10 Minute School
Log in

তড়িৎ বল (Electric force)

E প্রাবল্যের তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে স্থাপিত +q পরখ চার্জ (test charge) যদি F বল অনুভব করে তাহলে ওই বিন্দুতে ক্রিয়াশীল তড়িৎ বল

F = q E                 …                      …                         …        (2.8)

অর্থাৎ তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে স্থাপিত কোনো আধানের ওপর ক্রিয়াশীল বল বা তড়িৎ বল ওই বিন্দুতে প্রাবল্য এবং স্থাপিত আধানের গুণফলের সমান। ধনাত্মক আধান প্রাবল্যের অভিমুখে বল লাভ করে আর ঋণাত্মক আধান প্রাবল্যের বিপরীত দিকে বল লাভ করে। তড়িৎ বলের একক নিউটন।

স্থির তড়িৎ বল এবং মহাকর্ষ বলের তুলনা (Comparison between electrostatic force and gravitational force)

দুটি তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর মধ্যে স্থির তড়িৎ বল এবং মহাকর্ষ বল উভয়ই ক্রিয়া করে। এই দুটি বলের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নিম্নরূপ :

সাদৃশ্য (Similarity)

১. দুটি বলই বস্তু দুটির মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।

২. দুটি বলই সংরক্ষণশীল বল; অর্থাৎ এই বল দুটি দ্বারা কৃত কাজ পথের ওপর নির্ভরশীল নয়।

৩. দুটি বলই শূন্যস্থানে কাজ করে।

৪. দুটি বলই কেন্দ্রীয় বল (central force) এবং এই বল বস্তুদ্বয়ের কেন্দ্রবিন্দু দুটির সংযোগকারী সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।

বৈসাদৃশ্য (Contrast):

স্থির তড়িৎ বল মহাকর্ষ বল
১. এই বল অনেক বেশি শক্তিশালী। ১. এই বল খুবই দুর্বল।
২. আধানের প্রকৃতি অনুযায়ী এই বল আকর্ষণধর্মী

   বিকর্ষণধর্মী হতে পারে।

২. এই বল সবসময়ই আকর্ষণধর্মী হয়।
৩. এই বল সংশ্লিষ্ট মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। ৩. এই বল সংশ্লিষ্ট মাধ্যমের ওপর নির্ভর করে

    না।

তড়িৎ বলের উপরিপাতন নীতি (Superposition principle of electric force)

ধরা যাক, তিনটি ধনাত্মক চার্জ q_{1}, q_{2}q_{3} কাছাকাছি অবস্থান করছে [চিত্র ২.২]এখন আমরা q_{3}, চার্জের ওপর q_{1}, ও q_{2}, এর জন্য সৃষ্ট বিকর্ষণ বল বের করব। প্রথমে q_{1} চার্জের জন্য q_{3}-এর ওপর ক্রিয়াশীল বল \vec{F}_{31}-এর মান ও দিক নির্ণয় করি। এবার q_{2}, চার্জের জন্য q_{3}-এর ওপর বিকর্ষণ বল \vec{F}_{32} -এর মান ও দিক বের করি। এখন q_{3} -এর ওপরে লদ্ধি বা নিট বিকর্ষণ বল \vec{F}_{3}, হবে \vec{F}_{31}\vec{F}_{32} বলদ্বয়ের ভেক্টর যোগফল। 

অর্থাৎ, \vec{F}_{3} = \vec{F}_{31} + \vec{F}_{32}

তড়িৎ বলের উপরিপাতন নীতি 

লক্ষণীয় যে q_{3}, এর ওপর q_{1} এর ক্রিয়াশীল বল বের করার সময় q_{2} অনুপস্থিত ধরা হয়েছে। আবার q_{3} এর ওপর q_{2} এর ক্রিয়াশীল বল নির্ণয়ের সময় q_{1} অনুপস্থিত ধরা হয়েছে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে যে কোনো সংখ্যক চার্জের জন্য কোনো একটি চার্জের ওপর ক্রিয়াশীল নিট বল বের করা যায়।

জানার বিষয় (Things to know):

১। দুটি আধানের মধ্যে ক্রিয়ারত স্থির তড়িৎ বল অন্য কোনো আধানের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে না।

২। স্থির তড়িৎ বল সংরক্ষণশীল বল।

৩। তত্ত্বীয়ভাবে স্থির তড়িৎ বলের সীমা অসীম।

একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে গতিশীল আহিত কণার ওপর চৌম্বক ক্ষেত্র বল প্রয়োগ করলে আহিত কণার শক্তির কোনো পরিবর্তন হবে কী?

যদিও গতিশীল আহিত কণার ওপর চৌম্বক ক্ষেত্র বল প্রয়োগ করে, তবুও, কণার শক্তির কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ কার্যকর বল ব্যাসার্ধমুখী (radial) হওয়ায় এটি অকার্যকর বল অর্থাৎ বস্তুর ওপর কোনো কাজ করা হয় না। সুতরাং কণার শক্তিরও কোনো পরিবর্তন হবে না।

তড়িৎ ক্ষেত্র (Electric field)

অত্যন্ত ক্ষুদ্র মানের কাল্পনিক চার্জ যা অন্য কোনো চার্জের ওপর বল প্রয়োগ করে না, অর্থাৎ আশেপাশের চার্জকে প্রভাবিত করে না, তাকে পরখ চার্জ বলে।

বিখ্যাত বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে প্রথম অনুধাবন করেন যে ওই বিন্দু চার্জের চারদিকে এক ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয় যার ফলে ওই অঞ্চলে কোনো পরখ চার্জ স্থাপন করলে বল অনুভূত হয়।

কোনো একটি চার্জিত বস্তু এর চারদিকে যে অঞ্চল ব্যাপী তার প্রভাব বিস্তার করে সেই অঞ্চলকে ওই চার্জিত বস্তুর তড়িৎ ক্ষেত্র বলে।

তড়িৎ ক্ষেত্রের একক (Unit of electric field):

এস. আই. (S. I.) পদ্ধতিতে বলের একক নিউটন এবং চার্জের একক কুলম্ব। অতএব, তড়িৎ ক্ষেত্রের একক হবে নিউটন/কুলম্ব (N / C)। এ ছাড়া আরো একটি একক আছে। সেটি হলো ভোল্ট/মিটার (V / m)

তড়িৎ ফ্লাক্স (Electric flux) :

কোনো তল বা পৃষ্ঠের ভেতর দিয়ে যতগুলো তড়িৎ বলরেখা অতিক্রম করে তাকে তড়িৎ ফ্লাক্স বলে। একে \varphi_{E} দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

  1. তড়িৎ ক্ষেত্র এবং তলের অভিলম্ব যখন সমান্তরাল অবস্থানে থাকে তখন তড়িৎ ফ্লাক্স সর্বাধিক হয়।

     [চিত্র ২.৪ (ক)]

(ii) তড়িৎ ক্ষেত্র এবং তলের অভিলম্ব যখন সমকোণে থাকে তখন তড়িৎ ফ্লাক্স শূন্য হয় [চিত্র ২.৪ (খ)]

2.4a 2.4b 

                                                                                                          চিত্র ২.৪

একাধিক বিন্দু চার্জের জন্য কোনো বিন্দুতে সৃষ্ট তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য নির্ণয় করতে হলে ওই বিন্দুতে প্রতিটি চার্জের জন্য আলাদাভাবে প্রাবল্য নির্ণয় করতে হয় এবং নিট প্রাবল্য হবে আলাদাভাবে নির্ণীত তড়িৎ প্রাবল্যের ভেক্টর যোগফল। অতএব, N সংখ্যক চার্জ থাকলে এদের জন্য সৃষ্ট মোট তড়িৎ প্রাবল্য হবে

\vec{E}=\vec{E}_{1}+\vec{E}_{2}+\vec{E}_{3}+\ldots \ldots . \ldots . \ldots . \vec{E}_{n}=\sum \vec{E}_{n} \ldots  (2.9)

“তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে প্রাবল্য 10 এস. আই. একক।” উক্ত উক্তি দ্বারা বুঝায় যে তড়িৎ ক্ষেত্রের ওই  বিন্দুতে 1 কুলম্ব ধন চার্জের উপর 10 নিউটন বল ক্রিয়া করবে।

সুষম তড়িৎ ক্ষেত্র (Uniform electric field)

কোনো তড়িৎ ক্ষেত্রের সকল বিন্দুতে প্রাবল্য যদি একই হয় তবে ওই তড়িৎ ক্ষেত্রকে সুষম তড়িৎ ক্ষেত্র বলে। অন্য কথায় কোনো তড়িৎ ক্ষেত্রের মান ও দিক সর্বত্র সমান হলে তাকে সুষম তড়িৎ ক্ষেত্র বলে [চিত্র ২.৫]। চিত্রে সমান ফাঁকবিশিষ্ট সমান্তরাল বল রেখা দ্বারা সুষম তড়িৎ ক্ষেত্র বুঝানো হয়েছে।

2.5

তড়িৎ বলরেখা (Electric line of force)

তড়িৎ ক্ষেত্রে একটি মুক্ত ধনাত্মক চার্জ স্থাপন করলে এটি যে পথে পরিভ্রমণ করে তাকে তড়িৎ বলরেখা বলে। একে তড়িৎ ক্ষেত্র রেখাও বলে। তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে বল রেখার সাথে অঙ্কিত স্পর্শক ওই বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্যের দিক নির্দেশ করে। বলরেখার সাথে লম্বভাবে অবস্থিত একক ক্ষেত্রফলের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত বলরেখার সংখ্যা প্রাবল্যের মানের সমানুপাতিক।

ধর্ম :

১। তড়িৎ বলরেখা খোলা বক্র রেখা।

২। বলরেখাগুলো পরস্পরের ওপর আড়াআড়িভাবে পার্শ্বচাপ দেয়।

৩। দুটি বলরেখা কখনো পরস্পরকে ছেদ করে না।

৪। বলরেখাগুলো ধনাত্মকভাবে চার্জিত পৃষ্ঠ হতে বের হয়ে ঋণাত্মক পৃষ্ঠে শেষ হয়।

৫। বলরেখাগুলো স্থিতিস্থাপক সুতার মতো দৈর্ঘ্য বরাবর সঙ্কুচিত হওয়ার চেষ্টা করে।

৬। তড়িৎ ক্ষেত্রে বলরেখাগুলি ঘন সন্নিবিষ্ট হলে সেখানে তড়িৎ প্রাবল্য বৃদ্ধি পায় এবং বলরেখাগুলির ঘনত্ব কম হলে তড়িৎ প্রাবল্য হ্রাস পায়।

৭। একই পরিবাহীতে কোনো তড়িৎ বলরেখারই শুরু ও শেষ হয় না।

  • কোনো বলরেখা শুরু ও শেষ কি একই পরিবাহীতে হতে পারে? ব্যাখ্যা কর।

কোনো পরিবাহীর এক অংশ ধনাত্মক ও অপর অংশ ঋণাত্মক আধানে আহিত হলেই কেবল কোনো বলরেখার শুরু ও শেষ একই পরিবাহীতে হতে পারে। তবে কোনো আহিত পরিবাহীর আধান তার পৃষ্ঠতলে সাধারণত ছড়িয়ে থাকে; ফলে পরিবাহীর এক অংশ ধনাত্মক ও অপর অংশ ঋণাত্মক আধানে আহিত হতে পারে না। সুতরাং কোনো বলরেখাই একই পরিবাহীতে শুরু ও শেষ হতে পারে না।

তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য বা তড়িৎ প্রাবল্য (Electric field intensity or electric intensity):

তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক চার্জ স্থাপন করলে সেটি যে বল অনুভব করে তাকে ওই বিন্দুর তড়িৎ প্রাবল্য বলে। অর্থাৎ কোনো বিন্দুতে একক আধান বা চার্জের ওপর ক্রিয়াশীল বলকে তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য বলা হয়। একে ক্ষেত্র প্রাবল্যও (field intensity) বলে। তড়িৎ প্রাবল্যের একক নিউটন/কুলম্ব।

Image চিত্র : ২.৬

তড়িৎ ক্ষেত্র \vec{E} দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এটি ভেক্টর রাশি। তড়িৎ ক্ষেত্র যেহেতু ভেক্টর রাশি, অতএব এর দিক ও মান রয়েছে। E-এর দিক হলো একটি ধনাত্মক পরখ চার্জের ওপর ক্রিয়াশীল বলের দিক [চিত্র ২.৬(ক)], ঋণাত্মক চার্জের ক্ষেত্রে \vec{E}-এর দিক \vec{F}-এর বিপরীতমুখী হয় [চিত্র ২.৬(খ)]। তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে স্থাপিত পরখ চার্জ q{0}-এর ওপর ক্রিয়াশীল বল F হলে, ওই বিন্দুতে তড়িৎ প্রাবল্য হবে,

\vec{E}=\frac{\vec{F}}{q_{0}} \quad \ldots \quad \ldots . \quad \ldots (2.10)

\therefore \vec{F}=q_{0} \vec{E} …. …. (2.11)

সমীকরণ (2.11) তড়িৎ প্রাবল্য এবং তড়িৎ বলের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে।

তড়িৎ ক্ষেত্রে বলের মানকে চার্জের মান দ্বারা ভাগ করলে ভাগফলই হবে তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্যের বা তড়িৎ ক্ষেত্রের মান।