10 Minute School
Log in

নিউটন (Newton, 1642–1727)

নিউটন (Newton, 1642–1727)

বস্তু কেন মাটিতে পড়ে ? মহাবিশ্বে সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদির গতিবিধি সম্পর্কেও প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের কৌতূহল ছিল। সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত মানুষের ধারণা ছিল যে বস্তুর মাটিতে পতিত হওয়া বস্তুর স্বাভাবিক ঘটনা। তিনি স্বর্গীয় বস্তুসমূহের গতিবিধি সম্পর্কে প্রথমে মতবাদ ব্যক্ত করেন। দ্বিতীয় শতাব্দীর দিকে গ্রিক জ্যোতির্বিদ টলেমি (Ptolemy) ভূ-কেন্দ্রিক তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। এ তত্ত্ব অনুসারে স্থির পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র আবর্তনরত।

পঞ্চদশ শতাব্দীতে জ্যোতির্বিদ কোপারনিকাসসূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব‘ দেন। এই তত্ত্বে সূর্যকে মহাজগতের কেন্দ্রে স্থির বিবেচনা করা হয়েছে এবং অন্যান্য গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে। কোপারনিকাসের ধারণা ছিল গ্রহগুলোকে সূর্যের চারদিকে ঘুরতে বাধ্য করে চৌম্বক বল। পঞ্চদশ শতাব্দীতে কেপলার গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথের বিভিন্ন উপাত্ত বিশ্লেষণ করে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, গ্রহগুলোর গতিপথ বৃত্তাকার নয়, উপবৃত্তাকার।

sir-isaac-newton
নিউটন (Newton, 1642–1727)

1658 খ্রিস্টাব্দে নিউটন বল সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য তার বিখ্যাত পরীক্ষাটি করেন। তিনি বাতাসের অনুকূলে ও প্রতিকূলে লাফ দিয়ে দূরত্বের পার্থক্য পর্যবেক্ষণ করেন। 1665 সালে ক্যামব্রিজে পড়ার সময় তিনি মহাকর্ষ বলের তত্ত্ব, ক্যালকুলাসআলাোর বর্ণালি এই তিনটি সূত্র আবিষ্কার করেন। গ্রহপুঞ্জের গতির মধ্যে কেপলার কিছু নিয়মনীতি খুঁজে পান এবং এই নিয়মনীতিগুলোকে তিনটি সূত্রের সাহায্যে প্রকাশ করেন। এগুলো কেপলারের সূত্র নামে পরিচিত।

কিন্তু কোপারনিকাসের চৌম্বক বলের ধারণার সঙ্গে কেপলার কোনোভাবেই উপবৃত্তাকার প্রকল্প মিলাতে পারছিলেন না। সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহগুলোর আবর্তন করার সন্তোষজনক কোনো কারণ তিনি দিতে পারেননি। তাছাড়া একটি বস্তু কেন মাটিতে পতিত হয় তার ব্যাখ্যাও কেপলারের সূত্র থেকে পাওয়া যায় না।

এ সকল প্রশ্নের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় 1687 খ্রিস্টাব্দে স্যার আইজ্যাক নিউটনের ‘ফিলোসসাফিয়া ন্যাচারালাস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকস’ (Pltilosopline Naturalis Principin Matlientatics) গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর। তিনি এই বইয়ে বস্তুপিণ্ডগুলো কী করে চলাচল করে, গাণিতিক বিশ্লেষণসহ তার তত্ত্ব প্রকাশ করেন। এ ছাড়াও তিনি মহাকর্ষীয় বিধি উপস্থাপন করেন। তিনি দেখান যে উপবৃত্তাকার কক্ষে চন্দ্রের পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার এবং সূর্যের চারদিকে গ্রহগুলোর উপবৃত্তাকার পথে ভ্রমণের কারণও এই মহাকর্ষ।

আলোকবিদ্যাগণিতেও নিউটনের অবদান অপরিসীম। তিনি বলবিদ্যার এবং লেন্সের সূত্রের প্রবর্তক এবং প্রতিফলক টেলিস্কোপ-এরও আবিষ্কারক।

তিনি আলোর কণিকা তত্ত্বের প্রবক্তা। এই তত্ত্ব অনুযায়ী যেকোনো দীপ্ত বস্তু (Luminous body) হতে অনবরত অসংখ্য ক্ষুদ্র কণিকা ঝাঁকে ঝাঁকে নির্গত হয়। এই কণিকা তত্ত্বের সাহায্যে তিনি আলোর বিভিন্ন গুণাগুণ সম্পৰ্কীয় বিভিন্ন ঘটনা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন। আলোর সরলপথে গমন, আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ গুণাবলি এ তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়। তাঁর অবদান এত সুদূরপ্রসারী যে সনাতনী পদার্থবিজ্ঞানকে নিউটনীয় পদার্থবিজ্ঞান বলা হয়।