যকৃতের বিপাকীয় ভূমিকা (Metabolic functions of liver)
যকৃতের বিপাকীয় ভূমিকা (Metabolic functions of liver)

১. শর্করা বিপাক (Metabolism of sugars)
- গ্লাইকোজেনেসিস (Glycogenesis) : শর্করা বিপাকে যকৃতই দেহে গ্লুকোজ প্রতি ১০০ ঘন সেন্টিমিটারে ৯০ মিলিগ্রাম গ্লুকোজ হিসাবে নিয়ন্ত্রণ করে। গ্যালাকটোজ, ফ্রুকটোজসহ সমস্ত হেক্সোজ চিনিকে যকৃত গ্লুকোজে পরিবর্তিত করে গ্লাইকোজেন (glycogen) নামক অদ্রবণীয় পলিস্যাকারাইড হিসাবে জমা রাখে। গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন রূপান্তর প্রক্রিয়াটিকে গ্লাইকোজেনেসিস বলে। প্রক্রিয়াটি ইনসুলিন এর উপস্থিতিতে উদ্দীপ্ত হয়।
- গ্লুকোনিওজেনেসিস (Glucuneogenesis) : নন কার্বোহাইড্রেট উৎস যেমন অ্যামিনো এসিড ও গ্লিসারল প্রভৃতি থেকে গ্লুকোজ সংশ্লেষণের প্রক্রিয়াকে গ্লুকোনিওজেনেসিস বলে।
২. প্রোটিন বিপাক (Protein Metabolism)
- ডিঅ্যামিনেশন (Deamination) : কোন অ্যামিনো এসিড বা অন্য উপাদান থেকে অ্যামিনো গ্রুপের অপসারণ প্রক্রিয়াকে ডিঅ্যামিনেশন বলে। যকৃত অতিরিক্ত ও অব্যাবহিত অ্যামিনো এসিড ডিঅ্যামিনেশন প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে কিটো এসিড ও আমিন মূলক (-NH_2) তৈরি করে। কিটো এসিড শক্তি উৎপাদনের জন্য ক্রেবস চক্রে প্রবেশ করে। অ্যামিন মূলক (-NH_2) হাইড্রোজেন (H^+) আয়ন এর সাথে যুক্ত হয়ে অ্যামোনিয়া (NH_3) উৎপন্ন করে।
- ইউরিয়া তৈরি (Urea formation) : যকৃতের অরনিথিন চক্রে (Ornithine cycle) শর্করা বিপাকে সৃষ্ট CO_2 এর সাথে এমোনিয়া যুক্ত হয়ে ইউরিয়া সৃষ্টি করে। ইউরিয়া রক্তবাহিত হয়ে বৃক্ক থেকে মুত্ররূপে দেহে নির্গত হয়।
- প্লাজমা প্রোটিন সংশ্লেষ (Synthesis of plasma proteins) : যকৃতে যেসব প্লাজমা প্রোটিন সংশ্লেষিত হয় সেগুলো হচ্ছে: অ্যালবুমিন, লিপোপ্রোটিন, ট্রানস্ফেরিন, সেরোপ্লাজমিন, গ্লোবিউলিন, \alpha_1 ফিটোপ্রোটিন এবং রক্ত তঞ্চন ফ্যাক্টর
৩. ফ্যাট বিপাক (Fat Metabolism) :
- অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটকে ফ্যাটে রূপান্তর।
- রক্ত থেকে কোলেস্টেরল সরিয়ে নেওয়া।
- গ্লুকোজের ঘাটতি হলে শ্বসনের উদ্দেশ্যে যকৃতকে ভেঙে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে।
- গ্লুকোনিওজেনেসিস প্রক্রিয়ায় গ্লিসারোল গ্লুকোজের রূপান্তরিত হয়।
৪. লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন ও ভাঙন (Production and Destruction of Red Blood Cells):
শিশুর দেহে লোহিত কণিকা উৎপাদনের যকৃত নিয়োজিত থাকে।
৫. হিমোগ্লোবিনের ভাঙ্গন (Breakdown of Hemoglobin) :
যকৃতের ম্যাক্রোফেজকে কাপফার কোষ (Kupffer cell) বলে। ম্যাক্রোফেজ-এর অভ্যন্তরে হিমোগ্লোবিন ভেঙ্গে হিম ও গ্লোবিন গঠন করে। গ্লোবিন হচ্ছে অনুরূপ প্রোটিন অংশ, তার নিজস্ব অ্যামিনো এসিডে বিশ্লিষ্ট হয়। হিম থেকে আয়রন অংশ সরে গেলেও নির্বাচনে অংশ বিলিভারডিন (biliverdin) নামে সবুজ রঞ্জক উৎপন্ন করে। এ রঞ্জক হলদে বিলিরুবিন (bilirubin) এর পরিবর্তিত হয়। আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপন্ন অস্থিমজ্জার কষে পূর্ণ ব্যবহৃত হয়।
৬. পিত্ত উৎপাদন (Bile production) :
যকৃত কোষ (হেপাটোসাইট) অবিরাম পিত্ত ক্ষরণ করে এবং পিত্তথলিতে জমা রাখে। যকৃত কোষ স্টোরয়েড থেকে পিত্ত লবণ, যেমন সোডিয়াম গ্লাইকোকোলেট (sodium glycocholate) ও সোডিয়াম টরোকোলেট (sodium taurocholate) সংশ্লেষ করে।
৭. হরমোন সংশ্লেষ (Synthesis of Hormone) :
যকৃত অ্যানজিওটেনসিনোজেওন (angiotensinogen) নামক হরমোন সংশ্লেষ করে বা বৃক্ক নিঃসৃত রেনিন (renin) এনজাইম দিয়ে সক্রিয় হয়ে দেহে রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।
৮. হরমোন ভাঙ্গন (Breakdown of Hormones) :
যকৃত প্রায় সব হরমোনই কম-বেশি ধ্বংস করে। তবে টেস্টোস্টেরন ও অ্যালডোস্টেরন যত দ্রুত ধ্বংস হয় অন্য হরমোনগুলো (ইনসুলিন, গ্লুকাগোন, আন্ত্রিক হরমোন, স্ত্রীর যৌন হরমোন, এড্রেনাল হরমোন, থাইরক্সিন প্রভৃতি) ততো দ্রুত ধ্বংস হয় না।
৯. টক্সিন বা বিষ অপসারণ (Detoxification) :
যকৃত কোষের অভ্যন্তরে জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় এ বিষ প্রশমিত হয়ে যায়। অনেক ওষুধও দেহ থেকে অপসারণ করে।
১০. তাপ উৎপাদন (Production of Heat) :
যকৃতের অভ্যন্তরে নানা ধরনের বিক্রিয়া সংঘটিত হওয়ায় এখানে প্রচুর উৎপাদিত হয়। এ তাপ রক্তবাহী কার মাধ্যমে সমগ্র দেহে সঞ্চালিত হয় ফলে দেহে তাপমাত্রা স্থিতিশীল থাকে।