প্লাজমা ও সিরামের মধ্যে পার্থক্য | Difference between Plasma and Serum
প্লাজমা ও সিরামের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Plasma and Serum)
প্লাজমা (Plasma) | সিরাম (Serum) |
১. স্বাভাবিক রক্তের জলীয় অংশকে প্লাজমা বলে। | ১. তঞ্চিত রক্তের তঞ্চন পিন্ড থেকে নিঃসৃত জলীয় অংশকে সিরাম বলে। |
২. এতে বিভিন্ন প্রকার রক্ত কণিকা থাকে। | ২. এতে রক্ত কণিকা থাকে না। |
৩. এতে ফাইব্রিনোজেন থাকে। | ৩. এতে ফাইব্রিনোজেন থাকে না। |
৪. এর তঞ্চন ধর্ম উপস্থিত। | ৪. এর তঞ্চন ধর্ম অনুপস্থিত। |
৫. রক্তবাহিকার গহ্বর ও হৃৎপ্রকোষ্ঠে অবস্থান করে। | ৫. সাধারণ অবস্থায় দেহের মধ্যে থাকে না। |
লসিকা বা লিঙ্ক (Lymph)
টিস্যু গঠণকারী কোষের ফাঁকে ফাঁকে অবস্থিত বর্ণহীন তরল পদার্থকে লসিকা (lymph ; ল্যাটিন clear water) বলে। ৪-৮ লিটার তরল পদার্থ ও রক্তপ্রোটিন চারপাশের টিস্যু কোষের ফাঁকে ফাঁকে লসিকা হিসেবে অবস্থান করে।
লসিকার উৎপত্তি (Origin of lymph)
১০% এর মতো রক্তরস (প্লাজমা) কৈশিকজালিকা থেকে বেরিয়ে দেহ কোষের চারদিকে ইন্টারস্টিশিয়াল তরল (interstitial fluid) হিসেবে অবস্থান করে। এ তরল লসিকানালিকায় প্রবেশ করে লসিকায় পরিণত হয়। লসিকা উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে লিম্ফোজেনেসিস (lymphogenesis) বলে।
লসিকার উপাদান (Lymphatic material):
লসিকায় প্রধানত দু’ধরণের উপাদান দেখা যায়, যথা- কোষ উপাদান ও কোষবিহীন উপাদান।
কোষ উপাদান (Cellular material) :
লসিকায় প্রধানত শ্বেত কণিকার লিম্ফোসাইট থাকে। প্রতি কিউবিক মিলিমিটার লসিকায় ৫০০-৭৫,০০০ লিম্ফোসাইট থাকতে পারে।
কোষবিহীন উপাদান (Cellless material) :
লসিকায় অবস্থিত কোষবিহীন উপাদানগুলো রক্তরসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। লসিকায় প্রায় ৪%-ই পানি এবং ৬% কঠিন পদার্থ বিদ্যমান।
- প্রোটিন : প্রধানত অ্যালবুনিয়াম, গ্লোবিউলিন, ফাইব্রিনোজেন, এনজাইম, অ্যান্টিবডি ইত্যাদি থাকে।
- লিপিড : প্রধানত কাইলোমাইক্রন হিসেবে থাকে যাতে ট্রাইগ্লিসারাইড ও ফসফোলিপিড উপস্থিত। চর্বিযুক্ত খাবার খেলে লসিকায় ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং লসিক দুধের মতো সাদা দেখায়। এ ধরণের লসিকাকে কাইল (chyle) বলে।
- রেচন বর্জ্য : ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি পাওয়া যায়।
- অন্যান্য বস্তু : জীবানু, ক্যান্সার কোষ, দ্রবীভূত \mathrm{CO}_{2} ইত্যাদিও পাওয়া যায়।
প্লীহা (spleen), টনসিল (tonsil), অস্থিমজ্জা (bone marrow), থাইমাস (thymas) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য লসিকা গ্রন্থি। মানবদেহে ঘাড়ে, বগলে, কুচকিতে অধিক সংখ্যক লসিকা গ্রন্থি থাকে। মানবদেহে লসিকা গ্রন্থির সংখ্যা প্রায় ৪০০-৭০০।
প্লীহা (Spleen)
মানবদেহের সবচেয়ে বড় লসিকা গ্রন্থি। কালচে বর্ণের নরম প্লীহাকে রক্তের রিজার্ভার ব্লাডব্যাংক বলা হয় এবং এটি প্রায় ৩০০ মিলি লিটার রক্ত জমা রাখে। রক্তের প্রধান ছাঁকুনি হিসেবে কাজ করে। অধিকাংশ লোহিত রক্তকণিকা প্লীহায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এটি জীবাণু ধ্বংস করে রোগ প্রতিরোধে অংশগ্রহণ করে।
টনসিল (Tonsil)
মুখ হা করে গলার ভিতরের ডান ও বাম দিকের ছোট বলের মতো যে গঠন দেখা যায় তার নাম টনসিল। টনসিল এক ধরনের লসিকা গ্রন্থি। জীবাণু আক্রমণ এর বিরুদ্ধে প্রথম সারির প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এর প্রচুর পরিমাণে লিম্ফোসাইট সৃষ্টি করে যারা মুখে প্রবেশকৃত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তবে অনেক সময় টনসিল নিজে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ফুলে যায়। একে টনসিলাইটিস (tonsillitis) বা টনসিলের প্রদাহ বলে।
মানুষ ফাইলেরিয়া কৃমি (Wuchereria bancrofti) দ্বারা আক্রান্ত হলে লসিকানালি ও লসিকা গ্রন্থিগুলোতে লসিকা প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট অঙ্গের লসিকা নালী ও গ্রন্থিগুলো অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে যায়। এ রোগকে গোন রোগ বা এলিফ্যানটিয়াসিস বলে।
রক্ত ও লসিকার মধ্যে পার্থক্য (Difference between Blood and Lymph)
বৈশিষ্ট্য | রক্ত | লসিকা |
১. বর্ণ | লাল বর্ণের পরিবহন টিস্যু। | বর্ণহীন পরিবহন টিস্যু। |
২. প্রবাহ | রক্তনালিতে সুনির্দিষ্ট চাপে প্রবাহিত হয়। | লসিকানালিতে চাপহীন প্রবাহিত হয়। |
৩. গঠন উপাদান | প্লাজমা, লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং নিয়ে গঠিত। | প্লাজমা ও শ্বেত রক্তকনিকা নিয়ে গঠিত। |
৪. হিমোগ্লোবিন | হিমোগ্লোবিন বিদ্যামান। | হিমোগ্লোবিন অনুপস্থিত। |
৫. প্রোটিন ইত্যাদি | অধিক পরিমাণ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসযুক্ত। | অল্প পরিমাণ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসযুক্ত । |
৬. পরিবহন | রক্তের মাধ্যমে শ্বসন গ্যাস ও খাদ্যের (শর্করা ও আমিষ) পরিবাহিত হয়। | লসিকার মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ ও খাদ্যসার (লিপিড) পরিবাহিত হয়। |