খনিজ সম্পদ: জীবাশ্ম ও জীবাশ্ম জ্বালানি
জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil Fuel)
বহু প্রাচীনকালের উদ্ভিদ এবং প্রাণীর মৃতদেহের যে ধ্বংসাবশেষ মাটির নিচে পাওয়া যায় তাকে জীবাশ্ম বলে। বায়ুর অনুপস্থিতিতে তাপ, চাপ আর রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে বড় বড় উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রতম উদ্ভিদ ও প্রাণী পর্যন্ত সকল ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির সৃষ্টি হয়েছে। কয়লা, পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাসকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলা হয়। জীবাশ্ম জ্বালানিগুলো একসাথে অথবা আলাদা আলাদা থাকতে পারে। যেমন- পেট্রোলিায়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস একই সাথে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের সাথে পেট্রোলিয়ামও পাওয়া গেছে।
প্রাকৃতিক গ্যাস (Natural Gas)
প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান হলো মিথেন (CH4) যার পরিমাণ 80% ।
এছাড়া প্রাকৃতিক গ্যাসে ইথেন (7%), প্রোপেন (6%), বিউটেন ও আইসোবিউটেন (4%), ও পেন্টেন (3%) থাকে। বাংলাদেশে যে প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া গেছে তাতে (99.99%) মিথেন থাকে।
পেট্রোলিয়ামের উপাদানসমূহ ও পৃথকীকরণ
পেট্রোলিয়াম সাধারণত 5000 ফুট বা তার চেয়েও গভীরে শিলাস্তরের মধ্যে পাওয়া যায়।
যে পেট্রোলিয়াম খনি থেকে সরাসরি পাওয়া যায় তাকে অপরিশোধিত তেল (Crude Oil) বা পেট্রোলিয়াম বলে। এই অপরিশোধিত তেল অস্বচ্ছ ও দুর্গন্ধযুক্ত হয় । পেট্রোলিয়াম মূলত বিভিন্ন হাইড্রোকার্বনের মিশ্রণ এবং সরাসরি ব্যবহারের উপযোগী নয়।
এই অপরিশোধিত তেল আংশিক পাতন পদ্ধতিতে স্ফুটনাঙ্কের উপর ভিত্তি করে পৃথক করা হয়। আংশিক পাতন হলো এক ধরনের পাতন। এখানে বাষ্পকে ঠান্ডা করার জন্য লম্বা কলাম থাকে। পেট্রোলিয়াম বিভিন্ন হাইড্রোকার্বনের মিশ্রণ হওয়ায় এদের স্ফুটনাঙ্কও বিভিন্ন। আংশিক পাতনের সাহায্যে পৃথক করা হলে এ তেল থেকে পেট্রোল, গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, ন্যাপথা, কেরোসিন, ডিজেল, প্যারাফিন, মোম ও পিচ প্রভৃতি অংশ পাওয়া যায়। এদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো-
পেট্রোলিয়াম গ্যাস (Petroleum Gas)
এ অংশের স্ফুটনাঙ্ক 0^{\circ}\text{C} থেকে 200^{\circ}\text{C} পর্যন্ত। কার্বন সংখ্যা 1 থেকে 4 পর্যন্ত । অপরিশোধিত তেলে শতকরা দুই ভাগ পেট্রোলিয়াম গ্যাস থাকে। এ গ্যাসকে LPG (Liquefied Petroleum Gas) নামেও চিহ্নিত করা হয়। রান্নার কাজে এ গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
পেট্রোল (গ্যাসোলিন) (Petrol)
স্ফুটনাঙ্ক 21^{\circ}\text{C} থেকে 70^{\circ}\text{C}। কার্বন সংখ্যা 5 থেকে 10 পর্যন্ত, অপরিশোধিত তেলে শতকরা 5 ভাগ পেট্রোল থাকে। যানবাহনের ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে গ্যাসোলিন ব্যবহার করা হয়।
ন্যাপথা (Naphtha)
স্ফুটনাঙ্ক 71^{\circ}\text{C} থেকে 120^{\circ}\text{C} পর্যন্ত। কার্বন সংখ্যা 7 থেকে 14 পর্যন্ত। পেট্রোলিয়ামে শতকরা 10 ভাগ ন্যাপথা থাকে। জ্বালানি ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে ব্যবহার করা হয়।
কেরোসিন (Kerosene)
স্ফুটনাঙ্ক 121^{\circ}\text{C} থেকে 170^{\circ}\text{C} পর্যন্ত। কার্বন সংখ্যা 11 থেকে 16 পর্যন্ত। পেট্রোলিয়ামে শতকরা 13 ভাগ কেরোসিন থাকে। জেট ইঞ্জিনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ডিজেল (Diesel)
স্ফুটনাঙ্ক 171^{\circ}\text{C} থেকে 270^{\circ}\text{C} পর্যন্ত। কার্বন সংখ্যা 17 থেকে 20 পর্যন্ত। যানবাহনের জ্বালানি ও পিচ্ছিলকারক পদার্থ ও দ্রাবক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
প্যারাফিন মোম (Paraffin wax)
স্ফুটনাঙ্ক 271^{\circ}\text{C} থেকে 340^{\circ}\text{C} পর্যন্ত। কার্বন সংখ্যা 20 থেকে 30 পর্যন্ত। টয়লেট্রিজ ও ভ্যাসলিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
পিচ (Pitch)
স্ফুটনাঙ্ক 340^{\circ}\text{C} উচ্চ তাপমাত্রা পর্যন্ত। কার্বন সংখ্যা 30 এর বেশি। রাস্তা তৈরিতে এটি কাজে লাগে।