ভৌত রাশি এবং পরিমাপ (Physical Quantities and Measurements)
রাশি:
এই জগতে যা কিছু পরিমাপ করতে পারি, তাকে আমরা রাশি বলি। এই ভৌত জগতের অসীমসংখ্যক ভৌত রাশিমালার সংজ্ঞা, মাত্রা, একক ইত্যাদি মনে রাখা সম্ভব মাত্র ৭টি মৌলিক রাশি দিয়ে।
আন্তর্জাতিক একক (The International System of Units) :
দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, বৈদ্যুতিক প্রবাহ, তাপমাত্রা, পদার্থের পরিমাণ এবং দীপন তীব্রতা, এই সাতটি মৌলিক রাশির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সাতটি একককে এসআই একক (S.I. Unit) বলে।
(SI এসেছে ফরাসি ভাষার System International d‘Units থেকে)
রাশি | Unit | একক | Symbol of Unit |
দৈর্ঘ্য | meter | মিটার | m |
ভর | kilogram | কিলোগ্রাম | Kg |
সময় | second | সেকেন্ড | s |
বৈদ্যুতিক প্রবাহ | ampere | অ্যাম্পিয়ার | A |
তাপমাত্রা | Kelvin | কেলভিন | K |
পদার্থের পরিমাণ | mole | মোল | mol |
দীপন তীব্রতা | candela | ক্যান্ডেলা | cd |
পরিমাপের একক (Units of measurements) :
সুনির্দিষ্টভাবে | বাস্তবিক ধারণা |
(i) এক মিটার: শূন্য মাধ্যমে এক সেকেন্ডের ভাগের এক ভাগ সময়ে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে সেটা হচ্ছে এক মিটার। | (i) এক মিটার: স্বাভাবিক উচ্চতার একজন মানুষের মাটি থেকে পেট পর্যন্ত দূরত্ব মোটামুটি এক মিটার। |
(ii) এক কিলোগ্রাম: ফ্রান্সের একটা নির্দিষ্ট ভবনে রাখা প্লাটিনাম ইরিডিয়াম দিয়ে তৈরি 3.9 সেন্টিমিটার উচ্চতা ও ব্যাসের একটি সিলিন্ডারের ভর হচ্ছে এক কেজি। | (ii) এক কিলোগ্রাম: 1 লিটার পানির বোতল বা প্রায় চার গ্লাসে যতটুকু পানি থাকে তার ভর হচ্ছে এক কেজি। |
(iii) এক সেকেন্ড: সিজিয়াম 133 পরমাণুর 919 263 17703 টি স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তা এক সেকেন্ড। | (iii) এক সেকেন্ড: 1001 এই তিনটি শব্দ বলতে যে সময় লাগে, তা হচ্ছে এক সেকেন্ড। |
(iv) এক কেলভিন: পানির ত্রৈধ বিন্দুর তাপমাত্রাকে 27 3.16 দিয়ে ভাগ করলে যে তাপমাত্রা পাওয়া যায় সেটি হচ্ছে এক কেলভিন। | (iv) এক কেলভিন: হাত দিয়ে কারো জ্বর অনুভব করলে বলা যেতে পারে তার তাপমাত্রা 1 কেলভিন বেড়েছে। |
(v) এক অ্যাম্পিয়ার: যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে 1 মিটার দূরত্বে রাখা দুইটি এক মিটার দৈর্ঘ্যের তার 2 × 10 নিউটন বলে পরস্পরকে আকর্ষণ করে, সেটা হচ্ছে এক অ্যাম্পিয়ার। | (v) এক অ্যাম্পিয়ার: তিনটি মোবাইল ফোন একসাথে চার্জ করা হলে এক অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। |
(vi) এক মোল: 0.12 কেজিতে যে কয়টি কার্বন 12 পরমাণু থাকে সেই সংখ্যক মৌলিক কণার সমান পদার্থ হচ্ছে এক মোল। | (vi) এক মোল: বড় এক চামচ পানিতে যত মোল পানির অণু থাকে, তা হচ্ছে 1 মোল। |
(vii) এক ক্যান্ডেলা: 1 সেকেন্ডে 540 বার কম্পনরত কোনো আলোর উৎস থেকে যদি এক স্টেরেডিয়ান ঘনকোণে এক ওয়াটের 683 ভাগের এক ভাগ বিকিরণ পৌঁছায়, তাহলে সেই আলোর তীব্রতা হচ্ছে এক ক্যান্ডেলা। | (vii) এক ক্যান্ডেলা: একটি মোমবাতির আলোকে মোটামুটিভাবে এক ক্যান্ডেলা ধরা যায়। |
অনেক বড় থেকে অনেক ছোট দূরত্ব (Too big to too small distance):
দূরত্ব | m |
নিকটতম গ্যালাক্সি | 6 \times 10^{19} |
নিকটতম নক্ষত্র | 4 \times 10^{16} |
সৌরজগতের ব্যাসার্ধ | 6 \times 10^{12} |
পৃথিবীর ব্যাসার্ধ | 6 \times 10^{6} |
এভারেস্টের উচ্চতা | 9 \times 10^{3} |
ভাইরাসের দৈর্ঘ্য | 1 \times 10^{-8} |
হাইড্রোজেন পরমাণুর ব্যাসার্ধ | 5 \times 10^{-11} |
প্রোটনের ব্যাসার্ধ | 1 \times 10^{-5} |
অনেক বড় থেকে অনেক ছোট সময় (Too big to too small time):
সময় | s |
বিগ ব্যাংয়ের সময় | 4 \times 10^{17} |
ডাইনোসরের সময় | 2 \times 10^{14} |
মানুষের জন্ম | 8 \times 10^{12} |
এক দিন | 9 \times 10^{4} |
মানুষের হৃৎস্পন্দন | 1 |
মিউওন এর আয়ু | 2 \times 10^{-6} |
স্পন্দনকাল: সবুজ আলো | 2 \times 10^{-15} |
স্পন্দনকাল: এক MeV গামা রে | 4 \times 10^{-21} |
অনেক বড় থেকে অনেক ছোট ভর (Too big to too small masses):
ভর | Kg |
আমাদের গ্যালাক্সি | 2 \times 10^{41} |
সূর্য | 2 \times 10^{31} |
পৃথিবী | 6 \times 10^{24} |
জাহাজ | 7 \times 10^{7} |
হাতি | 5 \times 10^{3} |
মানুষ | 6 \times 10^{1} |
ধূলিকণা | 7 \times 10^{-7} |
ইলেকট্রন | 9 \times 10^{-31} |
উপসর্গ বা গুণিতক (Prefix):
পদার্থবিজ্ঞানে উপসর্গ বলতে একটি প্রতীককে বোঝানো হয় যা বড় বড় আকৃতির সংখ্যাগুলোকে সংক্ষেপে লিখতে সাহায্য করে। যেমন: কখনো আমাদের গ্যালাক্সির ভর আবার কখনো ইলেকট্রনের ভর মাপতে হয়। ভরের মাঝে এই বিশাল পার্থক্য মাপার জন্য একটা এককই যথেষ্ট নয় । তাই আন্তর্জাতিকভাবে কিছু উপসর্গ বা গুণিতক (Prefix) তৈরি করে নেওয়া হয়েছে যা আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে থাকি।
এক্সা | E | 10^{18} |
পেটা | P | 10^{15} |
টেরা | T | 10^{12} |
গিগা | G | 10^{9} |
মেগা | M | 10^{6} |
কিলো | K | 10^{3} |
হেক্ট | h | 10^{2} |
ডেকা | da | 10^{1} |
ডেসি | d | 10^{-1} |
সেন্টি | c | 10^{-2} |
মিলি | m | 10^{-3} |
মাইক্রো | μ | 10^{-6} |
ন্যানো | n | 10^{-9} |
পিকো | p | 10^{-12} |
ফেমটো | f | 10^{-15} |
এটো | G | 10^{-18} |
মাত্রা (Dimension) :
একটা রাশিতে বিভিন্ন মৌলিক রাশি কোন সূচকে বা কোন পাওয়ারে আছে সেটাকে তার মাত্রা বলে।
আমাদের চারপাশে অসংখ্য রাশি রয়েছে যেগুলো কয়েকটি মৌলিক রাশি (দৈর্ঘ্য , সময় , ভর ইত্যাদি) মিলে তৈরি হয়।
বেগের মাত্রা: দূরত্ব/সময় = \frac{L}{T} = LT^{-1}
ত্বরণের সময়: দূরত্ব = \frac{L}{T^2} = LT^{-2}
বলের মাত্রা: ত্বরণ \times ভর = MLT^{-2}\\ \therefore [F]= MLT^{-2}
একটা রাশিতে মাত্রা বোঝাতে হলে সেটিকে তৃতীয় ব্র্যাকেটের সাহায্যে দেখানো হয়।
বৈজ্ঞানিক প্রতীক ও সংকেত (Scientific Symbols and Notations):
এককের সংকেত লেখার জন্য নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয়ে থাকে:
- কোনো রাশির মান প্রকাশ করার জন্য একটি সংখ্যা লিখে তারপর একটি ফাঁকা জায়গা (space) রেখে এককের সংকেতটি লিখতে হয়। যেমন, 2.21 kg, 7.3 \times 10^2 m কিংবা 22K। শতকরা চিহ্নও (%) এই নিয়ম মেনে চলে। তবে ডিগ্রি (°), মিনিট (‘) ও সেকেন্ড (”) লেখার সময় সংখ্যার পর কোনো ফাঁকা জায়গা বা space রাখতে হয় না।
- গুণ করে পাওয়া লব্ধ লেখার সময় দুটি এককের মাঝখানে একটি ফাঁকা জায়গা বা space দিতে হয়। যেমন: 2.35 Nm
- ভাগ করে পাওয়া লব্ধ এককের বেলায় ঋণাত্মক সূচক বা ‘/’ (যেমন ms^{-1} কিংবা m/s) দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
- প্রতীকগুলো যেহেতু গাণিতিক প্রকাশ, কোনো কিছুর সংক্ষিপ্ত রূপ নয়, তাই তাদের সাথে কোনো যতিচিহ্ন (.) বা full stop ব্যবহার হয় না।
- এককের সংকেত লেখা হয় সোজা অক্ষরে যেমন মিটারের জন্য m, সেকেন্ডের জন্য s ইত্যাদি। তবে রাশির সংকেত লেখা হয় italic বা বাঁকা অক্ষরে। যেমন ভরের জন্য m, বেগের জন্য v ইত্যাদি।
- এককের সংকেত ছোট হাতের অক্ষরে লেখা হয় যেমন cm, s, mol ইত্যাদি। তবে যেগুলো কোনো বিজ্ঞানীর নাম থেকে নেওয়া হয়েছে সেখানে বড় হাতের অক্ষর (নিউটনের নাম অনুসারে N) হবে। একাধিক অক্ষর হলে শুধু প্রথমটি বড় হাতের অক্ষর হবে (প্যাস্কেলের নামানুসারে গৃহীত একক Pa)
- এককের উপসর্গ (k, G, M) এককের (m, W, Hz) সাথে কোনো ফাঁকা ছাড়া যুক্ত হবে যেমন km, GW, MHz
- কিলো (10^3) থেকে বড় সব উপসর্গ বড় হাতের হতে হবে (M, G, T)।
- এককের সংকেতগুলো কখনো বহুবচন হবে না ( 25 kgsনয় সব সময় 25 kg)
- কোনো সংখ্যা বা যৌগিক একক এক লাইনে লেখার চেষ্টা করতে হবে। খুব প্রয়োজন হলে সংখ্যা এবং এককের মাঝখানে line break দেওয়া যেতে পারে।
পরিমাপের যন্ত্রপাতি (Measuring Instruments):
স্কেল (Scale) :
100cm বা 1m লম্বা স্কেলকে মিটার স্কেল বলে। এতে একপাশে মিলিমিটার ও অন্যপাশে ইঞ্চি দাগ কাটা থাকে।
ভার্নিয়ার স্কেল (Vernier Scale):
অত্যন্ত সূক্ষ্ম কাজে আমাদের সূক্ষ্মভাবে মাপার প্রয়োজন হয়, তখন ভার্নিয়ার স্কেল ব্যবহার করতে হয়।
স্লাইড ক্যালিপার্সে ভার্নিয়ার স্কেলকে মূল স্কেলের পাশে লাগানো থাকে এবং সামনে-পেছনে সরানো যায়।
মূল স্কেলের 9mm দৈর্ঘ্যকে ভার্নিয়ার স্কেলের দশ ভাগ বলা হয়।
∴ প্রত্যেকটা ভাগ হচ্ছে \frac{9}{10}mm যা 1 mm থেকে \frac{1}{10} mm কম।
পরিমাপ (Measurement):
ভার্নিয়ার সমপাতন: ভার্নিয়ার স্কেলের যে দাগটি মূল দাগের সাথে মিলে যায়, সেটাকে হলো ভার্নিয়ার সমপাতন।
ভার্নিয়ার ধ্রুবক: প্রধান স্কেলের এক ভাগের চেয়ে ভার্নিয়ার স্কেলের এক ভাগ কতটুকু ছোট তার পরিমাণকে বলা হয় ভার্নিয়ার ধ্রুবক (Vernier Constant)।
(মূল স্কেলের সবচেয়ে ছোট ভাগের দূরত্বকে ভার্নিয়ার স্কেলের মোট দাগসংখ্যা দিয়ে ভাগ দিলেই ভার্নিয়ার সমপাতন পাওয়া যায়)
স্লাইড ক্যালিপার্স ও ভার্নিয়ার স্কেল দিয়ে পরিমাপের পদ্ধতি:
- প্রথমে মিলিমিটারের সর্বশেষ দাগ পর্যন্ত মেপে ভার্নিয়ার স্কেলের দিকে তাকাতে হয়।
- তারপর ভার্নিয়ার স্কেলের সমপাতন (V) দিয়ে ভার্নিয়ার ধ্রুবক (VC=0.0001 m)) গুণ করতে হয়।
- প্রাপ্ত মান মূল স্কেলের পাঠের (M) এর সাথে যোগ করলেই নিখুঁত পরিমাপ পাওয়া যাবে।
∴ পাঠ = M+(V \times VC )
স্লাইড ক্যালিপার্স/ ভার্নিয়ার স্কেলের ব্যবহার:
- কোন জিনিসের দৈর্ঘ্য মাপার জন্য।
- গোলক বা সিলিন্ডারের ব্যাস মাপার জন্য।
- ফাঁপা টিউবের ভেতর ও বাইরের ব্যাস মাপার জন্য।
স্ক্রু গজ (Screw Gauge) :
স্ক্রু গজ এক ধরনের ডিভাইস যা বিভিন্ন যন্ত্রপাতির খুব ছোট দৈর্ঘ্য, তারের ব্যাস, পাতলা পাতের পুরুত্ব ইত্যাদি অতি সূক্ষ্মভাবে মাপার জন্য ব্যবহৃত হয়।
স্ক্রু এর পিচ: বৃত্তাকার স্কেল একবার ঘোরালে রৈখিক স্কেল বরাবর যে দূরত্ব যায় তাকে পিচ (Pitch) বলে।
স্ক্রু গজের ন্যূনাঙ্ক: যে বৃত্তাকার অংশটি ঘুরিয়ে স্কেল স্কেলটিকে সামনে-পেছনে নেওয়া হয় সেটিকে 100 ভাগে ভাগ করা হলে প্রতি এক ঘর ঘূর্ণনের জন্য স্কেলটি পিচের 1/100 ভাগের এক ভাগ অগ্রসর হয় যাকে স্ক্রু গজের ন্যূনাঙ্ক/ লঘিষ্ট গণন (Least Count) বলে।
ব্যালান্স (ভর মাপার যন্ত্র) (Balance) :
ভর সরাসরি মাপা যায় না তাই সাধারণত ওজন মেপে সেখান থেকে ভরটি বের করা হয়। আজকাল ইলেকট্রনিক ব্যালেন্সের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। ব্যালেন্সের ওপর নির্দিষ্ট বস্তু রাখা হলেই ব্যালেন্সের সেন্সর সেখান থেকে নিখুঁতভাবে ওজনটি বের করে দিতে পারে।
থামা ঘড়ি (Stop Watch) :
সময় মাপার জন্য স্টপ ওয়াচ ব্যবহার করা হয়। স্টপ ওয়াচে যেকোনো একটি মুহূর্ত থেকে সময় মাপা শুরু করা হয় এবং নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর সময় মাপা বন্ধ করে কতখানি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে সেটি বের করে ফেলা যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্টপ ওয়াচ যত নিখুঁতভাবে সময় মাপতে পারে আমরা হাত দিয়ে কখনোই তত নিখুঁতভাবে এটা শুরু করতে বা থামাতে পারি না।
পরিমাপের ত্রুটি ও নির্ভুলতা (Error and Accuracy):
Error নামটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটি হচ্ছে প্রকৃত মানের তুলনায় পরিমাপ করা মাপের পার্থক্যটুকু। আমরা যখন পরিমাপ করি তখন প্রকৃত মানটি আসলে জানি না। তাই চূড়ান্ত ত্রুটি হিসেবে আমরা সবচেয়ে বেশি সম্ভাব্য ত্রুটিকেই ব্যবহার করি।
চুড়ান্ত ত্রুটির পর আমরা Relative Error বা আপেক্ষিক ত্রুটির বিষয়টি দেখতে পারি। ধরা যাক কোনো দৈর্ঘ্য মাপতে গিয়ে আমাদের \pm 0.5 mm ত্রুটি হয়। বস্তুটির দৈর্ঘ্য যদি 1 mm হয় তাহলে এই ত্রুটিটি খুবই গুরুতর কিন্তু দৈর্ঘ্যটি যদি 1 m হয় তাহলে পরিমাপটি যথেষ্ট নির্ভুল। এই বিষয়টুকু বোঝানোর জন্য আপেক্ষিক ত্রুটি বা Relative Error এর ধারণা আনা হয়েছে।
অর্থাৎ, আপেক্ষিক ত্রুটি = চূড়ান্ত ত্রুটি/পরিমাপ করা মান
প্রশ্ন: ধরা যাক বর্গাকৃতি একটা বইয়ের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করে তুমি 10cm পেয়েছ। ধরা যাক পরিমাপে 10% আপেক্ষিক ত্রুটি হয়েছে। বস্তুটির ক্ষেত্রফলে আপেক্ষিক ত্রুটি কত?
উত্তর: বস্তুটির পরিমাপ করা ক্ষেত্রফল 10 \times 10 = 100 cm^2
যেহেতু বস্তুটির আপেক্ষিক ত্রুটি 10% কাজেই তার দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হলে সবচেয়ে কম 9 cm এবং সবচেয়ে বেশি 11 cm হতে পারে।
কাজেই ক্ষেত্রফল, A_{min} = 9cm \times 9 cm = 81 cm^2 \\ \text{এবং } A_{min} = 11 cm \times 11 cm = 121 cm^3 হতে পারে।
কাজেই চূড়ান্ত ত্রুটি: |100 cm^2 - 81 cm^2| = 19 cm^2
অথবা, |121 cm^2 - 100 cm^2| = 21 cm^2
যেহেতু দুটি সমান নয় আমরা বড়টি নিই অর্থাৎ চূড়ান্ত ত্রুটি 21 cm^2
কাজেই আপেক্ষিক ত্রুটি, 21 cm^2 / 100 cm^2 = 0.21
শতাংশের হিসাবে 0.21 \times 100 = 21%
অর্থাৎ দৈর্ঘ্যের পরিমাপে 10% ত্রুটি হলে ক্ষেত্রফলের বেলায় সেটি হবে প্রায় দ্বিগুণ। একইভাবে তুমি দেখাতে পারবে আয়তন মাপা হলে তার ত্রুটি হবে তিন গুণ!
প্রশ্ন: তুমি একটি বাক্স একটি রুলার দিয়ে মেপেছ যেখানে শুধু cm দিয়ে দাগ। তুমি বাক্সটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা হিসেবে পেয়েছ 10 cm, 5 cm, 4 cm, তোমার মাপে কত শতাংশ ত্রুটি আছে?
উত্তর:যেহেতু তোমার রুলারে শুধু cm দাগ দেওয়া কাজেই তোমার ত্রুটি কাজেই তোমার মাপের ত্রুটি \pm 0.5 cm:
দৈর্ঘ্য 10 \pm 0.5 cm
প্রস্থ 5 \pm 0.5 cm
উচ্চতা 4 \pm 0.5 cm
পরিমাপকৃত আয়তন: 10 cm \times 5 cm \times 4 cm = 200 cm^3
সম্ভাব্য সবচেয়ে ছোট আয়তন: (10-0.5)cm \times (5-0.5) cm \times (4-0.5) cm =149.625 cm^3
সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় আয়তন: (10+0.5)cm \times (5+0.5) cm \times (4+0.5) cm =149.625 cm^3
কাজেই আয়তন 149.625 cm < V < 259.875 cm^3
চূড়ান্ত ত্রুটি: 149.625 cm^3 থেকে 200 cm^3 হচ্ছে 200 cm^3 - 149.625 cm^3 = 50.375 cm^3
200 cm^3 থেকে 259.875 cm^3 হচ্ছে 259.875 cm^3 - 200 cm^3 = 59.875 cm^3
আমরা বড়টি নিই: অর্থাৎ, চূড়ান্ত ত্রুটি 59.875 cm^3
আপেক্ষিক ত্রুটি: 59.875 cm^3 / 200 cm^3 \times 100 = 29.9375% \equiv 30%