10 Minute School
Log in

বৃক্কের সূক্ষ্ম গঠন (Ultra Structure of Kidney)- নেফ্রন (Nephron)

বৃক্কের গাঠনিক ও কার্যকর একককে নেফ্রন (Nephron) বলে। মানুষের প্রত্যেক বৃক্কে ১০ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ নেফ্রন রয়েছে। প্রতিটি নেফ্রন প্রায় ৩ থেকে ৫ সে.মি. লম্বা। এ হিসেবে প্রত্যেক বৃক্কে নেফ্রনের নালিকাগুলো সম্মিলিতভাবে ৩৬ কিমি (প্রায় ২২.৫ মাইল) এরও বেশি লম্বা হবে। এর ফলে বিভিন্ন পদার্থের বিনিময় ক্ষেত্র ব্যাপক বিস্তৃত হয়েছে। বৃক্কের মাধ্যমে প্রতি মিনিটে রক্ত থেকে ১২৫ ঘন সেমি তরল পদার্থ পরিশ্রুত হয়। প্রায় ৯৯% পানিই আবার রক্তে ফিরে যায়, সাধারণত প্রতি মিনিটে কেবল ১ ঘন সেমি. মূত্র সৃষ্টি হয়। ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে স্যার উইলিয়াম বেম্যান প্রথম বৃক্কের সূক্ষ্ম গঠনের সঠিক বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর মতে, প্রত্যেক নেফ্রন ২টি প্রধান অংশে বিভক্ত- রেনাল করপাসল এবং বৃক্কীয় নালিকা বা রেনাল টিউবিউলস।

রেনাল করপাসল বা ম্যালপিজিয়ান করপাসল বা ম্যালপিজিয়ান বডি (Renal corpuscle):

অগ্রপ্রান্তকে রেনাল করপাসল (Renal corpuscle) বলে। এটি বৃক্কের কর্টেক্সে অবস্থিত এবং বোম্যানস ক্যাপসুল ও গ্লোমেরুলাস নিয়ে গঠিত।

রেনাল করপাসল (Renal corpuscle)

  • বোম্যানস ক্যাপসুল (Bowman’s capsule) : রেনাল করপাসলে গ্লোমেরুলার অফারেন্ট আর্টারিওল কৈশিকজালিকাগুচ্ছকে ঘিরে অবস্থিত ০.২ মিলিমিটার ব্যাসের ও পোডোসাইট আঁইশাকার এপিথেলিয়ামে গঠিত দ্বিস্তরী পেয়ালার মতো প্রসারিত অংশকে বোম্যানস ক্যাপসুল বলে। এর গ্লোমেরুলাস সংলগ্ন স্তরকে ভিসেরাল স্তর, বহিঃপ্রাচীরকে প্যারাইটাল স্তর এবং দুই স্তরের মাঝখানে সংকীর্ণ গহ্বরকে ক্যাপসুলার স্পেস বলে। ভিসেরাল স্তরটি পোডোসাইট (podocyte) নামক বিশেষ ধরনের প্রবর্ধনযুক্ত কোষে এবং প্যারাইটাল স্তর স্বাভাবিক আঁইশাকার এপিথেলিয়াল কোষে আইশাকার এপিথেলিয়াম নির্মিত।
  • গ্লোমেরুলাস (Glomerulus) : বোম্যানস ক্যাপসুলের অভ্যন্তরে ঘনিষ্ঠভাবে গ্লোমেরুলাস অবস্থান করে। রেনাল ধমনি থেকে অন্তর্বাহী ধমনি বা অ্যাফারেন্ট আর্টারিওল (afferent arteriole) বোম্যানস ক্যাপসুলে প্রবেশ করে ৫০-৬০টি কৈশিক জালিকায় বিভক্ত হয়ে গ্লোমেরুলাস গঠন করে। কৈশিকজালিকাগুলো পুনরায় মিলিত হয়ে আনিকা বা ইফারেন্ট আটারিওল (efferent arteriole) রূপে বোম্যানস ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসে। দলের ব্যাস অ্যাফারেন্ট আটারিওলের চেয়ে কম হওয়ার কারণে গ্লোমেরুলাসে সর্বদা উচ্চ রক্তচাপ বজায় থাকে। রেনাল করপাসল-এ রক্তের আল্ট্রাফিল্ট্রেশন ঘটে এবং রক্ত থেকে রেচন বর্জ্য, পানি ও অন্যান্য দ্রব্য পরিস্রুত হয়ে গ্লোমেরুলার ফিলট্রেট (glumerular filtrate) হিসেবে বোম্যানস ক্যাপসুলে জমা হয়।

বৃক্ক বা রেনাল টিউবিউলস (Renal tubules) :

এটি নেফ্রনের পশ্চাৎ অংশ এবং বোম্যানস ক্যাপসুলের পিছন থেকে সৃষ্টি হয়ে সংগ্রাহী নালি পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রত্যেক রেনাল টিউবিউল প্রায় ৩ সেন্টিমিটার লম্বা এবং গড় ব্যাস প্রায় ৬০ মাইক্রোমিটার। এটি নিচে বর্ণিত ৩টি অংশে বিভক্ত।

  • নিকটবর্তী বা পতিমন্স ভালো নালিকা (Proximal convoluted tubule) : বোম্যানস ক্যাপসুলের সাথে সংযুক্ত এটি প্রায় ১৪ মিলিমিটার লম্বা রেনাল টিউবিউলের এ অংশ বৃক্কের কর্টেক্সে অবস্থিত। এর প্রাচীর একস্তরী এপিথেলিয়াল কোষে গঠিত। কোষগুলোর একপ্রান্তে অসংখ্য অতিআণুবীক্ষণিক আঙ্গুলের মতো অভিক্ষেপ বা মাইক্রোভিলাই (microvilli) থাকে।
  • নেফ্রন ফাঁস বা হেনলির লুপ (Loop of Henle) : প্রক্সিমাল  প্যাঁচানো নালিকার শেষ প্রান্ত  সোজা হয়ে বৃক্কের মেডুলা অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং একটি U আকৃতির ফাঁস বা লুপ (loop) গঠন করে পুনরায় কর্টেক্স অঞ্চলে ফিরে আসে। আবিষ্কারক জার্মান চিকিৎসক Friedrich Gustav Jakob Henle-র নামানুসারে একে হেনলির লুপ  বলা হয়। এর নিম্নগামী নালিকে ডিসেন্ডিং বাহু (descending limb) এবং উর্ধ্বগামী নালিকে অ্যাসেন্ডিং বাহু (ascending limb)  বলে।

Nephron

  • দূরবর্তী বা ডিস্টাল  প্যাঁচানো নালিকা (Distal convoluted tubule) : হেনলির লুপ-এর পরবর্তী এ প্যাচ নালিকা প্রায় ৫ মিলিমিটার লম্বা এবং এটি বৃক্কের কটেক্সে অবস্থান করে। এর শেষপ্রান্ত সংগ্রাহী নালির সাথে যুক্ত থাকে। এর প্রাচীর একস্তরী এপিথেলিয়াম কোষে গঠিত। রেনাল টিউবিউলের বৃক্ক নালিকা প্রক্সিমাল ও ডিস্টাল  প্যাঁচানো নালিকা সূক্ষ্ম কৈশিকজালিকা বা পেরিটিউবিউলার রক্তজালক (peritubular capillaries) দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে। এগুলো নেফ্রনের বিভিন্ন অংশ থেকে বিভিন্ন বস্তু পুনঃশোষণ করে। নেফনের প্রক্সিমাল  প্যাঁচানো নালিকায় নির্বাচনমূলক পুনঃশোষণ (selective reabsorption) ঘটে।

নেফ্রনের ডিস্টাল প্যাঁচানো নালিকা যে সোজা নালির সাথে যুক্ত থাকে তাকে সংগ্রাহী নালি বলে। একটি সংগ্রাহী নালিতে কয়েকটি নেফ্রন যুক্ত থাকে। এর কিছু অংশ কর্টেক্সে এবং কিছু অংশ মেডুলায় অবস্থান করে। এর প্রাচীর একস্তরী কোষে গঠিত। কয়েকটি সংগ্রাহী নালি মিলিত হয়ে ডাক্ট অব বেলিনি (duct of Bellini) গঠন করে।

নেফ্রনের প্রকারভেদ (Classification of Nephron) :

বৃক্কে অবস্থানের ভিত্তিতে নেফ্রন (Nephron) প্রধানত দুই প্রকার, যথা-

  • কর্টিক্যাল নেফ্রন (Cortical Nephron) : এ ধরনের নেন এদের হেনলির লুপ তুলনামূলকভাবে খাটো। মানুষের বৃক্কের ৯০% নেফ্রনই এ ধরনের।
  • জাক্সটামেডুলারি নেফ্রন (Juxtamedullary Nephron) : এ ধরনেরনেফ্রনের ম্যালপিজিয়ান বডি বৃক্কের কর্টেক্স ও মেডুলার সংযোগস্থলে অবস্থান করে। এদের হেনলির লুপ মেডুলার গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। মানুষের বৃক্কের ১০% নেফ্রন এ ধরনের।

নেফ্রনের কাজ (Functions of Nephron):

  • দেহে পানির সাম্যাবস্থা বজায় রাখা
  • রক্ত ও অন্যান্য দেহ তরলের অম্ল ও ক্ষারের সাম্যাবস্থার নিয়ন্ত্রণ
  • দেহ থেকে নানা প্রকারের ওষুধ, বিষাক্ত বস্তু এবং রেচন পদার্থের নিষ্কাশন
  • এরিথ্রোপোয়েটিন উৎপাদনের মাধ্যমে রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটানো
  • প্রয়োজনবোধে রেনিন ক্ষরণের মাধ্যমে রক্তচাপ বাড়ানো