স্থিতিস্থাপকতার বিভিন্ন গুণাঙ্ক
স্থিতিস্থাপকতার বিভিন্ন গুণাঙ্ক (Elastic Moduli)
হুকের সূত্র থেকে আমরা পাই, স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে কোনো বস্তুর পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত একটি ধ্রুব সংখ্যা । এ ধ্রুবকই বস্তুর উপাদানের স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক ।
সংজ্ঞা : স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে কোনো বস্তুর পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত একটি ধ্রুব সংখ্যা । এ ধ্রুব সংখ্যাকে বস্তুর উপাদানের স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক বলে ।
স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক, E=\frac{\text { পীড়ন }}{\text { বিকৃতি }}
রাশি : পীড়ন ও বিকৃতি স্কেলার রাশি বলে স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক একটি স্কেলার রাশি ।
মাত্রা : যেহেতু বিকৃতির কোনো মাত্রা নেই, সুতরাং স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের মাত্রা হবে পীড়নের মাত্রা ।
অর্থাৎ \frac{\text { বল }}{\text { ক্ষেত্রফল }} এর মাত্রা অর্থাৎ M L^{-1} T^{-2}
একক: যেহেতু বিকৃতির কোনো একক নেই, সুতরাং স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের একক হবে পীড়নের একক অর্থাৎ, \mathrm{N} \mathrm{m}^{-2} \text { বা, } P a
বিকৃতি ও পীড়নের বিভিন্নতার জন্য স্থিতিস্থাপকতার গুণাঙ্ক বিভিন্ন রকমের হয় ।
ইয়ং গুণাঙ্ক বা দৈর্ঘ্য গুণাঙ্ক (Young’s modulus), Y
সংজ্ঞা : স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে বস্তুর দৈর্ঘ্য পীড়ন ও দৈর্ঘ্য বিকৃতির অনুপাত একটি ধ্রুব সংখ্যা । এই ধ্রুব সংখ্যাকে বস্তুর উপাদানের দৈর্ঘ্য গুণাঙ্ক বা ইয়ং গুণাঙ্ক বলে । একে Y দ্বারা প্রকাশ করা হয় ।
ইয়ং গুণাঙ্ক Y=\frac{\text { দৈর্ঘ্য পীড়ন }}{\text { দৈর্ঘ্য বিকৃতি }}
ইয়ং গুণাঙ্কের মান : A প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল ও L দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট একটি তার কোনো দৃঢ় অবলম্বন থেকে ঝুলিয়ে যদি তারটির নিচের প্রান্তে লম্বভাবে \text { F } বল প্রয়োগ করা হয় তাহলে তারের দৈর্ঘ্য কিছুটা বৃদ্ধি পাবে । তারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি l হলে,
\text { দৈর্ঘ্য বিকৃতি }=\frac{\text { দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি }}{\text { আদি দৈর্ঘ্য }}=\frac{l}{L}
এবং দৈর্ঘ্য পীড়ন \frac{F}{A}
সুতরাং, Y=\frac{{ }^{\frac{F}{A}}}{\frac{A}{L}}=\frac{F L}{A l}
যদি তারের নিচের প্রান্তে M ভর ঝুলানো হয় তাহলে, \mathrm{F}=\mathrm{Mg}, এখানে, \mathrm{g}= অভিকর্ষজ ত্বরণ । আবার তারটির ব্যাসার্ধ যদি \mathrm{r}= হয় তাহলে A=\pi r^2। সেক্ষেত্রে,
Y=\frac{M g L}{\pi r^{2} l}যদি A = 1 একক এবং l = L হয়, তবে সমীকরণ অনুসারে F = Y হয়।
সুতরাং, একক প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট কোনো তারের দৈর্ঘ্য বরাবর যে বল প্রয়োগ করলে দৈর্ঘ্য বিকৃতি হয় একক হয় অর্থাৎ তারটির দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি আদি দৈর্ঘ্যের সমান হয় তাই ইয়ং গুণাঙ্ক ।
ইয়ং গুণাঙ্কের মাত্রা ও একক : যেহেতু বিকৃতির কোনো মাত্রা নেই, সুতরাং Y -এর মাত্রা পীড়নের মাত্রার অনুরূপ হবে অর্থাৎ \left[\mathrm{ML}^{-1} \mathrm{~T}^{-2}\right] এবং এসআই পদ্ধতিতে এর একক \mathrm{N} \mathrm{m}^{-2} বা, \mathrm{Pa} ।
তাৎপর্য : ইস্পাতের ইয়ং গুণাঙ্ক 2 \times 10^{11} \mathrm{~N} \mathrm{~m}^{-2} বলতে বোঝায় 1 \mathrm{~m}^{2} প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট ইস্পাতের দণ্ডের দৈর্ঘ্য বরাবর 2 \times 10^{11} \mathrm{~N} বল প্রয়োগ করা হলে এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি আদি দৈর্ঘ্যের সমান হবে ।
আয়তন গুণাঙ্ক (Bulk modulus), B
সংজ্ঞা : স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে বস্তুর আয়তন পীড়ন ও আয়তন বিকৃতির অনুপাত একটি ধ্রুব সংখ্যা। এ ধ্রুব সংখ্যাকে বস্তুর উপাদানের আয়তন গুণাঙ্ক বলে ।
আয়তন গুণাঙ্ককে B দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ
\text { আয়তন গুণাঙ্ক, } B=\frac{\text { আয়তন পীড়ন }}{\text { আয়তন বিকৃতি }}মান : যদি V আয়তনের কোনো বস্তুর উপর চার দিক থেকে লম্বভাবে F বল প্রয়োগ করা হয় এবং তাতে যদি বস্তুর আয়তন v হ্রাস পায়, তাহলে আয়তন বিকৃতি =v / V । যদি বস্তুটির পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল A হয় তাহলে
আয়তন পীড়ন =F / A
সুতরাং B=\frac{\frac{F}{A}}{\frac{v}{V}}=\frac{F V}{A v}
বা, B=\frac{p V}{v} \quad\left[\therefore \frac{F}{A}=\right. চাপ, \left.p\right]
কঠিন, তরল বা গ্যাস সবারই আয়তন থাকায় আয়তন গুণাঙ্ক পদার্থের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য ।
মাত্রা ও একক : আয়তন গুণাঙ্কের মাত্রা ও একক ইয়ং-এর গুণাঙ্কের মাত্রা ও এককের অনুরূপ ।
তাৎপর্য : পারদের আয়তন গুণাঙ্ক 2.8 \times 10^{10} \mathrm{~N} \mathrm{~m}^{-2} বলতে বোঝায় যে পারদের একক আয়তন বিকৃতি সৃষ্টি করতে এর প্রতি 1 \mathrm{~m}^{2} ক্ষেত্রফলের ওপর 2.8 \times 10^{10} \mathrm{~N} বল প্রয়োগ করতে হয় ।
সংনম্যতা (Compressibility) : স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে আয়তন বিকৃতি ও আয়তন পীড়নের অনুপাতকে সংনম্যতা বলে।
\text { অর্থাৎ সংনম্যতা }=\frac{\text { আয়তন বিকৃতি }}{\text { আয়তন পীড়ন }}=\frac{1}{\frac{\text { আয়তন পীড়ন }}{\text { আয়তন বিকৃতি }}}=\frac{1}{\text { আয়তন গুণাঙ্ক }}=\frac{1}{B}
অর্থাৎ সংনম্যতা হচ্ছে আয়তন গুণাঙ্কের বিপরীত রাশি । আয়তন গুণাঙ্ককে তাই কখনো কখনো অসংনম্যতা (incompressibility) বলা হয় ।
দৃঢ়তার গুণাঙ্ক বা ব্যবৰ্তন গুণাঙ্ক বা মোড় গুণাঙ্ক (Modulus of Rigidity), n
সংজ্ঞা : স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে বস্তুর ব্যবর্তন বা আকার পীড়ন ও ব্যবর্তন বা আকার বিকৃতির অনুপাত একটি ধ্রুব সংখ্যা । এই ধ্রুব সংখ্যাকে বস্তুর উপাদানের দৃঢ়তার গুণাঙ্ক বলে ।
দৃঢ়তার গুণাঙ্ককে n দ্বারা প্রকাশ করা হয় ।
মান : কোনো বস্তুর পৃষ্ঠে স্পর্শক বরাবর বল প্রয়োগ করার ফলে যদি ব্যবৰ্তন কোণ \theta উৎপন্ন হয় এবং ঐ পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল A হয় তাহলে,
দৃঢ়তার গুণাঙ্ক, n=\frac{\text { ব্যবর্তন পীড়ন }}{\text { ব্যবর্তন বিকৃতির }}=\frac{F / A}{\theta}
বা, n=\frac{F}{A \theta}
এখন, \theta=1 একক এবং A=1 একক হলে, F=n হয় ।
অর্থাৎ 1 রেডিয়ান ব্যবৰ্তন কোণ সৃষ্টি করতে বস্তুর পৃষ্ঠের প্রতি একক ক্ষেত্রফলের উপর যতটা স্পর্শকীয় বল প্রয়োগ করতে হয় তাই ঐ বস্তুর দৃঢ়তার গুণাঙ্ক ।
যেহেতু শুধু কঠিন পদার্থেরই নির্দিষ্ট আকার থাকে, সেজন্য দৃঢ়তার গুণাঙ্ক শুধু কঠিন পদার্থেরই বৈশিষ্ট্য ।
মাত্রা ও একক : দৃঢ়তার গুণাঙ্কের মাত্রা ও একক ইয়ং-এর গুণাঙ্কে মাত্রা ও এককের অনুরূপ ।
তাৎপর্য : অ্যালুমিনিয়ামের দৃঢ়তার গুণাঙ্ক 2.6 \times 10^{10} \mathrm{~N} \mathrm{~m}^{-2} বলতে আমরা বুঝি যে, একটি অ্যালুমিনিয়ামের ঘনকের আকৃতি পরিবর্তন করে 1 রেডিয়ান কোণ উৎপন্ন করতে ঐ ঘনকের পৃষ্ঠের প্রতি একক বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের ওপর 2.6 \times 10^{10} \mathrm{~N} স্পর্শকীয় বল প্রয়োগ করতে হবে ।