পেশি টিস্যু; ঐচ্ছিক, মসৃণ ও হৃৎপেশির তুলনা
পেশি টিস্যু (Muscular Tissue)
মেসোডার্ম থেকে উদ্ভূত যে টিস্যু সংকোচন-প্রসারণক্ষম ও অসংখ্য তন্তুর সমন্বয়ে গঠিত তাকে পেশি বা পেশি টিস্যু বলে।
- পেশির সাধারণ বৈশিষ্ট্য (General features of muscle): মায়োব্লাস্ট (myoblast) নামক আদিকোষ রূপান্তরিত হয়ে তন্তুর মতো লম্বা পেশিকোষ সৃষ্টি করে। পেশিকোষকে তাই পেশিতন্তু বলে। প্রতিটি কোষ সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াসযুক্ত এবং সারকোলেমা (sarcolemma) নামক ঝিল্লিতে আবৃত; এর ভিতরের সাইটোপ্লাজমকে সারকোপ্লাজম (sarcoplasm) বলে। সারকোপ্লাজমের মধ্যে পরস্পর সমান্তরালভাবে অবস্থিত অসংখ্য মায়োফাইব্রিল (myofibril) নামক সূক্ষ্ণ তন্তু থাকে। গুচ্ছবদ্ধ অ্যাকটিন (actin) ও মায়োসিন (myosin) নামক প্রোটিন ফিলামেন্ট দিয়ে মায়োফাইব্রিল গঠিত। পেশি টিস্যু প্রায় ৭৫ শতাংশ পানি ও অবশিষ্টাংশ কঠিন পদার্থে গঠিত।
কাজ : পেশিই প্রাণিদেহের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালনের জন্য দায়ী। অস্থিসংলগ্ন পেশির সংকোচন-প্রসারণের ফলে প্রাণী স্থানান্তরে গমন করতে পারে।
- পেশির প্রকারভেদ (Muscle types): গঠন, অবস্থান ও কাজের তারতম্যের ভিত্তিতে পেশিকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা –
- মসৃণ বা অনৈচ্ছিক
- হৃৎপেশি
- রৈখিক বা ঐচ্ছিক
- মসৃণ (ভিসেরাল) বা অনৈচ্ছিক পেশি (Non-striated or Involuntary muscle) : এ পেশির কোষগুলো মাকু আকৃতির, ১৫-২০০μm পর্যন্ত দীর্ঘ। কোষের চওড়া অংশের ব্যাস ৮-১০μm। প্রত্যেক কোষে নিউক্লিয়াসের সংখ্যা একটি এবং এটি কোষের চওড়া অংশে অবস্থান করে। কোষের আবরণী বা সারকোলেমা অস্পষ্ট। কোষের সাইটোপ্লাজম বা সারকোপ্লাজম এ অসংখ্য অতি সূক্ষ্ম মায়োফাইব্রিল পেশিতস্তুর দৈর্ঘ্য বরাবর বিস্তৃত। মায়োফাইব্রিলে কোনো আড়াআড়ি রেখা দেখা যায় না। পৌষ্টিকনালি, রক্তনালি, শ্বাসনালি, মূত্রথলি, জরায়ু প্রভৃতি অঙ্গের প্রাচীরে এ পেশি পাওয়া যায়। মসৃণ পেশিগুলো আন্তরযন্ত্রীয় (visceral) অঙ্গের প্রাচীরে থাকে বলে এগুলোকে ভিসেরাল পেশিও বলে।
চিত্র-১৫ : মসৃণ পেশি
কাজ : এ টিস্যুর সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা ধীর ও দীর্ঘস্থায়ী। বিভিন্ন বস্তুর যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে এ টিস্যু অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। যেমন- খাদ্যবস্তু এ টিস্যুর মাধ্যমে পেরিস্ট্যালসিস (peristalsis) প্রক্রিয়ায় পৌষ্টিকনালির উপরের অংশ থেকে নিচের দিকে ধাবিত হয়। এ পেশির সংকোচন প্রাণীর ইচ্ছানির্ভর নয় বলে একে অনৈচ্ছিক পেশি বলা হয়ে থাকে।
চিত্র-১৬ : হৃৎপেশি
2. হৃৎপেশি বা কার্ডিয়াক পেশি (Cardiac muscle) : গঠনের দিক থেকে এটি অনেকটা রৈখিক পেশির মতো । পেশিতন্তুর মায়োফাইব্রিলের গায়ে আড়াআড়ি রেখা থাকে; কিন্তু পেশিতন্তুগুলো পরস্পর অনিয়তভাবে যুক্ত থেকে জালের মতো গঠন সৃষ্টি করে। সারকোলেমা বেশ সূক্ষ্ম এবং নিউক্লিয়াসটি কোষের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করে। কোষগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ০.৮ মিলিমিটার এবং ব্যাস ১২-১৫μm হয়। কোষগুলোর সংযোগস্থলে কোষপর্দা ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে এক বিশেষ অনুপ্রস্থ রেখার সৃষ্টি করে। একে ইন্টারক্যালেটেড ডিস্ক (intercalated disc) বলে। এ ডিস্ক হৃৎপেশির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। একমাত্র হৃৎপিন্ডের প্রাচীরে এ ধরনের পেশি টিস্যু পাওয়া যায়।
কাজ : এ টিস্যুর সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা পরিমিতভাবে দ্রুত, কখনও ক্লান্ত হয় না। হৃৎপিণ্ডের সংকোচ-প্রসারণ ঘটিয়ে প্রাণিদেহে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হৃৎপেশির কাজ। হৃৎপেশির কার্যকারিতা প্রাণীর ইচ্ছানির্ভর নয়। তাই কাজের দিক থেকে এ পেশি অনৈচ্ছিক। হৃৎপেশি কখনও ক্লান্ত হয়না।
কঙ্কাল বা রৈখিক (চিহ্নিত) বা ঐচ্ছিক পেশি (Striated or Voluntary muscle)
প্রাণিদেহের যে অংশগুলোকে সাধারণত আমরা মাংস বলে থাকি প্রকৃতপক্ষে সেগুলোই কঙ্কাল বা রৈখিক বা চিহ্নিত পেশি। কোষগুলো দেখতে নলাকার (cylindrical), ১-৪ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ১০-৪০μm ব্যাসবিশিষ্ট হয়। তাই কোষগুলোকে সূক্ষ্ম তন্তুর মতো দেখায় এবং পেশিতন্তু (muscle fibre) নামে আখ্যায়িত করা হয়। তন্তুগুলো আলাদা বা বিক্ষিপ্ত না থেকে গুচ্ছবদ্ধ থাকে। পেশিতন্তুর গুচ্ছকে ফ্যাসিকুলাস (fasciculus; বহুবচনে fasciculi) বলা হয়। প্রতিটি গুচ্ছ পেরিমাইসিয়াম (perimysium) নামক যোজক টিস্যু নির্মিত আবরণে আবৃত। অনেক ফ্যাসিকুলি একত্রিত হয়ে একটি বড় গুচ্ছ গঠন করে। গুচ্ছটি এপিমাইসিয়াম (epimysium) নামক আরেক ধরনের যোজক টিস্যু নির্মিত আবরণে আবৃত থাকে।
ঐচ্ছিক পেশিগুলো দেহাভ্যন্তরে এভাবে গুচ্ছাকারে অবস্থান করে। প্রতিটি পেশিতন্তু সারকোলেমা (sarcolemma) নামক সুস্পষ্ট এক আবরণে আবৃত। এর ঠিক নিচে কয়েকশ’ গোল বা ডিম্বাকার নিউক্লিয়াস দেখা যায় প্রতিটি পেশিকোষের অভ্যস্তরে কতকগুলো অতি সূক্ষ্ম তন্তু পাওয়া মায়োফাইব্রিল যায়, এগুলো মায়োফাইব্রিল (myofibril)। প্রধানত অ্যাকটিন (actin) ও মায়োসিন (myosin) নামক প্রোটিন দিয়ে মায়োফাইব্রিল গঠিত হয়। অণুবীক্ষণযন্ত্রের নিচে এসব উপতন্তুগুলোর সমস্ত দেহ জুড়ে পর্যায়ক্রমিকভাবে অবস্থিত কতকগুলো অনুপ্রস্থ রেখা দেখা যায়। এ রেখাগুলোর দাগগুলো উপস্থিতির জন্য এ পেশিটিস্যুকে রৈখিক পেশি বা চিহ্নিত পেশি বলে। বড় বড় অস্থির সংযোগস্থলে এ ধরনের পেশি বেশি পাওয়া যায়, আর সে কারণেই এগুলোকে কঙ্কাল পেশি (skeletal muscle)—ও বলা হয়ে থাকে। চোখে, জিহ্বায়, গলবিলেও এ পেশি অবস্থান করে।
চিত্র-১৭ : রৈখিক পেশি
কাজ : এ ধরনের পেশির সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা খুব দ্রুত ও শক্তিশালী। হাত ও পা-এর বড় বড় অস্থিসহ দেহের অন্যান্য অস্থির সঞ্চালনে এ পেশিটিস্যুই দায়িত্ব পালন করে। প্রাণীর চলন এ পেশির মাধ্যমে ঘটে। এ পেশির কাজ প্রাণীর ইচ্ছা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই রৈখিক পেশিকে ঐচ্ছিক পেশি বলে আখ্যায়িত করা হয় ।
চিহ্নিত পেশির প্রকারভেদ : কাজের ভিত্তিতে চিহ্নিত বা ঐচ্ছিক পেশি বিভিন্ন ধরনের হয়।
- ফ্লেক্সর পেশি (Flexor muscle): এ পেশি দেহের কোন অংশকে অপর কোন অংশের উপর ভাঁজ হতে সাহায্য করে। যেমন- বাইসেপস পুরোবাহুকে (fore arm) ঊর্ধ্ব বাহুর (upper arm) উপর ভাঁজ হতে সহায়তা করে।
- এক্সটেনসর পেশি (Extensor muscle) : এ পেশি ভাঁজ করা অংশকে পুনরায় সোজা হতে সহায়তা করে। যেমন— ট্রাইসেপস ভাঁজ করা পুরোবাহুকে সোজা হতে সাহায্য করে।
- অ্যাডাক্টর পেশি (Adductor muscle) : এ পেশি দেহের কোন অংশকে দেহ অক্ষের নিকটে আনতে সাহায্য করে। যেমন- লাটিসিমাস ডরসি হাতকে পিছনে এবং উপরে উঠাতে সাহায্য করে।
- অ্যাবডাকটর পেশি (Abductor muscle) : এটি দেহের কোন অংশকে দেহের অক্ষ থেকে দূরে সরে যেতে সহায়তা করে । যেমন : ডেলটয়েড হাতকে সামনে প্রসারিত হতে সহায়তা করে থাকে।
- ডিপ্রেসর পেশি (Depressor muscle) : এটি দেহের কোন অংশকে নিচে নামাতে অংশ নেয়; যেমন- ডিপ্রেসর ম্যান্ডিবুলার নিম্ন চোয়ালকে নিচের দিকে নামাতে সাহায্য করে; ফলে মুখ খুলতে পারে।
- লিভেটর পেশি (Levator muscle: এটি দেহের কোন অংশকে উপরে উঠতে সহায়তা করে; যেমন- ম্যাসেটর পেশি নিম্ন চোয়ালকে উপরের দিকে উঠতে সাহায্য করে; ফলে খোলা মুখ বন্ধ হয়ে যায়।
- রোটেটর পেশি (Rotator muscle: এটি দেহের কোন অংশের আবর্তনে সহায়তা করে। যেমন- পাইরিফরমিস পেশি ফিমারকে ঘূর্ণনে সাহায্য কাজ করে।
বিভিন্ন ধরনের পেশিটিস্যুর মধ্যে পার্থক্য
(Differences between different types of muscle tissue)
বিভিন্ন ধরনের পেশিটিস্যুর মধ্যে পার্থক্য | |||
বিষয় | রৈখিক/ঐচ্ছিক পেশি | মসৃণ/অনৈচ্ছিক পেশি | হৃদপেশি |
১. অবস্থান | অস্থিসংলগ্ন পেশি এবং উদরগাত্র | পৌষ্টিকনালি, শ্বাসনালি, রেচন-জনন নালি, রক্তনালি, লসিকানালি, গ্রন্থিনালি, চোখের সিলীয় পেশি প্রভৃতি | শুধুমাত্র হৃৎপিণ্ড
|
২. পেশিতন্তুর আকার | দীর্ঘ ও নলাকার | মাকু আকৃতির | নলাকার |
৩. নিউক্লিয়াসের সংখ্যা ও অবস্থান | কয়েকশ’; পরিধির দিকে | একটি; স্ফীত কেন্দ্রে | একটি; কেন্দ্রস্থলে |
৪. অনুপ্রস্থ রেখা | থাকে | থাকে না | অস্পষ্টভাবে থাকে |
৫. ইন্টারক্যালেটেড ডিস্ক | নেই | নেই | আছে |
৬. প্রকৃতি | ঐচ্ছিক | ঐচ্ছিক | অনৈচ্ছিক |
৭. সংকোচনের ক্ষমতা | দ্রুত ও শক্তিশালী । | দ্রুত ও শক্তিশালী | পরিমিতভাবে দ্রুত |
পেশিতে টান পড়ে কিন্তু ধাক্কা দেয় না (Muscle can Pull but cannot Push)
পেশি আমাদের চলন ও ভঙ্গিমা নিয়ন্ত্রণ করে, মানবদেহের স্বাভাবিক কর্মকান্ড পরিচালনায় প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে। পেশির ব্যবহার এক-দুদিনের নয়, নিত্যদিনের। প্রতিটি কাজ পেশি নির্ভর। আমরা জানি মানবদেহে ৩ ধরনের পেশি আছে। মসৃণপেশি, হৃৎপেশি ও রৈখিকপেশি। এগুলো সুসমন্বিত কাজের মাধ্যমে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট রয়েছে। পেশি কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে আমাদের অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। আমরা প্রত্যেকদিন কাজ করি। বাঁকা হই, টেবিল থেকে মাটি থেকে কিছু তুলে
বাহুর প্রসারণ বাহুর ভাঁজকরণ
নেই, আরও কতো কি। সবকিছুরই মূলে রয়েছে ট্রাইসেপস কিছু জোড়-পেশির জটিল কর্মকান্ড। যেমন হাত ভাঁজ করা সোজা করা বিষয়টি কনুইয়ে কব্জাসন্ধি দেখতে যত সহজ সাবলীল মনে হয়, এর গূঢ় তত্ত্ব ঠিক ততোখানি কঠিন। এর মূল রহস্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পেশিগুলো সংকুচিত হয় ও টান দেয়, কিন্তু ধাক্কা দেয় না বরং প্রসারিত থাকে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য প্রথমেই নিচের দুধরনের পেশি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
- অ্যান্টাগোনিষ্টিক পেশি (Antagonistic muscles) : দেহের অঙ্গ সঞ্চালনে অংশগ্রহণকারী জোড় কঙ্কালপেশি দুটি পরস্পরের বিপরীতমুখী কাজ করে। এধরনের বিপরীতধর্মী কাজ সম্পাদনকারী পেশি দু’টির একটিকে অপরটির অ্যান্টাগোনিষ্টিক পেশি বলে। একই অঙ্গ পরিচালনাকারী এরকম দুটি পেশিকে অ্যান্টাগোনিষ্টিক পেশি-জোড় (antagonistic muscles partner) বা প্রতিপক্ষীয় পেশি-জোড় বলা হয়। এদের একটি যখন সংকুচিত হয় (contracts) অন্যটি তখন শিথিল (relax) বিপরীতক্রম (vice-versa) ঘটনা ঘটে। এদের সুশৃঙ্খল সমন্বয়ের মাধ্যমেই দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালন সম্ভব হয়।
- ফ্লেক্সর ও এক্সটেনসর পেশি (Flexor and Extensor muscles) : যে পেশি কোনো অঙ্গকে অস্থিসন্ধিতে বাঁকিয়ে এনে ভাঁজ করে তখন তাকে ফ্লেক্সর পেশি বলে। এ পেশির বিপরীত কাজ সম্পাদনকারী পেশি (অর্থাৎ অ্যান্টিগোনিষ্টিক পেশি) যা ঐ অঙ্গকে সোজা করে বা প্রসারিত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয় তাকে এক্সটেনসর পেশি বলে। উর্ধ্ববাহুর হিউমেরাসের সাথে অবস্থানকারী বাইসেপস (biceps) ও ট্রাইসেপস (triceps) পেশি যথাক্রমে ফ্লেক্সর ও এক্সটেনসর পেশির উদাহরণ।
ব্যাখ্যা : উর্ধ্ববাহুর বাইসেপস ও ট্রাইসেপস অ্যান্টাগোনিষ্টিক পেশি-জোড়ের কার্যাবলি থেকে “পেশিতে টান পড়ে কিন্তু ধাক্কা দেয়না” এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেখা যায়। হাতের সামনে অবস্থিত পেশিকে বাইসেপস পেশি বলে। এর একপ্রান্ত স্ক্যাপুলার সঙ্গে আটকানো এবং অন্যপ্রান্ত রেডিয়াস অস্থির সাথে যুক্ত থাকে। বাইসেপস পেশি সংকুচিত হলে কনুইসন্ধি ভাঁজ হয়ে রেডিয়াস ও আলনা স্ক্যাপুলার দিকে উত্তোলিত হয়। ফলে হাত বাঁকানো সম্ভব হয়। এ প্রক্রিয়াকে ফ্লেক্সন (flexon) এবং পেশিকে ফ্লেক্সর পেশি বলে। বাইসেপস-এর অ্যান্টাগোনিষ্টিক পেশি হলো ট্রাইপেসস যা উর্ধ্ববাহুর হিউমেরাসের পিছন দিকে অবস্থিত। এর উর্ধ্বাংশ তিনটি টেনডন দিয়ে বক্ষ-অস্থিচক্রের স্ক্যাপুলা ও হিউমেরাসের পিছনে যুক্ত থাকে। এর নিম্নাংশ একটি টেনডন দিয়ে নিম্নবাহুর আলনা অস্থির অলিক্রেনন প্রসেসের সাথে যুক্ত থাকে।
ট্রাইসেপস পেশির সংকোচনে হাত পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে। এ পেশি কনুই সন্ধিকে প্রসারিত করে, তাই একে এক্সটেনসর পেশি বলে। ফ্লেক্সর ও এক্সটেনসর পেশি একসঙ্গে পরস্পর বিরোধী কাজ করে অর্থাৎ বাইসেপস পেশি সংকুচিত হলে ট্রাইসেপস শ্লথ হয় আবার ট্রাইসেপস সংকুচিত হলে বাইসেপস শ্লথ হয়, ফলে হার বাঁকানো ও সোজা করা সম্ভবপর হয়ে থাকে। এসব কারণে সংকোচনের জন্য টান পড়লেও ধাক্কা লাগে না। অ্যাকটিন ও মায়োসিন এ দু’ধরনের প্রোটিন থাকে বলে পেশি টানতে পারে। এসব প্রোটিন পেশিকোষের একপ্রাস্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত প্রসারিত থাকে।
সংশিষ্ট পেশির প্রতিটি কোষ মস্তিষ্কের কোনো অংশ থেকে সংকোচনের সংকেত পেলে মস্তিষ্কের অন্য অংশ থেকে পৃথক বৈদ্যুতিক উদ্দীপনাগুলোকে সমন্বিত করে ‘টান’ দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করে। হাড়কে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে বিপরীতধর্মী পেশিও সম্মিলিতভাবে একই কাজ করে অর্থাৎ টেনে সোজা করে দেয়। এ কারণেরই বলা যায় যে, পেশিতে টান পড়ে কিন্তু ধাক্কা দেয় না।
মসৃণ পেশি ও হৃৎপেশির তুলনা
(Comparison of smooth muscle and Cardiac muscle)
মসৃণ পেশি ও হৃৎপেশির তুলনা |
||
তুলনীয় বিষয় | মসৃণ পেশি | হৃৎপেশি |
১. আকার ও আকৃতি
|
পেশিতন্তুগুলো লম্বা ও মাকু আকৃতির
এবং শাখাবিহীন। |
পেশিতন্তুগুলো খাটো ও বেলনাকার
এবং শাখাযুক্ত। |
২. অনুপ্রস্থ রেখা | তত্তুতে অনুপ্রস্থ রেখা নেই। | অনুপ্রস্থ রেখা উপস্থিত। |
৩. ইন্টারক্যালেটেড ডিস্ক | থাকে না। | কোষগুলোর সংযোগস্থলে থাকে। |
৪. সারকোলেমা | পেশিকোষের আবরণ বা সারকোলেমা অস্পষ্ট। | সারকোলেমা সূক্ষ্ম। |
৫. নিউক্লিয়াস | কোষের চওড়া অংশে অবস্থান করে। | কোষের কেন্দ্রে অবস্থান করে। |
৬. মায়োফাইব্রিল | পেশিতন্তুর দৈর্ঘ্য বরাবর বিস্তৃত। | পরস্পর অনিয়তভাবে যুক্ত হয়ে জালিকা গঠন করে। |