করার নিমিত্তে যখন পাতটিকে একটু একটু করে চার্জযুক্ত করা হয়েছিল তখন কোনো সময় পাতটির বিভব হয়েছিল V। ওই সময় পাতটিকে আরো d q পরিমাণ চার্জ সরবরাহ করতে সাধিত কাজের পরিমাণ, d W=V d q=\frac{q}{C} d q এবং পাতটিতে যদি মোট Q চার্জ সরবরাহ করা হয়, তবে মোট সাধিত কাজের পরিমাণ, 

W=\int d W=\int_{0}^{Q} \frac{q}{C} d q , এখানে C হলো ধারকের ধারকত্ব

\begin{array}{l} =\frac{1}{C}\left[\frac{q^{2}}{2}\right]_{0}^{Q}=\frac{1}{C}\left[\frac{Q^{2}}{2}\right] \\ =\frac{1}{2} \cdot \frac{Q^{2}}{C} \quad \ldots \text {(১১)} \\ \end{array} 

\therefore  ধারকের স্থিতিশক্তি

\begin{aligned} \text { P. } & E=W=\frac{Q^{2}}{2 C} \quad \cdots \\ &=\frac{1}{2} Q \times \frac{Q}{C}=\frac{1}{2} Q V\left[\because \quad V=\frac{Q}{C}\right] \quad \cdots \\ &=\frac{1}{2} C V^{2} \quad[\because \quad Q=C V] \quad \cdots \end{aligned}

যদি Q কুলম্বে, V ভোল্টে এবং C ফ্যারাডে প্রকাশ করা হয়, তবে স্থিতিশক্তি জুলে (J) প্রকাশিত হবে। চার্জিত ধারকে সঞ্চিত শক্তি পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী তড়িৎ ক্ষেত্রে অবস্থান করে। সমীকরণ (১২), (১৩) এবং (১৪)-এর প্রত্যেকটি হলো ধারকের স্থিতিশক্তির রাশিমালা। অর্থাৎ একটি আহিত ধারকে মোট শক্তির পরিমাণ,

U=\frac{1}{2} \cdot \frac{Q^{2}}{C}=\frac{1}{2} C V^{2}=\frac{1}{2} Q V। ধারকে সঞ্চিত শক্তি নির্ভর করে ধারকের দুই পাতের মধ্যবর্তী বিভব পার্থক্য, ধারকের ধারকত্ব এবং চার্জের ওপর। একটি নির্দিষ্ট ধারকে সঞ্চিত শক্তি তার আধানের বর্গের সমানুপাতিক এবং বিভব পার্থক্য স্থির থাকলে ধারকের সঞ্চিত শক্তি তার চার্জের সমানুপাতিক হয়।

তড়িৎ ক্ষেত্রের একক আয়তনে সঞ্চিত শক্তির রাশিমালা (Equation of stored energy in unit volume of electric field)

একক আয়তনে সঞ্চিত শক্তি,

\begin{aligned} U &=\frac{W}{\text { আয়তন }}=\frac{W}{A d} \\ &=\frac{\frac{1}{2} C V^{2}}{A d}=\frac{\frac{1}{2} C(E d)^{2}}{A d} \quad\left[\because \quad E=\frac{V}{d} \quad \therefore V=E d\right] \ldots \text { (১৬) } \end{aligned}

=\frac{1}{2} \epsilon_{o} E^{2} … … … (১৭)

যদি পাত দুটির মধ্যে বায়ু ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যম থাকে যার পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবক \epsilon_{r} তবে একক আয়তনে সঞ্চিত শক্তির পরিমাণ হবে,

\mathrm{U}=\frac{1}{2} \epsilon_{r} \epsilon_{o} E^{2}=\frac{1}{2} \epsilon E^{2} \quad\left[\because \epsilon_{r} \epsilon_{o}=\epsilon\right] \quad \ldots \quad \ldots \quad \text { (১৮) }
  • কোনো ধারককে যে কোনো উচ্চ মানের বিভবে আহিত করা কী সম্ভব-ব্যাখ্যা কর।

কোনো ধারককে যে কোনো উচ্চ মানের বিভবে আহিত করা সম্ভব নয়। বিভবের মান খুব বেশি হলে পারিপার্শ্বিক বায়ুস্তরের আস্তরণ (insulation) ভেঙে যায় এবং ধারক ও বায়ুর মধ্যে তড়িৎ ক্ষরণ ঘটতে থাকে।

  • বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করার পরেও ধারকযুক্ত কোনো বর্তনীকে সাবধানে নাড়াচাড়া করার দরকার হয় কেন ব্যাখ্যা কর।

ধারক সংযুক্ত কোনো তড়িৎ বর্তনীকে উচ্চ বিভবের উৎসের সঙ্গে যুক্ত করলে ধারকটি উচ্চ বিভবে চার্জিত হয়। এখন উৎস সরিয়ে নিলেও সাধারণত ধারকটি ক্ষরিত হতে বেশ সময় নেয়। তাই উৎস সরানোর সঙ্গে সঙ্গে বর্তনী স্পর্শ করলে শক লাগার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে ধারকযুক্ত বর্তনী সাবধানে নাড়াচাড়া করা উচিত।

ধারকের প্রকারভেদ ও ব্যবহার (Kinds of condenser and uses)

(ক) পরিবর্তনীয় ধারক (Variable condenser or capacitor) :

ধারকত্ব পরিবর্তন উপযোগী। এটি এক প্রকার। বায়ু মাধ্যম সমান্তরাল পাত ধারক। এটি বেতার গ্রাহক যন্ত্রের টিউনের কাজে এবং কোনো কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়।

পরিবর্তনীয় ধারক

[চিত্র : ৭]

এ জাতীয় ধারকে একই অক্ষবিশিষ্ট দুই সারি অর্ধ-বৃত্তাকার অ্যালুমিনিয়ামের পাত B ও C থাকে [চিত্র ৭]। এক সারি B স্থির এবং অন্য সারি C-কে ঘুরানো যায়। পাতগুলো পরস্পর সমান্তরাল এবং এদের পারস্পরিক দূরত্ব সমান। স্থির পাতগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত এবং ঘূর্ণনক্ষম পাতগুলো হতে অন্তরীত। পাতগুলোর মধ্যবর্তী স্থানের বায়ু পরাবিদ্যুতের কাজ করে। ঘূর্ণনক্ষম পাতগুলো একটি দণ্ড R-এর সাথে আটকানো থাকে। সুতরাং দণ্ডটি ঘুরালে তার সাথে যুক্ত পাতগুলো স্থির পাতগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে যায় বা বের হয়ে আসে। এই ঘূর্ণনে ধারকের কার্যকর ক্ষেত্রফল পরিবর্তনের সাথে সাথে ধারকত্ব পরিবর্তিত হয়।

(খ) স্থিরমান ধারক বা অভ্র ধারক (Fixed condenser or mica condenser):

বেতার গ্রাহক যন্ত্রে এরূপ ধারক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

স্থিরমান ধারক বা অভ্র ধারক [চিত্র : ৮]

এ জাতীয় ধারকে কতকগুলো টিনের পাত T থাকে [চিত্র ৮]। পাতগুলো পরস্পর হতে অভ্রের পাত (বা মোমযুক্ত কাগজ) M দ্বারা পৃথক করা থাকে। ধারকে প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম ইত্যাদি বিজোড় সংখ্যক টিনের পাতগুলো পরস্পরের সাথে ধাতব দণ্ড বা পাত দ্বারা যুক্ত করে P বন্ধনীর সাথে এবং দ্বিতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ইত্যাদি জোড় সংখ্যক টিনের পাতগুলো পরস্পরের সাথে অপর একটি পাত বা দণ্ড দ্বারা যুক্ত করে বন্ধনী Q-এ সংযোগ করা হয়। এখানে টিনের পাতগুলো ধারকের পাতের ও অভ্রের পাতগুলো পরাবিদ্যুতের কাজ করে। এবং ধারকগুলো সমান্তরাল সংযোজনে যুক্ত হয়ে একটি বড় ধারকে পরিণত হয়। এই ধারকের P ও Q বন্ধনী দুটির যে কোনো একটিকে ভূ-সংযুক্ত করে অপরটিতে চার্জ প্রদান করতে হয়।

(গ) কাগজ ধারক (Paper condenser) :

ইলেকট্রনিক বর্তনীতে টিউন সার্কিট বা ট্যাঙ্ক সার্কিট কম্পাঙ্ক নির্ধারণে ব্যবহৃত হয় (চিত্র ৯)।

কাগজ ধারক [চিত্র : ৯]

এটি এক প্রকার স্থির মান সমান্তরাল পাত ধারক। টিন বা অ্যালুমিনিয়ামের দুই পাত ধারকের প্লেটের ও প্লেটদ্বয়ের মধ্যে রক্ষিত প্যারাফিন মোমে ভিজানো পাতলা কাগজের ফালি পরাবিদ্যুতের কাজ করে। কাগজের ফালিসহ পাত দুটিকে জড়িয়ে  চোঙাকৃতি করা হয়। এটি সহজে তৈরি করা যায় ও খুব কম মূল্যে পাওয়া যায়।

(ঘ) তড়িৎ-বিশ্লেষক ধারক (Electrolytic condenser) :

বেতার গ্রাহক যন্ত্রে প্রচুর পরিমাণে এই ধারক ব্যবহৃত হয় [চিত্র ১০]।

তড়িৎ-বিশ্লেষক ধারক [চিত্র : ১০]

অ্যামোনিয়াম বোরেটের একটি দ্রবণে দুটি অ্যালুমিনিয়াম প্লেট নিমজ্জিত রেখে এই ধারক তৈরি হয়। এর একটি প্লেট অ্যানোড ও আর একটি প্লেট ক্যাথোড-এর কাজ করে। এর ধারকত্ব অনেক বেশি এবং একে কেবল অপরিবর্তী প্রবাহে ব্যবহার করা যায়; কিন্তু পরিবর্তী প্রবাহে কখনো ব্যবহার করা যায় না। সমতড়িৎ প্রবাহ পাঠালে অ্যানোড প্লেটে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের একটি অতি পাতলা প্রলেপ পড়ে যা পরাবিদ্যুতের কাজ করে।

এক নজরে ধারকের ব্যবহার (Uses of capacitor at a glance)

১।  টেলিগ্রাফ, টেলিফোনে এবং বেতার গ্রাহক যন্ত্রে টিউনিং-এর কাজে ধারক ব্যবহৃত হয়।

২। বৈদ্যুতিক পাখাকে জোরে ঘুরাবার জন্য ধারক ব্যবহৃত হয়।

৩। বিবর্ধক যন্ত্রে সংযুক্তকরণ (coupling) কাজে ধারক ব্যবহার করা হয়।

৪। বৈদ্যুতিক বর্তনীতে চার্জিং এবং ডিসচার্জিং-এর কাজে ব্যবহৃত হয়।

৫। বৈদ্যুতিক বর্তনীতে ডিসি ব্লকিং (DC blocking) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৬। ফিলটার সার্কিটে ধারক ব্যবহার করা হয়।

৭। স্পন্দকে ধারক ব্যবহার করা হয়।

৮। এছাড়া চার্জ সঞ্চিত করতে এবং বৈদ্যুতিক নানা কাজে ধারক ব্যবহার করা হয়।