তড়িৎ বিশ্লেষণ ও ফ্যারাডের সূত্র (Electrolysis and Faraday’s Law)
প্রশ্নঃ ইলেক্ট্রনীয় পরিবাহী এবং ইলেকট্রোলাইটিক পরিবাহীর মধ্যে পার্থক্য লিখ। অথবা, ধাতব পরিবাহী এবং তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে পার্থক্য লিখ ।(Q. Write the difference between electronic conductor and electrolytic conductor. Or, write the difference between metalic conductor and electrolytic analysis)
উত্তরঃ
ধাতব পরিবাহী এবং তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে পার্থক্যঃ
ধাতব পরিবাহী | তড়িৎ বিশ্লেষ্য পরিবাহী |
ইলেকট্রন প্রবাহের ফলে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। অণু পরমাণুর স্থানান্তর হয় না। | আয়নের চলাচলে তড়িৎ পরিবাহিতা ঘটে। |
তড়িৎ প্রবাহের সময় রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে না। শুধুমাত্র তাপের উদ্ভব ঘটে। এটি ভৌত পরিবর্তন। | তড়িৎ প্রবাহের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে এবং তাপের উদ্ভব ঘটে। |
ইলেক্ট্রন প্রবাহের বিপরীত দিককে বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক হিসেবে ধরে নেয়া হয়। | তড়িৎ প্রবাহ ঘটে অ্যানোড থেকে ক্যাথোডের দিকে। |
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পরিবাহিতা হ্রাস পায়। কারণ এর ফলে রোধ বৃদ্ধি পায়। | তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়। |
চাপের কোন প্রভাব নেই। | বাহ্যিক চাপ বাড়লে পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়। |
ওহ্মের সূত্র প্রযোজ্য। | ফ্যারাডের সূত্র প্রযোজ্য। |
প্রশ্নঃ তড়িৎ বিশ্লেষণ, অ্যানোড (জারণ ঘটে) ও ক্যাথোড (বিজারণ ঘটে) বলতে কী বুঝ?(What is electrolysis, anode and cathode?)
উত্তরঃ
তড়িৎ বিশ্লেষণ (Electrolysis): যে প্রক্রিয়ায় বিগলিত বা কোন উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থার কোন তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে সেই যৌগের বিয়োজনের মাধ্যমে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয় তাকে তড়িৎ বিশ্লেষণ বলে।
অ্যানোড ও ক্যাথোড (Anode and Cathode): দুটি তড়িৎদ্বারের মধ্যে যে তড়িৎদ্বারে জারণ ঘটে তাকে অ্যানোড এবং যে তড়িৎদ্বারের বিজারণ ঘটে তাকে ক্যাথোড বলে।
প্রশ্নঃ বিশুদ্ধ পানি ও বিশুদ্ধ HCI তড়িৎবিশ্লেষ্য নয় কিন্তু এই দুটির মিশ্রণ তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ কেন?(Pure water and pure HCl are not electrolyte but why is the mixture of these two strong-electrolyte?)
উত্তরঃ
কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে আয়নের উপস্থিত আবশ্যিক । বিশুদ্ধ পানিতে খুব সামান্য পরিমাণ H^+ ও OH^- আয়ন থাকে বলে বিশুদ্ধ পানি তড়িৎ পরিবহন করে না। তাই বিশুদ্ধ পানি তড়িৎ বিশ্লেষ্য নয়। অনুরূপভাবে, বিশুদ্ধ HCl সমযোজী যৌগ বলে বিশুদ্ধ HCl ও তড়িৎ পরিবহন করে না । HCl একটি পোলার সমযোজী যৌগ।
কিন্তু পানির মধ্যে বিশুদ্ধ HCl যোগ করলে পোলার HCl অণু, পানির অণুর দ্বারা দ্রাবকায়িত হয়ে স্থায়ী H_3O^+ ও CI^- আয়ন সৃষ্টি করে।
ফলে দ্রবণ \left[\mathrm{HCl}+\mathrm{H}_{2} \mathrm{O} \leftrightharpoons \mathrm{H}_{3} \mathrm{O}^{+}+\mathrm{CI}^{-}\right] উত্তম পরিবাহী হয়। এ কারণে HCl এর জলীয় দ্রবণ তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ।
প্রশ্ন: লঘু NaCl দ্রবণ, লঘু CH^3COOH দ্রবণ, লঘু HCl দ্রবণ ও লঘু চিনির দ্রবণের পরিবাহিতার ক্রম এর ব্যাখ্যা কর। (Explain the order of conductivity of light NaCl solution, light CH₃COOH, light HCl solution and light sugar solution.)
উত্তর:
লঘু HCl ও লঘু NaCl তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ। এরা দ্রবণে সম্পূর্ণ বিয়োজিত হয়। CH^3COOH একটি দুর্বল তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ। দ্রবণে এর অধিকাংশ অণু অবিয়োজিত অবস্থায় থাকে। চিনি একটি তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ। আবার H+ আয়নের তড়িৎ পরিবাহিতা অন্যান্য আয়ন থেকে অনেক বেশি বলে উপযুক্ত পদার্থগুলির তড়িৎ পরিবাহিতার উর্ধ্বক্রম। চিনির লঘু দ্রবণ < CH^3COOH এর লঘু দ্রবণ < NaCl এর লঘু দ্রবণ < HCl এর লঘু জলীয় দ্রবণ।
প্রশ্নঃ 0.1M NH^4OH অপেক্ষা 0.1M NaOH দ্রবণের তড়িৎ পরিবাহীতা বেশি কেন?(Why is the electric conductivity of 0.1M NaOH higher than that of 0.1M NH₄OH?)
উত্তরঃ
NaOH তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ, তাই 0.1M দ্রবণে এটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে Na^+ ও OH^- আয়ন উৎপন্ন করে। কিম্ভ NH_4OH মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য, তাই 0.1M দ্রবণে এটি আংশিকভাবে বিয়োজিত হয়। সুতরাং, একই আয়তনের 0.1M NHOH দ্রবণ অপেক্ষা 0.1M NaOH দ্রবণে অনেক বেশি সংখ্যক আয়ন থাকে। আয়নের সংখ্যাজনিত কারণে NH_4OH দ্রবণ অপেক্ষা NaOH দ্রবণের পরিবাহিতা অনেক বেশি হবে।
প্রশ্নঃ তড়িৎ বিশ্লেষণ একটি জারণ বিজারণ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা কর। (Explain-“Electrolysis is an Oxidation-Reduction process”.)
উত্তরঃ
তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় ক্যাটায়ন ক্যাথোড হতে এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে অর্থাৎ তা বিজারিত হয়। অপরদিকে অ্যানায়ন অ্যানোডে এক বা একাধিক ইলেকট্রন দান করে তা জারিত হয়। যেমন- তরলিত NaCl এর তড়িৎ বিশ্লেষণকালে নিম্নোক্ত বিক্রিয়া ঘটে-
\mathrm{NaCl}(\mathrm{l}) \rightarrow \mathrm{Na}^{+}(\mathrm{l})+\mathrm{Cl}^{-}(\mathrm{l})অ্যানোড (Anode): 2 \mathrm{Cl}^{-}(\mathrm{l}) \rightarrow \mathrm{Cl}_{2}(\mathrm{~g})+2 \mathrm{e}^{-}
ক্যাথোড (Cathode): 2 \mathrm{Na}^{+}(\mathrm{l})+2 \mathrm{e}^{-} \rightarrow 2 \mathrm{Na}(\mathrm{s})
উপরোক্ত বিক্রিয়া হতে দেখা যায় যে, ইলেকট্রন দানের মাধ্যমে অ্যানোডে জারণ, ইলেকট্রন গ্রহনের মাধ্যমে ক্যাথোডে বিজারণ ঘটে। তাই তড়িৎ বিশ্লেষণ একটি জারণ বিজারণ প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন : তড়িৎ বিশ্লেষণ যে সমস্ত বিষয়ের উপর নির্ভরশীল তা ব্যাখ্যা কর। (Explain the factors electrolysis depends on.)
উত্তরঃ
নিম্নোক্ত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
যেমন-
১। তড়িৎ রাসায়নিক সারিতে আয়নের অবস্থান (Position of ions in electrochemical series): তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় বিভিন্ন আয়নের চার্জমুক্ত হওয়ার প্রবণতার উপর ভিত্তি করে আয়নসমূহকে যে সারিতে সাজানো হয়েছে তাকে তড়িৎ রাসায়নিক সারি বলে। এ সারিতে যে আয়নের অবস্থান যত নিচে সে আয়নের চাজমুক্ত হওয়ার প্রবণতা তত বেশি । যেমন- কোন দ্রবণে Na^+ এবং K^+ উপস্থিত থাকলে Na^+ চার্জমুক্ত হবে আগে ।
২। সমধর্মী আয়নের ঘনমাত্রার প্রভাব (Effect of the concentration of homogenous ions): তড়িৎ রাসায়নিক সারিতে কোন আয়নের অবস্থানের অগ্রাধিকারের চেয়ে ঐ আয়নের ঘনমাত্রার প্রভাব বেশি কার্যকরী। যেমন- 0.1M NaCl এর জলীয় দ্রবণে OH^- এর ঘনমাত্রা 10^{-7} molL^{-1} এর CI– এর ঘনমাত্রা 0.1 molL^{-1} । তড়িৎ রাসায়নিক সারি অনুযায়ী OH^- আয়ন আগে চার্জমুক্ত হওয়া উচিত। কিন্তু Cl^- এর ঘনমাত্রা বেশী হওয়ায় এটি আগে চার্জমুক্ত হবে।
৩। তড়িৎদ্বারের প্রকৃতি (Nature of electrodes): তড়িৎদ্বারের প্রকৃতি অনেক সময় তড়িৎ রাসায়নিক সারির ব্যতিক্রম ঘটায়। যেমন- NaCl এর জলীয় দ্রবণে প্লাটিনাম তড়িৎদ্বার ব্যবহৃত হলে সক্রিয়তা সিরিজ মতে H^+ চার্জমুক্ত হয় কিন্তু মার্কারী তড়িৎদ্বার ব্যবহৃত হলে Na^+ আগে চার্জযুক্ত হয়।
প্রশ্ন : ফ্যারাডের তড়িৎ বিশ্লেষণের সূত্র দুটি বিবৃত ও ব্যাখ্যা কর।(State and explain Faraday’s two laws of electrolysis.)
উত্তরঃ
ফ্যারাডের প্রথম সূত্র (Faraday’s 1st Law): তড়িৎ বিশ্লেষণকালে যে কোন তড়িৎদ্বারে সংঘঠিত রাসায়নিক বিক্রিয়ার পরিমাণ অর্থাৎ কোনো তড়িৎদ্বারে সঞ্চিত বা দ্রবীভূত পদার্থের পরিমাণ প্রবাহিত বিদ্যুতের বা চার্জের পরিমাণের সমানুপাতিক।
এ সূত্র মতে,
\mathrm{W} \propto \mathrm{Q}\mathrm{W}=\mathrm{ZQ}
\mathrm{W}=\mathrm{ZIt}(\mathrm{Q}=\mathrm{It})
[ Q = প্রবাহিত চার্জের পরিমাণ, W = সঞ্চিত বা দ্রবীভূত পদার্থের পরিমাণ ]
এখানে, Z হল তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক-
যদি I = 1 amp এবং t = 1s হয় তাহলে,
Z=W g m c^{-1} অর্থাৎ তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে 1c পরিমাণ বিদ্যুৎ বা চার্জ প্রবাহিত করা হলে, যে পরিমাণ পদার্থ ক্যাথোডে সঞ্চিত হয় বা অ্যানোড থেকে দ্রবীভূত হয়, সে পরিমাণকে তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক বলা হয়।
উল্লেখ্য যে তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক Z=\frac{M}{n F}
বা, Z=\frac{M}{n \times 96500 C}
[ M = গ্রাম পারমানবিক ভর
n = যোজনী বা চার্জ
F = 96500c ]
\therefore W=\frac{M I t}{n F}এটিই ফ্যারাডের প্রথম সুত্রের গাণিতিক প্রকাশ
ফ্যারাডের ২য় সূত্র (Faraday’s 2nd Law): যদি বিভিন্ন তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ একই সময় ধরে চালনা করা হয় তাহলে বিভিন্ন তড়িৎদ্বারে সঞ্চিত পদার্থের পরিমাণ তাদের নিজ নিজ পারমাণবিক ভরকে যোজনী বা চার্জ সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায়, তার সমানুপাতিক হবে ।
অর্থাৎ রাসায়নিক তুল্যাঙ্কের সমানুপাতিক হবে।
যদি Q পরিমাণ বিদ্যুৎ বা চার্জ প্রবাহের ফলে কোন তড়িৎদ্বারে W গ্রাম ভরের কোন পদার্থ দ্রবীভূত বা সঞ্চিত হয় তাহলে ফ্যারাডের ২য় সূত্র মতে,
W \alpha \frac{M}{V} [v = যোজনী, M = পারমাণবিক ভর]
বা, \frac{w}{\frac{M}{v}}=k (ধ্রুবক)
যদি তিনটি তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ একই সময় ধরে চালনা করার ফলে এদের মধ্যে যথাক্রমে w_1, w_2, w_3 পরিমাণ পদার্থ সঞ্চিত হয়। তাহলে ফ্যারাডের ২য় সূত্র মতে,
\frac{w_{1}}{\frac{M_{1}}{v_{1}}}=\frac{w_{2}}{\frac{M_{2}}{v_{2}}}=\frac{w_{3}}{\frac{M_{3}}{v_{3}}}=kImage not found
Note: রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক E = \frac{M}{n} কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে 1F চার্জ প্রবাহিত করলে অ্যানোডে দ্রবীভূত বা ক্যাথোডে সঞ্চিত পদার্থের পরিমাণকে ঐ মৌলের রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক বলে। তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক,
Z=\frac{M}{n F} বা, \frac{M}{n \times 96500 C} (কোনো তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যে 1C বিদ্যুৎ চার্জ প্রবাহিত করলে অ্যানোডে দ্রবীভূত বা ক্যাথোডে সঞ্চিত পদার্থকে ঐ মৌলের তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক বলে।
তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক ও রাসায়নিক তুল্যাঙ্কের মধ্যে সম্পর্ক হল Z = \frac{E}{F}
প্রশ্ন : Ag এর তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক 0.00118gmc-1 বলতে কী বুঝ? (What is 0.00118gmc-1 electrochemical equivalent of Ag?)
উত্তরঃ
Ag এর তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক 0.00118gmc^{-1} এর অর্থ হল AgNO_3 এর দ্রবণে তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় এক কুলম্ব বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে কোন তড়িৎদ্বারে 0.00118gmc^{-1} সিলভার সঞ্চিত বা দ্রবীভূত হয়।
প্রশ্ন : তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক কী? (What is electrochemical equivalent?)
উত্তরঃ
তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে এক কুলম্ব বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে কোন পদার্থের যত পরিমাণ অ্যানোডে দ্রবীভূত হয় বা ক্যাথোডে সঞ্চিত হয় তাকে সে পদার্থের তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক বলে।
প্রশ্ন : ফ্যারাডের ধ্রুবক কী?(What is Faraday’s constant?)
উত্তরঃ
প্রতি মোল e^- এর চার্জকে ফ্যারাডে ধ্রুবক বলা হয়। অর্থাৎ ফ্যারাডে ধ্রুবক = 96500cmol^{-1}
প্রশ্ন : ফ্যারাডের তড়িৎ বিশ্লেষণের সূত্র হতে 1টি e^- এর চার্জ নির্ণয় কর। (Find the charge of 1e^- from Faraday’s law of electrolysis.)
উত্তরঃ
ফ্যারাডের প্রথম সূত্র মতে, এক মোল ইলেকট্রনের চার্জ সমান এক ফ্যারাডে।
অর্থাৎ, N_{A e}^{-1}=1 F=96500 C
এখানে, NA = অ্যাভোগেড্রো সংখ্যা,
e^- = একটি ইলেকট্রনের চার্জ
\therefore e^{-}=\frac{96500 \mathrm{C}}{N_{A}}=\frac{96500 \mathrm{C}}{6.022 \times 10^{23}}=1.602 \times 10^{-19} \mathrm{C}প্রশ্নঃ তড়িৎ প্রলেপন বা Electroplating কী?(What is electroplating?)
উত্তরঃ
তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি ধাতুর তৈরি জিনিসপত্রের উপর অন্য একটি কম সক্রিয় ধাতুর প্রলেপ সৃষ্টি করাকে ইলেকট্রোপ্লেটিং বলে। সাধারণত উজ্জ্বলতা সৃষ্টি বা ক্ষয় রোধ করার জন্য এটি করা হয়।
প্রশ্ন : তড়িৎ দক্ষতা বলতে কী বুঝ?(What is electro efficiency?)
উত্তরঃ
কোন তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ক্যাথোডে যে পরিমাণ পদার্থ সঞ্চিত হয় এবং যে পরিমাণ পদার্থ বা মৌল সঞ্চিত হওয়ার কথা, এ দুয়ের অনুপাতকে তড়িৎ দক্ষতা বলে। যেমন 1F তড়িৎ প্রবাহিত করলে নিকেল লবণের দ্রবণ থেকে ক্যাথোডে কাঙ্ক্ষিত 29.34g নিকেল জমা হওয়ায় পরিবর্তে 25.48 গ্রাম জমা হয়। বাকি 3.86g নিকেলের সমতুল্য 0.1326 গ্রাম H_2 গ্যাস উৎপন্ন হয়।
∴ এ দ্রবণের তড়িৎ দক্ষতা= \frac{25.48}{29.34}=0.8648=86.48 \%
প্রশ্ন : ধাতুর সক্রিয়তা সিরিজ কী?(What is reactivity series of metals?)
উত্তর :
সংজ্ঞা : একক প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ার মাধ্যমে ধাতুসমূহের সক্রিয়তার তুলনামূলক যে সারি রসায়নবিদেরা তৈরি করেছেন ধাতুসমূহের এ সারিকে ধাতুর সক্রিয়তা সিরিজ বলা হয়। এ সারিতে সবচেয়ে অধিক সক্রিয় ধাতুটিকে ওপরে এবং সবচেয়ে কম সক্রিয় ধাতুতে সারির নিচে দেয়া হয়েছে।
ধাতুর সক্রিয়তা সিরিজ : (Reactivity series of Metals)
সংজ্ঞা (Definiton):
ধাতব মৌলসমূহকে তাদের ইলেকট্রন ত্যাগের প্রবণতার তথা সক্রিয়তার নিম্নক্রম অনুসারে সাজিয়ে প্রাপ্ত সিরিজকে ধাতুর সক্রিয়তা সিরিজ বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
ধাতুর সক্রিয়তা সিরিজের কতিপয় উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নিম্নরূপ:
(i) এই সিরিজে যে ধাতব মৌলের অবস্থান যত উপরে সেই মৌলটি তত বেশি সক্রিয়।
(ii) এই সিরিজে উপস্থাপিত যে কোনো মৌল তার নিচে অবস্থিত যে কোনো মৌলকে তার যৌগ থেকে (যখন দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে) প্রতিস্থাপন করতে পারে।
প্রশ্ন: তড়িৎ বিশ্লেষ্যের পরিবাহিতা কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে?(What are the factors conductance of electrolytes depend on?)
কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট ঘনমাত্রার তড়িৎ বিশ্লেষ্যের পরিবাহিতা সবসময় নির্দিষ্ট থাকে। কিন্তু তড়িৎ বিশ্লেষ্যের ঘনমাত্রা পরিবর্তন করলে পরিবাহিতার মানের পরিবর্তন ঘটে। এক্ষেত্রে দুই ধরনের পরিবাহিতা নিয়ে ব্যাখ্যা করা হলো।
(ক) আপেক্ষিক পরিবাহিতা (Specific Conductance): কোনো দ্রবণের প্রতি cm3 এর পরিবাহিতাকে এর আপেক্ষিক পরিবাহিতা বলে। সুতরাং প্রতি সিসি আয়তনে আয়ন সংখ্যার উপর দ্রবণের আপেক্ষিক পরিবাহিতা নির্ভর করে। আধুনিক তত্ত্ব অনুসারে তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থগুলো দ্রবণে সম্পূর্ণরূপে আয়নিত অবস্থায় থাকে। এ দ্রবণকে লঘু করলে দ্রাবকের প্রভাবে আন্ত:আনবিক আকর্ষণ হ্রাসের দরুন দ্রবণে কার্যকরী আয়নের মোট সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পায় বটে। কিন্তু প্রতি সিসিতে যে পরিমাণ আয়ন বাড়ে লঘুকরণের কারণে প্রতি সিসিতে তা অপেক্ষা অধিক হ্রাস পায়। তাই দ্রবণ লঘুকরণের সাথে সাথে তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থগুলোর আপেক্ষিক পরিবাহিতা হ্রাস পেতে থাকে। মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থগুলো সাধারণ ঘনমাত্রার দ্রবণে আংশিকভাবে বিয়োজিত হয়। এরূপ দ্রবণকে লঘু করলে বিয়োজনমাত্রা সামান্য পরিমাণে বাড়ে সত্য কিন্তু এতে প্রতি সিসিতে যে পরিমাণ আয়ন সংখ্যা বাড়ে লঘুকরণের দরুন প্রতি সিসিতে আয়ন সংখ্যা তা অপেক্ষা অধিক হ্রাস পায়। এ কারণে মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রেও লঘুকরণের ফলে আপেক্ষিক পরিবাহিতা হ্রাস পায়। অর্থাৎ তীব্র বা মৃদু যে কোন প্রকার তড়িৎ বিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে দ্রবণকে লঘু করলে আপেক্ষিক পরিবাহিতা হ্রাস পায়।
(খ) তুল্য পরিবাহিতা (Equivalent Conductance): দ্রবণের ১ গ্রাম তুল্য ওজন তড়িৎ বিশ্লেষ্য হতে উৎপন্ন মোট আয়নের পরিবাহিতাই হল দ্রবণটির তুল্য পরিবাহিতা। তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থগুলো সব ঘনমাত্রাতেই সম্পূর্ণরূপে আয়নিত হতে পারে। এ দ্রবণকে আরও লঘু করলে ১ গ্রাম তুল্য ওজন তড়িৎ বিশ্লেষ্য হতে আর অধিক আয়ন পাওয়া যায় না। সুতরাং এ ধরনের দ্রবণ লঘু করলে তুল্য পরিবাহিতার কোনো পরিবর্তন হবে না। কিন্তু আয়নগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ থাকার কারণে গাঢ় দ্রবণে প্রতিটি আয়ন এর চারপাশের বিপরীত আয়নের সাথে আয়ন আবহমন্ডল (ionic atmosphere) সৃষ্টি করে পুঞ্জীভূত হয়ে থাকে। ফলে দ্রবণে ১ গ্রাম তুল্য ওজন পরিমাণ তড়িৎ বিশ্লেষ্য হতে প্রাপ্ত সব আয়ন পরিবাহিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু দ্রবণ লঘু করলে দ্রাবকের প্রভাবে আয়ন আবহমন্ডল ভেঙ্গে গিয়ে আয়নগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে ১ গ্রাম তুল্য ওজনের তড়িৎ বিশ্লেষ্য হতে উৎপন্ন কার্যকরী আয়ন সংখ্যা দ্রবণ লঘুকরণের সাথে বাড়তে থাকে। আন্ত আয়নিক আকর্ষণ হ্রাস পায় ফলে তড়িৎ পরিবাহিতা বাড়ে। মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থগুলো দ্রবণে আংশিক বিয়োজিত হয়। দ্রবণ লঘুকরণের সাথে মোট আয়ন সংখ্যাও বাড়ে। ফলে তুল্য পরিবাহিতা বাড়ে।