10 Minute School
Log in

নিউক্লিয়াসের ভর ত্রুটি (Mass Defect)

কোনো নিউক্লিয়াসের প্রোটনের সংখ্যা Z ও নিউট্রনের সংখ্যা N। যদি প্রোটন ও নিউট্রনের ভর যথাক্রমে M_pM_n হয়, তবে নিউক্লিয়াসের মোট ভর

M= প্রোটনের ভর + নিউট্রনের ভর = নিউক্লীয় ভর

বা, \mathrm{M}=\mathrm{ZM}_{p}+\mathrm{NM}_{n}

কিন্তু কোনো স্থায়ী নিউক্লিয়াসের ভর তার গঠনকারী উপাদানসমূহের যুক্তাবস্থার ভরের যোগফল অপেক্ষা কিছুটা কম হতে দেখা যায়। ভরের এই পার্থক্যকে ভর-ত্রুটি বা ভর ঘাটতি বলে। একে সাধারণত \triangle m দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

ভর-ত্রুটি, \Delta \mathrm{m}=\mathrm{ZM}_{\mathrm{p}}+\mathrm{NM}_{\mathrm{n}}-\mathrm{M} 

বা, \Delta \mathrm{m}=\mathrm{ZM}_{p}+(\mathrm{A}-\mathrm{Z}) \mathrm{M}_{n}-\mathrm{M}

এখানে, A= ভরসংখ্যা এবং N=(A–Z)

নিউক্লিয়াস গঠিত হবার মুহুর্তে এই ভর শক্তি হিসেবে বিকিরিত হয় এবং এই শক্তি নিউক্লিয়াস গঠনকালে বন্ধন শক্তির পরিমাপের সমান।

ভর এটিকে আবার নিম্নলিখিত উপায়েও প্রকাশ করা যায়। 

একটি নিউক্লিয়াসের প্রকৃত ভর বা নিউক্লীয় ভর =M_{nuc}

প্রোটন সংখ্যা =Z

নিউট্রন সংখ্যা =N

একটি প্রোটনের ভর =M_p

একটি নিউট্রনের ভর =M_n

\therefore ভর ত্রুটি, \Delta \mathrm{m}=\mathrm{ZM}_{p}+\mathrm{NM}_{n}-\mathrm{M}_{n u c} 

এখানে মৌলের নিউক্লীয় ভর = মৌলের পারমাণবিক ভর ইলেকট্রনের ভর

বা, \mathrm{M}_{\text {nuc }}=\mathrm{M}_{\text {atm }}-\mathrm{ZM}_{e}

\begin{aligned} \Delta \mathrm{m} &=\left(\mathrm{ZM}_{p}+\mathrm{NM}_{n}\right)-\left(\mathrm{M}_{a t m}-\mathrm{ZM}_{e}\right) \\ &=\mathrm{ZM}_{p}+\mathrm{NM}_{n}-\mathrm{M}_{a t m}+\mathrm{ZM}_{e} \\ &=\mathrm{ZM}_{p}+\mathrm{ZM}_{e}+\mathrm{NM}_{n}-\mathrm{M}_{a t m} \\ &=\mathrm{Z}\left(\mathrm{M}_{p}+\mathrm{M}_{e}\right)+\mathrm{NM}_{n}-\mathrm{M}_{a t m} \\ \therefore \Delta \mathrm{m} &=\mathrm{ZM}_{\mathrm{H}}+\mathrm{NM}_{n}-\mathrm{M}_{a t m} \end{aligned}

[হাইড্রোজেনের পারমাণবিক ভর, M_H=M_p+M_e]

বন্ধন শক্তি (Binding energy)

(ক) কোনো প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিউক্লিয়ন একত্রিত হয়ে একটি স্থায়ী নিউক্লিয়াস গঠন করতে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত বা শোষিত হয় তাকে নিউক্লীয় বন্ধন শক্তি বলে। একে B. E. দ্বারা ব্যক্ত করা হয়।

(খ) কোনো নিউক্লিয়াসকে ভেঙে এর নিউক্লিয়নগুলোকে পরস্পরের প্রভাব হতে মুক্ত করতে নিউক্লিয়াসকে বাহির হতে যে পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করতে হয় তাকে বন্ধন শক্তি বলে।

উল্লেখ্য থাকে যে, নিউক্লিয়নগুলোকে একত্রকারী নিউক্লীয় বলের ক্রিয়া হতে নিউক্লীয় বন্ধন শক্তি উদ্ভূত হয় এবং এটা নিউক্লিয়াসের স্থায়িত্বের জন্য দায়ী। বন্ধন শক্তি বেশি হলে নিউক্লিয়াস অধিকতর স্থায়ী হয়।

মনে করি নিউক্লিয়াসের ভর-ত্রুটি =∆m এবং আলোকের বেগ =c। অতএব আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ হতে পাই,

বন্ধন শক্তি,

\therefore \text { B. E. }=\Delta \mathrm{mc}^{2}=\text { ভরত্রুটি } \times(\text { আলোকের বেগ })^{2}

\text { B. E. }=\left[\mathrm{ZM}_{\mathrm{p}}+(\mathrm{A}-\mathrm{Z}) \mathrm{M}_{n}-\mathrm{M}\right] \mathrm{c}^{2}

এটিই হলো নিউক্লীয় বন্ধন শক্তির চূড়ান্ত রাশিমালা।

বি.দ্র. বন্ধন শক্তির জন্য অন্য সমীকরণও ব্যবহার করা যায়। 

\therefore \text { B. E. }=\Delta \mathrm{mc}^{2}=\left[\mathrm{ZM}_{\mathrm{p}}+(\mathrm{A}-\mathrm{Z}) \mathrm{M}_{n}-\mathrm{M}\right] \mathrm{c}^{2}

এবং \text { B. E. }=\left[\mathrm{ZM}_{\mathrm{n}}+\mathrm{NM}_{n}-\mathrm{M}_{\mathrm{atm}}\right] \mathrm{c}^{2}

সমীকরণ 9.189.18(a)9.18(b) হলো বন্ধন শক্তির সমীকরণ।

সমীকরণ 9.189.18(a)9.18(b) সমীকরণের ভরসমূহ একীভূত পারমাণবিক ভর একক (amu) অথবা কিলোগ্রাম (kg) এককে প্রকাশ করা যায়। 

আমরা জানি, \mathrm{E}= 1  \mathrm{amu} \times \mathrm{c}^{2}=931.5 \mathrm{MeV} \approx 931 \mathrm{MeV}

বা, 1  \mathrm{amu}=931 \mathrm{MeV} / \mathrm{c}^{2}

প্রতি নিউক্লিয়নে বন্ধন শক্তি (Binding Energy per Nucleon)

কোনো নিউক্লিয়াসের মোট বন্ধন শক্তি এবং ভর সংখ্যার অনুপাতকে প্রতি নিউক্লিয়নে বন্ধন শক্তি বলা হয়। মোট বন্ধন শক্তিকে ভর সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে প্রতি নিউক্লিয়নে বন্ধন শক্তি নির্ণয় করা হয়। একে গড় বন্ধন শক্তিও বলা হয়।

গড় বন্ধন শক্তি =\frac{মোট বন্ধন শক্তি}{মোট নিউক্লিয়ন সংখ্যা}

=\frac{B \cdot E}{A}=\frac{\Delta m c^{2}}{A}   \mathrm{MeV} / \text { nucleon }

গড় বন্ধন শক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাশি। কোনো নিউক্লিয়াসের গড় বন্ধন শক্তি ভর সংখ্যার ওপর নির্ভর করে। ভর সংখ্যার পরিবর্তনে গড় বন্ধন শক্তি পরিবর্তিত হয়।

প্রতি নিউক্লিয়নের বন্ধন শক্তি ও নিউক্লিয়াসের স্থায়িত্ব

image 34

যে ভর সংখ্যা A-এর বৃদ্ধির সাথে E_B/A প্রথমে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কিছু কিছু নিউক্লিয়াস যেমন \mathrm{He}^{4}, \mathrm{C}^{12} 0^{16} এর মান তুলনামূলকভাবে বেশি। অতএব, এই নিউক্লিয়াসগুলি আশেপাশের নিউক্লিয়াসগুলির তুলনায় বেশি স্থায়ী।

পর্যায় সারণির (periodic table) মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত মৌলগুলির (50<A<40) নিউক্লিয়াসগুলি সবচেয়ে সুস্থিত। কেননা এদের নিউক্লিয়াস থেকে একটি নিউক্লিয়ন বিচ্ছিন্ন করতে অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। লেখচিত্র থেকে দেখা যায় যে এই অঞ্চলের নিউক্লিয়াসগুলির প্রতি নিউক্লিয়ন বন্ধন শক্তি (E_B/A) প্রায় ৪5 MeV^{56}Feএর ক্ষেত্রে এই মান হলো ৪.৪ MeV  যা সর্বোচ্চ। সুতরাং বলা যায় যে লোহা সর্বাধিক স্থায়ী নিউক্লিয়াসগুলির অন্যতম।

অত্যন্ত হাল্কা (A < 20) এবং ভারী (A > 100) নিউক্লিয়াসের বেলায় EB/A-এর মান কম। তাই ভারী নিউক্লিয়াস (A > 200) বিভাজিত হয়ে এবং হাল্কা নিউক্লিয়াস সংযোজিত হয়ে স্থায়ী নিউক্লিয়াসে পরিণত হতে সচেষ্ট হয়। এ কারণেই _{92}U^{295} নিউক্লিয়াসের ভাঙন বা বিভাজন এবং _1H^2 নিউক্লিয়াসের সংযোজন তুলনামূলকভাবে সহজ।

নিউক্লীয় বিক্রিয়া (Nuclear Reaction)

তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে নিঃসৃত আলফা কণিকা \left({ }_{2}^{4} \mathrm{He}\right)-এর সাহায্যে রাদারফোর্ড সর্বপ্রথম নাইট্রোজেন নিউক্লিয়াস ভাঙতে সক্ষম হন। কৃত্রিম উপায়ে একটি নিউক্লিয়াস ভেঙে অন্য একটি নিউক্লিয়াস সৃষ্টির এটিই প্রথম ঘটনা। এটিই হচ্ছে প্রথম নিউক্লীয় বিক্রিয়া (Nuclear Reaction)। অর্থাৎ কৃত্রিম উপায়ে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন মৌল গঠন করার প্রক্রিয়াকে নিউক্লীয় বিক্রিয়া বলে। নিউক্লীয় বিক্রিয়া হলো একটি নিউক্লীয় ঘটনা। নাইট্রোজেন নিউক্লিয়াসে যে বিক্রিয়া ঘটে তা নিম্নরূপ :

{ }^{14} \mathrm{~N}+{ }_{2}^{4} \mathrm{He} \rightarrow{ }^{17} \mathrm{O}+p

বিক্রিয়ার ফলে নির্গত কণিকাকে প্রোটন কণিকা বলে।

পরবর্তীকালে কক্রফট (S. D. Cockroft) এবং ওয়ালটন (E.T.S. Walton) কৃত্রিমভাবে ত্বরান্বিত (Accelerated) প্রোটন কণিকার সাহায্যে নিম্নলিখিত বিক্রিয়া ঘটান—

{ }^{7} \mathrm{Li}+p \rightarrow \mathrm{He}+\alpha

পরবর্তী সময়ে আলফা কণিকা, নিউট্রন কণিকা ও অন্যান্য কণিকা ব্যবহার করে অনেক নিউক্লীয় বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এবং নিউক্লিয়াসের গঠন, অভ্যন্তরীণ বিন্যাস, প্রকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আহরণ করা সম্ভব হয়েছে।

একটি নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় নিম্নলিখিত ভৌত রাশি (Physical quantities) সংরক্ষিত হয়। যথা : 

(ক) নিউক্লিয়ন সংখ্যা (Nucleon number) 

(খ) তড়িৎ আধান (Electric charge) 

(গ) সামগ্রিক ভরশক্তি (Total mass-energy)

(ঘ) রৈখিক ভরবেগ (Linear momentum) 

(ঙ) কৌণিক ভরবেগ (Angular momentum) 

(চ) আইসোটোপিক স্পিন (Isotopic spin) এবং

(ছ) সমতা (Parity) 

রাসায়নিক বিক্রিয়া ও নিউক্লীয় বিক্রিয়ার পার্থক্য কী ?

(ক) রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষপথের ইলেকট্রন অংশগ্রহণ করে এবং এর ফলে নতুন কোনো পরমাণু উৎপন্ন হয় না। কিন্তু নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় পরমাণুর নিউক্লিয়াস পরিবর্তিত হয়ে নতুন মৌলের পরমাণু সৃষ্টি হয়।

(খ) রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট শক্তি খুব কম, মাত্র eV ক্ৰমের। পক্ষান্তরে নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় শক্তির পরিমাণ অনেক বেশি, MeV ক্ৰমের।

চেইন বিক্রিয়া বা শৃঙ্খল বিক্রিয়া (Chain Reaction)

চেইন বা শৃঙ্খল বিক্রিয়া এমন একটি প্রক্রিয়া যা একবার শুরু হলেই তাকে চালাবার জন্য অন্য কোনো অতিরিক্ত উৎস বা শক্তির প্রয়োজন হয় না।

image 36

অনিয়ন্ত্রিত চেইন বিক্রিয়ায় এক সেকেণ্ডের লক্ষ ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে ফিশন বিক্রিয়া হাজার গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। 

নিউক্লীয় ফিউশন (Nuclear fusion)

যে প্রক্রিয়ায় একাধিক হালকা নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে একটি অপেক্ষাকৃত ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং অত্যধিক শক্তি নির্গত হয়, তাকে নিউক্লীয় ফিউশন বা নিউক্লীয় সংযোজন বলে। এ জন্য ফিউশনকে ফিশনের বিপরীত প্রক্রিয়া বলা হয়। ফিউশন অত্যধিক উচ্চ তাপমাত্রায় সংঘটিত হয় বলে এই বিক্রিয়াকে তাপ-নিউক্লীয় বিক্রিয়া (Thermonuclear reaction) বলে। এই তাপমাত্রার মান প্রায় 10^{8} \mathrm{C}

ফিউশনে হাইড্রোজেন আইসোটোপডিউটেরন \left({ }_{1}^{2} \mathrm{H} \text { বা }{ }_{1}^{2} \mathrm{D}\right), ট্রাইটিয়াম বা ট্রাইটন \left({ }_{1}^{3} \mathrm{H}\right) ব্যবহার করা হয়। যখন 800  kms^{-1} বেগসম্পন্ন ট্রাইটিয়াম নিউক্লিয়াস-এর সঙ্গে ডিউটেরিয়াম নিউক্লিয়াসের সংঘর্ষ ঘটে, তখন ফিউশন প্রক্রিয়ায় হিলিয়াম নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। এবং এর সঙ্গে প্রচণ্ড শক্তি বিমুক্ত হয়।

{ }_{1}^{3} \mathrm{H}+{ }_{1}^{2} \mathrm{D} \rightarrow{ }_{2}^{4} \mathrm{He}+{ }_{0}^{1} \mathrm{n}+\text { শক্তি }

এই ধরনের প্রতিটি ফিউশন বিক্রিয়ায় 17.6 MeV শক্তি বিমুক্ত হয়। সূর্যের ভিতরে ফিউশন বিক্রিয়া সংঘটিত হচ্ছে এবং প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হচ্ছে, যার খুবই সামান্য অংশ আমাদের পৃথিবী পৃষ্ঠে আসে।

সূর্য ও নক্ষত্রসমূহের শক্তি : তাপ-নিউক্লীয় বিক্রিয়ার মাধ্যমে সূর্য ও নক্ষত্রসমূহের অভ্যন্তরে শক্তি উৎপন্ন হয়। এদের নিউক্লীয় অঞ্চলের কয়েক কোটি সেলসিয়াস ডিগ্রি তাপমাত্রা এই ধরনের নিউক্লীয় ফিউশনের জন্য উপযোগী। 

বিজ্ঞানীদের নিকট বর্তমানে স্বীকৃত তত্ত্ব হলো এরূপ যে সূর্যের অভ্যন্তরে কয়েকটি ধাপে তাপ-নিউক্লীয় বিক্রিয়ার একটি চক্র সম্পূর্ণ হয়। প্রতিটি চক্রে চারটি প্রোটনের নিউক্লীয় ফিউশনের ফলে একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস ও দুটি পজিট্রন উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ,

{ }_{1} \mathrm{H}^{1}+{ }_{1} \mathrm{H}^{1}+{ }_{1} \mathrm{H}^{1}+{ }_{1} \mathrm{H}^{1} \rightarrow{ }_{2} \mathrm{He}^{4}+{ }_{1} \mathrm{e}^{0}+{ }_{1} \mathrm{e}^{0}

এই বিক্রিয়ায় ভর হ্রাস = 4টি প্রোটনের ভর  একটি হিলিয়াম

_2He^4 ও দুটি পজিট্রনের মিলিত ভর = 4(1.008)–(4.003+20.00055)=0.0279 amu

এখানে, প্রোটনের ভর, m=1.008 amu, হিলিয়ামের ভর =4.003 amu এবং পজিট্রনের ভর =0.00055 amu

সুতরাং, এর তুল্য শক্তি = 0.0279931 MeV = 26 MeV

নিউক্লীয় ফিশন (Nuclear fission)

যে প্রক্রিয়ায় ভারী পরমাণুর নিউক্লিয়াস বিশ্লিষ্ট হয়ে প্রায় সমান ভরের দুটি নিউক্লিয়াস তৈরি হয় এবং বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়, তাকে নিউক্লীয় ফিশন বা নিউক্লিয়ার বিভাজন বলে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ইউরেনিয়াম নিউক্লিয়াসকে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন নিউট্রন, প্রোটন বা ডিউটেরন দ্বারা আঘাত করলে নিউক্লিয়াসের ফিশন ঘটে।

{ }_{92}^{235} \mathrm{U}+(\text { তাপীয় নিউট্রন }){ }_{0}^{1} \mathrm{n}^{1} \rightarrow\left[{ }_{92}^{235} \mathrm{U}\right]^{+} \rightarrow{ }_{56}^{141} \mathrm{Ba}+{ }_{36}^{92} \mathrm{Kr}+(\text { দ্রত গতি নিউট্রন }) 3{ }_{0}^{1} \mathrm{n}^{1}(\text { শক্তি }(\text { তাপীয় শক্তি) }) 200 \mathrm{MeV}

অর্থাৎ ইউরেনিয়াম { }_{92}^{235} \mathrm{U}-কে তাপীয় নিউট্রন দ্বারা আঘাত করায় এটি নিউট্রনকে আটক করে অস্থায়ী যৌগিক নিউক্লিয়াস [ \left.{ }_{92}^{235} \mathrm{U}\right]^{+}-\Omega-এ পরিণত হয় যার স্থায়িত্বকাল 10^{-12} \mathrm{~s}। এই অস্থায়ী নিউক্লিয়াস ফিশন প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে বেরিয়াম ও ক্রিপটন নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং 1টি হতে 3টি দ্রুতগতিসম্পন্ন নিউট্রন সৃষ্টি হয়। এই নিউট্রনগুলোর আরও ইউরেনিয়াম নিউক্লিয়াসে ফিশন ঘটে। এরূপ ধারাবাহিকভাবে ফিশন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। { }_{92}^{235} \mathrm{U} নিউক্লিয়াসকে নিউট্রন দ্বারা আঘাত করলে শুধু সমীকরণ (9.19) বিক্রিয়াই সংঘটিত হয় না। বহু ধরনের বিক্রিয়া ঘটে। যেমন,

{ }_{92}^{235} \mathrm{U}+{ }_{0}^{1} \mathrm{n}^{1} \rightarrow\left[{ }_{92}^{235} \mathrm{U}\right]^{+} \rightarrow{ }_{54}^{140} \mathrm{Xe}+{ }_{38}^{94} \mathrm{Sr}+2{ }_{0}^{1} \mathrm{n}+(\text { শক্তি }) 200 \mathrm{MeV}

এক্ষেত্রে 1টি হতে 2টি নিউট্রন সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো বিক্রিয়ায় 5টি পর্যন্ত নিউট্রন সৃষ্টি হয়। প্রতি ফিশনে গড়ে 2.5 সংখ্যক নিউট্রন সৃষ্টি হয়।

প্রতিটি ফিশনে প্রায় 200 Mev শক্তি উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে আণবিক বোমার বিস্ফোরণে রুপ নিবে। আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তা হবে আণবিক চুল্লীতে সংঘটিত নিয়ন্ত্রিত ফিশন বিক্রিয়া। যার মাধ্যমে টারবাইনের সাহায্যে জেনারেটর থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। বাংলাদেশের পাবনার রূপপুর আণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও এই প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হবে।

1934 খ্রিস্টাব্দে ফিশন প্রক্রিয়ার আবিষ্কার শুরু করেন বিজ্ঞানী ফার্মি (Fermi) । কিন্তু পরবর্তীতে 1939 খ্রিস্টাব্দে এই প্রক্রিয়া আবিস্কার করেন জার্মান বিজ্ঞানী অটো হান (Otto Hann) এবং তার দুজন সহযোগী স্ট্রাসম্যান (Strassmann) ও মাইট্রার (Meitner) ।

পারমাণবিক চুল্লি বা নিউক্লীয় চুল্লি (nuclear reactor)

যে যন্ত্রে নিয়ন্ত্রিত চেইন বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিপুল পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় তাকে পারমাণবিক চুল্লি বা নিউক্লীয় চুল্লি বলে। 

পারমাণবিক চুল্লিতে মূলত { }_{92}^{235} \mathrm{U} ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ইউরেনিয়ামের মধ্যে U^{238}U^{235} প্রায় 142 : 1 অনুপাতে থাকে। প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামের মধ্য দিয়ে তাপীয় নিউট্রন (Thermal neutron) পাঠালে U^{235}-এর বিভাজন হয়। পক্ষান্তরে U^{238} নিউট্রনকে শোষণ করে। তাই শৃঙ্খল বিক্রিয়া চালু রাখার জন্য প্রাকৃতিক ইউরিনিয়াম নমুনায় U^{235}–এর অনুপাত বাড়ানোর প্রয়োজন হয়। প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে U^{238} সরালেই U^{235}-এর অনুপাত বেড়ে যায়। এই ধরনের ইউরেনিয়ামকে সমৃদ্ধ (enriched) ইউরেনিয়াম বলে।

চিত্র -এ একটি নিউক্লীয় চুল্লির সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাদির নকশা দেখানো হয়েছে। চিত্রে প্রদর্শিত মজ্জা বা কোর (core)-এর মধ্যে জ্বালানি দণ্ড (এক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম), মডারেটর, নিয়ন্ত্রক দণ্ড ও শীতলকারক পদার্থ (coolant) বা শীতক থাকে। দ্রুতগতিসম্পন্ন নিউট্রনগুলিকে মন্দীভূত করার জন্য মডারেটর ব্যবহার করা হয়। মডারেটর হিসেবে ভারী পানি (heavy water), গ্রাফাইট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। শৃঙ্খল ক্রিয়া শুরু, বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়ন্ত্রক দণ্ড ব্যবহার করা হয়। ক্যাডমিয়াম বা বোরন দণ্ড নিয়ন্ত্রক দণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

image 39

কার্যনীতি (Working principle):

U^{235}এর জ্বালানি দণ্ড, তাপীয় নিউট্রনের আঘাতে বিভাজিত হয়ে উচ্চ বেগসম্পন্ন গৌণ নিউট্রন উৎপন্ন হয়। গৌণ নিউট্রন উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথে সাধারণত মডারেটর দ্বারা মন্দীভূত হয়ে পরবর্তী নিউক্লীয় বিভাজনের জন্য তৈরি হয়। ভারী পানি নিউট্রনকে শোষণ করে না, তবে নিউট্রনের শক্তি শোষণ করে। প্রয়োজনমতো নিউট্রনকে শোষণ করার কাজে ক্যাডমিয়াম দণ্ডের সেট ব্যবহার করা হয়। ক্যাডমিয়াম দণ্ডগুলি ওপরে নিচে চলাচলের মাধ্যমে নিউট্রনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। মজ্জার অভ্যন্তরস্থ স্থানে উৎপন্ন উচ্চ তাপকে মজ্জার বাহিরে এনে ওই তাপশক্তিকে তাপ বিনিময় যন্ত্রের সাহায্যে কাজে লাগিয়ে পানিকে বাষ্পে পরিণত করা হয়। টারবাইন ঘুরানোর জন্য মাধ্যমে বিদ্যুৎশক্তি উৎপন্ন করা হয়। আবার উচ্চ চাপের অধীনে পানিকে শীতলকারক হিসেবে মজ্জার মধ্যে পাঠানো হয়। এর ফলে মজ্জার তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিরাপত্তাজনিত কোনো কারণে নিউক্লীয় চুল্লি বন্ধ করার জন্য অতিরিক্ত ক্যাডমিয়াম দণ্ডের সেট রাখা হয় যা প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়।