10 Minute School
Log in

স্থির তড়িৎ (Static electricity)

গ্রিক দার্শনিক থেলিস (Thales : 626-548 B.C.) সর্বপ্রথম পর্যবেক্ষণ করেন যে সোলেমানী পাথর বা পাইন গাছের শক্ত আঠা দিয়ে রেশমি কাপড়কে ঘষলে এগুলো ছোট ছোট কাগজের টুকরাকে আকর্ষণ করে। উইলিয়াম গিলবার্ট (William Gilbert : 1544-1603) এ সম্বন্ধে বিস্তারিত অনুসন্ধান করেন এবং অনেক পদার্থের মধ্যে এই ধর্ম বা গুণাগুণ লক্ষ করেন। ড. গিলবার্ট পরবর্তীতে লক্ষ করেন যে ঘর্ষণের ফলে প্রত্যেক বস্তু অন্য বস্তুকে কম-বেশি আকর্ষণ করে এবং এই ধর্মই তড়িতাহিতকরণ (Electrification) নামে পরিচিত।

কুলম্বের সূত্র (Coulomb’s law)

দুটি চার্জের মধ্যকার আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান তিনটি শর্তের উপর নির্ভর করে; যথা-

(iii) চার্জ দুটির পরিমাণ

(iii) চার্জ দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব এবং

(iii) চার্জ দুটির মধ্যবর্তী মাধ্যম।

বিখ্যাত ফরাসি বিজ্ঞানী কুলম্ব (Coulomb) 1785 খ্রিস্টাব্দে দুটি বিন্দু চার্জের মধ্যে ক্রিয়াশীল বলের একটি সূত্র আবিষ্কার করেন। এটি কুলম্বের সুত্র(Coulomb’s law) নামে পরিচিত।

বিন্দু চার্জ (Point charge) :

আহিত বা চার্জিত বস্তুর আকার যখন খুবই ক্ষুদ্র হয়, তখন ওই চার্জিত বস্তুর চার্জকে বিন্দু চার্জ বলা হয়। ওই ধরনের চার্জিত বস্তুগুলো তাদের মধ্যকার দূরত্বের তুলনায় এত ছোট যে ওইগুলোকে গাণিতিক বিন্দু (mathematical point) হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

বিন্দু চার্জের সাহায্যে কুলম্বের সূত্র (Coulomb’s law) নিম্নরূপে বিবৃত করা যায়

কোনো একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমে দুটি বিন্দু চার্জের মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান চার্জ দুটির গুণফলের সমানুপাতিক, চার্জ দুটির মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এই বল চার্জ দুটির সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।

ব্যাখ্যা (Explanation):

মনে করি কোনো মাধ্যমে q_1 এবং q_2 দুটি বিন্দু চার্জ পরস্পর হতে r দূরত্বে অবস্থিত [চিত্র]। এরা যদি পরস্পরের ওপরে F পরিমাণ বল প্রয়োগ করে, তাহলে কুলম্বের সূত্র অনুসারে,

Coulomb's law

F \propto q_{1} q_{2} যখন \text{r} স্থির বা ধ্রুব থাকে 

এবং F \propto \frac{1}{r^{2}} যখন q_{1}q_{2} স্থির বা ধ্রুব থাকে 

যখন r, q_{1}q_{2} সকল রাশিই পরিবর্তনশীল, তখন

F \propto \frac{q_{2} q_{2}}{r^{2}}

বা,  F=K \frac{q_{2} q_{2}}{r^{2}}                 …                …                   …           (2.1)

এখানে K একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। এর মান চার্জ দুটির মধ্যবর্তী মাধ্যমের প্রকৃতি এবং F, q_{1} এবং q_{2} ও r এর পরিমাপের এককের ওপর নির্ভর করে।

এস. আই. (S. I.) বা এম. কে. এস. (M. K. S.) পদ্ধতিতে \text {K} এর একক \mathrm{Nm}^{2} \mathrm{coul}^{-2} 

K=\frac{1}{4 \pi €}  লেখা যায়।

এখানে (Epsilon) হলো চার্জ দুটি যে মাধ্যমে অবস্থিত ওই মাধ্যমের ভেদনযোগ্যতা বা সংক্ষেপে ভেদ্যতা (permittivity)

\therefore F=\frac{1}{4 \pi €} \frac{q_{1} q_{2}}{r^{2}} \quad \ldots \quad \ldots \quad \ldots \quad \text { (2.2) }

শূন্য বা বায়ু মাধ্যমের মধ্যে কুলম্বের সূত্র নিম্নরূপ (The Coulomb formula in zero or air medium):

 \therefore F_{0}=\frac{1}{4 \pi \varepsilon_{0}} \frac{q_{1} q_{2}}{r^{2}} \quad \ldots \quad \ldots . \quad \ldots . \quad(2.3)

এখানে F_{0} হলো শূন্য মাধ্যমে ক্রিয়াশীল বল এবং 0(Epsilon naught) শূন্যস্থানের ভেদনযোগ্যতা বা ভেদ্যতা\epsilon_{0}=8.854 \times 10^{-12} \text { কুলম্ব }^{2} / \text { निউটन }-\text { মিটার }^{2}\left(\frac{C^{2}}{N m^{2}}\right) 

এবং \frac{1}{4 \pi \epsilon_{0}}=9 \times 10^{9} \text { निউটन - মিটার }^{2} / \text { কুলম্ব }^{2} হয়।

অতএব, সমীকরণ হতে পাই,

  F_{0}=9 \times 10^{9} \frac{q_{1} q_{2}}{r^{2}}

কুলম্বের সূত্রের ভেক্টর রূপ (Vector form of Coulomb’s law)

যেহেতু দুটি চার্জের মধ্যে ক্রিয়াশীল বল একটি ভেক্টর রাশি, অতএব কুলম্বের সূ্ত্রকে ভেক্টররূপে প্রকাশ করা যায়। ভেক্টরের সাহায্যে সমীকরণ লেখা যায়,

     \vec{F}=\frac{1}{4 \pi \epsilon} \frac{q_{1} q_{2}}{r^{2}} \hat{n}

এখানে \hat{n} হলো চার্জদ্বয়ের সংযোজক সরলরেখা বরাবর একটি একক ভেক্টর। \hat{n} এর দিক \vec{F} এর দিক বরাবর। 

এখানে  \hat{n}=\frac{\vec{r}}{r}

\therefore \quad \vec{F}=\hat{n} F=\frac{\vec{r}}{r} F=\frac{1}{4 \pi \epsilon} \frac{q_{1} q_{2}}{r^{3}} \vec{r}

চার্জের একক (Unit of charge)

এস. আই. (S. I.) পদ্ধতিতে চার্জের একক কুলম্ব। সমীকরণ অনুসারে 1 কুলম্বের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা দেয়া যায়।

দুটি সমমানের চার্জ শূন্য মাধ্যমে 1 মিটার দূরে অবস্থান করে পরস্পরের ওপর 9 \times 10^{9} N বল প্রয়োগ করলে ওই চার্জ দুটির প্রত্যেককে একক চার্জ বলে এবং এই একক চার্জকে এক কুলম্ব বলে।

বলের প্রকৃতি (Nature of force)

বলের সমীকরণের ডান পাশের রাশিগুলোর মান জেনে Fএর মান নির্ণয় করা যায়। Fএর নির্ণীত মান যদি ধনাত্মক রাশি হয়, তবে বল হবে বিকর্ষণমূলক। কারণ একই জাতীয় দুটি রাশির গুণফল ধনাত্মক রাশি। আর Fএর নির্ণীত মান যদি ঋণাত্মক রাশি হয়, তবে বল হবে আকর্ষণমূলক কারণ দুটি বিপরীত রাশির গুণফল ঋণাত্মক রাশি।

  • শূন্য স্থানের তুলনায় অন্য যে কোনো মাধ্যমে দুটি তড়িৎ আধানের মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল কম হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

শূন্য স্থানের তড়িৎ ভেদ্যতার তুলনায় যে কোনো মাধ্যমের তড়িৎভেদ্যতা বেশি। দুটি তড়িৎ আধানের মধ্যে ক্রিয়াশীল বল, F=\frac{1}{4 \pi \epsilon} \frac{q_{1} q_{2}}{r^{3}}; এখানে এ হলো মাধ্যমের তড়িৎভেদ্যতা। এখন যেহেতু অন্য মাধ্যমের -এর মান বেশি, তাই চার্জদ্বয়ের মধ্যে ক্রিয়াশীল বল কম হবে।