রেজোন্যান্স
রেজোন্যান্স (Resonance)
প্রশ্ন: আবেশিক প্রভাব বা আবেশীয় ধর্ম (Inductive Effect) কী?
উত্তরঃ জৈব যৌগের কার্বন শিকলের প্রান্তিক কার্বনে অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক অথবা কার্বনের চেয়ে কম তড়িৎ ঋণাত্মক পরমাণু বা মূলক যুক্ত থাকলে বন্ধনকৃত ইলেক্ট্রন যুগলের তুলনামূলকভাবে অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক পরমাণু বা মূলকের দিকে আংশিক স্থানান্তর ঘটে। ফলে কার্বন শিকল বরাবর মেরুত্বের সৃষ্টি হয়। তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্যের কারণে বন্ধন ইলেক্ট্রনের এরূপ সরণকে আবেশিক প্রভাব বলে।
কার্বন শিকলের প্রান্তিক কার্বনে যদি কার্বন অপেক্ষা বেশি তড়িৎ ঋণাত্মক পরমাণু বা মূলক যুক্ত থাকে তাহলে শিকল বরাবর উক্ত পরমাণু বা মূলকের দিকে বন্ধন ইলেক্ট্রনের সরণ ঘটে। একে ঋণাত্মক আবেশিক প্রভাব বা I effect বলে। কিন্তু যুক্ত পরমাণু বা মূলকের তড়িৎ ঋণাত্মকতা যদি কার্বনের চেয়ে কম হয় তাহলে উল্টো প্রভাব দেখা যায়। অর্থাৎ কার্বনের দিকে বন্ধন ইলেক্ট্রনের আংশিক স্থানান্তর ঘটে । একে ধণাত্মক আবেশিক প্রভাব বা +I effect বলে।
প্রশ্ন: ইলেকট্রোমারিক প্রভাব (Electromeric Effect) কী?
উত্তর: রাসায়নিক বিক্রিয়াকালে বিকারকের প্রভাবে দ্বি-বন্ধন বা ত্রিবন্ধনের পরমাণুদ্বয়ের যে কোনো একটিতে π ইলেক্ট্রন স্থানান্তরের ক্ষণস্থায়ী | প্রভাবকে ইলেকট্রোমারিক প্রভাব বলে। একে E দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
ইলেকট্রোমারিক প্রভাব একটি ক্ষণস্থায়ী প্রভাব । আক্রমণকারী বিকারককে বিক্রিয়াস্থল থেকে সরিয়ে নিলে অণুটি পূর্বের ইলেক্ট্রনীয় অবস্থায় ফিরে আসে। π ইলেক্ট্রনের স্থানান্তর যদি ইলেকট্রনাকর্ষী বিকারকের প্রভাবে ঘটে তাহলে একে +E effect বলে। কিন্তু π ইলেক্ট্রনের স্থানান্তর যদি কেন্দ্রাকর্ষী বিকারকের প্রভাবে সংঘটিত হয় তাহলে এ স্থানান্তরকে –E effect বলে। যেমন-
প্রশ্ন: মেসোমারিক প্রভাব (Mesomeric Effect) কী? Resonance প্রভাব কি ?
উত্তরঃ কনজুগেটেড দ্বিবন্ধন বা ত্রিবন্ধনযুক্ত জৈব যৌগে π ইলেক্ট্রন সরণের প্রভাবকে মেসোমারিক প্রভাব বলে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট যৌগের অণুর একাধিক রেজোন্যান্স কাঠামো পাওয়া যায়।
কার্বন কার্বন দ্বি-বন্ধন বা ত্রি-বন্ধনযুক্ত কনজুগেটেড সিস্টেম কোনো নিঃসঙ্গ ইলেক্ট্রনজোড় বিশিষ্ট পরমাণু বা গ্রুপ যুক্ত থাকলে কার্বন পরমাণুর দিকে π বন্ধন ইলেক্ট্রনের সরণ ঘটে। এক্ষেত্রে মেসোমারিক প্রভাবকে ধণাত্মক মেসোমারিক প্রভাব বা +M effect বলে।
যেমন-
কনজুগেটেড সিস্টেমে অধিক তড়িৎ ঋণাত্মক পরমাণু বা গ্রুপ যুক্ত থাকলে π ইলেক্ট্রণের সরণ ঐ পরমাণু বা গ্রুপের দিকে ঘটে। এরুপে সৃষ্ট মেসোমারিক প্রভাবকে ঋণাত্মক মেসোমারিক প্রভাব বা —M effect বলে। যেমন- NO2, – COOH, – CHO
প্রশ্ন: হাইপার কনজুগেশন প্রভাব (Hyper Conjugation Effect) কী?
উত্তরঃ কার্বন কার্বন দ্বি-বন্ধন বা ত্রি-বন্ধনযুক্ত জৈব অণুতে বা কার্বোনিয়াম আয়নের অবস্থানে -হাইড্রোজেন যুক্ত থাকলে C-H বন্ধনের O-
আণবিক অরবিটালের সাথে পার্শ্ববর্তী কার্বনের -অরবিটালের অধিক্রমণ ঘটে। এতে O–ইলেক্ট্রন পার্শ্ববর্তী কার্বনে স্থানান্তরিত হয়। সিগমা ইলেক্ট্রনের এ স্থানান্তরকে হাইপার কনজুগেশন বলে। কোনো সিগমা বন্ধনের (C – H, C – C) ইলেকট্রন এর সাথে যুক্ত কার্বনের খালি পাই অরবিটালের দিকে স্থানান্তরিত হয়ে ঐ কার্বনে ইলেকট্রন বৃদ্ধির ঘটনাকে হাইপার কনজুগেশন বলে। কোন জৈব যৌগ বা আয়নের -হাইড্রোজেন তথা -অবস্থানের C – H বন্ধনের ইলেকট্রন ধনাত্মক চার্জযুক্ত কার্বনের দিকে বা কুনজুগেট সিস্টেমের দিকে ধাবিত হয়ে ইলেকট্রন ঘনত্ব বৃদ্ধি করার ঘটনাকে হাইপার কনজুগেশন বলে। এর ফলে অণুটিতে বন্ধনহীন অুরণন ঘটে সাধারণত অ্যালকাইল মূলকসমূহ এধরনের অনুরণন দেখায়।
চিত্র-: প্রোপিন অণুতে হাইপার কনজুগেশন
অনুরূপভাবে-
দ্বি-বন্ধন বা ত্রি-বন্ধনযুক্ত জৈব সিস্টেমে যত বেশি -H থাকবে সংশ্লিষ্ট যৌগের তত বেশি কনজুগেটেড গঠন পাওয়া যাবে। আবার যে যৌগের যত বেশি কনজুগেটেড গঠন পাওয়া যাবে সে যৌগ তত বেশি স্থিতিশীল হবে।
প্রশ্ন : বেনজিন সক্রিয়কারী গ্রুপ এবং নিষ্ক্রিয়কারী গ্রুপ বলতে কি বুঝ? (Benzene activating group and inactivating group)
উত্তর : সক্রিয়কারী গ্রুপ : যে সব গ্রুপ বা মূলকের উপস্থিতিতে প্রতিস্থাপিত বেনজিনের সক্রিয়তা অপ্রতিস্থাপিত বেনজিন বা শুধু বেনজিন অপেক্ষা বেশী হয়, সেই মূলককে সক্রিয়কারী মূলক বা গ্রুপ বলা হয়। সাধারণত ধণাত্মক আবেশীয় (+1) ধর্মযুক্ত বা ধণাত্মক মেসোমারিক (+M) ধর্মযুক্ত মূলকগুলো সক্রিয়কারী মূলক হিসেবে কাজ করে। যেমন- মিথাইল মূলক (-CH3), অ্যামিনো মূলক (-NH2), হাইড্রক্সিলমূলক (-OH) ইত্যাদি। এরা প্রত্যেকেই বেনজিন চক্রের দিকে ইলেকট্রন ঠেলে দিয়ে বেনজিন চক্রকে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ার জন্য অধিক সক্রিয় করে তোলে।
এ কারণেই টলুইন ফেনল এবং অ্যানিলিন প্রত্যেকেই প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় বেনজিনের তুলনায় অধিক সক্রিয়। সক্রিয়কারী গ্রুপগুলো রেজোন্যাসের মাধ্যমে বেনজিন চক্রের অর্থো এবং প্যারা অবস্থানে মেটা অবস্থানের তুলনায় ইলেকট্রন ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়। এজন্য সক্রিয়কারী মূলক উপস্থিত থাকলে আগত গ্রুপটি বা ইলেকট্রোফাইলটি সর্বদাই বেনজিনের অর্থো এবং প্যারা অবস্থানে প্রবেশ করে। ফলে সক্রিয়কারী গ্রুপগুলোকে অর্থো প্যারা নির্দেশকে গ্রুপও বলা হয়।
নিষ্ক্রিয়কারী গ্রুপ:- যে সব গ্রুপ বা মূলকের উপস্থিতিতে প্রতিস্থাপিত বেনজিনের সক্রিয়তা অপ্রতিস্থাপিত বেনজিন অপেক্ষা কমে যায়, সে সব মূলক বা গ্রুপকে নিস্ক্রিয়কারী মূলক বলে। সাধারণত ঋণাত্মক আবেশীয় (-I) ধর্ম সম্পন্ন মূলক সমূহকে বা ঋণাত্মক মেসোমারিক (-M) ধর্মযুক্তমূলককে নিস্ক্রিয়কারী মূলক বলে। যেমন- নাইট্টোমূলক (-NO2) অ্যালডিহাইড মূলক (-CHO), কার্বক্সিলমূলক (-COOH) ইত্যাদি। এরা প্রত্যেকেই বেনজিন চক্র থেকে নিজেদের দিকে ইলেকট্রন টেনে নিয়ে বেনজিন চক্রের ইলেকট্রন ঘনত্ব কমিয়ে দেয়।
ফলে এসব গ্রুপ উপস্থিত থাকলে বেনজিন চক্রটি অপ্রতিস্থাপিত বেনজিন চক্রের তুলনায় কম সক্রিয় হয়। অর্থাৎ এ কারণে নাইট্রোবেনজিন এবং বেনজালিডিহাইড অপ্রতিস্থাপিত বেনজিনের তুলনায় কম সক্রিয় হয়। নিষ্ক্রিয়কারী বা সক্রিয়তা হ্রাসকারী মূলকগুলো উপস্থিত থাকলে রেজোন্যান্সের মাধ্যমে বেনজিন চক্রের অর্থো এবং প্যারা অবস্থানে ধনাত্মক চার্জ সৃষ্টি হয়। কিন্তু মেটা অবস্থানে কোন চার্জ সৃষ্টি হয় না। ফলে এরা কেবল মেটা অবস্থানেই প্রতিস্থাপন ঘটাতে পারে। একারণে নিষ্ক্রিয়কারী মূলকগুলোকে মেটা নির্দেশকও বলা হয়।
অর্থো/প্যারা নির্দেশক গ্রুপ | |
তীব্র সক্রিয়তা বৃদ্ধিকারী | – O – NR2, – NHR, – NH2, – OH |
মধ্যম সক্রিয়তা বৃদ্ধিকারী | – OR, – OCH3, – NHCOR, – NHCOCH3 |
মৃদু সক্রিয়তা বৃদ্ধিকারী | -C2H5, -CH3, – C6H5 |
মৃদু সক্রিয়তা হ্রাসকারী | – F, -Cl, -Br, -I |
মেটা নির্দেশক গ্রুপ | |
তীব্র সক্রিয়তা হ্রাসকারী | – NR3, – NO2, – CF3, – CCl3 |
মধ্যম সক্রিয়তা হ্রাসকারী | – CN, – SO3H, – CHO, – COR, – COOR, – COOH |
প্রশ্ন : দেখাও যে মিথাইলমূলক একটি সক্রিয়কারী মূলক বা অর্থো প্যারা নির্দেশকমূলক। (Methyl group is an activating group or an Ortho Para Indicator)
উত্তর : হাইপার কনজুগেশন প্রবণতার কারণে মিথাইল মূলকের ধণাত্মক আবেশীয় (+1) ধর্ম আছে । – CH3 মূলক দ্বিবন্ধন যুক্ত কনজুগেট সিস্টেমের সাথে যুক্ত থাকলে –CH3 মূলকের C – H বন্ধনের O- ইলেকট্টনদ্বয় বেনজিন বলয়ে হাইপারকনজুগেটিভ বা ‘বন্ধনবিহীন’ অনুরণন নামে এক বিশেষ অনুরণন অংশ গ্রহণ করে। মিথাইল মূলকের প্রভাবে বেনজিন বলয়ে অনুরণন নিমরূপে ঘটে।
অণুরনন চিত্র হতে দেখা যায় যে অর্থো এবং প্যারা অবস্থানে ইলেকট্রন ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ টলুইনের বেনজিন বলয়টি অধিক সক্রিয় হয়। অর্থো এবং প্যারা অবস্থানে ইলেকট্রন ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় বলে আগমণকারী ইলেকট্রোফাইল ঐ সব সক্রিয় স্থানে সহজে প্রতিস্থাপন ঘটাতে পারে। তাই মিথাইলমূলককে অর্থো প্যারা নিদের্শকমূলক বলা হয়। মিথাইল মূলকের উপস্থিতিতে বেনজিন চক্রে ইলেকট্রন ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় বলে একে সক্রিয়কারী মূলক বলে ।
টলুইনের অনুরণন চিত্র নিম্নরুপ:
প্রশ্ন : দেখাও যে -OH মূলক একটি সক্রিয়কারী মূলক বা অর্থো প্যারা নিদের্শক মূলক। (–OH is an Ortho/Para Indicating Group)
উত্তর : বেনজিন চক্রে যুক্ত -OH মূলকটি তড়িৎ ঋণাত্মক অক্সিজেন পরমাণু ঋণাত্মক আবেশীয় ফল (-I) দ্বারা বেনজিন চক্র হতে ইলেকট্রন ঘনত্ব নিজের দিকে টেনে নেয়। আবার অক্সিজেন পরমাণু নি:সঙ্গ ইলেকট্রন যুগল ধনাত্মক মেসোমারিক ধর্ম (+M) দ্বারা বেনজিন চক্রে প্রবেশ করে এবং চক্রের ইলেকট্রন ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু মেসোমারিক ধর্ম তুলনামূলক ভাবে আবেশীয় ধর্ম অপেক্ষা বেশী হওয়ায় বেনজিন চক্রের দিকে ইলেকট্রন স্থানান্তর ঘটে। অর্থাৎ OH মূলকের উপস্থিতিতে বেনজিন চক্রের ইলেকট্রন ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। নিম্নের অণুরণন চিত্র হতে দেখা যায় অর্থো এবং প্যারা পজিশনে ইলেকট্রন ঘনত্বের পরিমান বৃদ্ধি পায়। তাই OH মূলক একটি সক্রিয়কারী মূলক এবং অর্থো প্যারা নির্দেশক মূলক। -OH মূলকের উপস্থিতিতে বেনজিন চক্রে ইলেকট্রন ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় বলে একে সক্রিয়কারী মূলক বলে। ফেনলের অনুরণন চিত্র নিম্নরুপ:
প্রশ্ন : দেখাও যে –NH2 মূলক একটি সক্রিয়কারী মূলক এবং অর্থো প্যারা নিদের্শক মূলক। (–NH2 is an Ortho/Para Indicating Group)
উত্তর : বেনজিন বলয়ে NH2 মূলক যুক্ত থাকলে ঐ যৌগকে অ্যানিলিন বলে । অ্যানিলিন অণুতে NH2 মূলক ধনাত্মক মেসোমারিক ফল’ দ্বারা এর নি:সঙ্গ ইলেকট্রন যুগল মেঘ বেনজিন বলয়ে ঠেলে দেয়। তখন বেনজিনের অনুরণন কাঠামো মতে অর্থো ও প্যারা অবস্থানে ইলেকট্রন ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়ে বেনজিন বলয় সক্রিয় হয়। আগমনকারী ইলেকট্টোফাইল ঐ সব সক্রিয় স্থানে সহজে প্রতিস্থাপন ঘটাতে পারে। তাই অ্যামিনমূলককে সক্রিয়কারী মূলক বা অর্থো-প্যারা নির্দেশক মূলক বলে । – NH2 মূলকের উপস্থিতিতে বেনজিন চক্রে ইলেকট্রন ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় বলে একে সক্রিয়কারী মূলক বলে । অ্যানিলিনের অনুরুপ চিত্র নিম্নরুপ:
প্রশ্ন : দেখাও যে- NO2 মূলক একটি নিষ্ক্রিয়কারী মূলক বা মেটা নিদের্শক মূলক । (NO2 is an Ortho/Para Indicating Group)
উত্তরঃ বেনজিন বলয়ে নাইট্রো মূলক যুক্ত থাকলে তাকে নাইট্রো বেনজিন বলে। নাইট্রো মূলক এর ঋণাত্মক মেসোমারিক ফলের প্রভাবে অর্থাৎ কনজুগেটেড সিস্টেমে অধিক তড়িৎঋণাত্মক পরমাণুর দিকে পাই ইলেকট্রনের সরণের ফলে – NO2 মূলক বেনজিন বলয়ের পাই ইলেকট্রন মেঘ নিজের দিকে টেনে নেয়। তখন বেনজিন বলয়ে অনুরণন নিমরূপে ঘটে। ফলে অনুরণন কাঠামোর অর্থো ও প্যারা অবস্থানে ইলেকট্রন ঘনত্ব হ্রাস পায়; তথা ধনাত্মক চার্জ তৈরি হয়। তুলনামূলকভাবে মেটা অবস্থানে ইলেকট্রন ঘনত্ব বেশি থাকে। তাই ইলেকট্রোফাইল উক্ত স্থানে প্রবেশ করে। তাই নাইট্রো মূলক একটি মেটা নিদের্শক মূলক বলা হয়। – NO2 এর উপস্থিতিতে বেনজিন চক্রে ইলেকট্রন ঘনত্ব হ্রাস পায় বলে একে নিস্ক্রিয়কারী মূলক বলে। নাইট্রো বেনজিনের অনুরণন চিত্র নিম্নরুপ:
প্রশ্ন : ক্লোরিন অর্থো-প্যারা নির্দেশক হলেও বেনজিন চক্রের সক্রিয়তা হ্রাস করে কেন? (Chlorin being an Ortho/Para Indicator reduces the activity of the benzene cycle)
উত্তর : বেনজিন বলয়ে ক্লোরিন পরমাণু যুক্ত থাকলে তাকে ক্লোরোবেনজিন বলে । ক্লোরোবেনজিনের Cl পরমাণু দুই প্রকার প্রভাব বেনজিন বলয়ে প্রদর্শন করে। একটি হল অধিক তড়িৎ ঋণাত্মকতার কারণে বেনজিন বলয় থেকে ইলেকট্রন Cl পরমাণুর দিকে টেনে নেওয়া, একে Cl পরমাণুর ঋণাত্মক আবেশীয় ফল (-I) বলা হয়। অপরটি হল Cl পরমাণুর উপর তিনটি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন যুগল থেকে ইলেকট্রন ঘনত্ব মেসোমারিক ফল (+M) দ্বারা বেনজিন বলয়ে প্রবেশ করা। -I>+M হওয়ায় তা বেনজিন চক্রের সক্রিয়তা হ্রাস করে ।
উভয় প্রভাবের ফলে ক্লোরোবেনজিনের সক্রিয়তা বেনজিনের তুলনায় সামান্যই পরিবর্তিত হয় এবং দ্বিতীয় আগমনকারী ইলেকট্রোফাইলকে অর্থো অথবা প্যারা অবস্থানে আসার জন্য নির্দেশ করে। তাই ক্লোরোবেনজিনের ইলেকট্রন আকর্ষী প্রতিস্থাপনে বিক্রিয়া সহজে ঘটে না।
প্রশ্ন : বেনজিনের নাইট্রেশন অপেক্ষা নাইট্রোবেনজিনের নাইট্রোশন অধিকতর উচ্চতর তাপমাত্রায় ঘটে কেন, তা ব্যাখ্যা কর। (Nitration in nitrobenzene occurs at a much higher temperature than nitration in benzene)
উত্তর : নাইট্রোবেনজিনে ইলেকট্রন আকর্ষী বিকারক –NO2 মূলক যুক্ত আছে। যা বেনজিন চক্র হতে নিজের দিকে ইলেকট্রন টেনে নিয়ে বেনজিন চক্রের ইলেকট্রন ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। ফলে নাইট্রোবেনজিনের বেনজিন চক্রটি অপ্রতিস্থাপিত বেনজিন চক্রের তুলনায় কম সক্রিয় হয় । অর্থাৎ –NO2 মূলকের ঋণাত্মক মেসোমারিক ধর্ম বেনজিন চক্রকে কম সক্রিয় করে। একারণে নাইট্রোবেনজিনে নাইট্রেশন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ঘটে না। এক্ষেত্রে উচ্চ তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অপ্রতিস্থাপিত বেনজিনে ইলেকট্রন ঘনত্বের কোন পরিবর্তন হয় না বলেই এক্ষেত্রে নাইট্রেশন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় হয় ।
৫০°C তাপমাত্রায় H2SO4 এর উপস্থিতিতে বেনজিন ও HNO3 এর নাইট্রেশন বিক্রিয়ায় নাইট্রোবেনজিনে পাওয়া যায়-
অথচ, ১০০°C তাপমাত্রায় নাইট্রোবেনজিনে নাইট্রেশন ঘটিয়ে মেটা ডাই নাইট্টোবেনজিন পাওয়া যায়।
অতএব উপরের আলোচনা হতে বলা যায় বেনজিনের নাইট্রেশন অপেক্ষা নাইট্রোবেনজিনের নাইট্রেশন উচ্চ তাপমাত্রায় ঘটে ।
প্রশ্নঃ বেনজিন অপেক্ষা টলুইনে সালফোনেশন বিক্রিয়া দ্রুত সংঘটিত হয় কেন?-ব্যাখ্যা কর। (The sulfonation reaction in toluene occurs faster than in benzene)
উত্তর : টলুইনে একটি ইলেকট্রন দানকারী মূলক (-CH3) যুক্ত আছে যা বেনজিন চক্রের দিকে ইলেকট্রন ঠেলে দিয়ে বেনজিন চক্রের ইলেকট্রন ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়। ফলে টলুইনের বেনজিন চক্রটি অপ্রতিস্থাপিত বেনজিন চক্রের তুলনায় অধিক সক্রিয় হয়। অর্থাৎ -CH3 মূলকের ধনাত্মক আবেশীয় ধর্মের কারণে বেনজিন চক্রের ইলেকট্রন ঘনত্ব বেড়ে যায়। অন্যদিকে অপ্রতিস্থাপিত বেনজিন চক্রে ইলেকট্রন ঘনত্বের কোন পরিবর্তন হয় না বলে এর বিক্রিয়া স্বাভাবিক গতিতে হয়। টলুইনের মত দ্রুত হয় না। যেমন-ধুমায়মান H2SO4 এর
উপস্থিতিতে বেনজিনকে সালফোনেশন করতে কক্ষ তাপমাত্রায় ২০-৩০ মিনিট সময় লাগে। পক্ষান্তরে, সমপরিমাণ টলুইনকে সালফোনেশন করতে ঐ কক্ষ তাপমাত্রায় মাত্র ১-২ মিনিট সময় লাগে এবং এক্ষেত্রে অর্থো ও প্যারা যৌগ উৎপন্ন হয়।
অতএব উপরের আলোচনা হতে বলা যায়, বেনজিন অপেক্ষা টলুইনে সালফোনেশন দ্রুত সংঘটিত হয়।