10 Minute School
Log in

মহাকর্ষীয় ধ্রুবক ও অভিকর্ষজ ত্বরণের সম্পর্ক (Relation between Gravitational Constant and Acceleration due to Gravity)

মহাকর্ষীয় ধ্রুবক (Gravitational Constant)

নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী Mm ভরের দুটি বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ বল,

F=GMmd2

এখানে G= মহাকর্ষ ধ্রুবক(Gravitational Constant) এবং d= বস্তু দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব 

মনে করি বস্তু দুটির মধ্যকার ভর এক একক এবং তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বও এক একক অর্থাৎ M=1m=1 একক এবং d=1 একক হলে,

F=G×1×11×1

বা, F=G …   …   …   (6.8)

এই সমীকরণ অনুযায়ী মহাকর্ষ ধ্রুবককে নিম্নলিখিত উপায়ে সংজ্ঞায়িত করতে পারি।

একক ভরবিশিষ্ট দুটি বস্তুকণা একক দূরত্বে থেকে যে পরিমাণ বল দ্বারা পরস্পরকে আকর্ষণ বা  তার সংখ্যাগত মানকে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক(Gravitational Constant) বলে। G এর মান বস্তুর ভরের উপর বা ভরকেন্দ্র হতে বস্তুর দূরত্বে উপর নির্ভর করে না। 

এস. আই. পদ্ধতিতে এর মান 6.673×10-11 N m2kg-2

মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের মাত্রা: [G]=[MT-2L3]

মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, G কে সর্বজনীন ধ্রুবক বলে। 

অভিকর্ষজ ত্বরণ (Acceleration due to gravity)

নিউটনের গতির সূত্র অনুসারে বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে ত্বরণ সৃষ্টি হয়। অভিকর্ষও একটি বল। বল কোনো একটি বস্তুর উপর ক্রিয়া করে ত্বরণ সৃষ্টি করবে। অতএব, বস্তুতে অভিকর্ষ বল কর্তৃক যে ত্বরণ, উৎপন্ন হয় তাকে অভিকর্ষজ ত্বরণ(Acceleration due to gravity) বলে। অথবা কোনো স্থানে অভিকর্ষের টানে মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর বেগ যে হারে বৃদ্ধি পায় তাকে ঐ স্থানের অভিকর্ষজ বা অভিকর্ষীয় ত্বরণ(Acceleration due to gravity) বলে। একে ‘g’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

পরীক্ষার সাহায্যে জানা গেছে, বাধাহীন পথে ও একই স্থান হতে সকল বস্তু সমত্বরণে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে পতিত হয়। স্থানভেদে এই ত্বরণের মান বিভিন্ন। সুতরাং অভিকর্ষজ ত্বরণ বস্তু নিরপেক্ষ, স্থান নিরপেক্ষ নয়।

এর একক এম. কে. এস. ও আন্তর্জাতিক SI পদ্ধতিতে মিটার/সে2 এর মাত্রা সমীকরণ =[LT-2]। 

মহাকর্ষীয় ধ্রুবক ও অভিকর্ষজ ত্বরণের সমীকরণ (Equation of gravitational constant and acceleration due to gravity)

Gravitational-Constant

মনে করি ‘m‘ ভরবিশিষ্ট একটি বস্তুকণা পৃথিবী পৃষ্ঠে অবস্থিত এবং পৃথিবী একটি গোলাকার বস্তু। যদি পৃথিবীর ভর ‘M’ এবং ব্যাসার্ধ ‘R’ হয়, তবে নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র হতে আমরা পাই,

F=GMmR2…   …   …   (6.9)

পুনরায়, নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্র হতে আমরা পাই, 

বল = ভর ত্বরণ

অভিকর্ষীয় বল = বস্তুর ভর অভিকর্ষজ ত্বরণ। অর্থাৎ,

F=mg…   …   …   (6.10)

সমীকরণ (6.9) এবং সমীকরণ (6.10) হতে আমরা পাই,

mg=GMmR2

বা, g=GMR2…   …   …   (6.11)

এই সমীকরণ মহাকর্ষীয় ধ্রুবক ও অভিকর্ষ ত্বরণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।

অর্থাৎ অভিকর্ষজ ত্বরণ = মহাকর্ষ ধ্রুবক ×পৃথিবীর ভরপৃথিবীর ব্যাসার্ধ2

ইহাই ভূ-পৃষ্ঠে অভিকর্ষজ ত্বরণের সমীকরণ যা অভিকর্ষজ ত্বরণ এবং মহাকর্ষ ধ্রুবক G-এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। এই সমীকরণ অনুসারে অভিকর্ষজ ত্বরণ g বস্তুর ভর m-এর উপর নির্ভর করে না, দূরত্বের উপর নির্ভর করে। আবার, আমরা জানি G এবং M ধ্রুব রাশি। অতএব ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থানে ‘g’-এর মান ভূ-কেন্দ্র হতে ঐ স্থানের দূরত্বের উপর নির্ভর করে।

এটি হতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, ভূ-পৃষ্ঠের কোনো একটি স্থানে g-এর মান নির্দিষ্ট, কিন্তু স্থানভেদে এর পরিবর্তন ঘটে। পৃথিবীর ভর M=5.983×1024 kg এবং ব্যাসার্ধ R= 6.36×106 m ধরে উপরের সমীকরণ অনুসারে ভূ-পৃষ্ঠে g-এর মান হয়,

g=6.673×10-11 N m2kg-25.983×1024 kg 6.36×106 m2=9.8465 ms-2

মহাকর্ষীয় ধ্রুবক (Gravitational Constant)ও অভিকর্ষীয় ত্বরণ (acceleration due to gravity) এর মধ্যে সম্পর্ক থেকে আমরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জানতে পারি-

  1. G একটি সর্বজনীন ধ্রুবক, অন্যদিকে g একটি পরিবর্তনশীল রাশি 
  2. G এর মান 6.673×10-11 N m2kg-2, অন্যদিকে g এর মান 9.8 ms-2 
  3. G একটি স্কেলার রাশি, অন্যদিকে g একটি ভেক্টর রাশি।
  4. এর মান বস্তুর ভরের উপর বা ভূ-কেন্দ্র হতে বস্তুর দূরত্বের উপর নির্ভর করে না। অন্যদিকে g এর মান ভরের উপর নির্ভর করে না। কিন্তু ভূ-কেন্দ্র হতে বস্তুর দূরত্বের উপর নির্ভর করে।

G এবং g এর সম্পর্ক থেকে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করা হলো: পৃথিবী কেন ভর নিরপেক্ষভাবে সকল বস্তুতে সমান ত্বরণ সৃষ্টি করে? এর জবাবে নিশ্চয় তোমরা বলবে, পৃথিবীর ভর ও ব্যাসার্ধ যথাক্রমে MR ধরা হলে,

পৃথিবী পৃষ্ঠে m ভরের কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে, 

mg=GMmR2∴ g=GMR2

যেহেতু এই সমীকরণে বস্তুর ভর m অনুপস্থিত। কাজেই অভিকর্ষজ ত্বরণ বস্তুর ভর নিরপেক্ষ । সুতরাং R ধ্রুবক হলে কোনো স্থানের অভিকর্ষজ ত্বরণ ধ্রুবক ও বস্তুর ভর নিরপেক্ষ হয়।

আবার G কেন সর্বজনীন ধ্রুবক? যেহেতু বস্তুকণার মধ্যে মহাকর্ষীয় বল কণা দুটির মধ্যে কোনো মাধ্যমের উপস্থিতি অথবা প্রকৃতির উপর নির্ভর করে না, এই বল কণা দুটির প্রকৃতি, রাসায়নিক গঠন বা উষ্ণতার উপর নির্ভরশীল নয়। এ সকল কারণে G-কে সর্বজনীন ধ্রুবক বলা হয়। 

কাজ: পৃথিবী সূর্যের চারদিকে বৃত্তাকার পথে ঘুরছে ধরে দেখাও যে, একক সময়ে পৃথিবীর কক্ষপথ যে ক্ষেত্রফল  তৈরি করে তা একটি ধ্রুবক। 

মনে করি, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে r ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার পথে পৃথিবীর কৌণিক বেগ ধ্রুবক হবে। মনে করি, সময়ের অতি ক্ষুদ্র অবকাশ ∆t-তে সূর্য ও পৃথিবীর সংযোজক সরলরেখা OP অতিক্ষুদ্র কোণ উৎপন্ন করে। এক্ষেত্রে উৎপন্ন চাপ PQ=r∆. অত্যন্ত ক্ষুদ্র বলে আমরা এটিকে সরলরেখা বলে গণ্য করতে পারি।

                                           

Gravitational-Constant

সুতরাং, পৃথিবী ও সূর্যের সংযোজক সরলরেখা দ্বারা বর্ণিত ক্ষেত্রফল

=△OPQ-এর ক্ষেত্রফল =12PQ×OP=12r∆θ×r=12r2∆θ

একক সময়ে বর্ণিত ক্ষেত্রফল =12r2∆θ∆t=12r2

এখানে, r,ω উভয়ই ধ্রুবক। সুতরাং একক সময়ে বর্ণিত ক্ষেত্রফলও ধ্রুবক। 

ক্রিয়াকর্ম: সূর্য যে মহাকর্ষ বল চন্দ্রের উপর প্রয়োগ করে তা পৃথিবীর চন্দ্রের উপর প্রযুক্ত বল থেকে বেশি; তাহলে চন্দ্র কেন পৃথিবী থেকে মুক্ত হয়ে যায় না?

পৃথিবী ও চন্দ্র একটি তন্ত্রের সৃষ্টি করে যার ভরকেন্দ্র সূর্যকে আবর্তন করে। তাই চন্দ্রের, পৃথিবী থেকে বিছিন্ন হওয়া সম্ভব নয়।