10 Minute School
Log in

শক্তি(Energy)

শক্তি(Energy)

কোনো বস্তু যদি কাজ করতে পারে, তখন আমরা বলি যে, ঐ বস্তুর শক্তি আছে।

সংজ্ঞা : কোনো বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে(energy)। বস্তু সর্বমোট যতটুকু কাজ করতে পারে তা দিয়েই বস্তুর শক্তির পরিমাপ করা হয়।

যেহেতু কোনো বস্তুর শক্তির পরিমাপ করা হয় তার দ্বারা সম্পন্ন কাজের পরিমাণ থেকে; সুতরাং শক্তি ও কাজের পরিমাণ অভিন্ন। কাজের মতো শক্তিও স্কেলার রাশি।

মাত্রা ও একক : শক্তির মাত্রা ও কাজের মাত্রা একই অর্থাৎ ML2T-2

শক্তির একক ও কাজের একক একই অর্থাৎ জুল (J)

কিলোওয়াট-ঘণ্টা : সাধারণত বিদ্যুৎ শক্তির হিসাব-নিকাশের সময় কিলোওয়াট-ঘণ্টা (kWh) এককটি ব্যবহৃত হয়। এক কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন কোনো যন্ত্র এক ঘণ্টা কাজ করলে যে শক্তি ব্যয় হয় তাকে এক কিলোওয়াট ঘণ্টা বলে।

1kWh=1000Wh=1000Js-1×3600s

∴1kWh=3.6×106J

আমরা শক্তির নিম্নোক্ত রূপগুলো পর্যবেক্ষণ করি।

১। যান্ত্রিক শক্তি    ২। তাপ শক্তি   ৩। শব্দ শক্তি    ৪। আলোক শক্তি   ৬। বিদ্যুৎ শক্তি        ৫। চৌম্বক শক্তি   ৭। রাসায়নিক শক্তি    ৮। নিউক্লিয় শক্তি     ৯। সৌর শক্তি

যান্ত্রিক শক্তি(Mechanical Energy)

কোনো বস্তুর মধ্যে তার গতি, অবস্থান বা ভৌত অবস্থার জন্য কাজ করার যে সামর্থ তথা শক্তি থাকে তাকে যান্ত্রিক শক্তি বলে। যান্ত্রিক শক্তির দুটি রূপ আছে- গতি শক্তি বিভব শক্তি।

গতি শক্তি(Kinetic Energy)

সংজ্ঞা : কোনো গতিশীল বস্তু গতিশীল থাকার জন্য কাজ করার যে সামর্থ্য অর্থাৎ শক্তি অর্জন করে তাকে গতিশক্তি বলে।

একটি গতিশীল বস্তু যে বেগে গতিশীল, বস্তুটিকে স্থির অবস্থান থেকে ঐ বেগ দিতে বস্তুটির উপর যে পরিমাণ কাজ করতে হয়েছে তাই হচ্ছে বস্তুটির গতিশক্তি।

গতিশক্তির পরিমাপ(Measurement of Kinetic Energy)

ধরা যাক, m ভরের কোনো স্থির বস্তুর উপর নির্দিষ্ট দিকে F বল প্রয়োগে বস্তুটিকে গতিশীল করা হয়। ধরা যাক, এই বল ধ্রুব নয়, তবে এর পরিবর্তন কেবল এর মানের পরিবর্তনে সাধিত হয়। আরো ধরা যাক, এই বল প্রয়োগের ফলে বস্তুটির বলের দিকে সরণ ঘটে এবং এই দিক X-অক্ষ বরাবর। এই বল যদি বস্তুটির বেগ শূন্য থেকে v তে উন্নীত করে, তাহলে কৃত মোট কাজ হবে,

W=v=0v=v Fdx 

কিন্তু নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্র থেকে আমরা জানি, F=ma। এখন ত্বরণ a কে লেখা যায়,

a=dvdt=dvdxdxdt=dvdxv=vdvdx

সুতরাং

W=v=0v=v Fdx=v=0v=v mad⁡x=v=0v=v dvdxdx=0v mvdv=mv220v

W=12mv2-0=12mv2

কিন্তু সংজ্ঞানুসারে এই কৃত কাজই হচ্ছে বস্তুটির গতিশক্তি K

∴K=12mv2

সুতরাং নির্দিষ্ট ভরের কোনো বস্তুর গতিশক্তি তার বেগের বর্গের সমানুপাতিক।

গতিশক্তি ও ভরবেগের সম্পর্ক(Relation Between Kinetic Energy & Momentum)

(5.21) সমীকরণকে লেখা যায়, K=12m2v2m

কিন্তু mv হচ্ছে বস্তুর ভরবেগ p

∴K=p22m

বা, p=2mK

১। গতিশক্তি কি ঋণাত্মক হতে পারে?

কোনো সচল বস্তুর ভর m এবং বেগ v হলে বস্তুর গতিশক্তি 12mv2। বস্তুর ভর m কখনোই ঋণাত্মক হতে পারে না। বস্তুর বেগ ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হতে পারে, কিন্তু বেগের বর্গ সবসময় ধনাত্মক হবে। অতএব বস্তুর গতিশক্তি কখনো ঋণাত্মক হতে পারে না।

২। একটি হালকা বস্তু এবং একটি ভারী বস্তুর ভরবেগ সমান। কোনটির গতিশক্তি বেশি?

মনে করি, ভারী বস্তুর ভর =M এবং বেগ v1 এবং হালকা বস্তুর ভর =m এবং বেগ =v2। বস্তু দ্বয়ের ভরবেগ সমান হলে,

Mv1=mv2=P

হালকা বস্তুর গতিশক্তিভারী বস্তুর গতিশক্তি=12mv2212Mv12=P2/2mP2/2M=Mm

∴m অপেক্ষা M বড় হলে (M>m) হালকা বস্তুর গতিশক্তি ভারী বস্তুর গতিশক্তির চেয়ে বেশি হবে।

৩। একটি হালকা বস্তু এবং একটি ভারী বস্তুর গতিশক্তি সমান। কোনটির ভরবেগ বেশি?

মনে করি, ভারী বস্তুর ভর M ও বেগ v1 এবং হালকা বস্তুর ভর m ও বেগ v2। অতএব ভারী বস্তুর ভরবেগ P1=Mv1 এবং হালকা বস্তুর ভরবেগ P2=mv2 । কিন্তু দুটি বস্তুর গতিশক্তি সমান।

12Mv12=12mv22

P122M=P222m

P1P2=Mm

m অপেক্ষা M বড় হলে (M>m) ভারী বস্তুর ভরবেগ হাল্কা বস্তুর ভরবেগের চেয়ে বেশি হবে।

কাজ-শক্তি উপপাদ্য(Work-Energy Theorem)

বিবৃতি : কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল দ্বারা কৃতকাজ বস্তুটির গতিশক্তির পরিবর্তনের সমান।

ধ্রুব বলের জন্য প্রতিপাদন : ধরা যাক, v0 বেগে গতিশীল m ভরের কোনো বস্তুর উপর F ধ্রুব বল ক্রিয়া করে। এর ফলে বস্তুটির বেগ হয় v এবং ঐ সময়ে বস্তুটি বলের দিকে x দূরত্ব অতিক্রম করে।

সুতরাং বল দ্বারা কৃত কাজ

W=Fx

এই বল প্রয়োগের ফলে বস্তুর ধ্রুব ত্বরণ a হলে, নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্রানুসারে F=ma

∴W=max

কিন্তু গতির সমীকরণ থেকে আমরা জানি, v2=v02+2ax বা, ax=v2v022

সুতরাং W=mv2v022=12mv212mv02

কিন্তু 12mv02 হচ্ছে বস্তুর আদি গতিশক্তি Ko এবং 12mv2 হচ্ছে শেষ গতিশক্তি K

∴W=K-K=K

বল দ্বারা কৃত কাজ=বস্তুটির গতিশক্তির পরিবর্তন

পরিবর্তনশীল বলের জন্য প্রতিপাদন : ধরা যাক, কোনো কণার উপর পরিবর্তনশীল বল F ক্রিয়া করছে। বলের মান পরিবর্তনশীল হলেও এর দিক অপরিবর্তনশীল। সেক্ষেত্রে কণাটির সরণের অভিমুখ বলের দিকেই হবে। ধরা যাক, কণাটি X-অক্ষ বরাবর গতিশীল। আরো ধরা যাক, শুরুতে বস্তুটির x0 অবস্থানে বেগ v0 এবং শেষে x অবস্থানে বেগ v। এখন কণাটিকে x0 অবস্থান থেকে x অবস্থানে সরাতে প্রযুক্ত বল দ্বারা কৃত কাজের পরিমাণ

W=x0x Fdx

কিন্তু নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্র থেকে আমরা জানি,

F=ma

আবার, a=dvdt=dvdxdxdt=dvdx⋅v=vdvdx

∴F=mvdvdx 

সুতরাং সম্পাদিত কাজ, W=x0x mvdvdxdx

যখন x=x তখন v=vo

এবং যখন x=x তখন v=v

∴W=v0v mvdv=mv0v vdv=mv22v0v=12mv212mvo2

কিন্তু 12mvo2 হচ্ছে বস্তুটির আদি গতিশক্তি Ko এবং 12mv2 হচ্ছে শেষ গতিশক্তি K।

∴W=K-K=K

পরিবর্তনশীল বল দ্বারা কৃতকাজ=বস্তুটির গতিশক্তির পরিবর্তন।

বিভব শক্তি বা স্থিতি শক্তি(Potential Energy)

কোনো বস্তু তার ভৌত অবস্থা বা অবস্থানের কারণে তার মধ্যে শক্তি সঞ্চিত রাখতে পারে। বস্তুর মধ্যে সঞ্চিত এই শক্তিকে বলা হয় বিভব শক্তি(Potential Energy)।

সংজ্ঞা : স্বাভাবিক অবস্থা বা অবস্থান পরিবর্তন করে কোনো বস্তুকে অন্য কোনো অবস্থায় বা অবস্থানে আনলে বস্তু কাজ করার যে সামর্থ্য অর্জন করে তাকে বিভব শক্তি বলে।

ব্যাখ্যা : একটি স্প্রিং বা রাবার ব্যান্ডকে টান টান করলে এই টান টান অবস্থার জন্য এর মধ্যে বিভব শক্তি থাকে; কেননা, এটি তার পূর্ববর্তী শিথিল অবস্থায় ফিরে আসার সময় কাজ করতে পারে। এটি অন্য কোনো বস্তুকে স্থানান্তরিত করতে পারে। কোনো বস্তুকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরে ওঠালে অবিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। এই অবস্থানে বস্তুর মধ্যে অভিকর্ষজ বিভব শক্তি থাকে; কেননা, বস্তুটি যখন ভূ-পৃষ্ঠে পড়ে তখন সেটি অন্য বস্তুর উপর কাজ করতে পারে। অন্য কোনো বস্তুকে উপরে ওঠাতে পারে।

(ক) অভিকর্ষজ বিভব শক্তি (Gravitational Potential Energy)

যখন m ভরের কোনো বস্তুকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে h উচ্চতায় ওঠানো হয়, তখন অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কৃত কাজই হচ্ছে বস্তুতে সঞ্চিত বিভব শক্তির পরিমাপ। m ভরের বস্তুকে ত্বরণ ছাড়া সমবেগে উপরের দিকে ওঠাতে প্রয়োজনীয় বল হচ্ছে বস্তুর উপর প্রযুক্ত অভিকর্ষ বল তথা বস্তুর ওজন mg এর সমান।

সুতরাং অভিকর্ষ বিভব শক্তি=অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কৃত কাজ

U=Fh =mgh

∴U=mgh

 সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, কোথা থেকে উচ্চতা h পরিমাপ করা হয়েছে তার উপর অভিকর্ষজ বিভব শক্তি নির্ভর করে, অর্থাৎ কোথায় h=0 ধরা হয়েছে তার উপর বিভব শক্তি নির্ভরশীল। সুতরাং অভিকর্ষজ বিভব শক্তি কোনো বস্তু বা তার অবস্থানের কোনো পরম গুণ বা ধর্ম নয়, বরং বিভব শক্তি নির্ভর করে কোও প্রসঙ্গ তলের সাপেক্ষে তা পরিমাপ করা হচ্ছে তার উপর। মনে কর, তোমার পড়ার টেবিলের উপর একটি বই আছে। বই এর কিছু উপরে তুমি একটি কলম ধরে আছ। কলমটির বিভব শক্তি কত? কলমটির বিভব শক্তি একেকটি তলের সাপেক্ষে একেক রকম। বই এর সাপেক্ষে কলমটির বিভব শক্তি যত হবে, টেবিলের সাপেক্ষে তার চেয়ে বেশি হবে। আবার ঘরের মেঝের সাপেক্ষে আরো বেশি হবে।

(5.24) সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, কোনো বস্তুর অভিকর্ষজ বিভবশক্তি প্রসঙ্গ তল থেকে তার উচ্চতার সমানুপাতিক।

(খ) স্প্রিং-এর বিভব শক্তি (Potential Energy for Spring)

ধরা যাক, এক প্রান্ত দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ একটি স্প্রিং-এর মুক্ত প্রান্তে m ভরের একটি বস্তু আটকানো আছে (চিত্র : ৫.৯ক)। বস্তুটি একটি ঘর্ষণবিহীন তলের উপর চলাচল করতে পারে। আমরা জানি, স্প্রিংটিকে টান টান করতে স্প্রিং বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। স্প্রিং বলের বিরুদ্ধে কৃত এই কাজই এপ্রিং-এ বিভব শক্তি হিসেবে বিরাজ করবে। 

energy

স্প্রিংটিকে যখন তার শিথিল অবস্থা x=0 থেকে x=x অবস্থানে টান টান করা হয় (চিত্র : ৫.৯খ), তখন বস্তুটির উপর প্রযুক্ত স্প্রিং-এর বল Fs=-kx । এখন বস্তুটিকে x দূরত্বে সরাতে তার উপর এর সমান ও বিপরীতমুখী F=kx বল প্রয়োগ করে কাজ করতে হবে। এই বল দ্বারা কৃত কাজই হবে বস্তুটির সঞ্চিত বিভব শক্তি।

  বিভব শক্তি U=0x Fdx

∴U=12kx2

বা, U=0x kxdx=kx22x

সুতরাং কোনো স্প্রিং এর সঞ্চিত বিভবশক্তি তার মুক্তপ্রান্তের সরণের বর্গের সমানুপাতিক।