তেজস্ক্রিয়তা (Radioactivity)
নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিভাস (Important Phenomena in Nuclear Physics)
প্রকৃতিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রোটনসমৃদ্ধ স্থায়ী নিউক্লিয়াস হলো বিসমাথ। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৪3 এবং ভরসংখ্যা 209। যে সমস্ত মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 83-এর বেশি সেগুলোর নিউক্লিয়াস স্থায়ী হয় না।
তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গমনের ঘটনাকে তেজস্ক্রিয়তা বলে।
তেজস্ক্রিয়তা একটি স্বতঃস্ফুর্ত স্বীয় বিচ্ছিন্নকারী (disruptive) অবিরাম প্রক্রিয়া। সাধারণত যেসব মৌলিক পদার্থের পারমাণবিক ভর 206-এর অধিক তাদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া ঘটে থাকে। 1896 খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত ফরাসি বিজ্ঞানী হেনরি বেকরেল (Henry Becquerel) সর্বপ্রথম তেজস্ক্রিয়া আবিষ্কার করেন। তিনি লক্ষ করেন যে, ইউরেনিয়াম এবং তাদের যৌগ হতে আপনা-আপনি এক প্রকার রহস্যজনক কণা এবং রশ্মি নির্গত হতে থাকে। এর পর পিয়ারে কুরী এবং তার স্ত্রী মাদাম কুরী থোরিয়ামের মধ্যে এই একই গুণ আবিষ্কার করেন। পরবর্তীকালে রেডিয়াম, পলোনিয়াম এবং অ্যাকটিনিয়াম প্রভৃতি ভারী মৌলিক পদার্থের এই গুণ আবিষ্কৃত হয়। তেজস্ক্রিয় মৌল হতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কণা এবং রশ্মি নির্গত হওয়ার প্রক্রিয়াকে তেজস্ক্রিয়তা (Radioactivity) বলে এবং যে সমস্ত পদার্থ হতে এই কণা এবং রশ্মি নির্গত হয় এদেরকে যথাক্রমে তেজস্ক্রিয় পদার্থ (Radioactive substance) ও তেজস্ক্রিয় রশ্মি (Radioactive rays) বলে। পরমাণুর নিউক্লিয়াসের গঠনগত পরিবর্তনই এই রশ্মির উৎস। তেজস্ক্রিয়তা একটি নিউক্লীয় ঘটনা এবং প্রকৃতি নিয়ন্ত্রিত। এটি তাপ, চাপ, বৈদ্যুতিক বা চৌম্বক ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
তেজস্ক্রিয়তার কারণ (Cause of radioactivity)
তেজস্ক্রিয়তা একটি স্বতঃস্ফূর্ত স্বীয় বিচ্ছিন্নকারী (disruptive) অবিরাম প্রক্রিয়া। প্রকৃতিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রোটনসমৃদ্ধ স্থায়ী নিউক্লিয়াস হলো বিসমাথ (Bismuth)।
মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নিউট্রন ও প্রোটন সংখ্যার অনুপাত (n/p)-এর মান 1.5 অপেক্ষা বেশি হলে পোটন প্রোটন (p-p) বিকর্ষণধর্মী বল অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ফলে নিউক্লীয় বল প্রোটন ও নিউট্রনগুলিকে একত্রে ধরে রাখতে পারে। কাজেই নিউক্লিয়াস অস্থায়ী হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভাঙ্গতে শুরু করে এবং তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে। সাধারণত কোনো মৌলের ভর সংখ্যা 210 বা তার বেশি হলে n/p-এর মান 15 অপেক্ষা বেশি হয়, ফলে এদের মধ্যে তেজস্ক্রিয় ধর্ম প্রকাশ পায়। তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণের সঙ্গে সঙ্গে তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াসটির প্রোটনের সংখ্যা পরিবর্তিত হতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণের পর এক সময় নিউক্লিয়াসটির নিউট্রন ও প্রোটন সংখ্যার অনুপাত 1.5 বা এর কাছাকাছি হয়। তখন নিউক্লিয়াসটি স্থিত হয় এবং পরমাণুর তেজস্ক্রিয়তা থাকে না।
তেজস্ক্রিয়তার একক (Unit of radioactivity)
তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপের জন্য দুটি একক রয়েছে, যথা—
(১) কুরী (Curie) এবং (২) বেকেরেল (Becquerel)।
(১) কুরী : প্রতি সেকেন্ডে 3.7 \times 10^{10} সংখ্যক পরমাণুর ভাঙ্গনকে 1 কুরী বলা হয়।
অথবা, কোনো বস্তুর প্রতি সেকেন্ডে 3.7 \times 10^{10} পরমাণু বিয়োজিত হলে ই বস্তুর তেজস্ক্রিয়তা 1 কুরী হবে।
∴ 1 কুরী, C=3.7 \times 10^{10} বিয়োজন/সেকেণ্ড =3.7 \times 10^{10} বেকেরেল।
এই এককটি খুব বড় হওয়ায় মিলি কুরী (Milli Curie) ও মাইক্রো কুরী (Micro-Curie) একক ব্যবহার করা হয়।
∴ 1 মিলি-কুরী (mC)=3.7 \times 10^{7} বিয়োজন/সেকেণ্ড
1 মাইক্রো-কুরী (mC)=3.7 \times10^{4} বিয়োজন/সেকেণ্ড
(২) তেজস্ক্রিয়তার এস. আই. একক হলো বেকেরেল (Bq)।
কোনো বস্তুর প্রতি সেকেন্ডে একটি পরমাণুর ভাঙ্গনকে 1 বেকেরেল (Bq) বলে।
তেজস্ক্রিয়তা একটি নিউক্লীয় ঘটনা—কীভাবে তা ব্যাখ্যা করবে ?
তেজস্ক্রিয়তা মাধ্যমের তাপমাত্রা, চাপ, তড়িৎ ক্ষেত্র বা চৌম্বক ক্ষেত্র কোনো কিছুর দ্বারা প্রভাবিত হয় না। অর্থাৎ তেজস্ক্রিয়তার ওপর পারিপার্শ্বিকের কোনো রকম প্রভাব নেই। তেজস্ক্রিয়তার এই সমস্ত বিশেষ ধর্মের জন্য বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে তেজস্ক্রিয়তা একটি নিউক্লীয় ঘটনা।
তেজস্ক্রিয়তা সংক্রান্ত কয়েকটি রাশি
তেজস্ক্রিয় রশ্মি বা তেজস্ক্রিয় বিকিরণ (Radioactive rays or radioactive radiation) : পরমাণু নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিঃসৃত বিকিরণকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বা তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বলে।
তেজস্ক্রিয় মৌল (Radioactive element) : যে সকল মৌল নিজে থেকে অন্য মৌলে রূপান্তরিত হয় তাদেরকে তেজস্ক্রিয় মৌল বলে।
তেজস্ক্রিয় নমুনা (Radioactive sample) : যে বস্তুখণ্ড থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয় তাকে তেজস্ক্রিয় নমুনা বলে।
জনক পরমাণু ও দুহিতা পরমাণু (Parent atom and daughter atom) : তেজস্ক্রিয় মৌলের যে পরমাণুর বিঘটন (disintegration) ঘটে, তাকে জনক পরমাণু বলা হয়। নিউক্লিয়াস থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হওয়ার পর যে পরমাণুটি থাকে তাকে দুহিতা পরমাণু বলা হয়। দুহিতা পরমাণুটি তেজস্ক্রিয় হতে পারে অথবা নাও হতে পারে। তবে এটি যদি তেজস্ক্রিয় হয় তাহলে পরবর্তী বিঘটনের ক্ষেত্রে এটি জনক পরমাণু হিসেবে ক্রিয়া করে।
রেডিও আইসোটোপ বা তেজস্ক্রিয় সমস্থানিক (Radio isotope or radioactive isotope) : কিছু কিছু আইসোটোপ তেজস্ক্রিয় কণা এবং রশ্মি নির্গত করে। এদেরকে রেডিও আইসোটোপ বা তেজস্ক্রিয় সমস্থানিক বলা হয়।
এগুলো সাধারণত নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়। পরীক্ষার সাহায্যে দেখা গেছে যে, কোনো নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় উৎপন্ন নতুন মৌলের প্রকৃতি অত্যন্ত অস্থায়ী। মৌলটি তেজস্ক্রিয় মৌলের মতো ইলেকট্রন, পজিট্রন বা বিটা রশ্মি বিকিরণ করে স্থায়ী অবস্থায় আসে।
নিম্নে একটি উদাহরণ দেওয়া হলো :
{ }_{7}^{14} \mathrm{~N}+{ }_{0}^{1} n \rightarrow{ }_{6}^{14} \mathrm{C}+{ }_{1}^{1} \mathrm{H} { }_{6}^{14} \mathrm{C} \rightarrow{ }_{7}^{14} \mathrm{~N}+\beta^{-1}এখানে { }_{6}^{14} \mathrm{C}, \beta রশ্মি নির্গত করে স্থায়ী মৌলে পরিণত হয়। তাই { }_{6}^{14} \mathrm{C} কার্বনের একটি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ।
রেডিও বা তেজস্ক্রিয় আইসোটাপের ব্যবহার (Uses of radio-isotopes) : বর্তমান বিজ্ঞান জগতে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ এক বিস্ময়কর ভূমিকা পালন করছে। বিজ্ঞানের প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। কয়েকটি ব্যবহার নিম্নে উল্লেখ করা হলো—
১। কৃষিক্ষেত্র : কৃষিক্ষেত্রে বীজ সংরক্ষণ, কীটমুক্তকরণ, অধিক ফসল ফলানো, একই গাছে বিভিন্ন বর্ণের ফুল ফুটানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
২। চিকিৎসা শাস্ত্র : চিকিৎসা শাস্ত্রে ক্যানসার, টিউমার প্রভৃতির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
৩৷ গবেষণা বিজ্ঞান : জীববিদ্যার বিভিন্ন গবেষণায় এবং রসায়নবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়।
৪৷ শিল্প বিজ্ঞান : বিভিন্ন শিল্প কাজে ও নানা প্রকার প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষের সময়কাল নির্ণয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়।
তেজস্ক্রিয়তার প্রকারভেদ (Kinds of radioactivity)
তেজস্ক্রিয়তা দুই প্রকার। যথা –
(১) প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা (Natural radioactivity) ও
(২) কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা (Artificial radioactivity)
কোনো পদার্থ হতে স্বতঃসফুর্তভাবে যে তেজস্ক্রিয়তা ঘটে, তাকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা বলে। যেমন ইউরেনিয়াম, রেডিয়াম, থোরিয়াম প্রভৃতি মৌল হতে যে তেজস্ক্রিয়া ঘটে তা প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা।
কৃত্রিম উপায়ে কোনো মৌলকে তেজস্ক্রিয় মৌলে পরিণত করলে যে তেজস্ক্রিয়তা ঘটে তাকে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা বলে।
উদাহরণ : { }_{13} A l^{27}+{ }_{2} H e^{4} \rightarrow{ }_{15} P^{30}+{ }_{0} n^{1} অর্থাৎ অ্যালুমিনিয়ামকে এ-কণা দ্বারা আঘাত করলে তেজস্ক্রিয় ফসফরাস তৈরি হয়।
তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার (uses of radioactivity)
আধুনিক বিজ্ঞান জগতে তেজস্ক্রিয়তার বহুল ব্যবহার দেখা যায়। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :
(১) এটা তেজস্ক্রিয় প্রদর্শক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(২) এটা কৃষি বিদ্যায় ব্যবহৃত হয়।
(৩) এটা চিকিৎসা বিদ্যায় ব্যবহৃত হয়।
(৪) এটা রসায়ন বিদ্যায় ব্যবহৃত হয়।
(৫) শিল্প ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার সমধিক।
তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of radioactivity)
তেজস্ক্রিয়তার নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ দেখা যায় :
১। যে সব মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৪3-এর বেশি সেসব পদার্থই তেজস্ক্রিয় ধর্ম দেখায়।
২। তেজস্ক্রিয়তা স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত নিউক্লীয় ঘটনা। এটি অবিরাম প্রক্রিয়া, সবিরাম নয়।
৩। তাপমাত্রা বা চাপের পরিবর্তন, পারিপার্শ্বিক যে কোনো বিকিরণ, বিদ্যুৎ বা চৌম্বক ক্ষেত্র, বাহ্যিক কোনো বল ইত্যাদি তেজস্ক্রিয়তাকে প্রভাবিত করে না।
৪। তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে সাধারণত আলফা, বিটা, গামা রশ্মি নিঃসরণ হয়।
তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রকারভেদ (Kinds of radioactive ray)
1899 খ্রিস্টাব্দে রাদারফোর্ড (Rutherford) এবং 1900 খ্রিস্টাব্দে উইলার্ড (Willard) পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে দেখান যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ হতে তিন প্রকার রশ্মি নির্গত হয়; যথা-
(১) আলফা রশি α-rays), (২) বিটা রশি (β-rays) এবং (৩) গামা রশ্মি (γ -rays)।
নিম্নলিখিত পরীক্ষার সাহায্যে বিজ্ঞানী মাদাম কুরী তিন প্রকার রশ্মির অস্তিত্ব প্রমাণ করেন।
বাম দিকে যে রশ্মিটি অল্প বেঁকে গেছে তা ধনাত্বক চার্জযুক্ত, একে আলফা রশ্মি বা α-রশ্মি; ডান দিকে যে রশ্মিটি বেশি বেঁকে গেছে তা ঋণাত্বক চার্জযুক্ত, একে বিটা রশ্মি বা β-রশ্মি এবং মাঝখানে যে রশ্মিটি সোজা চলে গেছে যার উপর চৌম্বক ক্ষেত্রের কোনো প্রভাব নেই তা গামা রশ্মি বা γ-রশ্মি। γ-রশ্মি বৈদ্যুতিক চৌম্বক তরঙ্গ। সাধারণ আলোর সঙ্গে পার্থক্য শুধুমাত্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের। γ-রশ্মি তড়িচ্চুম্বকীয়। তরঙ্গ যার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 0.1 \dot{A} থেকে 0.0001 \dot{A}।
α, β, γ গ্রিক বর্ণমালার প্রথম তিনটি বর্ণ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে নির্গত রশ্মির ভেদন ক্ষমতার ক্রম অনুসারে α, β, γ নামকরণ করা হয়েছে। α– রশ্মির ভেদন ক্ষমতা β-রশির চেয়ে কম, আবার β– রশ্মির চেয়ে γ-রশ্মির ভেদন ক্ষমতা অনেক বেশি। α-রশি একটি সীসা খণ্ডের মাত্র 1 \times 10^{-5} m ভেদ করতে পারে, β-রশ্মি 1 \times 10^{-4} m এবং γ– রশ্মি .01m।
কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের পরমাণু হতে α-কণা নির্গত হলে যে নতুন মৌল-পরমাণু তৈরি হয় তার ভর সংখ্যা ও পারমাণবিক সংখ্যা প্রাথমিক তেজস্ক্রিয় মৌলটির ভর ও পারমাণবিক সংখ্যা অপেক্ষা যথাক্রমে 4 একক ও 2 একক কম হয়।
পক্ষান্তরে, β-কণা নির্গমনের ক্ষেত্রে নতুন মৌলটির ভর সংখ্যা একই থাকে; কিন্তু পারমাণবিক সংখ্যা প্রাথমিক মৌলটির পারমাণবিক সংখ্যা অপেক্ষা 1 একক বৃদ্ধি পায়।
γ-রশ্মি বিকিরণের ফলে পরমাণুর ভর সংখ্যা বা পারমাণবিক সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না।
কোনো তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ এক সঙ্গে α-রশ্মি ও β-রশ্মি বিকিরণ করতে পারে না। একই সঙ্গে α বা B-রশ্মি পেতে হলে তেজস্ক্রিয় নমুনা হিসেবে একাধিক আইসোটোপের মিশ্রণ নিতে হয়।
তেজস্ক্রিয় রশ্মির ধর্ম (Properties of radioactive ray)
তেজস্ক্রিয় পদার্থ হতে তিন প্রকারের রশ্মি নির্গত হয়। তারা α, β, এবং γ রশ্মি। তাদের বিভিন্ন ধর্ম নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
আলফা রশ্মির ধর্ম :
(১) এই রশ্মি কতকগুলো ভারী কণার সমষ্টি। প্রত্যেকটি কণার ভর 6.6 \times 10^{-27} kg এর ভর হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসের বা প্রোটনের ভরের চার গুণ।
(২) এরা ধনাত্বক চার্জ বহন করে। চার্জের পরিমাণ q=+2 e=3.2 \times 10^{-27} C।
(৩) এরা দ্বি-আয়নিত হিলিয়াম পরমাণু।
(৪) এরা বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়। এটি প্রমাণ করে যে আলফা রশ্মির কণাগুলো চার্জগ্রস্ত। বিক্ষেপের অভিমুখ হতে আলফা রশ্মির চার্জ ধনাত্মক প্রমাণিত হয়।
(৫) এদের আয়নায়ন (lonisation) ক্ষমতা বেশি। এই ক্ষমতা β-রশির তুলনায় 100 গুণ এবং γ-রশির তুলনায় 1000 গুণ বেশি।
(৬) এরা ফটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর বিক্রিয়া করে।
(৭) এরা সহজেই বস্তু দ্বারা শশাষিত হয়, অর্থাৎ এদের ভেদন ক্ষমতা (Penetrating power) খুব কম। β এবং γ-রশ্মির তুলনায় এদের ভেদন ক্ষমতা অনেক কম।
(৮) জিঙ্ক সালফাইড বা বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইডে আলফা রশ্মি প্রতিভা সৃষ্টি করে।
(৯) বাতাসে এদের গম্যতার (Range) সীমা 0.027 m হতে প্রায় 0.09 m।
(১০) বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় বস্তু হতে আলফা রশ্মি বিভিন্ন বেগে নির্গত হয়। এই বেগ 1.4 \times 10^7ms^{-1} হতে 1.9 \times 10^7ms^{-1} হয়।
(১১) আলফা রশ্মি শরীরের কোনো অংশে পড়লে ক্ষত সৃষ্টি করে। এই ক্ষত সারানো খুবই মুশকিল।
(১২) পাতলা ধাতব বা অভ্রের পাতের ভেতর দিয়ে যাবার কালে আলফা কণাগুলোর চতুর্দিকে বিক্ষেপণ হয়।
বিটা রশ্মির ধর্ম :
(১) বিটা রশ্মি খুবই হালকা। এই রশ্মি ঋণাত্মক তড়িৎযুক্ত কণার সমষ্টি।
(২) এদের ভর 9.1 \times 10^{-31} kg ৷
ক্ষয় (Decay)
তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের তিন বছর পর দুজন বিজ্ঞানী এলস্টার (Elster) ও গাইটেল (Ceitel) লক্ষ করেন যে, কোনো তেজস্ক্রিয় বস্তুর তেজস্ক্রিয়তা সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে কমতে থাকে, এটাই তেজস্ক্রিয়তার ক্ষয় (Decay)। এই ক্ষয় সূচক নিয়ম (Exponential Law) মেনে চলে। কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থের একটি পরমাণুর একক সময়ে ভাঙনের সম্ভাব্যতাকে ওই পদার্থের অবক্ষয় ধ্রুবক বা ক্ষয় ধ্রুবক বা ভাঙন ধ্রুবক বলে। একে \lambda দ্বারা প্রকাশ করা। পরিসংখ্যানের নিয়ম মেনে চলে যা ক্ষয় সূত্র নামে পরিচিত।
তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের সরণ সূত্র (Displacement laws of radioactive decay)
তেজস্ক্রিয় বিঘটনের বিভিন্ন পরীক্ষালব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিখ্যাত বিজ্ঞানী সডি (Soddy) ও ফাজান্স (Fajans) দুটি সূত্র উদ্ভাবন করেন। এগুলোকে সডি-ফাজানস-এর সরণ সূত্র বলে।
(i) α-বিঘটনের সূত্র (α–disintegration law): কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর α-বিঘটন হলে যে নতুন মৌল পরমাণু সৃষ্টি হয় তার ভর সংখ্যা ও পারমাণবিক সংখ্যা জনক তেজস্ক্রিয় মৌলটির ভর সংখ্যা ও পারমাণবিক সংখ্যা অপেক্ষা যথাক্রমে 4 একক ও 2 একক কম হয়। অর্থাৎ
\mathrm{z} \mathrm{X}^{\mathrm{A}} \rightarrow \mathrm{z}-2 \mathrm{Y}^{\mathrm{A}-4}+\alpha(\text { কণা) }জনক দুহিতা
যেমন,
{ }_{88} \mathrm{Ra}^{226} \rightarrow{ }_{86} \mathrm{Rn}^{222}+\alpha \text { (কণা) }রেডিয়াম রেডন
ব্যাখ্যা : α কণা হলো হিলিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াস অর্থাৎ { }_{2} \mathrm{He}^{4}। ওপরের উদাহরণে জনক রেডিয়াম ও দুহিতা রেডনের ভরসংখ্যার পার্থক্য, (226-222)=4 এবং পারমাণবিক সংখ্যার পার্থক্য (88-86)=2। সুতরাং ভর সংখ্যার পার্থক্য ও পারমাণবিক সংখ্যার পার্থক্য যথাক্রমে 4 ও 2 যা হিলিয়াম নিউক্লিয়াস { }_{2}\mathrm{He}^{4}e নির্দেশ করে।
(ii) β-বিঘটনের সূত্র (B-disintegration law) : কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর β-বিঘটন হলে যে মৌল পরমাণু সৃষ্টি হয় তার ভর সংখ্যা জনক তেজস্ক্রিয় মৌলটির ভর সংখ্যার সমান হয় এবং পারমাণবিক সংখ্যা জনক মৌলটির পারমাণবিক সংখ্যা অপেক্ষা 1 বেশি হয়। অর্থাৎ
\mathrm{z} \mathrm{X}^{\mathrm{A}} \rightarrow \mathrm{z}+2 \mathrm{Y}^{\mathrm{A}+4}+\beta \text { (কণা) }যেমন,
{ }_{90} \mathrm{Th}^{234} \rightarrow{ }_{92} \mathrm{~Pa}^{234}থোরিয়াম প্রোটোঅ্যাকটিনিয়াম
উল্লেখ্য, এখানে পারমাণবিক সংখ্যা 1 বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো যে β বিঘটনের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরের 1টি নিউট্রন ভেঙ্গে 1টি প্রোটনে পরিণত হয়। β বিঘটনে জনক ও দুহিতার ভর সংখ্যা সমান থাকে।
ভর সংখ্যা ও পারমাণবিক সংখ্যার সংরক্ষণ সূত্র (Conservation laws of mass number and atomic number)
ভর সংখ্যার সংরক্ষণ সূত্র : তেজস্ক্রিয় বিঘটনে মোট প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যা একই থাকে। অর্থাৎ, বিঘটনের পূর্বের ও পরের ভর সংখ্যা সমান থাকে। একেই ভর সংখ্যার সংরক্ষণ সূত্র বলে।
পারমাণবিক সংখ্যার সংরক্ষণ : তেজস্ক্রিয় বিঘটনে মোট চার্জের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ, নিউক্লিয়াসের প্রোটন সংখ্যা যা পারমাণবিক সংখ্যা নির্দেশ করে তা বিঘটনের পূর্বে এবং পরে সমান থাকে। এটিই পারমাণবিক সংখ্যার সংরক্ষণ সূত্র।
পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন α ও β কণা বেরিয়ে আসে। এই শক্তির উৎস কী?
α ও β বিঘটনের জন্য জনক পরমাণুর ভর অপেক্ষা দুহিতা পরমাণুর ও নিঃসৃত কণার ভর সমষ্টি কিছুটা কম হয়। এখন আইনস্টাইনের ভর-শক্তি নীতি অনুসারে এই হ্রাসকৃত ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। α ও β কণা দুহিতা পরমাণুর তুলনায় অনেক হালকা হওয়ায় ওই কণাগুলো শক্তির সিংহভাগ গ্রহণ করে। এই কারণেই নিউক্লিয়াস থেকে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন α ও β কণা বেরিয়ে আসে।
তেজস্ক্রিয় ক্ষয় সূত্র (Radioactive decay law)
তেজস্ক্রিয়া একটি স্বতঃস্ফুর্ত এবং আকস্মিক ঘটনা। 1902 খ্রিস্টাব্দে রাদারফোর্ড এবং সডি তেজস্ক্রিয় ক্ষয় সূত্র বা অবক্ষয় সূত্র আবিষ্কার করেন। সূত্রটি নিয়ে বিবৃত হলো−
সূত্র : কোনো মুহূর্তে তেজস্ক্রিয় পরমাণুর ভাঙন বা অবক্ষয়ের হার ওই সময়ে উপস্থিত অক্ষত পরমাণুর সমানুপাতিক।
যদি তেজস্ক্রিয় পরমাণুর ভাঙনের হার dN/dt এবং t সময়ে অক্ষত পরমাণুর সংখ্যা N হয়, তবে
বা, -\frac{\mathrm{dN}}{\mathrm{dt}}=\text { ধ্রুবক } \times \mathrm{N}
বা, \frac{d \mathrm{~N}}{d \mathrm{t}}=-\lambda \mathrm{N} … … … (9.10)
বা, \frac{d \mathrm{~N}}{\mathrm{~N}}=-\lambda d \mathrm{t}
ইহাই তেজস্ক্রিয় ক্ষয় সূত্রের গাণিতিক রূপ।
এখানে, একটি ধ্রুবরাশি এবং একে বলা হয় ওই তেজস্ক্রিয় মৌলের ক্ষয় ধ্রুবক (Decay constant)। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে তেজস্ক্রিয় বস্তুর পরমাণুর সংখ্যা হ্রাস পায় বলে সমীকরণের পূর্বে একটি ঋণ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
ক্ষয় ধ্রুবক বা অবক্ষয় ধ্রুবক বা ভাঙন ধ্রুবক (decay constant)
সমীকরণ (9.10) হতে পাই,
\frac{d \mathrm{~N}}{d \mathrm{t}}=-\lambda \mathrm{N}এখন, N=1 হলে ওপরের সমীকরণ থেকে পাই,
\lambda=-d \mathrm{~N} / d \mathrm{t}
অর্থাৎ, ক্ষয় ধ্রুবক একটি পরমাণুর একক সময়ে ভাঙনের সম্ভাব্যতা (probability) নির্দেশ করে।
সংজ্ঞা: কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থের একটি পরমাণুর একক সময়ে ভাঙনের সম্ভাব্যতাকে ওই পদার্থের ক্ষয় বা অবক্ষয় বা ভাঙন ধ্রুবক বলে।
এর একক s^{-1} বা, day^{-1} বা, yr^{-1}
{ }^{198 n} \mathrm{Au} এর ক্ষয় ধ্রুবক 0.257 ^{d-1} বলতে বুঝায় 1 দিনে একটি Au পরমাণু ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা হলো 0.257 অংশ।
তেজস্ক্রিয় রূপান্তর সূত্র (Radioactive conversion formula)
কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থের ক্ষয় ধুবক এবং t সময়ে অক্ষত পরমাণুর সংখা N হলে তেজস্ক্রিয়তার ক্ষয় সুত্র থেকে পাই সমীকরণ (9.10)
\frac{d \mathrm{~N}}{d \mathrm{t}} =-\lambda \mathrm{N}বা, \frac{d \mathrm{~N}}{\mathrm{~N}} =-\lambda d \mathrm{t}
মনে করি শুরুতে অর্থাৎ যখন, t=0, তখন N=N_0এবং যখন t=t তখন N=N এই সীমার মধ্যে উপরোক্ত সমীকরণকে সমাকলন করে পাই,
\int_{\mathrm{N}_{0}}^{\mathrm{N}} \frac{d \mathrm{~N}}{\mathrm{~N}}=-\lambda \int_{0}^{t} d \mathrm{t} … … … (9.11)
বা, \quad\left\lceil\log _{e} \mathrm{~N}\right\rceil{ }_{\mathrm{N}_{0}}^{\mathrm{N}}=-\lambda(t-0)
বা, \quad \log _{e} \mathrm{~N}-\log _{e} \mathrm{~N}_{0}=-\lambda t
বা, \quad \log _{e} \frac{\mathrm{N}}{\mathrm{N}_{0}}=\log _{x} e^{-\lambda t}
বা, \frac{\mathrm{N}}{\mathrm{N}_{0}}=e^{-\lambda t} … … … (9.12)
\mathrm{~N}=\mathrm{N}_{0} e^{-\lambda t}অর্ধায়ু বা অর্ধজীবন (Half life)
কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রারম্ভিক বা উপস্থিত অক্ষত পরমাণুগুলোর অর্ধেক পরিমাণ ক্ষয় হতে যে সময় লাগে তাকে অর্ধায়ু বা অর্ধজীবন বলে।
অর্ধায়ুর মান তেজস্ক্রিয় পদার্থের একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। পদার্থটির ভৌত বা রাসায়নিক পরিবর্তন হলেও অর্ধায়ুর মান অপরিবর্তিত থাকে।
তেজস্ক্রিয় ভাঙনের সূত্র হতে আমরা জানি, \mathrm{N}=\mathrm{N}_{0} e^{-\lambda t}
যদি অর্ধায়ুকে T বা \mathrm{T}_{\frac{1}{2}} দ্বারা সূচিত করা হয়, তা হলে যখন t=T , তখন \mathrm{N}=\frac{\mathrm{N}_{0}}{2}
\therefore \frac{\mathrm{N}_{0}}{2}=\mathrm{N}_{0} e^{-\lambda T} \quad \text { বা, } e^{\lambda T}=2 \quad \text { বা, } \quad \lambda T=\log _{e} 2\mathrm{T}=\frac{\log _{e} 2}{\lambda}=\frac{2.303 \times \log _{10} 2}{\lambda} \quad \therefore \mathrm{T}=\frac{0.693}{\lambda} … … … (9.14)
অর্থাৎ তেজস্ক্রিয় পদার্থের অর্ধায়ু এর ক্ষয় ধ্রুবকের ব্যস্তানুপাতিক।
1 গ্রাম ইউরেনিয়াম পরমাণু ভেঙে ঠিক অর্ধেক অর্থাৎ \frac{1}{2} গ্রাম হতে 450 কোটি বছর সময় লাগে। আরও 450 কোটি বছরে \frac{1}{2} গ্রাম ভেঙে \frac{1}{4} গ্রাম হবে। সুতরাং ইউরেনিয়ামের অর্ধায়ু 450 কোটি বছর।
স্পষ্টত বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থের অর্ধায়ু বিভিন্ন। যে সকল মৌলের T খুব দীর্ঘ হয় এবং \lambda খুব ক্ষুদ্র হয় তাদের পরমাণুগুলি খুব কম হারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। বিভিন্ন অর্ধায়ুসম্পন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিঘটন (disintegration) [চিত্র]-এ দেখানো হয়েছে।
T সময় পরে তেজস্ক্রিয় পরমাণুর সংখ্যা প্রাথমিক সংখ্যার অর্ধেক হয়। 2T সময় পরে এই সংখ্যা প্রাথমিক সংখ্যার 2^{1/2} অংশ, 3T সময় পরে 2^{1/3} অংশ হয়। সুতরাং, nT সময় পরে তেজস্ক্রিয় পরমাণুর সংখ্যা প্রাথমিক সংখ্যার \frac{1}{2^n} হয়।
অর্ধায়ুর সংজ্ঞা থেকে যে কোনো মুহূর্তে অবশিষ্ট পরমাণুর সংখ্যা নিম্নোক্ত সূত্রানুসারে নির্ণয় করা যায়,
\frac{\mathrm{N}}{\mathrm{N}_{0}}=\left(\frac{1}{2}\right)^{1 / T}অর্ধায়ুর মান জানা থাকলে প্রারম্ভিক অবস্থার t সময় পরে প্রাথমিক অক্ষত পরমাণু সংখ্যার কত ভগ্নাংশ অক্ষত থাকবে তা সমীকরণ (i)-এর সাহায্যে জানা যায়। আবার N_0 জানা থাকলে সময় পরে অক্ষত পরমাণুর সংখ্যা (N) এবং বিঘটিত পরমাণুর সংখ্যা (N_0-N) ইত্যাদিও জানা যায়।
প্রাথমিক ভর M_0 এবং t সময়ে ভর[ katex] M[/katex] অবশিষ্ট থাকলে অনুরূপভাবে লেখা যায়,
\frac{\mathrm{M}}{\mathrm{M}_{0}}=\left(\frac{1}{2}\right)^{1 / T}গড় আয়ু (Mean life of average life)
তেজস্ক্রিয়তা স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা। এটা সূচকীয় সূত্র মেনে চলে এবং কোনো পরমাণুর আয়ু শূন্য হতে অসীম (∞) হতে পারে। সুতরাং কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থের গড় আয়ু নির্ণয় করা সম্ভব।
প্রত্যেকটি তেজস্ক্রিয় পরমাণুর আয়ুর যোগফলকে পরমাণুর প্রারম্ভিক সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে আয়ু পাওয়া যায় তাকে ঐ তেজস্ক্রিয় পদার্থের গড় আয়ু বলে।
গড় আয়ুকে সাধারণত τ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
\therefore \tau=\frac{\text { ১ম পরমাণুর আয়ু + ২য় পরমাণুর আয়ু +......+ nতম পরমাণুর আয়ু }}{\mathrm{N}_{0}}গাণিতিকভাবে দেখানো যায় যে, গড় আয়ু \tau=\frac{1}{\lambda}=\frac{\mathrm{T}}{0.693} … … … (9.15)
সমীকরণ (9.15) হতে দেখা যায়, গড় আয়ু অর্ধায়ুর সমানুপাতিক।
ভাঙ্গনের হার বা সক্রিয়তা (Rate of disintegration or activity)
সময়ের সাপেক্ষে কোনো তেজস্ক্রিয় নমুনার ভাঙ্গনের হারকে তার সক্রিয়তা বলে। একে A দ্বারা সূচিত করা হয়।
প্রাথমিক পরমাণু সংখ্যা N_0 এবং যে কোনো সময়ে অপরিবর্তিত পরমাণু সংখ্যা N হলে, N_0 ও N-এর মধ্যে সম্পর্ক হলো—
\mathrm{N}=\mathrm{N}_{0} e^{-\lambda t}সমীকরণ (i)-কে অবকলন করে পাই,
\frac{d \mathrm{~N}}{d \mathrm{t}}=-\lambda \mathrm{N}_{0} e^{-\lambda t}=-\lambda \mathrm{N}=\mathrm{A}=\text {সক্রিয়তা }
সুতরাং, যখন t=0, তখন \left(\frac{d \mathrm{~N}}{d \mathrm{t}}\right)_{0}=-\lambda \mathrm{N}_{0}
\therefore \frac{d \mathrm{~N}}{d \mathrm{t}}=\left(\frac{d \mathrm{~N}}{d \mathrm{t}}\right)_{0} e^{-\lambda t} \frac{d \mathrm{~N}}{d \mathrm{t}}=\mathrm{A} \quad \text { এবং } \quad\left(\frac{d \mathrm{~N}}{d \mathrm{t}}\right)_{0}=\mathrm{A}_{0}অতএব, সমীকরণ (i) কে লেখা যায়, \mathrm{A}=\mathrm{A}_{0} e^{-\lambda t} … … … (9.16)
সুতরাং, সক্রিয়তা সূচকীয় সূত্র অনুযায়ী হ্রাস পায়।
চিত্রে সময়ের সাথে সক্রিয়তার পরিবর্তন দেখানো হয়েছে।
λN গুণফলটির মাধ্যমে সক্রিয়তাকে প্রকাশ করা হয়। এ থেকে বোঝা যায় যে কোনো তেজস্ক্রিয় নমুনার সক্রিয়তা বেশি হয় যদি (i) নমুনাটিতে পরমাণুর সংখ্যা বেশি থাকে এবং (ii) মৌলটির ক্ষয় ধ্রুবক λ এর মান বেশি থাকে অর্থাৎ অর্ধায়ু T-এর মান কম হয়।
তেজস্ক্রিয় উৎসের সক্রিয়তা পরিমাপের এস.আই. (SI) একক হলো বেকেরেল (Becquerel, Bq)। কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থের সক্রিয়তা 1 Bq বলতে বোঝায় প্রতি সেকেন্ডে ওই তেজস্ক্রিয় পদার্থের একটি নিউক্লিয়াসের ভাঙন।
অর্থাৎ, 1 Bq=1s^{-1}