10 Minute School
Log in

দ্রাব্যতা (Solubility)

দ্রাব্যতা (Solubility)

নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় 100g দ্রাবকে যত গ্রাম দ্রব দ্রবীভূত করে একে সম্পৃক্ত দ্রবণে পরিণত করা যায় সেই পরিমাণকে বা গ্রাম প্রকাশক সংখ্যাকে ঐ দ্রাবকে দ্ৰবটির দ্রাব্যতা বলে।যেমন: 20°C তাপমাত্রায় NaCl এর দ্রাব্যতা 36 g/100 g H_2O এর অর্থ হল ঐ তাপমাত্রায় 100g পানিতে NaCl এর সম্পৃক্ত দ্রবণ তৈরি করতে 36 g NaCl প্রয়োজন হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট আয়তনের সম্পৃক্ত দ্রবণে দ্রবীভূত দ্রবের পরিমাণকে ও দ্রাব্যতা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে, দ্রাব্যতার একক হল gL^{-1}, mol L^{-1}, g/100 mL ইত্যাদি 

  • প্রথম সংজ্ঞা মতে,
দ্রাব্যতা, S=\frac{গ্রামে  প্রকাশিত  দ্রবের  ভর \times 100}{গ্রামে  প্রকাশিত  দ্রাবকের  ভর}

সম্পৃক্ত দ্রবণ (Saturated Solution)

যে দ্রবণে আর দ্রব দ্রবীভূত হয় না তাকে সম্পৃক্ত দ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

অসম্পৃক্ত দ্রবণ (Unsaturated Solution)

যে দ্রবণে আরো দ্রব দ্রবীভূত হয় তাকে অসম্পৃক্ত দ্রবণ বলে।

অতিপৃক্ত দ্রবণ (Super Saturated Solution)

যে দ্রবণে কোন বিশেষ উপায়ে অতিরিক্ত দ্রব দ্রবীভূত থাকে তাকে অতিপৃক্ত দ্রবণ বলে। একই দ্রব দ্বারা প্রস্তুতকৃত তিনটি দ্রবণের মধ্যে একই পরিমাণ দ্রব পৃথকভাবে যোগ করা হলে যদি কোন দ্রবণে দ্রবটি দ্রবীভূত হয়ে যায় তবে তা হবে অসম্পৃক্ত, যদি কোন দ্রবণে দ্রব আর দ্রবীভূত না হয় তবে তা হবে সম্পৃক্ত এবং কোনো দ্রবণে যদি যোগকৃত দ্রবের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও দ্রবীভূত হয় তবে তা হবে অতিপৃক্ত দ্রবণ।

দ্রাব্যতার উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব (Factors affecting solubility)

দ্রাব্যতা নিমোক্ত বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন:

১। দ্রবের প্রকৃতি

২। দ্রাবকের প্রকৃতি

৩। তাপমাত্রা

৪। চাপ

সমআয়ন প্রভাব

দ্রাব্যতার গুণফল (Solubility Product)

নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় স্বল্প দ্রবণীয় লবণ বা তড়িৎ বিশ্লেষ্যের সম্পৃক্ত দ্রবণে যেসকল আয়ন উপস্থিত থাকে সে আয়নগুলোর যথোপযুক্ত ঘাত বিশিষ্ট ঘনমাত্রা পদের গুণফল সর্বদাই ধ্রুবক হয় এবং এই ধ্রুবককে ঐ তাপমাত্রায় ওই লবণটির দ্রাব্যতার গুণফল বলে। এক্ষেত্রে, ঘনমাত্রাকে মোল/ লিটার এককে প্রকাশ করা হয়। স্বল্প দ্রবণীয় লবণ যেমন- সিলভার ক্লোরাইড (AgCl), লেড ক্লোরাইড (PbCl_2), BaSO_4 ইত্যাদি খুব কম পরিমাণে পানিতে দ্রবীভূত হয়। ফলে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় লবণের মধ্যে একটি সাম্যাবস্থা বিরাজ করে। এ অবস্থায় বিয়োজনে উৎপন্ন আয়নগুলোর ঘনমাত্রা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ধ্রুবক থাকে। প্রকৃতপক্ষে, এই আয়নগুলোর যথোপযুক্ত ঘনমাত্রার গুণফলকে দ্রাব্যতার গুণফল বলে।

মনে করি, MX একটি স্বল্প দ্রবণীয় লবণ।

MX(s)\rightleftharpoons M^{+}_{(aq)}+X_{(aq)}

ভরক্রিয়ার সূত্রমতে বিক্রিয়াটির সাম্য ধ্রুবক,

K=\frac{উৎপাদ  আয়নের  মোলার  ঘনমাত্রা}{বিক্রিয়ক  আয়নের  মোলার  ঘনমাত্রা} \\K=\frac{[M^+][X^-]}{[MX]} \\ \therefore [M^+][X^-]=K\times [MX]                \big[[something]=Something  এর  মোলার  ঘনমাত্রা=\frac{n}{v}\big]

স্থির তাপমাত্রায় অবিয়োজিত কঠিন বস্তুর ঘনমাত্রা ধ্রুবক এবং এর পরিমাণকে এক একক ধরা হয়। সুতরাং,

\therefore [M^+][X^-]=K\times 1=Ks=Ksp

দ্রাব্যতার গুণফলের মান তাপমাত্রার উপর এবং লবণের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।

প্রশ্ন: সিলভার ক্লোরাইডের (AgCI) দ্রাব্যতা গুণফলের সমীকরণ নির্ণয় কর।

উত্তর: মনে করি,

AgCl এর দ্রাব্যতা = S mol L^{-1}

AgCl জলীয় দ্রবণে নিম্নরূপে আয়নিত অবস্থায় থাকে-

AgCl_s\rightleftharpoons Ag^+(aq)+Cl(aq)\\ SmolL^{-1}...SmolL^{-1}...SmolL^{-1}

AgCl এর দ্রাব্যতার গুণফল, Ksp=[Ag^+][Cl^-]=S\times S=S^2 mol^2/L^2

প্রশ্ন: ক্যালসিয়াম ফসফেটের Ca_3(PO_4)_2 দ্রাব্যতায় গুণফলের সমীকরণ নির্ণয় কর।

উত্তর: মনে করি,

ক্যালসিয়াম ফসফেটের দ্রাব্যতা =Smol L^{-1}

Ca_3(PO_4)_2 জলীয় দ্রবণে নিম্নরূপে আয়নিত অবস্থায় থাকে।

Ca_3(PO_4)_2\rightleftharpoons 3Ca^{2+}+2PO_4^{3-}\\ (s)..................(3s).............(2s)

  লবণটির দ্রাব্যতার গুণফল, Ksp=[(Ca^{2+})]^3[PO_4^3]^2\\ =(3s)^3(2s)^2\\ =108 S^5 mol^5 L^{-5}

দ্রাব্যতা এবং দ্রাব্যতার গুণফলের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Solubility and Solubility Product)

দ্রাব্যতা সকল ধরনের পদার্থ যেমন- স্বল্প দ্রবণীয় বা সম্পূর্ণরূপে দ্রবণীয় লবণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু দ্রাব্যতার গুণফল শুধুমাত্র স্বল্প দ্রবণীয় লবণের সম্পৃক্ত দ্রবণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

২। তড়িৎ বিশ্লেষ্য এবং তড়িৎ অবিশ্লেষ্য উভয় ধরনের পদার্থের ক্ষেত্রেই দ্রাবত্য প্রযোজ্য। কিন্তু দ্রাব্যতার গুণফল শুধুমাত্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ।

৩। সমআয়ন প্রভাবের ফলে দ্রাব্যতার পরিবর্তন হলেও দ্রাব্যতার গুণফল অপরিবর্তিত থাকে।

৪। তাপমাত্রা পরিবর্তনের ফলে দ্রাব্যতা ও দ্রাব্যতার গুণফল উভয়ই পরিবর্তিত হয়।

৫। সাধারণত স্থির তাপমাত্রায় 100g দ্রাবকে যত গ্রাম দ্রব দ্রবীভূত করে সম্পক্ত দ্রবণ তৈরি করা যায় সেই পরিমাণ দ্বারা দ্রাব্যতা নির্ণয় করা যায়। তাই একে গ্রাম/ লিটার বা মোল/ লিটার এককেও প্রকাশ করা হয়। তবে স্থির তাপমাত্রায় স্বল্প দ্রবণীয় লবণের সম্পৃক্ত দ্রবণে আয়নসমূহের যথোপযুক্ত ঘাতবিশিষ্ট ঘনমাত্রার গুণফল দ্বারা দ্রাব্যতার গুণফল হিসাব করা হয়।

আয়নিক গুণফল এবং দ্রাব্যতার গুণফলের মধ্যে পার্থক্য (Differences Between Ionic Product and Solubility Product)

১। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় যে কোনো লবণের যেকোনো দ্রবণে (সম্পৃক্ত বা অসম্পৃক্ত বা অতিপৃক্ত) উৎপন্ন আয়নসমূহের যথোপযুক্ত ঘাতবিশিষ্ট ঘনমাত্রায় গুণফলকে সেই লবণের আয়নিক গুণফল বলে। কিন্তু এটি স্বল্প দ্রবণীয় লবণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে তা দ্রাব্যতার গুণফল নামে পরিচিত।

কোনো লবণের আয়নিক গুণফলের মান ধ্রুবক নয় কিন্তু নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় দ্রাব্যতার গুণফলের মান ধ্রুবক থাকে। আয়নিক গুণফল মূলত দ্রবণের ঘনমাত্রার উপর নির্ভরশীল।

৩। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সম্পৃক্ত দ্রবণে কোনো লবণের সর্বোচ্চ আয়নিক গুণফলই হল দ্রাব্যতার গুণফল।

৪। কোনো দ্রবণের আয়নিক গুণফলের মান দ্রাব্যতার গুণফল অপেক্ষা বেশী হলে দ্রবণ হতে লবণ কেলাসিত বা অধঃক্ষিপ্ত হয়।

৫। আয়নিক গুণফল দ্রবণে যেকোন ঘনমাত্রায় নির্ণয় করা হয় । কিন্তু দ্রাব্যতার গুণফল শুধুমাত্র সম্পৃক্ত দ্রবণের ক্ষেত্রে নির্ণয় করা যায় ।

৬। আয়নিক গুণফল দ্রাব্যতা গুণফল থেকে বেশি হলে অধঃক্ষেপ তৈরি হয়। কিন্তু দ্রাব্যতা গুণফল আয়নিক গুণফল থেকে বেশি হলে অধঃক্ষেপ তৈরি হয় না।

আয়নিক গুণফল এবং দ্রাব্যতার গুণফল-এর মধ্যে সম্পর্ক (Relation between Ionic Product and Solubility Product)

i) Kip>Ksp হলে দ্রবণ থেকে লবণের অধঃক্ষেপণ বা কেলাসন ঘটবে।

(ii) Kip<Ksp হলে দ্রবণটি অসম্পৃক্ত দ্রবণ হবে। দ্রব দ্রবীভূত হবে এবং এক্ষেত্রে কোনো লবণ অধঃক্ষিপ্ত হবে না অর্থাৎ কেলাসন ঘটবে না।

iii) Kip=Ksp হলে দ্রবণটি সম্পৃক্ত হবে এবং এক্ষেত্রে অধঃক্ষেপণ ঘটবে না এবং বিয়োজন বিক্রিয়াটি সাম্যাবস্থায় থাকবে।

সমআয়ন প্রভাব (common ion effect)

যদি কোনো একটি দুর্বল বা মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের দ্রবণে এর কোনো আয়ন সম্বলিত অপর একটি তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ মেশানো হয় তখন মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের বিয়োজন মাত্রা হ্রাস পায়। একই আয়নের প্রভাবে মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের বিয়োজন মাত্রার এই হ্রাসকে সমআয়ন প্রভাব বলে।

যেমন-

(i) মৃদু তড়িৎ বিশ্লেষ্য সিলভার ক্লোরাইডের দ্রবণে তীব্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য সোডিয়াম ক্লোরাইড যোগ করা হলে সাধারণ আয়ন ক্লোরাইড আয়নের প্রভাবে সিলভার ক্লোরাইডের দ্রাব্যতা হ্রাস পায়। একে ক্লোরাইড আয়নের সমআয়ন প্রভাব বলে ।

AgCl \rightleftharpoons Ag^+(aq) + Cl^-(aq)\\ NaCl \rightarrow Na^+(aq)+ Cl^-(aq)\\ Ksp_{(AgCl)}=[Ag^+][Cl^-]

NaCl যোগ করায় দ্রবণে Cl^- এর পরিমাণ বাড়ে ফলে K_{AgCl} এর মানও বাড়ে। কিন্তু নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় K_{AgCl} এর মান ধ্রুবক রাখার জন্য পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়ার মাধ্যমে Ag^+ Cl^- মিলে AgCl এ পরিণত হবে অর্থাৎ AgCl এর দ্রাব্যতা হ্রাস পাবে।

(ii) মনে করি, ইথানয়িক এসিড একটি দুর্বল এসিড যা নিম্নরূপে আয়নিত অবস্থায় থাকে।

CH_2COOH \rightleftharpoons CH_3COO^- (aq)+H^+(aq)

ভর ক্রিয়ার সূত্রমতে, বিক্রিয়াটির সাম্য ধ্রুবক,

Ka=\frac{উৎপাদ  আয়নের  মোলার  ঘনমাত্রা}{বিক্রিয়ক  আয়নের  মোলার  ঘনমাত্রা} \therefore Ka=\frac{[CH_3COO^-][H^+]}{[CH_3COOH]}

 

এই এসিডের দ্রবণে সবল তড়িৎ বিশ্লেষ্য সোডিয়াম ইথানয়েট বা সোডিয়াম এসিটেট যোগ করা হলে তা নিমরূপে আয়নিত হয়।

CH_3COONa\to CH_3COO^-(aq)+Na^+(aq)

লবণ যোগ করা হলে সাধারণ আয়ন এসিটেট আয়ন বা ইথানয়েট আয়নের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রিয়ার Ka এর মান বৃদ্ধি পায় । যেহেতু, স্থির তাপমাত্রায় Ka এর মান ধ্রুবক থাকবে তাই Ka এর মান ধ্রুবক রাখার জন্য কিছু এসিটেট আয়ন হাইড্রোজেন আয়নের সাথে বিক্রিয়া করে পশ্চাৎম্মুখী বিক্রিয়ার মাধ্যমে এসিটিক এসিডে পরিণত হয়। অর্থাৎ, এসিটিক এসিডের বিয়ােজন বিক্রিয়া তথা বিয়োজন হ্রাস পায়। অর্থাৎ দুর্বল এসিড তড়িৎবিশ্লেষ্য এসিটিক এসিডের দ্রাব্যতা কমে গেছে দ্রাব্যতার গুণফল স্থির রাখার জন্য।