10 Minute School
Log in

আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein 1879–1955)

আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein)

আজ যদি বিশ্বের যেকোনো দেশের বিজ্ঞানমনস্ক কোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়, “বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানী কে?” স্বাভাবিক উত্তর পাওয়া যাবে, “আলবার্ট আইনস্টাইন(Albert Einstein)” খুব কম সংখ্যক বিজ্ঞানীই আইনস্টাইনের মতো তাঁর মৌলিক কাজের সংখ্যা, বৈচিত্র্য এবং অপরিসীম গুরুত্ব বিবেচনায় এত বিখ্যাত হতে পেরেছেন।

আইনস্টাইন (Einstein) তাঁর বহু বৈচিত্র্যময় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত তার আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য। আপেক্ষিক তত্ত্বের মধ্যে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের জন্য তিনি সমধিক পরিচিত। তিনি ব্রাউনীয় গতি, আলোক তড়িৎ ক্রিয়া, আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব এবং শক্তি ও জড়তার সূত্র ইত্যাদি জগৎ বিখ্যাত সূত্রের আবিষ্কারক। জার্মানিতে জন্ম হওয়া সত্ত্বেও তিনি 1901 সালে সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। শেষ জীবনে আইনস্টাইন (Einstein) আমেরিকাতে বসবাস করেন।

albert-einstein
আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein 1879–1955)

1905 সালে যখন তাঁর বয়স মাত্র 23 বছর তখন তিনি আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব প্রকাশ করেন। আমাদের মৌলিক চিন্তা-চেতনা বা বিশ্বাসের অনেক কিছুরই পরিবর্তন সাধন করেছে এই আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব। পারমাণবিক বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে আপেক্ষিক তত্ত্বের ভূমিকা অপরিসীম।

আইনস্টাইনের মতে স্থান, কাল, দৈর্ঘ্য, কোনোটিই পরম রাশি বা নিরপেক্ষ নয়। এগুলো পরিবর্তনশীল। চিরায়ত বলবিজ্ঞানে ভর এবং শক্তি স্বাধীন হলেও আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব অনুসারে এরা সমতুল্য (Equivalent)। এই তত্ত্ব অনুসারে আমরা জানতে পারি যে ভরসম্পন্ন কোনো বস্তুই আলোর বেগ বা তার বেশি বেগে ছুটতে পারে না, তা যত বলই বস্তুর ওপর প্রয়োগ করা হোক না কেন। আপেক্ষিকতার ভর-শক্তির সমতা সূত্র, 𝐸=𝑚 𝑐 2  তার আবিষ্কার। 1915 সালে তিনি আপেক্ষিকতার সার্বিক তত্ত্ব প্রদান করেন। তাঁর আপেক্ষিকতার তত্ত্ব পদার্থবিজ্ঞানে দ্বিতীয় বৃহত্তম তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত।

আইনস্টাইনের আরেকটি অমর সৃষ্টি হচ্ছে আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার ব্যাখ্যা প্রদান। কোনো ধাতব পদার্থের ওপর উপযুক্ত কম্পাঙ্ক বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক আপতিত হলে ওই পদার্থ হতে ইলেকট্রন নির্গত হয়। এই ক্রিয়াকে আলোক তড়িৎ ক্রিয়া বলে। তিনি 1921 সালে আলােক তড়িৎ ক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য নােবেল পুরস্কার পান। 1905 খ্রিস্টাব্দে। আলোক তড়িৎ ক্রিয়া ব্যাখ্যার জন্য আইনস্টাইন প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রয়োগ করেন।

কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুসারে যে কোনো চরণ অসংখ্য ফোটনের সমষ্টি অর্থাৎ বিকিরণ ফোটনের একটি ঝাঁক বা ঝরনা। প্রতিটি ফোটনের শক্তি হচ্ছে ।ℎ𝜗৷ এখানে h হলো প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক এবং 𝜗 হচ্ছে ফোটনের কম্পাঙ্ক। এখন একটি ফোটন কোন ধাতব পাতের পরমাণুর ওপর আপতিত হলে ফোটনের সাথে পরমাণুর সংঘাত হবে এবং এই সংঘাত স্থিতিস্থাপক সংঘাত। এই সংঘাতের ফলে পরমাণুস্থ একটি ইলেকট্রন ফোটনের সমুদয় শক্তি গ্রহণ করবে এবং কোনো শক্তি স্থানান্তরিত হবে না।

এখন ইলেকট্রনটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের সঙ্গে আবদ্ধ থাকায় এই শক্তির কিছু অংশ ইলেকট্রনকে নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ হতে মুক্ত করতে ব্যয় হবে এবং অবশিষ্ট শক্তি নিয়ে ইলেকট্রন নির্গত হবে। এটিই আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার ব্যাখ্যা। আইনস্টাইনের ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর ভিত্তি করে এক শ’ বছর পর 2016 সালে 11ই ফেব্রুয়ারি একদল বিজ্ঞানী (LSC) মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সরাসরি শনাক্ত করতে সক্ষম হন।