প্রতিপ্রভা ও অনুপ্রভা (Fluorescence and Phosphorescence)
প্রতিপ্রভা বা ফ্লোরোসেন্স (Fluorescence)
শােষিত রশ্মির অবিলম্বিত বা বিলম্বহীন বিকিরণকে প্রতিপ্রভা (Fluorescence) বলে। যে সকল পদার্থ UV অঞ্চলের 200 – 380nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রশ্মি শোষণ করে কিন্তু 380 – 780nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট দৃশ্যমান রশ্মি বিকিরণ করে, সে সকল পদার্থকে প্রতিপ্রভ পদার্থ বা ফ্লোরোসেন্ট পদার্থ বলে। শক্তির উৎস যতক্ষণ থাকে ফ্লোরােসেন্ট পদার্থ ততক্ষণ শক্তি বিকিরণ করে। শক্তির উৎস বন্ধ হওযার সাথে সাথে এদের বিকিরণও বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আলো শােষণ করে পরমাণু বা অণুর ইলেক্ট্রনীয়ভাবে উত্তেজিত হয়। এ বিকিরণ শোষণের 10^{-8} থেকে 10^{-6} সেকেন্ডের মধ্যে সংঘটিত হয়। বিক্ষিপ্ত বিকিরণের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য শােষিত আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অপেক্ষা বেশি হয়।
অনুপ্রভা (Phosphorescence)
শােষিত রশ্মির বিলম্বিত বিকিরণকে অনুপ্রভা বলে। কিছু অণু বা পরমাণুর উপর UV রশ্মি নিক্ষেপ করার পর রশ্মির উৎস সরিয়ে নিলেও 10^{-4} সেকেন্ড থেকে 10 সেকেন্ড বা তার বেশি সময় ধরে ঐ অণু বা পরমাণু দৃশ্যমান আলো বিকিরণ করে। এই ঘটনাকে অনুপ্রভা বলে।
শক্তির উৎস বন্ধ করে দেবার পরও যথেষ্ট সময় যাবৎ (কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক ঘণ্টা) উত্তেজিত অণু বা পরমাণু হতে দৃশ্যমান আলোর বিকিরণ হয়। অনুপ্রভার মেকানিজম এই যে, উত্তেজিত অণু বা পরমাণুর উত্তেজিত ইলেকট্রন উচ্চ শক্তিস্তর হতে সরাসরি আদি স্তরে নেমে আসে না। বরং মধ্যবর্তী কোনো এক স্তরে কিছুক্ষণ অবস্থান করে এবং তা হতে ধীরে ধীরে প্রভা বিচ্ছুরণ করে। CaS, MgS, SrS ও BaS ইত্যাদি যৌগের অনুপ্রভা ধর্ম আছে।
ফসফোর (Phosphor)
ফসফোর হলো 230 – 375nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের UV রশ্মি শােষণকারী; কিন্তু দৃশ্যমান অঞ্চলের মধ্যে ঐ শােষিত শক্তি বিকিরণকারী রাসায়নিক পদার্থ। ফসফোররূপে বিভিন্ন জটিল ধাতব অক্সাইড ও ল্যান্থানাইড আয়ন এর মিশ্রণ ব্যবহৃত হয় ।যেমন- ইট্রিয়াম অক্সাইড ও ইউরােপিয়াম আয়ন, সেরিয়াম-ম্যাগনেসিয়াম-অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ও টারবিয়াম আয়ন। এগুলো অবস্থান্তর ধাতু বা ল্যান্থেনাইড মৌল দ্বারা গঠিত যৌগ।
প্রশ্ন : জাল টাকা বা পাসপোর্ট সনাক্তকরণে UV রশ্মি কীরূপে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর : আসল টাকা ও জাল টাকা বা আসল পাসপোর্ট ও জাল পাসপোর্ট এর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করার জন্য প্রতিটির ক্ষেত্রে কিছু গােপন ও প্রকাশ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। টাকার ক্ষেত্রে এই প্রকাশ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি হচ্ছে Security Thread বা নিরাপত্তা সূতা যা আসল নোটের মধ্যে প্রযুক্তি প্রয়োগ করে এমনভাবে স্থাপন করা হয় যা জাল নোটে প্রায় অসম্ভব। অপরটি হচ্ছে জলছাপ যা সাধারণভাবে দেখা না গেলে UV রশ্মিতে স্পষ্ট আভা ছড়ায়। এই নিরাপত্তা সূতা বা জলছাপ ফসফোর দ্বারা প্রলেপিত থাকে।
UV অঞ্চলের আলোক রশ্মি কারেন্সী নোট বা পার্সপাের্টের ফসফোর যৌগে পতিত হলে সেটি ঐ রশ্মির নির্দিষ্ট তরঙ্গ শোষণ করে উত্তেজিত অবস্থায় চলে যায়। এতে অণুটির ইলেক্ট্রনীয় ধাপান্তর ঘটে । উল্লেখ্য যে, যৌগের প্রত্যেক ইলেক্ট্রনীয় স্তরে কতিপয় কম্পনীয় স্তরও থাকে।
ইলেট্রনীয় ধাপান্তরে অণুটি কম্পনীয় শক্তিস্তরে কম্পন করতে থাকে (S_1)। কম্পনীয় শক্তিস্তরে অণুর মধ্যে সংঘর্ষের কারণে কিছুটা কম্পনীয় শক্তি হারিয়ে এটি ইলেক্ট্রনীয় শক্তিস্তরে (S_2) এর নিম্নতম কম্পনীয় শক্তিস্তরে অবনমিত হয়। পরবর্তীতে অণুটি S_1 এর সর্বনিম্ন কম্পনীয় শক্তিস্তর থেকে নিম্নতর ইলেক্ট্রনীয় শক্তিস্তরে (S_0)অবনমিত হলে দৃশ্যমান আলো বিকিরিত হয়। এই প্রক্রিয়াটিকে প্রতিপ্রভা (Fluorescence) বলে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক সংঘর্ষ বা কম্পনজনিত কারণে কিছু শক্তি হ্রাস পায় বলে বিকিরিত রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য শােষিত রশ্মি অপেক্ষা কম হয়। প্রকৃত নোটে আমরা সেটাই দেখতে পাই। জাল নোট বা জাল পাসপাের্টে অনুরূপ কোনো UV শােষণকারী ফসফোর পদার্থ অন্তর্ভূক্ত করা সম্ভব হয় না বলে UV শনাক্তকারকে কোনো প্রভা সৃষ্টি হয় না।