10 Minute School
Log in

গতি (Motion)

পদার্থ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে বলবিজ্ঞান – যেখানে বলের ক্রিয়াধীন বস্তুর স্থিতি ও গতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এখানে আমরা শুধু গতি নিয়ে আলোচনা করবো। অধ্যায়টি শেষ করে আমরা যেসব বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবো:

  • স্থিতি ও গতি ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • বিভিন্ন প্রকার গতির মধ্যে পার্থক্য করতে পারব।
  • স্কেলার ও ভেক্টর রাশি ব্যাখ্যা করতে পারব। 
  • গতি সম্পর্কিত রাশিসমূহের পারস্পারিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারব। 
  • বাধাহীন ও মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর গতি ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • লেখচিত্রের সাহায্যে গতি সম্পর্কিত রাশিসমূহের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারব। 
  • আমাদের জীবনে গতির প্রভাব উপলব্ধি করতে পারব।

স্থিতি ও গতি (Rest and Motion)

চার দিকে তাকালেই আমরা আমাদের স্থিতি ও গতির সার্থকতা খুঁজে পাই। যেটি স্থির হয়ে আছে তাই “স্থিতি” এর উদাহরণ যেমন: চেয়ার,টেবিল, বই, খাতা। অন্যদিকে যা চলমান তাই গতির উদাহরণ। যেমন: বাস, ট্রাক, ট্রেন। কিন্তু গতি বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের আরও একটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তা হলো “প্রসঙ্গ কাঠামো”।

প্রসঙ্গ কাঠামো (Frame of reference):

যে বস্তু বা পরিপার্শ্বের সাথে তুলনা করে আমরা অন্য বস্তুর অবস্থান, স্থিতি, গতি ইত্যাদি নির্ণয় করি তাকে প্রসঙ্গ কাঠামো বলে।  “প্রসঙ্গ কাঠামো”-র ধারণা থেকে খুব সহজেই “স্থিতি” “গতি”-র সংজ্ঞা দেয়া যায়।

  • স্থিতি (Rest): 

সময়ের সাথে পরিপার্শ্বের সাপেক্ষে যখন কোনো বস্তুর অবস্থান পরিবর্তন ঘটে না তখন ঐ বস্তুকে স্থিতিশীল বা স্থির বস্তু বলে। আর এ অবস্থান অপরিবর্তিত থাকাকে স্থিতি বলে।

  • গতি (Motion):  

সময়ের সাথে পরিপার্শ্বের সাপেক্ষে যখন কোনো বস্তুর অবস্থান পরিবর্তন ঘটে তখন ঐ বস্তুকে গতিশীল বস্তু বলে। আর এ অবস্থান পরিবর্তনের ঘটনাকে গতি বলে। কিন্তু কোনো বস্তুর সাপেক্ষে স্থিতি বা গতি সেটি নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। কারণ “মহাবিশ্বের সকল স্থিতিই আপেক্ষিক, সকল গতিই আপেক্ষিক”।  

একটি উদাহরণ বিষয়টিকে রাত-দিনের মত পরিষ্কার করে দেবে।
ধরো, তুমি ও তোমার বন্ধু ঢাকা থেকে ট্রেনে রাজশাহী যাচ্ছো। যেহেতু তুমি ও তোমার বন্ধু পাশাপাশি বসে আছো, তাই তোমরা একে অপরের সাপেক্ষে স্থির। কিন্তু ভেবে দেখ তো, তোমরা দুজনে আসলেই কী স্থির? তোমরা যখন ধানের ক্ষেতের মাঝখানে দিয়ে ভ্রমণ করছো মাঠে থাকা কৃষকটি কিন্তু তোমাদেরকে গতিশীল দেখবে। তাহলে বোঝা গেল গতি ও স্থিতির বিষয়টি সম্পূর্ণ আপেক্ষিক।

বিভিন্ন প্রকার গতি (Different types of Motion)

আমরা আমাদের জীবনে বিভিন্ন প্রকার গতির দেখা পাই। কিছু সরল পথে চলছে, কিছু নড়ছে আবার কিছু ঘুরছে। সকল ধরণের গতিই নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। নিচে গতির বিভিন্ন প্রকারভেদ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো: 

রৈখিক গতি: 

আমরা সবাই নিশ্চই ট্রেনে ভ্রমণ করেছি। ট্রেনটি একটি সরল লাইনের উপর সীমাবদ্ধ থাকে, তাই না? তাহলে আমরা এ ধরণের গতির সংজ্ঞা দিতে পারি এভাবে, কোনো বস্তুর গতি যদি একটি সরলরেখার উপর সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে তার গতিকে রৈখিক বা সরলরৈখিক গতি বলে।

ঘূর্ণন গতি: 

বন্ধুরা, তোমরা যেখানে বসে আছো তার উপর দিকে তাকাও। গরমের দিনে এই জিনিসটির কথা আমরা সবচেয়ে বেশি স্মরণ করি। নিশ্চই ধরে ফেলেছো কোন জিনিসটির কথা বলছি। হ্যাঁ, বস্তুটি ফ্যান। একটু লক্ষ্য করলেই দেখবে ফ্যান একটি কেন্দ্রে স্থির থেকে অনবরত ঘুরতে থাকে। ঘড়ির ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি লক্ষ্য করবে। তাহলে ফ্যান বা ঘড়ির এ গতির সংজ্ঞা দেয়া যায়, “যখন কোনো বস্তু কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু বা রেখাকে কেন্দ্র করে ঘোরে তখন সে বস্তুর গতিকে ঘূর্ণন গতি বা বৃত্তাকার গতি বলে”।

চলন গতি: 

একখানা বইকে যদি ঘুরতে না দিয়ে টেনে টেবিলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয় দেখবে বইয়ের প্রতিটি কণা সমান সময়ে একই দিকে সমান দূরত্ব অতিক্রম করেছে। এটিই চলন গতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

সুতরাং, কোনো বস্তু যদি এমনভাবে চলতে থাকে যাতে করে বস্তুর সকল কণা একই সময়ে একই দিকে সমান দূরত্ব অতিক্রম করে তাহলে ঐ গতিকে চলন গতি বলে।

পর্যায়বৃত্ত গতি: 

পৃথিবী কীভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে তা কি দেখেছো? একটি উপবৃত্তাকার পথে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ঘুরতে থাকে।পর্যায়বৃত্ত গতির সংজ্ঞাটি কিন্তু এই উদাহরণ থেকেই চলে আসে। 

কোনো গতিশীল বস্তু যদি এমন হয় যে, এটি এর গতি পথে কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে নির্দিষ্ট সময় পর পর  একই দিক থেকে অতিক্রম করে তবে সেই গতিকে পর্যায়বৃত্ত গতি বলে।

“ঘূর্ণন গতি একটি বিশেষ ধরনের পর্যায়বৃত্ত গতি”।